শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪


চিরকুমার সভার একটি বিশেষ দৃশ্য

বাংলা ছবির এক সময়ের দাপুটে পরিচালক ছিলেন দেবকীকুমার বসু। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিরকুমার সভা নাটকের দেবকীবাবু চিত্ররূপ দেওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিলেন। সেখানে পূর্ণ চরিত্রের জন্য উত্তমকুমারকে তিনি নিয়েছিলেন। সময় মতো এসে দেবকীবাবু দেখেন উত্তমকুমার তখনও আসেননি। উত্তমকুমার ছাড়া অন্য শট নেওয়া যেত, কিন্তু দেবকীকুমারের নীতি ছিল, যে ভাবে যে দিনের কাজ ভাবা হয়েছে, সেভাবেই হবে। তিনি ছবি অনুযায়ী ফ্লোরে সুন্দর একটা পরিবেশ গড়ে তুলতেন। উত্তমকুমারের জন্য সবাই অপেক্ষা করছেন। দেবকীবাবু খুবই বিরক্ত হচ্ছেন। উত্তমকুমার আধঘন্টা পরে এসে হন্তদন্ত হয়ে ফ্লোরে ঢুকে দেবকীবাবুকে বললেন, ‘স্যরি স্যার আমার ইনকাম ট্যাক্সের উকিলের সঙ্গে অ্যাপায়নমেন্ট ছিল।’

লেখক রবীন্দ্রনাথ

উত্তমকুমারের তখন খুব নামডাক এবং খুব ব্যস্ত অভিনেতা। তিনি তাড়াতাড়ি জিজ্ঞাসা করেন, ‘কোন সিনটা প্রথমে টেক করা হবে?’ দেবকীকুমার পাল্টা প্রশ্ন করলেন, ‘কেন তুমি জাননা প্রথম সিনটা কি?’ উত্তমকুমার বললেন, ‘না আমি এক্ষুনি দেখে নিচ্ছি।’ দেবকীবাবু ‘থাম’ বলে তাঁর সহকারী বিজলীবাবুকে বললেন, ‘বিজলী তুমি উত্তমকে বলে দাওনি কোন দিন কোন সিন টেক করা হবে?’ উত্তমকুমার বললেন, ‘আমি পড়ার সময় পাইনি। আমি এক্ষুনি পড়ে ঠিক করে দিচ্ছি’ এই বলে বিজলীবাবুর কাছ থেকে ডায়লগের পাতা নিয়ে নেন। দেবকীকুমার বললেন ‘থাক’ তারপর গম্ভীর ভাবে বললেন, ‘প্যাকআপ’। উত্তমকুমার তো বিস্মিত হলেন। বললেন, ‘প্যাকআপ’। দেবকীকুমার বললেন, ‘হ্যাঁ আজকে ডায়লগগুলো ভালো করে পড়ো। মুখস্থ করো। কালকের হবে।’ উত্তম বললেন, ‘না না আমি এক্ষুনি ঠিক করে দিচ্ছি। আপনি শ্যুটিং করুন।’

দেবকীবাবু চটে গেলে যাকে তুমি বলতেন তাকে তখন আপনি করে কথা বলতে শুরু করে দিতেন। সেদিনের সেট থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে দেবকীবাবু বললেন, ‘উত্তমবাবু এই বইয়ের ওই সংলাপ যিনি ভেবে ভেবে লিখেছেন মনে রাখবেন তিনি রবীন্দ্রনাথ। আপনি সংলাপ এখানে এসে কোন রকম পড়ে উগরে দিলেন। এতই সোজা হতে পারে? আপনি এখন টপস্টার, রবীন্দ্রনাথ নন।’ এই বলে সেদিনের মতো শ্যুটিং বন্ধ করে গটগট করে বেরিয়ে গাড়ি করে চলে গেলেন দেবকীকুমার বসু।

পরিচালক দেবকীকুমার বসু

এই ছবিতে বিভিন্ন ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন অহীন্দ্র চৌধুরি, জহর গঙ্গোপাধ্যায়, নীতিশ মুখোপাধ্যায়, উত্তমকুমার, জীবেন বসু, প্রশান্তকুমার, তুলসী চক্রবর্তী, জহর রায়, অজিত চট্টোপাধ্যায়, অনিতা গুহ, ভারতী দেবী, যমুনা সিংহ, তপতী ঘোষ, শোভা সেন প্রমুখ শিল্পীরা। ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৫৬ সালের ১৪ এপ্রিল উত্তরা, উজ্জ্বলা, প্রাচী প্রেক্ষাগৃহে। অসম্ভব জনপ্রিয়তা পেয়েছিল এই চিরকুমার সভা ছবিটি। যিনি আমাদের উপহার দিয়েছেন চণ্ডীদাস, বিদ্যাপতি, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য, মীরাবাঈ, কবি, রত্নদীপের মতো সাড়া জাগানো ছবি। সেই দেবকীকুমার বসুর হাতেই পেলাম আরেক সাড়া জাগানো ছবি ‘চিরকুমার সভা’।

Skip to content