শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪


স্ক্রিপ্ট পড়ে শোনাচ্ছেন।

হেমন্ত এবং তরুণ জুটি একসঙ্গে কাজ করেছেন টানা ২৫ বছর ২৫টি ছবিতে। তরুণ মজুমদারের ভাষায় বলি: ‘জানি না পৃথিবীর ইতিহাসে পরিচালক-সুরকারের এমন লম্বা যুগলবন্দির আর কোনও নজির আছে কিনা। কত ঘটনা, কত মধুর স্মৃতি। একটানা তো বলা যাবে না। তাই এই লেখায় প্রায়শই উনি উঁকি মারবেন। যখন তখন, যেখানে সেখানে। দে’জ পাবলিশিং প্রকাশিত ‘সিনেমা পাড়া দিয়ে’ বইটিতে এভাবেই হেমন্ত বন্দনা শুরু করেছেন তনুবাবু।

নিউ থিয়েটার্স স্টুডিওর পিছন দিকের ছোট্ট যে ঘরটিতে তনুবাবুর অফিস, যেখানে আমি তাঁর ইন্টারভিউ করেছিলাম এবং পরবর্তীকালে অনেকবার গিয়েছিও, সেখানেই প্রথম তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছিল হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের। ছবির নাম ছিল ‘পলাতক’। ওই ঘরে বসেই উনি তনুবাবুর কণ্ঠে এই ছবিটির চিত্রনাট্য শুনেছিলেন। তনুবাবুর ঘরে হেমন্ত সুরারোপিত পলাতকই হল প্রথম ছবি। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সুপারিশে এই ছবির অধিকাংশ গানই লিখেছিলেন মুম্বইয়ের মুকুল দত্ত। প্রথম লেখা গানটি ছিল: ‘আহা কৃষ্ণ কালো আঁধার কালো, আমিও তো কালো সখি, তবে কেন আমায় ভালোবাসলে না’। গানটি নিয়ে মুকুলবাবু তনুবাবুকে সঙ্গে নিয়ে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে গেলেন মুম্বইয়ের নর্থ কোর্ট নার্সিংহোমে, যেখানে উনি তখন কোমর ব্যথার জন্য ভর্তি হয়ে ট্রাকশন নিচ্ছিলেন।

আবার তনুবাবুর কথা ধার করেই বলি: ‘লেখাটা পেয়ে চিত হয়ে শুয়ে থাকা অবস্থাতেই উনি কাগজটা শূন্যে তুলে চোখ বোলাতে থাকেন। একবার, দু-বার, সম্ভবত আরও কয়েকবার। তার পরেই ঘটে যায় সেই আশ্চর্য ঘটনা। আজও ভাবলে বিশ্বাস করতে চায় না মন— এতটাই অবাক-করা। বড়জোর এক মিনিট চোখ বুজে কী যেন ভাবেন। চোখ খোলেন। তারপর গুন গুন করে গাইতে থাকেন, কৃষ্ণ কালো আঁধার কালো… মাঝখানে কোনও থামাথামির ব্যাপার নেই। প্রথম অন্তরা, সঞ্চারী, দ্বিতীয় অন্তরা পেরিয়ে গানটা একটানে শেষ হয়ে যায়। একটানে। শুনে আমাদের কী প্রতিক্রিয়া হয়েছিল তা আর বলে কাজ নেই। এটুকু বললেই যথেষ্ট যে ,’পলাতক’ ছবিতে এই সুরটাই-অবিকল এই সুরটাই শেষ পর্যন্ত থেকে গিয়েছে’।

তারপর তো ‘পলাতক’ সুপার ডুপার হিট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই গানও ইতিহাস তৈরি করেছিল। আজও সঙ্গীতপ্রেমীদের মনে এই গান রয়ে গিয়েছে। এই ভাবে একবার শুনেই হেমন্তবাবু চটজলদি গান তৈরি করেছিলেন আরেক কালজয়ী ছবি ‘মরুতীর্থ হিংলাজ’-এর। গানটি ছিল ‘পথের ক্লান্তি ভুলে স্নেহ ভরা কোলে তব মাগো বলো কবে শীতল হবো, কতদূর আর কতদূর’। এই ঘটনারও সাক্ষী ছিলেন তরুণ মজুমদার নিজেই।

