যশস্বী পরিচালক অঞ্জন চৌধুরির ছবি হীরক জয়ন্তী৷ অঞ্জন চৌধুরি নিজের লেখা কাহিনি নিয়েই ছবি করেন৷ তাঁর চিত্রনাট্য ও সংলাপ তিনিই রচনা করেন৷ পরিচালক হয়ে অবতীর্ণ হওয়ার পর তাঁর জীবদ্দশায় তিনি অত্যন্ত সফল চিত্রপরিচালক৷ এমনকী তাঁর লেখা গল্প নিয়ে বহু পরিচালক সফল ছবি করে গিয়েছেন। সেই তালিকায় আছে ‘অনুরাগের ছোঁয়া’, ‘অভিমান’, ‘বৌমা’, ‘অমর সঙ্গী’, ‘মঙ্গলদীপ’, ‘অভাগিনী’, ‘মেজবউ’, ‘বন্দিনী’, ‘শঠে শাঠ্যং’, ‘নবাব’ প্রভৃতি ছবি। অঞ্জন চৌধুরি পরিচালিত পরপর তিনটি ছবি বাম্পার হিট—’শত্রু’, ‘গুরুদক্ষিণা’ এবং ‘ছোটবউ’৷ এবারে তিনি নিজের বড়মেয়ে চুমকি চৌধুরিকে নায়িকা করে ছবি করা শুরু করলেন। হীরক জয়ন্তী ছবিতে হীরক হলেন জয় বন্দ্যোপাধ্যায়, জয়ন্তী হলেন চুমকি চৌধুরি৷ গ্রামের ডাক্তারদাদা রঞ্জিত মল্লিক৷ রাশভারী দাম্ভিক বাবার চরিত্রে সত্য বন্দ্যোপাধ্যায়৷ নিউ থিয়েটার্স এক নম্বর স্টুডিওতে টানা শ্যুটিং চলছে৷ একদিন একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্যের শ্যুটিং। ফাস্ট হাফেই লাগবে সত্য বন্দ্যোপাধ্যায়কে৷ কল টাইম ছিল সকাল নটায়৷ নটা বেজে গেল, দশটা বেজে গেল, এগারোটা বেজে গেল, বারোটা বেজে গেল সত্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেখা নেই৷ ওই সময়ে মোবাইলের এত রমরমা ব্যাপার তো ছিল না। তাই তাঁকে কোথাও ধরা যাচ্ছিল না৷ অথচ তাঁকে ছাড়া এই দিনে শ্যুটিংয়ের কোনও মানেই দাঁড়ায় না৷ অঞ্জন চৌধুরি অনেক কষ্ট করে এই এত উপরে উঠেছেন বলে সময়ের গুরুত্বটা বুঝতেন৷ সময়ের গুরুত্বটা বুঝতেন যাঁদের নিয়ে তিনি কাজ করতেন তাঁরা সবাই সময়টাকে মেনে চলতেন৷ সেখানে সত্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই সময়জ্ঞান তাঁর কাছে অত্যন্ত বিরক্তিকর বলে ঠেকেছিল৷ লাঞ্চ ব্রেকের সময় সত্য বন্দ্যোপাধ্যায় এলেন। গাড়ি থেকে নেমে সোজা ফ্লোরে ঢুকে অঞ্জন চৌধুরিকে ‘সরি সরি’ বলে ভেবেছিলেন এ যাত্রায় বেরিয়ে যাবেন৷ কিন্তু অঞ্জন চৌধুরি সত্য বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরাসরি প্রশ্ন করলেন, ‘সত্যদা তুমি কোথায়? এই ছবিটা করতে চাও না, তাই না? তুমি যদি চাও এ ছবির কাজ তুমি ছেড়ে দিতে পারো৷’ সত্য বন্দ্যোপাধ্যায় হাসলেন৷ কারণ, তাঁকে নিয়ে এই ছবির বেশ কয়েকটা দিন শ্যুটিং হয়ে গিয়েছে৷ তাঁকে বাদ দিয়ে কী করে অঞ্জন চৌধুরি কাজ করবেন? রসিকতা করেই সত্য বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘আমি ছেড়েই দেব এই কাজ।’ ভাবলেন এবার বুঝি অঞ্জন চৌধুরি তাঁকে অনুরোধ করবেন থেকে যাওয়ার জন্য৷ কিন্তু ঘটনাটা ঘটল বিপরীত৷ অঞ্জন চৌধুরি স্ক্রিপ্টের একটা সাদা পাতা বার করে বললেন, ‘তুমি এই কাগজে নিজে সই করে দাও যে তুমি এই কাজটা ছেড়ে দিচ্ছ।’ সত্য বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের সম্মান রাখতে সেই কাগজে লিখে দিলেন যে তিনি এই ছবির কাজ থেকে সরে দাঁড়ালেন৷ সত্য বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে শ্যুট করা সব অংশ ফেলেই দিলেন৷ সেখানে জয়ন্তীর বাবার চরিত্রে তিনি নিয়ে এলেন দিলীপ রায়কে৷ দিলীপ রায়ের সময়জ্ঞান দারুণ৷ ফলে দেখা গেল অঞ্জন চৌধুরির ছবিতে দিলীপ রায় নিয়মিত শিল্পী হয়ে গেছেন৷ সেই তালিকায় আছে ‘মায়া-মমতা’, ‘ইন্দ্রজিৎ’, ‘আব্বাজান’ প্রভৃতি ছবি। হীরক জয়ন্তী যথারীতি ব্যবসার দিক থেকে এক সফল ছবি৷ আর কিশোরকুমারের গাওয়া ‘বহু দূর থেকে একথা দিতে এলাম উপহার’ গানটি জনপ্রিয়তায় সময়কে হার মানিয়েছে।