শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি প্রতীকী, সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে।

পদার্থবিদ্যা প্রাচীনতম শাখাগুলির একটি। পদার্থবিদ্যা বলতে বর্তমানে যে বিষয়কে বোঝানো হয় তার জন্ম ষোড়শ শতাব্দীর বৈজ্ঞানিক বিপ্লবোত্তর-কালে, যখন এই বিষয় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণকারী একটি বিজ্ঞানে পরিণত হয়। পদার্থ বিজ্ঞান বা পদার্থবিদ্যা একটি আকর্ষণীয় বিষয়, যে বিষয়ে আমাদের চারপাশের বস্তুজগৎ কীভাবে আচরণ করে তা বোঝার চেষ্টা করা হয়। এর জন্যে বিজ্ঞানীরা যে তত্ত্ব প্রস্তাব করেন সেগুলি বাস্তবে পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষায় প্রাপ্ত ফলাফলের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হয়। আমাদের দেশের প্রায় সবকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনের বহু কলেজেই পদার্থবিদ্যা বিষয়ে স্নাতকস্তরে পড়া যায়। স্নাতকস্তরে পদার্থবিদ্যা পড়ার পর পরবর্তীকালে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণায় নানান সহযোগী বিষয়ে পড়াশুনো যেমন এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় তেমনি নানা সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রেও চাকরির সুযোগ রয়েছে।

উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা

পদার্থবিদ্যয় স্নাতক হওয়ার পরে উচ্চশিক্ষার জন্যে ছাত্রছাত্রীরা সাধারণত ফিজিক্সে মাস্টার্স ডিগ্রিতে ভর্তি হয়। যেহেতু পদার্থবিদ্যা বিজ্ঞানের একটি বেসিক সাবজেক্ট, তাই সব বিশ্ববিদ্যালয়েই মাস্টার্স করানো হয়। বর্তমানে পদার্থবিদ্যা ছাড়াও অন্যান্য বিষয়ে ও মাস্টার্স করার সুযোগ রয়েছে, যেমন, বায়োফিজিক্স, জিওলজি, অ্যারনেটিক্স, অ্যাপ্লায়েড ফিজিক্স, কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন, ডেটা সায়েন্স, লাইব্রেরি সায়েন্স ইত্যাদি। বিভিন্ন আইআইটি, ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব সায়েন্স (আইআইএসসি) ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে এই বিষয়গুলিতে পড়ার সুযোগ রয়েছে। সুযোগ রয়েছে আইআইটিগুলিতে এম টেক করারও। মাস্টার্স-এ ভর্তির জন্যে জাতীয় স্তরে বিভিন্ন পরীক্ষা হয়, যেমন, জয়েন্ট এন্ট্রান্স স্ক্রিনিং টেস্ট (জেসট), গ্র্যাজুয়েট অ্যাপটিটিউড টেস্ট (গেট), আইআইটি জয়েন্ট এন্ট্রান্স টেস্ট (আইআইটিজ্যাম), ন্যাশনাল গ্র্যাজুয়েট ফিজিক্স এগজামিনেশন (এনজিপিই) ইত্যাদি, সেগুলিতে ভালো র‍্যাঙ্ক সহ উত্তীর্ণ হওয়া প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয় বা ইন্সটিটিউটগুলি অনেক ক্ষেত্রে নিজেদের অ্যাডমিশন টেস্টও নিয়ে থাকে। কিছু কিছু রিসার্চ ইন্সটিটিউট-এ (যেমন, সত্যেন্দ্রনাথ বোস ন্যাশনাল সেন্টার ফর বেসিক সায়েন্সেস, ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট ফর সায়েন্টিফিক এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (আইজার) ইত্যাদি) Integrated PhD (IPhD) করানো হয় যেখানে মাস্টার্স-এর কোর্স চলাকালীনই গবেষণার কাজ শুরু করার সুযোগ রয়েছে। মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জনের পরে CSIR-UGC ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি টেস্ট, জয়েন্ট এন্ট্রান্স স্ক্রিনিং টেস্ট (জেসট), গ্র্যাজুয়েট অ্যাপটিটিউড টেস্ট (গেট) বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব রিসার্চ এলিজিবিলিটি টেস্ট-এ উত্তীর্ণ হলে বিভিন্ন জাতীয় স্তরের গবেষণাগারে ও দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে গবেষণার সুযোগ রয়েছে। আবার অনেকে গবেষণা ডক্টরাল রিসার্চের জন্য স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশেও যেতে পারে।

