সোমবার ২৫ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি প্রতীকী

অনেকেরই মাঝে মধ্যে পেটে ব্যথা হয়। এটি একটি পরিচিত উপসর্গও। তবে পেটে ব্যথার প্রকারভেদ এবং উপসর্গের পরিধি এতটাই বেশি যে আমরা চিকিৎসকরাও অনেক সময় রোগ নির্ণয় করতে ভুল করি। কেউ কেউ পেট ব্যথাকে তেমন গুরুত্ব দেন না, সমস্যার সমাধানে অ্যান্টাসিড খেয়ে নেন। বিষয়টিকে এতটাই হালকা ভাবে নেওয়া উচিত নয়। তাই আজকের প্রতিবেদনে পেটে ব্যথা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। জেনে নেব পেট ব্যথার সাধারণত কী কী কারণে হয়। এর প্রতিকারই বা কী? কখন চিকিৎসকের কাছে যাতে হবে। পেটে ব্যথাকে আমরা তিন ভাগে ভাগ করতে পারি— পেটের ওপরের অংশ, মাঝখান এবং নীচের অংশ।
 

পেটের উপরের অংশ

পেটের ওপরের অংশে ব্যথা হলে রোগ নির্ণয়ে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। পেটের মাঝখানে সাধারণত গ্যাস-অ্যাডিটির কারণে ব্যথা হয়। আবার পাকস্থলি বা ক্ষুদ্রান্তে ঘা বা প্রদাহ হলেও জ্বালা বা ব্যথা হয়, যাকে আমরা গ্যাস্ট্রিক আলসার বলি। এই ধরনের ব্যথা সাধারণত যখন তখন চলতেই থাকে। আর একটি বিষয় হল— পাকস্থলিতে ব্যথা বা জ্বালা হয় সাধারণত খাবার খাওয়ার পর। আর ক্ষুদ্রান্তের ক্ষেত্রে অনেকক্ষণ খাবার না খেলে এরকম উপসর্গ দেখা যায়। এক্ষেত্রে অ্যান্টাসিড জাতীয় ওষুধ খেলে কিছুটা উপকার পেতে পারেন।
 

ডানদিকে ব্যথা

গলব্লাডারের সমস্যায় পেটের ওপরের অংশে অর্থাৎ ডানদিকে ব্যথা হতে পারে। সেই সঙ্গে বমিভাবও থাকবে। খিদে কমে যাবে। ব্যথা কাঁধ বা পিঠের দিকেও হয়। এরকম উপসর্গ দেখা দিলে শীঘ্রই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। গলব্লাডার বা পৃত্তথলিতে পাথর হলে অস্ত্রোপচার করতে হবে। এর অন্য কোনও চিকিৎসা নেই।

 

ব্যথা যখন বাঁদিকে

পেটের ওপরের অংশে বাঁদিকেও অনেক সময় পাকস্থলির প্রবাহ থেকে ব্যথা হতে পারে। কিন্তু একটা বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে, পেটের উপরে বাঁদিকে ব্যথা অনেক সময় হার্টঅ্যাটাকের উপসর্গ হিসাবে ধরা হয়। কেমন করে বুঝবেন হার্টঅ্যাটাকের সমস্যা হচ্ছে কিনা? আমাদের হার্টের নীচের দিকটা থাকে ডায়াফ্রামের ঠিক ওপরের অংশে। সুতরাং হার্টের নীচের দিকটা যদি অ্যাটাক হয় যাকে চিকিৎসার পরিভাষায় ‘ইনফিরিয়র ওয়াল’ বলা হয়, সেক্ষেত্রে ব্যথাটা বুকে না হয়ে পেটের মাঝখান বা ওপরের বাঁদিকে হতে পারে। এই ব্যথাটা দীর্ঘক্ষণ হতে থাকবে। বুক ধরফর করতে পারে। শ্বাসকষ্ট হবে। ঘাম হতে পারে। সেই সঙ্গে ব্যথা বাঁদিকের হাতেও শুরু হলে, সময় নষ্ট না করে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। ইসিজি করতে হবে।
তাই যাঁদের বয়স চল্লিশ বছরের বেশি, পরিবারের হার্টের সমস্যার ইতিহাস আছে, ব্লাড প্রেসার, ডায়াবেটিস থাকলে সতর্ক হতে হবে।
 

পেটের মাঝখানের ব্যথা

সাধারণত পেটে জীবাণু সংক্রমণ বা কৃমি হলে পেটের মাঝখানে ব্যথা হয়। তবে ব্যথা যদি নাভির চারিদিকে হয় তাহলে তা অ্যাপেন্ডিসাইটিসের প্রাথমিক লক্ষণ। সেক্ষেত্রে ব্যথা আস্তে আস্তে তলপেটের ডানদিকে ছড়িয়ে যায়। নাভির দু’ দিকে ব্যথা হলে ধরে নিতে হবে পেটে জীবাণু সংক্রমণের জন্য হচ্ছে। কিন্তু যদি দীর্ঘক্ষণ ব্যথা হয় তাহলে কিডনিতে পাথর হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখতে হবে।
 

তলপেটে ব্যথা

তলপেটে ব্যথার রোগ নির্ণয় করা খুব শক্ত হয়। তলপেটের ডানদিকে ব্যথা হলে প্রথমেই দেখতে হবে অ্যাপেন্ডিসাইটিস হয়েছে কিনা। মূত্রনালীতে পাথর হলেও ব্যথা হয়। মেয়েদের ওভারিতে সিস্ট হলেও এরকম ব্যাথা হতে পারে। আবার ওভারিতে সিস্ট ফেটে যাচ্ছে কিনা তাও পরীক্ষা করে দেখতে হবে।
এছাড়াও মেয়েদের অনেক সময় ‘একটপিক প্রেগনেন্সি’ হয়। এক্ষেত্রে স্বাভাবিক নিয়মে ইউটেরাসে না হয়ে ফ্যালোপিয়ান টিউবে হয়। সেটা অনেক সময় ফেটে যেতে পারে। সেজন্যও তলপেটের ডান বা বাঁ দিকে তীব্র ব্যথা হতে পারে। এক্ষেত্রে রোগী ফ্যাকাসে হয়ে যেতে পারেন, সঙ্গে কোনও ভাবেই ব্যথা কমবে না।

ছবি: সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে

যোগাযোগ: ৯৮৩১৬৭১৫২৫


Skip to content