আমার ক্যামেরায় তোলা। দশ বছর আগে।

তনুবাবুর সিনেমাতে কাজ করার ইচ্ছে বহুদিন ধরেই মনের মধ্যে পুষে রেখে ছিলাম। দু-একবার তাঁকে মনের কথা জানিয়েছিলামও। বলেছিলেন, ‘আমার চরিত্র নির্বাচনের একটা ধরন আছে। আমি যখন চিত্রনাট্য লিখি, তখন অনেক মুখ আমার সামনে ভেসে ওঠে। সাধারণত তাদের মধ্যে থেকেই আমি চরিত্র বেছে নেই। আপনার কথা আমার মাথায় আছে’। আনন্দলোকের জন্য ইন্টারভিউ নেওয়ার পর থেকে তাঁর সঙ্গে আমার কমবেশি যোগাযোগ ছিল। বছরে দু- একবার তো কথা হতোই। এরমধ্যে আরও গোটা চারেক ছবি করেছেন উনি। ‘আলো’ সিনেমাটি দেখার পর তাঁকে আমি ফোন করেছিলাম। অনেকক্ষণ কথাও হয়েছিল সেবার। আরেকটা কথা অনেকেই হয়তো জানেন না সুযোগ পেলেই তনুবাবু গ্রুপ থিয়েটারের নাটক দেখতেন। আমার সঙ্গে একাধিকবার অ্যাকাডেমিতে তাঁর দেখা হয়েছে, কথাও হয়েছে।

অবশেষে আমার ভাগ্য সুপ্রসন্ন হল। সুযোগ পেলাম তাঁর সঙ্গে কাজ করার। ১৩ বছর আগের কথা। খবর পেয়েছিলাম উনি বঙ্কিমচন্দ্রের ক্লাসিক উপন্যাস দুর্গেশনন্দিনী নিয়ে কাজ করবেন। বহু চরিত্রের সমাবেশ এই উপন্যাসটিতে। মনের মধ্যে ক্ষীণ আশা ছিল, এবার ডাক পেলেও পেতে পারি। একদিন সন্ধেবেলা ছাদে বসে চা খাচ্ছি। এমন সময় মোবাইল ফোন বেজে উঠল। দেখলাম তরুণ মজুমদার স্বয়ং ফোন করেছেন। ফোন ধরতেই উনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘এখন আপনি কোথায়? চেম্বারে, না নাটকের রিহার্সালে, নাকি কোথাও শুটিংয়ে?’ আমি গদগদ হয়ে উত্তর দিলাম,’ না দাদা আপনি যেগুলো বললেন তাঁর কোনওখানেই আমি এখন নেই। আমি এখন আমার বাড়ির ছাদে বসে সস্ত্রীক সান্ধ্যকালীন চা পান করছি।’ উনি হেসে বললেন, ‘বেশ চা খেতে খেতেই কাজের কথাটা শুনে নিন। আপনার জন্য দুর্গেশনন্দিনীতে একটি চরিত্র ভেবেছি। সাত-আট দিনের কাজ। বেশি পারিশ্রমিক কিন্তু দিতে পারবো না। জানেন তো স্টুডিও পাড়ায় আমার এই ব্যাপারে খুব দুর্নাম আছে। তবুও বলুন আপনি কত আশা করেন। ‘আমি বললাম, ‘দাদা আপনার যা খুশি তাই দেবেন, কিছু না দিলেও আমি কিন্তু এই কাজটি করব। আপনার সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছে আমার বহুদিনের। সে কথা আমি আপনাকে এর আগে অনেক বারই জানিয়েছি।’

