![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2022/04/Golpokathay-thakurbari-A.jpg)
মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ
মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথকে আমরা যে রকম জানি, প্রথম জীবনে তিনি তেমন ছিলেন না। ছিলেন পিতার অনুসারী। দিন কাটত বিলাস-ব্যসনে, আনন্দ- আমোদে। তিনি যে প্রিন্স দ্বারকানাথের পুত্র— এই বোধ ও ভাবনা মাথার মধ্যে সারাক্ষণই ঘুরপাক খেত! অন্তত তাঁর কর্মকাণ্ড, চালচলন, মতিগতি দেখে তেমনই মনে হয় আমাদের। সে-সময় পিতার ব্যাংক- ব্যবসার অনেকখানিই দেখাশোনা করতেন দেবেন্দ্রনাথ। পিতামহীর মৃত্যুর পর জীবন সম্পর্কে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি নাটকীয়ভাবে বদলে যায়। মন দিয়েছিলেন ধর্মাচরণে। চেনা পথে নয়, ভিন্নতর পথে শুরু হয় তাঁর জীবন-পরিক্রমা।
তখনও সোমেন্দ্রনাথ-রবীন্দ্রনাথের জন্ম হয়নি। জন্ম হয়নি বর্ণকুমারীরও। দেবেন্দ্রনাথ জমিদারি দেখাশোনা করতে গিয়েছিলেন শিলাইদহে। শিলাইদহ দেখাবেন, পদ্মা দেখাবেন, এমনই প্রতিশ্রুতি দিয়ে সন্তানদের সঙ্গে নিয়েছিলেন। জমিদারি নিয়ে ব্যস্ততার শেষ ছিল না। সে-ব্যস্ততার মাঝেই একটু ফুসরত খুঁজে ছেলেদের নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন! কেজো-ব্যস্ততা দূরে সরিয়ে একটু আনন্দ উপভোগের চেষ্টা!
ছলাৎ ছলাৎ ঢেউ। নদীবক্ষে রোদের আলপনা। নদীর পাড়ে, কাছে দূরে সবুজের সমারোহ। গাছে গাছে কত না পাখি! কেউ মিষ্টি সুরে কেউ-বা কর্কশ গলায় ডেকে চলেছে। প্রকৃতি তার উজাড় করা রূপ মেলে ধরেছে। চোখ জুড়নো, মন ভরানো সে-রূপ। দেবেন্দ্রনাথ মগ্ন হয়ে দেখছিলেন চারপাশের দৃশ্যাবলি। ভালো-লাগায় মন ভরে উঠছিল। ছেলেরা কৌতূহলী চোখে অবাক বিস্ময়ে দেখছিল। জোড়াসাঁকোর বন্দিজীবনে এসব তো এতকাল দেখাই হয়নি! তাদের চোখেমুখে যে খুশির রং লেগেছে, তা পিতা দেবেন্দ্রনাথও লক্ষ করলেন। সন্তানরা যেমন তাদের পিতাকে কাছে পায় না, তেমনই পিতাও তাঁর ব্যস্ত-জীবনে আদরের সন্তানদের দু’দণ্ড কাছে পান না। শিলাইদহ, পদ্মানদী কী অদ্ভুত কৌশলে সবাইকে মিলিয়ে দিয়েছে! প্রাপ্তির আনন্দ, মিলনের আনন্দ।
সে-আনন্দ আকস্মিক কোথায় মিলিয়ে গেল! হঠাৎই দেবেন্দ্রনাথের মনে হল, দূরে কোথাও নির্জনে গিয়ে নিভৃতে ঈশ্বর-সাধনায় মন দেবেন। যেমন ভাবা, তেমন কাজ। ছেলেদের বাড়ি পাঠানোর তখনই ব্যবস্থা করলেন। কোথায় শিলাইদহ, আর কোথায় কলকাতা! ছেলেরা ভ্যাবাচ্যাকা, কিছু বোঝার আগেই পিতার কঠোর নির্দেশ! পিতার মুখের উপর কিছু বলার উপায় নেই, অগত্যা তাঁর ঠিক করা লোকের সঙ্গে কলকাতা-অভিমুখে ফিরে যাওয়া। শিলাইদহে প্রকৃতির মাঝে কাটানো ক’টা দিনের স্মৃতি মনের মণিকোঠায় রয়ে যায়।
