শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি প্রতীকী

 

মাইগ্রেন ঠিক কী?

মাইগ্রেন এক ধরনের নিউরোভাসকুলার মাথা ব্যথার রূপ, যেখানে স্নায়ুতন্ত্রের আয়ন চ্যানেলের সমস্যার কারণে রক্তনালীগুলি প্রসারণে ফলে মাথা ব্যথা হয়। মাইগ্রেনের একটি পর্ব সাধারণত পর্যায়ক্রমে ঘটে। কয়েক দিন স্থায়ী হতে পারে। কিছু জনের ক্ষেত্রে প্রতি সপ্তাহে একাধিক ‘এপিসোড’ থাকে, অন্যদের মাঝে মাঝেই হয়ে থাকে। খুব বাড়াবাড়ি তা দৈনন্দিন জীবনকে প্রভাবিত করতে পারে। গবেষকরা দেখেছেন গড়ে ১৫ শতাংশেরও বেশি প্রাপ্তবয়স্কদের মাইগ্রেন সমস্যা থাকে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, মাইগ্রেন কমবেশি ১৯ শতাংশ মহিলা এবং ৯ শতাংশ পুরুষদের প্রভাবিত করে। ‘এপিসোড’গুলি প্রায়শই ১৮-৪৪ বছর বয়সীদের মধ্যে ঘটে। তবে শৈশব-সহ যে কোনও সময় এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
 

মাইগ্রেনের প্রাথমিক উপসর্গ

প্রোড্রোম স্টেজ: মাইগ্রেনের লক্ষণগুলি মাথা ব্যথার কয়েক ঘণ্টা বা একদিন দিন আগে শুরু হয়। এই পর্যায়ে, একজন ব্যক্তি অনুভব করতে পারেন যার মধ্যে মানসিক পরিবর্তন, বিশেষ করে বিষণ্নতা এবং বিরক্তি ভাব থাকতে পারে। প্রড্রোমের মধ্যে হাঁপানি, মাথা ঘোরা, তৃষ্ণা, ঘন ঘন প্রস্রাব এবং আলো ও শব্দের প্রতি সংবেদনশীলতা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।

অরা: মাথা ব্যাথার আগে কিছু শারীরিক উপসর্গ যেমন দৃষ্টিক্ষেত্রে আলোর ঝলকানি, চোখে ঝাপসা দেখা, গন্ধ অনুভব করা ইত্যাদি হতে পারে।

মাথা ব্যথার সময়: হালকা থেকে তীব্র, ঝাঁকুনি বা স্পন্দিত মাথাব্যথার পাশাপাশি, উপসর্গগুলির মধ্যে বমি বমি ভাব, বমি, ঘাড়ে ব্যথা, মাথা ঘোরা এবং নাক বন্ধ হতে পারে, ঘাম হওয়া, অস্বাভাবিকভাবে গরম বা ঠান্ডা অনুভব করা, পেটে ব্যথা এবং ডায়রিয়া হতে পারে। আলো এবং শব্দের প্রতি সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পায় যার ফলে অন্ধকার ঘরে চুপচাপ শুয়ে থাকতে চান। মাথাব্যথার পরে, ক্লান্তি এবং বিরক্তি ভাব আরও দু’ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। একে কখনও কখনও ‘মাইগ্রেন হ্যাংওভার’ও বলা হয়।
 

মাইগ্রেনের সম্ভাব্য কারণ

বংশগত: মাইগ্রেন একই পারিবারের সদস্যদের মধ্যে হওয়ার প্রবনতা বেশি।
খাদ্যাভ্যাস: অ্যালকোহল, ক্যাফেইন, চকলেট, সাইট্রাস ফল।
ওষুধ: কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু ওষুধ খাওয়ার ফলেও এই সমস্যা হতে পারে। যেমন, ঘুমের ট্যাবলেট, হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি (এইচআরটি), জন্মনিয়ন্ত্রণ ট্যাবলেট জাতীয় ওষুধ খেলে মাইগ্রেনের সমস্যা হলেও হতে পারে।
পরিবেশগত: কম্পিউটার স্ক্রিন, তীব্র গন্ধ, ধোঁয়া, উচ্চ শব্দ, আর্দ্রতা, বদ্ধ ঘর, তাপমাত্রার পরিবর্তন, তীব্র সূর্যালোক, উজ্জ্বল আলো, ঘুমের অভাব ইত্যাদি মাইগ্রেনের ট্রিগারের হিসাবে কাজ করে।
অন্যান্য: মাইগ্রেনের ট্রিগার ব্যক্তিভেদে পরিবর্তিত হয়। তারা সাধারণত হরমোনের পরিবর্তন, যেমন ঋতুস্রাবের সময়, মানসিক চাপ, বিষণ্নতা, উদ্বেগ এবং উত্তেজনা ইত্যাদি।
 

কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন

নিম্নলিখিত কয়েকটি কৌশলগুলি মাইগ্রেনের এপিসোডের ফ্রিকোয়েন্সি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
পর্যাপ্ত ঘুম প্রয়োজন।
মানসিক চাপ কমাতে হবে।
প্রচুর জলপান করতে হবে।
যে সব খাওয়ার থেকে মাইগ্রেনের সমস্যা বাড়ে সেগুলি এড়িয়ে চলতে হবে। যেমন: চিজ, চকোলেট, পেস্ট্রি, আজিনা মটর, ক্যাফিন, অ্যালকোহল প্রভৃতি।
নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে।
ভিড়, কোলাহলযুক্ত পরিবেশ থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে।
বেশি রাত জাগা যাবে না।
নিয়ন্ত্রিত জীবনযাত্রা এ ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা নেয়।

 

মাইগ্রেনের চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথি

মাইগ্রেনের সমস্যায় ভালো ফল পাওয়া যায় হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায়। নিয়মিত হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করালে মাইগ্রেনের প্রবনতা ধীরে ধীরে কমে যায়। এর ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি প্রায় স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে সক্ষম হন। হোমিওপ্যাথি ওষুধ রোগীর লক্ষণ সাদৃশ্যের উপর নির্ভর করে নির্বাচন করা হয়। তাই বিভিন্ন রুগীর ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা ওষুধ কার্যকর হয়। অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গিয়েছে, কিছু কিছু হোমিওপ্যাথি ওষুধ মাইগ্রেনের ক্ষেত্রে খুব ভালো কাজ করে, যেমন:
ন্যাট্রাম মিউরিয়েটিকাম (Natrum muriaticum)
সাঙ্গুইনারিয়া (sanguinaria)
স্পিগেলিয়া (Spigelia)
গ্লোনুইন (Glonuine)
ম্যাগনেসিয়াম ফসফরিকু ন্যাট্রাম মুরিয়াটিকাম (Magnesium phosphoricu Natrum muriaticum)
ম্যাগনেসিয়াম ফসফরিকাম (Magnesium phosphoricum)
বেলাডোনা (Belledona) ইত্যাদি।

তবে এই সব ওষুধ নিজের মতো করে খেলে ফল তো পাওয়াই যাবে না, উল্টে বিপদও বাড়তে পারে। ওষুধের নাম উল্লেখ করার কারণ, মাইগ্রেনের সমস্যায় কী ধনের ওষুধ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় রয়েছে পাঠকদের তার একটা ধারণা দেওয়া। সব ক্ষেত্রেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাওয়া যাবে না। কারণ একজন অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকই সঠিক পরামর্শ দিতে পারেন।

যোগাযোগ: ৭০০৫৩৫৮৯১৬


Skip to content