কিছুদিন বাদেই তাঁর প্রোডাকশন থেকে একজন ফোন করে আমাকে একদিন দেখা করতে বললেন টালিগঞ্জে চলচ্চিত্র শতবার্ষিকী ভবনে। ওখানেই তনুবাবুর দুর্গেশনন্দিনীর প্রি-প্রোডাকশনের কাজ চলছিল। আমি গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করলাম। তাঁর নির্দেশে আমার পোশাকের মাপ নেওয়া হল, কনট্রাক্ট সই করানো হল এবং আমার সংলাপ লেখা স্ক্রিপ্টের অংশবিশেষ দেওয়া হল। আর দেওয়া হল একটি কল কার্ড, যেখানে আমার শ্যুটিং ডেটগুলো উল্লিখিত আছে। এর আগে বহু সিনেমা-সিরিয়াল করেছি, কিন্তু কোথাও এমন কল কার্ড পাইনি। তবে শুনেছিলাম, আগে যেসব সিনেমা হতো সেখানে প্রোডাকশন হাউজ থেকে আর্টিস্টদের এটি দেওয়া হতো।

অবশেষে কাজ শুরু হল টেকনিশিয়ান স্টুডিওতে। আমার ভূমিকাটি ছিল একজন সৈনিকের। পরবর্তীকালে পৈলানের স্টুডিওতেও দীর্ঘদিন কাজ করেছি। ইটিভি বাংলার জন্য এটি নির্মিত হচ্ছিল। এই সময় তরুণ মজুমদারের বয়স আশি পার হয়ে গিয়েছে। কিন্তু তাঁর উদ্যম, পরিশ্রম করার ক্ষমতা, ফিজিক্যাল ফিটনেস এবং জোয়ারি গলা যে কোনও তরুণকে লজ্জা দেবে। মনে আছে টেকনিশিয়ান স্টুডিওর ফ্লোরে ৩০ ফুট উঁচুতে উঠে তিনি ক্যামেরা অপারেট করেছিলেন এবং হাতে বর্শা নিয়ে কীভাবে সেটি ছুঁড়ে মারতে হবে, সেটি নিজে অভিনয় করে দেখিয়েছিলেন একজন তরুণ অভিনেতাকে। অবশ্য শ্যুটিং শুরু হওয়ার আগেই তিনি প্রত্যেকটি অভিনেতাকে নিয়ে ওয়ার্কশপ করেছিলেন, যেখানে চরিত্র বুঝিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি কীভাবে কণ্ঠকে ব্যবহার করতে হবে, সেটিও নিজে অভিনয় করে দেখিয়েছিলেন। রবি ঘোষ কিংবা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মুখে শুনেছি, সত্যজিৎ রায় শুধু পরিচালক নন, অভিনেতা হিসেবেও অসাধারণ ছিলেন। তিনি যেভাবে অভিনয় করে দেখাতেন তার পঞ্চাশ শতাংশ অভিনেতারা শ্যুটিংয়ে দেখাতে পারতেন এবং তাতেই সিনেমাটি উতরে যেতে। সত্যজিৎবাবুর শ্যুটিং দেখার সৌভাগ্য আমার হয়নি। কিন্তু তরুণ মজুমদারের শ্যুটিংয়ে আমি হতবাক হয়ে দেখেছি, কীভাবে উনি কণ্ঠ এবং দেহ দিয়ে অভিনয় করে অভিনেতাদের সামনে সেই চরিত্রের একটা প্রতিলিপি তুলে ধরতেন। কোনও শব্দ উচ্চারণ করতে আমাদের অসুবিধা হলে, সঙ্গে সঙ্গে অন্য একটি প্রতিশব্দ আমাদের দিয়ে উনি বলিয়ে নিতেন।

