রবিবার ১০ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি প্রতীকী

সাধারণত অপুষ্টিকর খাবারদাবার এবং অপরিশুদ্ধ জল পানের জন্য অনেক সময় ডায়েরিয়া হানা দেয়। এই সমস্যায় মূলত শিশুরাই বেশি আক্রান্ত হয়। এর অন্যতম কারণ ওদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বড়দের তুলনায় কম। তবে কখনও কখনও সময় মতো চিকিৎসা শুরু না করলে বড়দের ক্ষেত্রেও মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। আগে দিনে তিন বা তার বেশি বার পাতলা পায়খানা করলে সেটাকে ডায়েরিয়া বলা হত। কিন্তু আজকাল একবারও যদি স্বাভাবিকের থেকে বেশি পরিমাণে পাতলা পায়খানা করে সেটাকে ডায়েরিয়া হিসেবে ধরা হয়।
 

শিশুদের ডায়েরিয়া হওয়ার কারণ কী?

আমাদের খাদ্যনালী বা খাদ্যতন্ত্র ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলেই সাধারণত ডায়েরিয়া হয়। তাছাড়াও ব্যাকটেরিয়া বা পরজীবী দ্বারা খাদ্যতন্ত্র আক্রান্ত হলেও ডাইরিয়া হতে পারে। আবার খাদ্যে বিষক্রিয়া বা সংক্রমিত খাবার খেলেও হতে পারে ডায়েরিয়া। কিছু অ্যান্টিবায়োটিক বা ওষুধ খেলেও এরকম হয়।
 

ডায়েরিয়া কত দিন স্থায়ী হতে পারে

সংক্রমণজনিত ডায়েরিয়া সাধারণত স্বল্পমেয়াদী তিন থেকে পাঁচ দিন স্থায়ী হতে পারে। কিন্তু ডায়েরিয়া যদি সাত থেকে দশ দিনের বেশি স্থায়ী হয়, তখন আমরা ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম, ইনফ্লামেটরি বাওয়েল ডিজিজ, সিলিয়াক ডিজিজ আথবা ক্রমাগত ডায়েরিয়া আছে বলে সন্দেহ করি। এসব ক্ষেত্রে কী ধরনের ডায়েরিয়া হয়েছে সেই অনুযায়ী পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসা করা হয়।
 

সাধারণ উপসর্গ

বারবার জলের মতো পাতলা পায়খানা হওয়া।
পেট ব্যাথা, পেট ফাঁপা ও বমি ভাব।
মুখ ও জিভ শুকিয়ে যাওয়া।
ঘন ঘন জল পিপাসা পাওয়া।
প্রস্রাব কমে যাওয়া বা তিন থেকে চার ঘণ্টা প্রস্রাব না হওয়া।
শিশু কান্না করছে কিন্তু চোখ দিয়ে জল পড়ছে না।
চোখ কোটরে ঢুকে যাওয়া।
ছোট শিশুদের মাথার তালু ডেবে যাওয়া।
খুব দুর্বলতা সঙ্গে গা হাত পা কামড়ানো।
ত্বক কুঁচকে যাওয়া—এ সমস্তই ডায়েরিয়ার লক্ষণ।
 

ভয়াবহতা অনুযায়ী জল অল্পতা তিন প্রকার

১. সবুজ জল অল্পতা বা জল অল্পতা নেই

শিশু যখন পাতলা পায়খানা করছে কিন্তু জল অল্পতার কোনও লক্ষণ নেই তখন তাকে জল অল্পতা বা ডিহাইড্রেশন নেই বলে ধরা হয়
 

২. হলুদ জল অল্পতা বা কিছু জল অল্পতা

যখন জল অল্পতার দুটি বা তার কম লক্ষণ থাকে, তখন হলুদ জল অল্পতা বা কিছু ডিহাইড্রেশন আছে বলে ধরা হয়।
 

