শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪


ছবি প্রতীকী, সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে।

আয়ুর্বেদের দৃষ্টিকোণে সুগারকে প্রমেহ নামক রোগের সঙ্গে তুলনা করা হয়ে থাকে। এই প্রমেহ নিয়ে বিভিন্ন আয়ুর্বেদ সংহিতায় সুবিস্তারিতভাবে বর্ণনা আছে যেখানে দোষ, দুষ্য ভেদে বিংশতি প্রকার প্রমেহর কথা বলা হয়েছে, সঙ্গে সঙ্গেই প্রত্যেক প্রমেহের লক্ষণ, চিকিৎসাপ্রণালী আলোচিত হয়েছে। বর্তমানে জীবনশৈলীগত রোগগুলির মধ্যে সুগার এক অতি পরিচিত ব্যাধি।

আচার্য সুশ্রুতের মতে সুগার বা প্রমেহ রোগের মুখ্য কারণ

দিবানিদ্রা, দীর্ঘক্ষণ আলস্যপ্রবণ হয়ে থাকা, অতিরিক্ত পরিমাণে নিয়মিত শীতল, স্নিগ্ধ, মধুর ও মেদবর্ধক আহার সেবন, নতুন অন্ন, অতিরিক্ত মিষ্টদ্রব্য সেবনের ফলেও প্রমেহ রোগ দেখা দেয়।

সুগার নিরাময়ে আয়ুর্বেদ চিকিৎসা কতটা কার্যকরী?

দেখুন আয়ুর্বেদ চিকিৎসার প্রধান শর্তই হল ‘নিদান পরিবর্জন’ অর্থাৎ যে কারণসমূহের জন্য রোগ উৎপত্তি হয়েছে তা পুরোপুরি বর্জন করা।
‘দোষপ্রশমন’ অর্থাৎ উক্ত রোগের ক্ষেত্রে দেহে যে বিশেষ দোষের সাম্যতা বিঘ্নিত হয়েছে তা সাম্যাবস্থায় ফিরিয়ে আনা।
‘পথ্য সেবন’ মানে কোন রোগে কী কী খাওয়া যাবে এবং কী কী বর্জনীয় ইত্যাদি।
এক্ষেত্রে একক ঔষধি থেকে শুরু করে রসৌষধি পর্যন্ত প্রমেহ রোগ চিকিৎসায় আয়ুর্বেদ চিকিৎসার অবদান যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। ফলত পুনরায় রোগাক্রান্ত হওয়ার বা সুদীর্ঘকাল ঔষধ সেবনের প্রয়োজন পড়ে না।

সুগার রোগে আক্রান্ত হওয়ার পূর্বে কী কী লক্ষণ দেখা দেয়?

আয়ুর্বেদে ‘পূর্বরূপ’ বলে একটি কথা আছে যার অর্থ হল: রোগ হওয়ার পূর্বে কী কী লক্ষণ দেখা দেয়।
প্রমেহ রোগের পূর্বরূপ হল: অতিরিক্ত ঘাম হওয়া ও শরীরে দুর্গন্ধ, হাতের ও পায়ের তালুতে জ্বালাভাব, বারবার তেষ্টা পাওয়া, দ্রুততার সঙ্গে চুল ও নখের বৃদ্ধি, বারবার মূত্র বেগ আসা, অতিরিক্ত আলস্য ও নিদ্রাভাব, মুখে মিষ্টত্ব স্বাদ অনুভব ইত্যাদি। শরীরে এই লক্ষণগুলোর প্রাদুর্ভাব দেখা দিলেই সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।

সুগার নিয়ন্ত্রণে জীবনশৈলীর ভূমিকা ঠিক কতখানি?

প্রমেহ থেকে নিরাপদ থাকতে জীবনশৈলীর ভূমিকা ঔষধের থেকেও বেশি।
যেহেতু প্রমেহ ত্রিদোষজ ও প্রধানত মেদ ধাতু দূষিত জনিত ব্যাধি তাই নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম, দিনচর্যা, ঋতুচর্যা পালন করা উচিত সঙ্গে সঙ্গে উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত লোভনীয় খাদ্যদ্রব্য অতিরিক্ত ভক্ষণ থেকে যতটা দূরে থাকা যায় ততই মঙ্গল।

সুগার রোগের প্রাথমিক চিকিৎসায় আয়ুর্বেদে মুষ্টিযোগের কী ব্যবস্থা আছে?

রোগের প্রাথমিক অবস্থায় একক ঔষধির ভূমিকা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। যেমন
বিজয়সারের কাঠ ভেজানো জল খালিপেটে নিয়মিত সেব্য।
মেষশৃঙ্গি চূর্ণ ১ চামচ করে দিনে দুইবার খাওয়ার আগে সেবনীয়।
গুড়ুচি: গুলঞ্চের (গিলোয়) স্বরস চার চামচ পরিমাণ রোজ খালিপেটে সেবন করলে প্রমেহে উপকার দর্শে।
জামবীজ চূর্ণ ও মেথি ভেজানো জলের উপকারিতা মোটামুটি সকলেরই জানা।

এছাড়াও সুশ্রুত সংহিতায় সর্বপ্রকার প্রমেহর ক্ষেত্রে পাঁচটি ফলপ্রসূ মুষ্টিযোগের বর্ণনা পাওয়া যায়, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:
মধু ও হলুদ আমলকীর রসের সঙ্গে নিয়মিত সেবন করলে আশাতীত ফল পাওয়া যায়।
ত্রিফলা, দেবদারু, ইন্দ্রায়ন ও নাগকেশরের ক্বাথ প্রমেহ রোগীর ক্ষেত্রে অমৃত সমান।

সুগার রোগীর খাওয়াদাওয়া কেমন হওয়া উচিত?

আচার্য বাগভট মতে প্রমেহ রোগাক্রান্ত রোগীর পথ্য-অপথ্য অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে দোষ, দুষ্য ও বলের উপর নির্ভর করে তৈরি করা উচিত।
তবে সাধারণত সর্বপ্রকার প্রমেহ রোগীর ক্ষেত্রে পুরোনো চালের অন্ন, মুগডাল, পটল, ডুমুর, সজনে, মোচা, তিক্তরস প্রধান শাক, মধু, শুকনো খাদ্যদ্রব্য, যবের আটার তৈরি মালপোয়া, ডালিয়া, ডাবের জল ইত্যাদি পথ্য।
আমিষের ক্ষেত্রে কুক্কুট মাংস, ছাগ মাংস ও ছোট মাছের ঝোল সেব্য। সুক্ত, সুরা, দুগ্ধজাত দ্রব্য, দই, পিষ্ট অন্ন, ইক্ষুদ্রব্য (গুড়, চিনি ইত্যাদি), ঘি ইত্যাদি প্রমেহ রোগীর একেবারেই বর্জনীয়।

লেখক: আয়ুর্বেদ মেডিকেল অফিসার (উত্তর চণ্ডীপুর সদর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, মানিকচক, মালদা)


Skip to content