দূর্গেশনন্দিনী-তে আমি।

আমার সাত দিনের শ্যুটিং বেড়ে ১৩-১৪ দিন হয়েছিল। খুব কাছ থেকে এই কদিন তার কাজ দেখার সুযোগ পেয়েছিলাম। শ্যুটিংয়ে অনেক ভালো-মন্দ ঘটনাই ঘটেছিল। দুটি ঘটনার কথা এখানে আলাদা হবে উল্লেখ করছি। পৈলানে শ্যুটিং চলছে। দৃশ্যটি ছিল তাপস পাল বন্দী হয়েছেন এবং তাঁকে বধ্যভূমিতে নিয়ে আসা হচ্ছে হত্যা করা হবে বলে। আমি হলাম প্রধান রক্ষী, যে বল্লম উঁচিয়ে গটগট করে হেঁটে তাপস পালকে নিয়ে আসছে। আমরা রক্ষীরা বিশেষভাবে তৈরি খুব হালকা এবং পাতলা জরির কাজ করা জুতো পরে অভিনয় করতাম। বিভিন্ন সাইজের জুতো সাজানো থাকত মেকআপ রুমে। যার যেটা পায়ে ফিট করত, সে সেটাই পরে নিত। সেদিন সবার শেষে আমি জুতো পরতে গিয়ে দেখি, ভালো জুতো নেই। ছেঁড়া এবং বড় সাইজের যা পেলাম তাই পায়ে গলিয়ে নিলাম। কিন্তু হাঁটার সময় দেখি, জুতো পা থেকে হড়কে যাচ্ছে। এদিকে সেটে ডাক পড়ে গিয়েছে। মনিটর অর্থাৎ রিহার্সাল শুরু হল। আমি যতটা সম্ভব স্মার্টলি ব্যাপারটাকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করছি। তনুবাবু ক্যামেরায় চোখ রেখে আমাদের মনিটর দেখছেন। জানি না কি করে তাঁর চোখে ব্যাপারটা এড়িয়ে গেল কিন্তু আমাদের ছবির নায়িকা এবং অন্যতম পরিচালনা সহযোগী শ্রাবণী বণিকের চোখে সেটা পড়ল। মনিটর শেষ হতেই আমাকে ডেকে নিয়ে আলাদা করে বলল, ‘আপনার কি কোনও অসুবিধা হচ্ছে হাঁটতে’? আমি পুরো ঘটনাটা তাঁকে বলতেই, শ্রাবণী বিকল্প এক জোড়া জুতোর ব্যবস্থা করলেন। আমিও কেস খাবার হাত থেকে সে যাত্রায় বেঁচে গেলাম।

আরেকটি ঘটনা বলি। আমার মা তখন গুরুতর অসুস্থ, বলা যায় শেষ অবস্থা। বেশ কয়েকদিন ধরেই চেতনাহীন। বাড়িতেই চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। আগে থেকে ডেট নেওয়া থাকায় আমাকে পরপর কয়েক দিন শ্যুটিং করতে হচ্ছিল। কিন্তু মায়ের বেডসোর ড্রেসিং করে বাড়ি থেকে বের হতে দেরি হয়ে যাচ্ছিল। সেই সুদূর পৈলানে পরপর দু-দিন আমি বেশ দেরি করেই লোকেশনে ঢুকেছিলাম। তনুবাবু ঘড়ি মেনে চলেন। দেরি দেখে প্রোডাকশন থেকে কেউ একজন একাধিক বার ফোন করেছিলেন। বললেন যে স্যার খুব রেগে গিয়েছেন আপনার উপরে। আপনি রোজই এরকম লেট করছেন। আমাদের শ্যুটিংয়ের খুব ক্ষতি হচ্ছে। ব্যক্তিগত সমস্যার কথা অকারণে কাউকে বলা আমি একেবারেই পছন্দ করি না। আনন্দটা ভাগ করে নিতে চাই সবার সঙ্গেই কিন্তু দুঃখ নয়। কিন্তু সেদিন নিরুপায় হয়েই আমার সমস্ত ঘটনা সংক্ষেপে তাঁকে বললাম। সব শুনে উনি ফোন ছেড়ে দিলেন। কয়েক মিনিট বাদেই ফোন করলেন স্বয়ং তনুবাবু। বললেন, আপনি আগে কেন আমাকে জানাননি! তাহলে আমি শ্যুটিং শিডিউল সেই ভাবেই করতাম। একদম তাড়াহুড়ো করবেন না। আপনি ধীরে ধীরে আসুন। তারপর ওখানে আরও দুদিন শ্যুটিং করেছি। ইউনিটের যথেষ্ট সহযোগিতা পেয়েছি।

