শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪


উত্তমকুমার তখন বেশ নাম করে ফেলেছেন ছবির জগতে। সেই সময় তাঁকে ডাকলেন প্রখ্যাত নট ও পরিচালক নরেশ মিত্র। তিনি উত্তমকুমারকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘বউ ঠাকুরানীর হাট পড়েছ? রবীন্দ্রনাথের। আবারও পড়ো। আর উদয়াদিত্য চরিত্রটাকে ভালো করে বোঝার চেষ্টা করো। রোলটা করতে প্রচুর পরিশ্রম করতে হবে। পারবে তো? কথাটা শুনে খানিকটা শঙ্কিত হয়ে পড়েন উত্তমকুমার। মনে মনে দুর্বল হয়ে পড়লেন। মনের মধ্যে নানা সংশয়, যদি সত্যটা জানিয়ে দেন যে তিনি ঘোড়ায় চড়তে জানেন না, তবে কাজটা হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। অন্য কেউ পেয়ে যাবেন উদয়াদিত্য চরিত্রটি। ভাবনার অথই জলে পড়লেন উত্তমকুমার৷ নরেশ মিত্রকে কী জবাব দেবেন তিনি। তাঁর মুখেচোখে ফুটে উঠল এক অসহায়তার ছাপ। সেটি সুদক্ষ পরিচালক নরেশ মিত্রের দৃষ্টি এড়ায়নি। তিনি বললেন, ‘তাতে ঘাবড়াবার কী আছে? ঘোড়ায় চড়া তোমাকে একেবারে আয়ত্তে আনতে হবে না। মোটামুটি যদি একটু আধটু ওঠানামা করতে পারো তাহলে চলবে।’ তবু এই কথায় যেন স্বস্তি পেলেন না উত্তমকুমার। নরেশ মিত্র আরও আশ্বস্ত করে বললেন, ‘তুমি ঘোড়ায় ওঠা আর নামাটা আয়ত্তে আনতে পারলে বাকিটুকু আমি ডামি নিয়ে চালিয়ে দেব।’

চরিত্রের নিখুঁত রূপায়ণের জন্য সবার অজান্তে তিনি ঘোড়ায় চড়তে শুরু করলেন। সবার অজান্তে তিনি ঘোড়ায় চড়া শিখতে শুরু করলেন। শ্যুটিংয়ের দিন সবাই অবাক। উদয়াদিত্য চরিত্রে শিল্পী উত্তমকুমার ঘোড়ায় উঠছেন, নামছেন, ঘুরছেন, অবলীলাক্রমে। সবচেয়ে আনন্দিত হয়েছিলেন নরেশ মিত্র। উত্তমকুমার প্রসঙ্গে নরেশ মিত্র বলেছিলেন, ‘উত্তম যে একটি অসাধারণ অভিনেতা হবে আমি বউ ঠাকুরানীর হাট ছবি তৈরি করার সময় ভালোভাবে বুঝতে পেরেছিলাম। একজন বাধ্য ছাত্রের মতো আমার কাছে শিক্ষা গ্রহণ করেছিল। যেখানে বুঝতে পারেনি বারবার আমাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জিজ্ঞাসা করেছে। ওর ধৈর্য দেখে আমি বিস্মিত হয়েছি। খুশি হয়েছি অভিনয়ের প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধা দেখে।’

এই ছবিটিতে উত্তমকুমার ছাড়া আর যাঁরা অভিনয় করেছেন তাঁদের মধ্যে রয়েছেন নরেশ মিত্র, পাহাড়ী সান্যাল, মঞ্জু দে, নীতীশ মুখোপাধ্যায়, শম্ভু মিত্র, পদ্মাদেবী, সত্য বন্দ্যোপাধ্যায়, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, পঞ্চানন ভট্টাচার্য প্রমুখ শিল্পী। ১৯৫৩ সালে এই ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল উত্তরা পূরবী উজ্জ্বলা প্রেক্ষাগৃহে এবং ছবিটি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল সেই সময়।

Skip to content