ছেলেদের তো ফিরিয়ে দিলেন, কোথায় যাবেন দেবেন্দ্রনাথ, জানা গেল সিমলাপাহাড়ে! পাহাড়ের অপরূপ নৈসর্গিক শোভা বুঝি হাতছানি দিয়ে তাঁকে ডাকছে। সে-ডাক উপেক্ষা করার ক্ষমতা তাঁর নেই।
তখনও সোমেন্দ্রনাথ-রবীন্দ্রনাথের জন্ম হয়নি। জন্ম হয়নি বর্ণকুমারীরও। দেবেন্দ্রনাথ জমিদারি দেখাশোনা করতে গিয়েছিলেন শিলাইদহে। শিলাইদহ দেখাবেন, পদ্মা দেখাবেন, এমনই প্রতিশ্রুতি দিয়ে সন্তানদের সঙ্গে নিয়েছিলেন। জমিদারি নিয়ে ব্যস্ততার শেষ ছিল না। সে-ব্যস্ততার মাঝেই একটু ফুসরত খুঁজে ছেলেদের নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন! কেজো-ব্যস্ততা দূরে সরিয়ে একটু আনন্দ উপভোগের চেষ্টা!
ছলাৎ ছলাৎ ঢেউ। নদীবক্ষে রোদের আলপনা। নদীর পাড়ে, কাছে দূরে সবুজের সমারোহ। গাছে গাছে কত না পাখি! কেউ মিষ্টি সুরে কেউ-বা কর্কশ গলায় ডেকে চলেছে। প্রকৃতি তার উজাড় করা রূপ মেলে ধরেছে। চোখ জুড়নো, মন ভরানো সে-রূপ। দেবেন্দ্রনাথ মগ্ন হয়ে দেখছিলেন চারপাশের দৃশ্যাবলি। ভালো-লাগায় মন ভরে উঠছিল। ছেলেরা কৌতূহলী চোখে অবাক বিস্ময়ে দেখছিল। জোড়াসাঁকোর বন্দিজীবনে এসব তো এতকাল দেখাই হয়নি! তাদের চোখেমুখে যে খুশির রং লেগেছে, তা পিতা দেবেন্দ্রনাথও লক্ষ করলেন। সন্তানরা যেমন তাদের পিতাকে কাছে পায় না, তেমনই পিতাও তাঁর ব্যস্ত-জীবনে আদরের সন্তানদের দু’দণ্ড কাছে পান না। শিলাইদহ, পদ্মানদী কী অদ্ভুত কৌশলে সবাইকে মিলিয়ে দিয়েছে! প্রাপ্তির আনন্দ, মিলনের আনন্দ।
সে-আনন্দ আকস্মিক কোথায় মিলিয়ে গেল! হঠাৎই দেবেন্দ্রনাথের মনে হল, দূরে কোথাও নির্জনে গিয়ে নিভৃতে ঈশ্বর-সাধনায় মন দেবেন। যেমন ভাবা, তেমন কাজ। ছেলেদের বাড়ি পাঠানোর তখনই ব্যবস্থা করলেন। কোথায় শিলাইদহ, আর কোথায় কলকাতা! ছেলেরা ভ্যাবাচ্যাকা, কিছু বোঝার আগেই পিতার কঠোর নির্দেশ! পিতার মুখের উপর কিছু বলার উপায় নেই, অগত্যা তাঁর ঠিক করা লোকের সঙ্গে কলকাতা-অভিমুখে ফিরে যাওয়া। শিলাইদহে প্রকৃতির মাঝে কাটানো ক’টা দিনের স্মৃতি মনের মণিকোঠায় রয়ে যায়।
ছেলেদের তো ফিরিয়ে দিলেন, কোথায় যাবেন দেবেন্দ্রনাথ, জানা গেল সিমলাপাহাড়ে! পাহাড়ের অপরূপ নৈসর্গিক শোভা বুঝি হাতছানি দিয়ে তাঁকে ডাকছে। সে-ডাক উপেক্ষা করার ক্ষমতা তাঁর নেই।
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2022/04/Golpokathay-thakurbari-D.jpg)
মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ : অবনীন্দ্রনাথের তুলিতে
সন্তানরা ফিরে এল বাড়িতে, পিতা যাত্রা করলেন সিমলার দিকে। দেবেন্দ্রনাথ সিমলায় যাওয়ার কিছুদিন পরই সিপাহী বিদ্রোহ আরম্ভ হল। কেমন আছেন তিনি, পাহাড়ে নিরাপদে আছেন তো— বাড়ির সবারই মনে নানা প্রশ্ন, চিন্তা-দুশ্চিন্তার শেষ নেই। পত্নী সারদাসুন্দরীও উদ্বিগ্ন। চোখেমুখে সে-ছাপ স্পষ্ট।
দেবেন্দ্রনাথ মাঝেমধ্যে চিঠি লিখতেন। চিঠিপত্র আসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্নতা দিনে দিনে বাড়তে থাকে। ক্রমেই তীব্র হয়। কন্যা সৌদামিনী দেবীর লেখা থেকে জানা যায়, এক ভয়ংকর গুজব ছড়িয়েছিল। তাঁর লেখায় আছে, ‘একটা গুজব উঠল সিপাহীরা তাঁহাকে হত্যা করিয়াছে।’
গুজব দ্রুত ডালপালা ছড়ায়। মুখে মুখে এ-খবর ছড়াতে থাকে। যে শোনে তার মুখই বিমর্ষ হয়ে যায়। প্রিয়জনের নীরবে চোখের জল মোছেন। সারদাসুন্দরী আহারনিদ্রা ত্যাগ করে শুধুই অশ্রু-বিসর্জন করেন। চোখে জলের ধারা, কেঁদেই চলেন তিনি।
সবাই তখন শোকধ্বস্ত। ধরেই নিয়েছেন দেবেন্দ্রনাথ আর নেই। ঠিক সে-সময়ই আসে তাঁর চিঠি। মুহূর্তের জোড়াসাঁকোর পরিবেশ বদলে গেল। সেই বেদনাবিধুর পরিবেশে হঠাৎই যেন খুশির রোশনাই জ্বলে ওঠে।
সৌদামিনী দেবীর লেখা থেকে জানা যায়, এরকমই সিমলাপাহাড় থেকে সেবার হঠাৎ করে বাড়ি ফিরেছিলেন দেবেন্দ্রনাথ। বাড়িতে জগদ্ধাত্রী পুজো হয়েছিল। সেদিন ছিল বিসর্জন। দেবেন্দ্রনাথ ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষিত, তাই বাড়িতে ঢুকলেন না। ব্রাহ্মসমাজের কার্যালয়ে গিয়ে ঠায় বসে রইলেন। তাড়াহুড়ো করে কোনওরকমে দেবীপ্রতিমার বিসর্জনের ব্যবস্থা হল। দূর-পাহাড় থেকে আসা মানুষটি পথশ্রমে বিধ্বস্ত। তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে যেন বিশ্রাম নিতে পারে, চলে সে প্রস্তুতি। অচিরেই জোড়াসাঁকোতে জগদ্ধাত্রীপুজো ও দুর্গাপুজো বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
পিতামহী অলকাসুন্দরীর মৃত্যু দেবেন্দ্রনাথকে বদলে দিয়েছিল। অলকাসুন্দরী তখন অসুস্থ, বৈদ্য এসে বললেন, রোগীকে আর বাড়িতে রাখা যাবে না। এরপর সবাই মিলে তাকে গঙ্গাতীরে নিয়ে যাওয়া হল। গঙ্গাতীরে এক চালাঘরে রাখা হয়েছিল অলকাসুন্দরীকে। সেখানে তিন দিন জীবিত ছিলেন। দেবেন্দ্রনাথ মুমূর্ষু অলকাসুন্দরীর পাশে বসে থাকতেন।
দেবেন্দ্রনাথ তাঁর আত্মজীবনীতে লিখেছেন, ‘দিদিমার মৃত্যুর পূর্বদিন রাত্রিতে আমি ওই চালার নিকটবর্তী নিমতলা ঘাটে একখানা চাঁচের উপর বসিয়া আছি।… এই অবসরে আমার মনে এক আশ্চর্য উদাস ভাব উপস্থিত হইল। আমি যেন আর পূর্বের মানুষ নই। ঐশ্বর্যের উপর একেবারে বিরাগ জন্মিল।’