এক সপ্তাহ বাদ দিয়ে আবার শ্যুটিংয়ের ডেট। এর মধ্যেই মা মারা গেলেন। প্রোডাকশন ইউনিটকে জানালাম সে কথা। যথারীতি আবার ফোন এল তনুবাবুর। সব শুনলেন। আমাকে সমবেদনা জানালেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, দু-দিন বাদে আমার যে শ্যুটিং ডেট নেওয়া আছে সেগুলোতে আমি কি কাজ করতে পারব? আমি বললাম, নিশ্চয়ই পারব। এখন তো আমার কাজের চাপ একদমই কমে গেল। মাকে নিয়েই তো সারাটা দিন কেটে যেত। এখন তো আর মা নেই। আপনি চিন্তা করবেন না। আমি নির্দিষ্ট দিনের নির্দিষ্ট সময়েই শ্যুটিং লোকেশনে পৌঁছে যাব। এই কদিন শ্যুটিং-এর বাইরেও উনি আমার খোঁজখবর নিতেন। বিশেষ করে আমার খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারটা।

ডাক দিয়ে যাই : নিজে অভিনয় করে দেখাচ্ছেন।

আজ এসব কথা খুব বেশি করে মনে পড়ছে। তনুবাবু এখন এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি আছেন, এ কথা সবাই জানেন। অবস্থা সঙ্কটজনক। ডায়ালিসিস চলছে। আমাদের সবার সকরুণ এবং আন্তরিক প্রার্থনা, উনি যেন সুস্থ হয়ে আমাদের মধ্যে ফিরে আসেন এবং ‘সিনেমাপাড়া দিয়ে’র পরবর্তী খণ্ডটি লেখেন। জানি, অনেক বয়স হয়েছে তাঁর। ৯২। তবু এই বয়সেও কিন্তু তার দেহ এবং মস্তিষ্ক সম্পূর্ণ সচল ছিল। সম্প্রতি জীবনের প্রথম উপন্যাসের কাজ শেষ করে গিয়েছেন, যেটি দে’জ পাবলিশিং থেকে প্রকাশিত হতে চলেছে।

প্রতিবছর নিয়ম করে বিজয়া দশমীর পরের দিন সকালবেলা এবং বাংলা নববর্ষের সকালবেলা, গত ১২ বছর ধরে ফোনে তাঁকে প্রণাম জানিয়ে আসছি এবং বেশ কিছুক্ষণ গল্পও করে থাকি ওই সময়। ফোনটা ছেড়ে দেওয়ার পর প্রত্যেকবারই ঘড়ি দেখি। এবার শেষ কথা বলি পয়লা বৈশাখ সকালে, মোট ২৬ মিনিট। তাঁকে বারবার অনুরোধ করি, সিনেমা নিয়ে আরও কিছু আমাদের জন্য লিখে যাবার জন্য। উনি বলেন, অনেকেই একই অনুরোধ করছে। দেখি এবার কাজে হাত দেব। আমি কি লিখছি জিজ্ঞেস করাতে তাঁকে জানাই যে আমি আমার জীবনের নানা ঘটনা এবং এলোমেলো কিছু কথা নিয়ে একটি ডিজিটাল সংবাদ মাধ্যমে (ওয়েবসাইট) ধারাবাহিক লিখছি যেটি ভবিষ্যতে দে’জ থেকে বই হয়ে প্রকাশিত হবে। আমি সবিনয়ে দাদাকে অনুরোধ করি, আমার প্রকাশিতব্য এই বইটির একটি ভূমিকা লিখে দেওয়ার জন্য। উনি বলেন, ফার্স্ট প্রুফ রেডি হলে আমাকে পাঠাবেন, আমি পড়ে নিশ্চয়ই লিখে দেব। ফোনটা ছেড়েই দে’জ-এর কর্ণধার সুধাংশু শেখর দে-কে এই আনন্দ সংবাদটি দিয়েছিলাম।

তনুদা, আমি জানি, আমার এই লেখা আপনার কাছে এখন আর পৌঁছবে না। আমি কিন্তু বড্ড আশা করে আছি, আপনি আবার সুস্থ হয়ে আমাদের মধ্যে ফিরে আসবেন। আসবেন তো? খুব স্বার্থপরের মতই বলছি, আপনার লেখালেখির ফাঁকে আমার বইটির ভূমিকাটিও লিখে দেবেন কিন্তু। কী দেবেন তো!

ছবি: লেখক ও মতিলাল মন্ডল

Skip to content