রবিবার ২৪ নভেম্বর, ২০২৪


‘কবে আমি বাহির হলেম তোমারি গান গেয়ে, সে তো আজকে নয়, সে আজকে নয়!…’ আজ রবীন্দ্রজয়ন্তী। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬২তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে চারদিকে সাজো সাজো রব। আপামর বাঙালির বড় প্রাণের উৎসবে আজ। এবছর আরও আনন্দের কারণ দু’বছর পর সকলে আবার আনন্দ উৎসবে শামিল হতে পেরেছে। দ্বারকানাথ ঠাকুর লেন যেখানে রবীন্দ্র সরণীতে মিশেছে, সে পথটার সকালবেলার ছবি আজ অন্যরকম। ‘অশনি’ সংকেত উপেক্ষা করেই ভোরবেলা থেকে দলে দলে রবীন্দ্রানুরাগী মানুষের ঢল নেমেছে এ পথে। বেল জুঁইয়ের গন্ধে ম ম করছে এ পথ। সাদা শাড়ি, পাঞ্জাবির সাজ চলতে চলতে থমকে দাঁড়াচ্ছে পথের ধারে বসা ফুলের অস্থায়ী দোকানগুলোতে। ভোরবেলাতেই পসরা সাজিয়ে তৈরি কচুরি অমৃতি শিঙাড়া বিক্রেতা। অন্যদিনে কটা লোকই বা থাকে এ পথে। আজ তো উৎসব এ পাড়ায়। অভ্যর্থনা করতে তৈরি সকলে।

দু’বছর পর এবছর কবিপ্রণামের আয়োজন করা হয়েছে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের জোড়াসাঁকো ক্যাম্পাসে। সকাল সাড়ে ছটা থেকে শুরু হয়েছে ‘কবিপ্রণাম’ অনুষ্ঠান। এ অনুষ্ঠানে এলে যেমন নামী শিল্পীদের অনেকের গান শোনার সুযোগ মেলে, তেমনি বহু নতুন প্রতিভার সঙ্গেও পরিচিত হওয়ার সৌভাগ্য হয়। ‘হে নূতন দেখা দিক আর বার …’ গেয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা করে রবীন্দ্রসংগীত বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা। এরপর একের পর এক প্রাণের গানের সুর, পাঠের উদাত্তস্বর আবিষ্ট করে শ্রোতাদের। আজ ছুটির দিন। রাস্তায় গাড়িঘোড়াও বেশ কম। তা সত্ত্বেও শুধু এ আনন্দানুষ্ঠানে শামিল হতে বহু দূর থেকে ছুটে আসেন আবালবৃদ্ধবনিতা৷ এই একটি দিন রবীন্দ্রভারতী মিউজিয়ামও খুলে দেওয়া হয় সর্বসাধারণের জন্য। টিকিট ছাড়াই আগ্রহী দর্শক ‘মহর্ষি ভবন’ এবং ‘বিচিত্রা’র ১৮টি গ্যালারি জুড়ে অবস্থিত মিউজিয়ামের প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য ধারার নামীদামি শিল্পীদের আঁকা ছবি এবং রবিঠাকুরের আঁতুড়ঘর থেকে শুরু করে মহাপ্রয়াণের ঘর ইত্যাদি বহু দুর্লভ বিষয়ের সাক্ষী হতে পারেন।
মঞ্চে শিল্পী গাইছেন, ‘তুমি নব নব রূপে এসো প্রাণে…’। পাশে বসে গুনগুনিয়ে গাইছিলেন যে সুবেশা প্রৌঢ়া, খেয়াল হল তিনি কিছুক্ষণ আগেই মঞ্চ আলো করে অপূর্ব কণ্ঠস্বরে মুগ্ধ করে রেখেছিলেন শ্রোতাদের। এখানে গায়ক শ্রোতা সকলে একাসনে। তাঁকে স্মরণ করার দিন আজ। এ আনন্দধারায় শামিল হতে পারাটাই আনন্দের, সৌভাগ্যের। বছর পরে ঘুরেফিরে আনন্দের এ মিলনমেলায় ভিড়ের মাঝেও দেখা হয়ে যায় চেনা মানুষের সঙ্গে৷ কুশল বিনিময় হয়। জোড়াসাঁকোর লালরঙের বাড়িটি বাঙালির আবেগ। বাঙালির ‘পুরাতন প্রেম’ নতুন সাজে সেজে অপেক্ষা করবে প্রাণের ঠাকুরকে উপলক্ষ করে তাঁরই কথায় সুরে তাঁকে স্মরণ করার মানসে কোনও এক মিলনমেলায়। রোদ ঝলমলে আকাশের মেজাজ ততক্ষণে বদলে গিয়েছে। বাইরে তখন ‘উতল ধারা বাদল ঝরে…’। ‘আকাশ হতে আকাশ পথে ঝরছে জগৎ ঝরনাধারার মত…’। সে ঝরনাধারায় সিক্ত মনে এগিয়ে চলি ফেরার পথে৷

ছবি ও ভিডিও: লেখক

Skip to content