৩. লাল জল অল্পতা বা সাংঘাতিক জল অল্পতা

যখন জল অল্পতার তিনটি বা তার বেশি লক্ষণ থাকে তখন তার মারাত্মক জল অল্পতা আছে বলে ধরা হয়।
 

ডায়েরিয়ার চিকিৎসা

জলশূন্যতার চিকিৎসা করতে হবে।
জলশূন্যতা কমে গেলেও জিঙ্ক ট্যাবলেট বা সিরাপ দু সপ্তাহ ধরে খাওয়াতে হবে।
শিশুকে স্বাভাবিক খাবার খাওয়াতে হবে।
সংক্রমণ অনুযায়ী প্রতিষেধকের ব্যবস্থা করতে হবে।

 

অবশ্যই মেনে চলুন

সবুজ ও হলুদ জল অল্পতার ক্ষেত্রে ছোট শিশুকে বুকের দুধ ও একটু বড় শিশু হলে বাড়ির স্বাভাবিক খাবার দেওয়া যেতে পারে। তার সঙ্গে ছোট শিশুকে ওআরএস এবং মাঝে মাঝে সাদা জল এবং দু’ বছরের বড় বাচ্চাদের ওআরএস এবং বাড়ির স্বাভাবিক খাবার দিতে হবে।
বাড়িতে ওআরএস প্যাকেট না থাকলে এক লিটার পানীয় জলে ছয় চামচ (৩০ গ্রাম) চিনি, এক চিমটি লবণ (৫ গ্রাম) মিশিয়ে ওআরএস-এর সমধর্মী বাড়িতে ওআরএস তৈরি করা যায়।
শিশুকে বাড়িতে প্রাপ্ত ফ্লুইড যেমন: ডাবের জল, মুড়ি ভেজানো জল, ঘোল ইত্যাদি দেওয়া যেতে পারে যেটা ওআরএস-এর মতো কাজ করে।
লাল জল অল্পতা বা সাংঘাতিক জল অল্পতা থাকলে শিশু যদি খেতে পারে বা যদি বমি না করে সেক্ষেত্রে সবুজ ও হলুদ জল অল্পতার মতো চিকিৎসা শুরু করা যেতে পারে। অন্যথায় যথাযোগ্য চিকিৎসক বা হাসপাতালের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা প্রয়োজন।
 

কখন চিকিৎসকের কাছে বা হাসপাতালে নিয়ে যাবেন?

শিশু যদি জল পান করতে না পারে।
বারবার বমি হতে থাকে।
শিশু নেতিয়ে পড়ছে বা ঘুমাচ্ছন্ন রয়েছে।
ছোট শিশুর মাথার তালু বসে গিয়েছে।
প্রস্রাব বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
পায়খানার সঙ্গে রক্ত পড়ছে।
জ্বর রয়েছে।

জল অল্পতা কমে গেলে এবং শিশু খেতে পারলে বাড়িতে তৈরি খিচুড়ি — চাল, ডাল, আলু, লবণ মশলা দিয়ে তৈরি করে দিতে হবে। ফাইবার আছে এমন কোনও সবজি খিচুড়িতে দেওয়া যাবে না। সেক্ষেত্রে ডায়রিয়া সারতে দেরি হবে। খিচুড়ি তৈরি করতে অসুবিধা হলে ডাল, ভাত, আলু সিদ্ধ চটকে খাওয়ানোই শ্রেয়। দিনে অন্তত পাঁচ থেকে ছয় বার খাওয়াতে হবে। তবেই ডায়রিয়া তাড়াতাড়ি সারবে। সেইসঙ্গে ছোট শিশুদের বুকের দুধ খাইয়ে যেতে হবে। মনে রাখবেন, শিশু ডায়রিয়া আক্রান্ত হলে বাইরের দুধ, বিস্কুট, আটার তৈরি কোনও খাবার, কেক এসব না দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। তবে তাদের যে কোনও টাটকা মাছের ঝোল ভাত খাওয়ানো যেতে পারে।

ছবি: সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে

যোগাযোগ: ৯৮৩০২৯৪৯৩২


Skip to content