সার্টিফিকেট ও ডিপ্লোমা কোর্স

কেউ মাস্টার্স ডিগ্রি-তে ভর্তি হতে না চাইলে স্নাতক হবার পর ডিপ্লোমা বা সার্টিফিকেট কোর্স করার সুযোগও রয়েছে। বিভিন্ন বিষয়ে এই কোর্স করা যেতে পারে, যেমন, ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট, রেডিওলজি, মেডিক্যাল ল্যাব টেকনলজি ইত্যাদি। বিভিন্ন টেকনিক্যাল বা ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়েও ডিপ্লোমা বা সার্টিফিকেট কোর্স করা যেতে পারে।
চাকরির সুযোগ

স্কুল শিক্ষকতা

যেহেতু স্কুলে পদার্থবিদ্যা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক উভয় স্তরেই পড়ানো হয় তাই স্নাতক পাশ করে বি.এড করলে স্কুলে চাকরির সুযোগ রয়েছে। মাস্টার্স করার পরেও স্কুলে চাকরির সুযোগ রয়েছে।

‘সাইন্টিস্ট’ পোস্ট

বিভিন্ন গবেষণাগারে ও সরকারের বিভিন্ন শাখায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাশের পরে ‘সায়েন্টিস্ট’ পোস্ট-এ রিক্রুট করা হয়।

প্রোজেক্ট ও রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট

বিভিন্ন গবেষণাগারে গবেষণার কাজে সহায়তার জন্য রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট ও প্রোজেক্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে লোক নেওয়া হয়। এর জন্যে সাধারণত স্নাতকোত্তর হওয়া জরুরি। তবে ক্ষেত্র বিশেষে প্রয়োজন অনুসারে স্নাতকদেরও নেওয়া হয়।

কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা

পদার্থবিদ্যায় স্নাতকোত্তর পাশ করে নেট, সেট প্রভৃতি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা দিয়ে রাজ্য তথা দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার সুযোগ রয়েছে।

ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট

স্নাতক পাশ করার পর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় গবেষণাগারগুলির ল্যাবরেটরিতে ল্যাবরেটরি অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে চাকরির সুযোগ রয়েছে। টেকনিশিয়ানের ডিপ্লোমা বা সার্টিফিকেট কোর্স করে বিভিন্ন প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরিতেও কাজ করা যেতে পারে। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল ও প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরিতে এই ধরনের দক্ষতা সম্পন্ন ব্যক্তির চাহিদাও অনেক বেড়েছে (যেমন রেডিওলজি অ্যাসিস্ট্যান্ট)।

অন্যান্য চাকরি

শিক্ষকতা ও গবেষণায় অনেকের আগ্রহ নাও থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা, যেমন, ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশন, স্টেট পাবলিক সার্ভিস কমিশন, স্টাফ সিলেকশন, ইন্ডিয়ান অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস, ওয়েস্ট বেঙ্গল সিভিল সার্ভিস, ইন্ডিয়ান ফরেস্ট সার্ভিস, ওয়েস্ট বেঙ্গল ফরেস্ট সার্ভিস-এর মতো সরকারি চাকরির পরীক্ষায় বসা যেতে পারে। পদার্থবিদ্যার ছাত্রছাত্রীরা এসব ক্ষেত্রে যথেষ্ট সাফল্য অর্জন করেছে। এসব ছাড়াও ব্যাংক, পোস্ট অফিস, রেল ইত্যাদি সরকারি ও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার চাকরির সুযোগ তো রয়েছেই।


Skip to content