শনিবার ৫ অক্টোবর, ২০২৪


ডাঃ তমাল চক্রবর্তী, বিশিষ্ট ত্বক ও যৌনরোগ বিশেষজ্ঞ

সারাবছরই বিভিন্ন কারণে শরীরের নানা স্থানে র‍্যাশ বের হতে পারে। অ্যালার্জির কারণেও অনেকসময় ত্বকে র‍্যাশ বের হয়। তবে, গরমে শরীরে একটু বেশিই র‍্যাশ বের হতে দেখা যায়। একসঙ্গে অনেকগুলো ছোট লালচে দানা ত্বকে বেরোলেই বুঝতে হবে সেগুলি ঘামাচি বা র‍্যাশ। সাধারণত, নাকের উপর, গালের দু’পাশে, কপালের মধ্যে লাল ভাব, চুলকানি, ছোট ছোট ফুসকুড়ির মতো র‍্যাশ দেখা যায়। অতিরিক্ত গরমে পিঠে ও গলাতেও দেখা যায় এই ধরনের র‍্যাশ। আবার প্রচণ্ড গরমে ফাঙ্গাল ইনফেকশনের প্রবণতাও বেড়ে যায়। কিন্তু ত্বকে র‍্যাশ কেন বের হয়? আর ফাঙ্গাল ইনফেকশন কী? এর থেকে বাঁচার উপায়ই বা কী? বিস্তারিত আলোচনা করেছেন নারায়ণা মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতাল, বারাসত-এর বিশিষ্ট ত্বক ও যৌনরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ তমাল চক্রবর্তী
ত্বকে র‍্যাশ কেন বের হয়?
বর্তমানে আমাদের এখানকার আবহাওয়া গরম কিন্তু শুষ্ক। এই আবহাওয়ায় আমাদের ঘর্মগ্রন্থির মুখ ইনফেকশন হয়ে আটকে যায়। তখন ত্বকের নীচে ঘাম জমে গিয়ে প্রদাহ হয়। আর এই প্রদাহ হলে ত্বকের নীচে কেলাসের মতো ছোট ছোট ফুসকুড়ি দেখা যায়। যাকে বলে মিলিয়ারিয়া ক্রিস্টালিনা বা ঘামাচি। কোনও কারণে এর মধ্যে ইনফেকশন হলে ত্বক ফুলে লাল হয়ে যায়। একে মিলিয়ারিয়া রুব্রা বলে। আবার অনেকসময় কেলাসের মধ্যে পুঁজ জমে গিয়ে, ইনফেকশন হয়, ব্যথা হয়। এই ধরনের র‍্যাশ মিলিয়ারি পাস্তুলোসা নামে পরিচিত। ঘর্মগ্রন্থিতে ঘাম জমে গিয়ে মূলত এই ধরনের র‍্যাশ বের হয়।

ফাঙ্গাল ইনফেকশন কী এবং কেন হয়?
সারা শরীরে যেখানে ঘাম বেশি হয়, যেমন কুঁচকিতে এই ধরনের ইনফেকশন বেশি হয়। এর অনেক প্রকারভেদ আছে। ফাঙ্গাল ইনফেকশন মূলত গোল ধরনের হয়। প্রত্যেকটা ইনফেকশনেরই মার্জিন থাকে। এক্ষেত্রেও তেমন মার্জিন থাকে। ফাঙ্গাল ইনফেকশনের সেই মার্জিনগুলো লাল হয় এবং এর মধ্যে ছোট ছোট ফুসকুড়ি হয়। এগুলো প্রচণ্ড চুলকায় এবং ধীরে ধীরে আশপাশে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। অর্থাৎ, ইনফেকশনের আকৃতিটা বেড়ে যায়। ফাঙ্গাল ইনফেকশনও ঘর্মগ্রন্থিতে ঘাম জমে যাওয়ার কারণে হয়ে থাকে।

গরমে ডিহাইড্রেশনের কারণে ত্বক শুকিয়ে যায়
যখন বাতাসে আর্দ্র ভাবটা বেশি থাকে, তখন ঘাম হয়। সেইসময় অতিরিক্ত ঘাম হলে শরীর থেকে জল বেরিয়ে যায়। ত্বক তখন শুকনো হয়ে যায়। এর জন্য আমাদের শরীরের সঠিক যত্ন নেওয়া দরকার।

ছবি প্রতীকী, সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে।

র‍্যাশ, ফাঙ্গাল ইনফেকশন ও শুষ্ক ত্বকের জন্য কী করণীয়
খুব প্রয়োজন না হলে অতিরিক্ত গরমে বাড়ির বাইরে বেরোনো উচিত নয়। যদি বাড়ির বাইরে বেরোতেই হয়, তাহলে ত্বক ঢেকে বেরোন। যে স্থানে রোদ বেশি লাগে, সান ট্যান পড়ে যায় সেই স্থানগুলি ঢেকে রাখুন। গরমে বাইরে গেলে ফুলহাতা জামা পরাই শ্রেয়। এই গরমে হালকা সুতির পোশাক পরতে হবে। অর্থাৎ বেশি ঘাম যেন না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
গ্রীষ্মকালে বাইকে বা স্কুটারে ভ্রমণ করতে গেলে সবসময় মাথা ঢেকে রাখতে হবে। বিশেষ করে দিনেরবেলায় কোথাও গেলে মাথা ঢেকে রাখুন।
নিয়মিত স্নান করতে হবে। যদি ঠান্ডা লাগার ধাত না থাকে তাহলে গরম থেকে বাঁচতে দিনে দু’বার ঠান্ডা জলে স্নান করতে হবে। আর এইসময় ভালো মানের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল সাবান ব্যবহার করতে হবে।
হঠাৎ করে এসি থেকে বেরিয়ে গরমে চলে গেলেও র‍্যাশ হয়। তাই এসি থেকে হঠাৎ গরমে না বেরিয়ে আগে এসি অফ করতে হবে। ঘর হালকা গরম হয়ে গেলে বাইরে বেরোন।
গরমে রসালো ফল যেমন, তরমুজ, জামরুল—এই ধরনের ফল খেতে পারেন। এতে জলের চাহিদা অনেকটা পূরণ হয়। কারণ, এই ফলগুলির মধ্যে জলের পরিমাণ বেশি থাকে।
রাস্তার কাটা ফল খাওয়া একেবারেই উচিত নয়। বিশেষ করে এই গরমে কাটা ফল নৈব নৈব চ।

যোগাযোগ: ৯৮৩১১৯৫৭০১

Skip to content