দেবেন্দ্রনাথ মাঝেমধ্যে চিঠি লিখতেন। চিঠিপত্র আসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্নতা দিনে দিনে বাড়তে থাকে। ক্রমেই তীব্র হয়। কন্যা সৌদামিনী দেবীর লেখা থেকে জানা যায়, এক ভয়ংকর গুজব ছড়িয়েছিল। তাঁর লেখায় আছে, ‘একটা গুজব উঠল সিপাহীরা তাঁহাকে হত্যা করিয়াছে।’
গুজব দ্রুত ডালপালা ছড়ায়। মুখে মুখে এ-খবর ছড়াতে থাকে। যে শোনে তার মুখই বিমর্ষ হয়ে যায়। প্রিয়জনের নীরবে চোখের জল মোছেন। সারদাসুন্দরী আহারনিদ্রা ত্যাগ করে শুধুই অশ্রু-বিসর্জন করেন। চোখে জলের ধারা, কেঁদেই চলেন তিনি।
সবাই তখন শোকধ্বস্ত। ধরেই নিয়েছেন দেবেন্দ্রনাথ আর নেই। ঠিক সে-সময়ই আসে তাঁর চিঠি। মুহূর্তের জোড়াসাঁকোর পরিবেশ বদলে গেল। সেই বেদনাবিধুর পরিবেশে হঠাৎই যেন খুশির রোশনাই জ্বলে ওঠে।
সৌদামিনী দেবীর লেখা থেকে জানা যায়, এরকমই সিমলাপাহাড় থেকে সেবার হঠাৎ করে বাড়ি ফিরেছিলেন দেবেন্দ্রনাথ। বাড়িতে জগদ্ধাত্রী পুজো হয়েছিল। সেদিন ছিল বিসর্জন। দেবেন্দ্রনাথ ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষিত, তাই বাড়িতে ঢুকলেন না। ব্রাহ্মসমাজের কার্যালয়ে গিয়ে ঠায় বসে রইলেন। তাড়াহুড়ো করে কোনওরকমে দেবীপ্রতিমার বিসর্জনের ব্যবস্থা হল। দূর-পাহাড় থেকে আসা মানুষটি পথশ্রমে বিধ্বস্ত। তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে যেন বিশ্রাম নিতে পারে, চলে সে প্রস্তুতি। অচিরেই জোড়াসাঁকোতে জগদ্ধাত্রীপুজো ও দুর্গাপুজো বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
পিতামহী অলকাসুন্দরীর মৃত্যু দেবেন্দ্রনাথকে বদলে দিয়েছিল। অলকাসুন্দরী তখন অসুস্থ, বৈদ্য এসে বললেন, রোগীকে আর বাড়িতে রাখা যাবে না। এরপর সবাই মিলে তাকে গঙ্গাতীরে নিয়ে যাওয়া হল। গঙ্গাতীরে এক চালাঘরে রাখা হয়েছিল অলকাসুন্দরীকে। সেখানে তিন দিন জীবিত ছিলেন। দেবেন্দ্রনাথ মুমূর্ষু অলকাসুন্দরীর পাশে বসে থাকতেন।
দেবেন্দ্রনাথ তাঁর আত্মজীবনীতে লিখেছেন, ‘দিদিমার মৃত্যুর পূর্বদিন রাত্রিতে আমি ওই চালার নিকটবর্তী নিমতলা ঘাটে একখানা চাঁচের উপর বসিয়া আছি।… এই অবসরে আমার মনে এক আশ্চর্য উদাস ভাব উপস্থিত হইল। আমি যেন আর পূর্বের মানুষ নই। ঐশ্বর্যের উপর একেবারে বিরাগ জন্মিল।’
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2022/04/Golpokathay-thakurbari-B.jpg)
সৌদামিনী দেবী
