রবিবার ২৪ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি প্রতীকী

আগের পর্বে যে সব চিত্র দেখানো হয়েছে সেগুলি উত্তর-দক্ষিণ কোণের উপর ভিত্তি করে হয়েছে৷ কিন্তু ব্যবহারের সময় দেখা যায় অধিকাংশ ভূখণ্ড সমান্তর হয় না৷ তা দিক নির্ণয় সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হয়৷ বাস্তুশাস্ত্রে দিক নির্ণয় করার বেশ কয়েকটি প্রাচীন পদ্ধতি থাকলেও বর্তমানে কম্পাস দিয়ে দিক নির্ণয় করা অত্যন্ত সহজ ও দ্রুততার সঙ্গে হয়৷ সুতরাং প্রাচীন পদ্ধতিগুলির ব্যবহার আর ভালোভাবে হয় না৷ যে কেউ কম্পাস দিয়ে অনায়াসে দিক নির্ণয় করতে পারেন৷
 

দিক পরীক্ষা ও নির্ধারণ

ভবন নির্মাণে দিক শোধন করা অনিবার্য৷ দিক শোধনের অভাবে দিকের যথার্থ জ্ঞান না থাকার দরুন নির্মাণ কার্যের সময় ঘর এবং দ্বার ইত্যাদিতে ত্রুটি হওয়ায় সম্পূর্ণ ভবনটির অবস্থান বদলে যাবে৷ আর বাস্তুশাস্ত্র অনুসারে যে দিকে যে দুয়ারের স্থান নির্ধারণ করা হবে সেগুলি সব বিপরীত অবস্থানের জন্য হতে পারে৷ শাস্ত্রেও দিক শোধনের প্রয়োজনের উল্লেখ পাওয়া যায়৷

প্রসাদে সদনেহলিন্দে দ্বারে কুণ্ডে বিশেষতঃ৷
দিঙমুঢ়ে কুলনাশঃ স্যাত্তস্মাৎসংশোধয়েদ্দিশঃ৷৷

দেবালয়, রাজপ্রাসাদ, গৃহ, দরজা ও দুয়ারের বাইরে বারান্দা, পুকুর ইত্যাদির যথার্থ দিক নির্ণয় করা জরুরি৷ সুতরাং, শাস্ত্র অনুসারে পূর্ব-পশ্চিম ইত্যাদি দিক নির্ধারণের পর তবেই সংশ্লিষ্ট জমিতে ভবন নির্মাণ করা দরকার৷ শঙ্কুরোপণের মাধ্যমে ছায়ার ভিত্তিতে ধ্রুবতারা অনুসারে ও নক্ষত্রবোধের ভিত্তিতে প্রাচীন গ্রন্থে দিক শোধনের উল্লেখ পাওয়া যায়৷
আধুনিককালে বাস্তুশাস্ত্রীরা কম্পাস দিয়ে চৌকম্বীয় পদ্ধতিতে দিক নির্ণয় করে প্রয়োজনে দিক সংশোধন করে নেন৷ দিক শোধনের পরও ভবন নির্মাণের দরুন ভবনে তৈরি ঘর ও দুয়ার ইত্যাদির যথার্থ দিক নির্ধারণ করা যেতে পারে৷ বর্তমানে অভিজ্ঞ বাস্তুশাস্ত্রীরা বাড়ি তৈরির পরেও দিক নির্ণয় করে ওই সব সুন্দর বাড়িঘরের কাটছাঁট ও পরিবর্তন করেছেন৷ এ এক বিরাট সমস্যা৷ এমনটি হওয়া উচিত নয়৷ এই সমস্যার সমাধান বাড়ি তৈরির আগেই হওয়া উচিত৷ দিক সংশোধন করে ঠিকভাবে বাস্তুশাস্ত্রের সিদ্ধান্তগুলি মেনে তবেই বাড়িঘরের নির্মাণ শুরু করা উচিত৷ প্রবেশদ্বার ও বাতায়ন ইত্যাদি ছাড়াও প্রতিটি ঘর ঠিক দিকে তৈরি করতে হবে৷ আর তা করলে বাস্তুসংক্রান্ত কোনও রকমের সমস্যা দেখা দেবে না৷ এতে বাড়ির কর্তাসহ সকলে সুখ ও সৌভাগ্য লাভ করবেন৷ এমনকী বাড়ির ভৃত্যসহ পশুপাখিও থাকবে সুখে৷
বর্তমানে বসতবাড়ি বা ফ্ল্যাটবাড়িতে আগের মতো শৌচালয় আলাদা স্থানে থাকে না৷ এখানকার মানুষ সংলগ্ন শৌচালয় পছন্দ করে৷ তা এখন বসতবাড়ি বা ফ্ল্যাটবাড়িতে শৌচালয় শয়নকক্ষের সংলগ্নে তৈরি করা হয়৷ শৌচালয় ঋণাত্মক শক্তি সৃষ্টি করে৷ সংলগ্ন শৌচালয় বাস্তুবিধি অনুসারী নয়৷ তাই বাড়ি বা ফ্ল্যাটের নকশা তৈরির সময় শৌচালয়ের দিকজ্ঞান অবশ্যই অনুসরণ করা উচিত৷ খেয়াল রাখতে হবে উত্তর-পূর্ব বা দক্ষিণ-পশ্চিমে যেন শৌচালয় তৈরি করা না হয়৷
চারটি মধ্যবিত্ত দিকের প্রত্যেকটিকে দুটি সমানভাগে ভাগ করা যেতে পারে৷ নীচের চিত্রে সেটা দেখানো হয়েছে৷
আমরা যদি পূর্ব দিকটিকে ৯টি সমান ভাগে বিভক্ত করি, তাহলে পূর্বের দুটি ভাগ উত্তর ও উত্তর-পূর্ব হয়ে যাবে৷ পশ্চিমের দুটি অংশ উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম হয়ে যাবে৷ কেন্দ্রবর্তী ৫টি অংশ উত্তর দিক বলে গণ্য হবে এবং চক্রনাভির একটি সমান ভাগ এই ৫টি অংশে মিশে যাবে৷
যদি পশ্চিমকে ৯টি সমান ভাগে ভাগ করা হয় তা হলে পূর্ব হয়ে যাবে দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব কেন্দ্রে অবস্থিত ৫টি চক্রনাভিযুক্ত তা মিশে যাবে এবং দক্ষিণ দিক বলে গণ্য হবে৷
এরকমভাবেই প্রতিটি দিকের ৯টি অংশ৷ মুখ্য অংশের ৪টি অংশ, মধ্যবর্তী দিকে ৪টি অংশ এবং বাকি একটি অংশ চক্রনাভির সঙ্গে যুক্ত৷
অঙ্কের মাধ্যমে এটা প্রমাণ করা যেতে পারে৷ এ ক্ষেত্রেও পূর্বের চিত্রের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে৷ নীচে বিষয়টিকে সেরকমভাবেই দেখানো হল৷ যদি আমরা একটি মুখ্যদিকের ৯টি স্প্যানকে অপর একটি মুখ্যদিকের ৯টি স্প্যানের সঙ্গে গুণ করি তা হলে আমরা পাব ৮১টি বর্গ অথবা সমান স্প্যানের আয়তাকার৷
* বাস্তুবিজ্ঞান (Vastu Shastra): সুরেন্দ্র কাপুর (Surendra Kapoor), বিশিষ্ট বাস্তুবিদ।

Skip to content