দিদিমার মৃত্যু দেবেন্দ্রনাথকে জ্ঞানচর্চামুখী করে তুলল। আবেগসর্বস্বতা নয়, যুক্তির আলোকধারা। ধর্মসংক্রান্ত প্রচলিত ধ্যান-ধারণার বাইরে তাঁর তখন অবস্থান। ব্রাহ্মধর্মের ঔদার্য, যুক্তিনিষ্ঠ বিচার-বিশ্লেষণ মুগ্ধ করল তাঁকে। ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণের মধ্য দিয়ে নতুন করে আবিষ্কার করলেন নিজেকে। মান্যতা পেলেন পরিবারজীবনে, সমাজজীবনে। শুধু ‘দেবেন্দ্রনাথ’ নন, সকলের কাছে হয়ে উঠলেন ‘মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ’।
প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথকে বরাবরই মুগ্ধ করত। ফুল ভালোবাসতেন তিনি। পার্ক স্ট্রিটের বাড়িতে তখন থাকতেন, কন্যা সৌদামিনী প্রতিদিন ফুল সংগ্রহ করে একটি তোড়া বেঁধে পিতৃদেবের হাতে তুলে দিতেন। সেই তোড়া হাতে নিয়ে তাঁর মন ভরে উঠত। মাঝে মাঝে ফুল-তোড়ার গন্ধ নিতেন, আর হাফেজের কবিতা আবৃত্তি করতেন। একদিন ফুল-গন্ধে মোহিত হয়ে কন্যাকে বললেন, ‘এখুনি কাগজ-পেন্সিল নিয়ে এসো।’
পিতার আদেশ। কালবিলম্ব নয়, দৌড়ে কাগজ-পেন্সিল নিয়ে এলেন সৌদামিনী। তৎক্ষণাৎ তিনি হাফেজের কবিতার তর্জমা করলেন। সে-কবিতা পরে ছাপা হয়েছিল ‘তত্ত্ববোধিনী’ পত্রিকায়।
সৌদামিনীর লেখায় আছে, ‘ফুল তিনি বড় ভালবাসিতেন।’ ফুল ভালোবাসার মধ্য দিয়ে মানুষটিকেও বোধহয় চেনা যায়! পার্ক স্ট্রিটের বাড়িতে সৌদামিনী দেবী ও তাঁর ভাইবোনরা সকলে মিলে পিতৃদেবের জন্মদিন পালন করতেন। সে ছিল বড় আনন্দের দিন। ঘরের মাঝখানে চৌকিতে বসতেন মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ। তাঁকে ঘিরে অন্যান্যরা। দ্বিজেন্দ্রনাথ কিছু লিখে আনতেন, সে-লেখা দেখে দেখে পাঠ করতেন। রবীন্দ্রনাথ গান গাইতেন।
সন্তান-সন্ততি, বধূ-জামাতা ও নাতি-নাতনিরা সবাই মিলে পালন করতেন মহর্ষিদেবের জন্মদিন। পিতৃদেব ফুল ভালোবাসতেন বলে তাঁকে ফুলের তোড়া ও ফুলের সাজি উপহার দাওয়া হত। ফুল হাতে তুলে দিয়েই ক্ষান্ত হতেন না, ফুল দিয়ে মহর্ষিদেবের ঘরটিও সাজিয়ে দেওয়া হত।
চারিদিকে ফুল, শুধু ফুল, সে ফুলের মাঝখানে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ! ছবিটি চোখে দেখার সৌভাগ্য হওয়ার কথা নয়, তবু যেন আমাদেরও চোখের সামনে ভাসতে থাকে।
ছবি সৌজন্যে: লেখক
* গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি (tagore-stories – Rabindranath Tagore) : পার্থজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (Parthajit Gangopadhyay) অবনীন্দ্রনাথের শিশুসাহিত্যে ডক্টরেট। বাংলা ছড়ার বিবর্তন নিয়ে গবেষণা, ডি-লিট অর্জন। শিশুসাহিত্য নিয়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে গবেষণা করে চলেছেন। বাংলা সাহিত্যের বহু হারানো সম্পদ পুনরুদ্ধার করেছেন। ছোটদের জন্য পঞ্চাশটিরও বেশি বই লিখেছেন। সম্পাদিত বই একশোরও বেশি।
প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথকে বরাবরই মুগ্ধ করত। ফুল ভালোবাসতেন তিনি। পার্ক স্ট্রিটের বাড়িতে তখন থাকতেন, কন্যা সৌদামিনী প্রতিদিন ফুল সংগ্রহ করে একটি তোড়া বেঁধে পিতৃদেবের হাতে তুলে দিতেন। সেই তোড়া হাতে নিয়ে তাঁর মন ভরে উঠত। মাঝে মাঝে ফুল-তোড়ার গন্ধ নিতেন, আর হাফেজের কবিতা আবৃত্তি করতেন। একদিন ফুল-গন্ধে মোহিত হয়ে কন্যাকে বললেন, ‘এখুনি কাগজ-পেন্সিল নিয়ে এসো।’
পিতার আদেশ। কালবিলম্ব নয়, দৌড়ে কাগজ-পেন্সিল নিয়ে এলেন সৌদামিনী। তৎক্ষণাৎ তিনি হাফেজের কবিতার তর্জমা করলেন। সে-কবিতা পরে ছাপা হয়েছিল ‘তত্ত্ববোধিনী’ পত্রিকায়।
সৌদামিনীর লেখায় আছে, ‘ফুল তিনি বড় ভালবাসিতেন।’ ফুল ভালোবাসার মধ্য দিয়ে মানুষটিকেও বোধহয় চেনা যায়! পার্ক স্ট্রিটের বাড়িতে সৌদামিনী দেবী ও তাঁর ভাইবোনরা সকলে মিলে পিতৃদেবের জন্মদিন পালন করতেন। সে ছিল বড় আনন্দের দিন। ঘরের মাঝখানে চৌকিতে বসতেন মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ। তাঁকে ঘিরে অন্যান্যরা। দ্বিজেন্দ্রনাথ কিছু লিখে আনতেন, সে-লেখা দেখে দেখে পাঠ করতেন। রবীন্দ্রনাথ গান গাইতেন।
সন্তান-সন্ততি, বধূ-জামাতা ও নাতি-নাতনিরা সবাই মিলে পালন করতেন মহর্ষিদেবের জন্মদিন। পিতৃদেব ফুল ভালোবাসতেন বলে তাঁকে ফুলের তোড়া ও ফুলের সাজি উপহার দাওয়া হত। ফুল হাতে তুলে দিয়েই ক্ষান্ত হতেন না, ফুল দিয়ে মহর্ষিদেবের ঘরটিও সাজিয়ে দেওয়া হত।
চারিদিকে ফুল, শুধু ফুল, সে ফুলের মাঝখানে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ! ছবিটি চোখে দেখার সৌভাগ্য হওয়ার কথা নয়, তবু যেন আমাদেরও চোখের সামনে ভাসতে থাকে।
ছবি সৌজন্যে: লেখক
* গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি (tagore-stories – Rabindranath Tagore) : পার্থজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (Parthajit Gangopadhyay) অবনীন্দ্রনাথের শিশুসাহিত্যে ডক্টরেট। বাংলা ছড়ার বিবর্তন নিয়ে গবেষণা, ডি-লিট অর্জন। শিশুসাহিত্য নিয়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে গবেষণা করে চলেছেন। বাংলা সাহিত্যের বহু হারানো সম্পদ পুনরুদ্ধার করেছেন। ছোটদের জন্য পঞ্চাশটিরও বেশি বই লিখেছেন। সম্পাদিত বই একশোরও বেশি।