৬৮ নম্বর বিডন স্ট্রিটে প্রতিষ্ঠিত স্টার থিয়েটার-এর দ্বার উদঘাটিত হয়েছিল মহাকবি গিরিশচন্দ্র ঘোষের পরিচালনায় তাঁর রচিত পৌরাণিক নাটক ‘দক্ষযজ্ঞে’র অভিনয়ের মাধ্যমে। ১৮৮৩ সালের একুশে জুলাই শনিবার দক্ষযজ্ঞ নাটকে প্রথম অভিনয় রজনীতে বিভিন্ন ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন গিরিশচন্দ্র ঘোষ (দক্ষ), অমৃতলাল মিত্র (মহাদেব), অমৃতলাল বসু (দধীচি), নীলমাধব চক্রবর্তী (ব্রহ্মা) উপেন্দ্রনাথ মিত্র (বিষ্ণু), বিনোদিনী (সতী), গঙ্গামণি (ভৃগুপত্নী) প্রমুখ। স্টার থিয়েটারে অভিনয়ের আগে দক্ষিণ কলকাতার কালীঘাটের নাটমন্দিরে কালী মূর্তির সামনে প্রথমে দক্ষযজ্ঞ নাটকের অভিনয় অনুষ্ঠিত হয়। এদিন সমস্ত শিল্পী চরিত্রানুগ-পোশাক-পরিচ্ছদ পরিধান ও অঙ্গসজ্জা করে অভিনয় করেন। স্বয়ং গিরিশচন্দ্র ছিলেন এই অভিনয়ের উদ্যোক্তা। তাঁরই ঐকান্তিক আগ্রহ এবং আন্তরিক চেষ্টায় এই অভিনয় হয়েছিল।
বিডন স্ট্রিটের স্টার থিয়েটার প্রথম নাটক দক্ষযজ্ঞ থেকে প্রহ্লাদচরিত্র বিবাহ বিভ্রাট পর্যন্ত ১ বছর ৪ মাস-এর ওপর এখানে যতগুলি নাটক অভিনীত হয়েছে, সেগুলির সুরকার ও সংগীত শিক্ষক ছিলেন বেণীমাধব অধিকারী (বেনি ওস্তাদ নামে সমধিক পরিচিত)। প্রতিষ্ঠিত মঞ্চশিল্পী জহরলাল ধর ছিলেন এই নাটকের মঞ্চসজ্জাকর। রঙ্গমঞ্চে নাটকীয়ভাবে একের পর এক দশমহাবিদ্যার (কালী, তারা, ষোড়শী, ভুবনেশ্বরী, ভৈরবী, ছিন্নমস্তা, ধূমাবতী, বগলা, মাতঙ্গী, কমলা) বিস্ময়কর আবির্ভাব ও তিরোভাব এই নাটকটিকে অত্যন্ত জনপ্রিয় করে তুলেছিল। কাচের ওপর আলো ফেলে জহরলাল সবিশেষ দক্ষতার সঙ্গে সতীর দশমহাবিদ্যার দশটি রূপকে দর্শকমণ্ডলীর সামনে তুলে ধরেছিলেন। সেকালের বাংলা মঞ্চ শিল্পের ইতিহাসে এটি একটি অবিস্মরণীয় যুগান্তকারী ঘটনা এবং এই অতুলনীয় কৃতিত্বের জন্য তিনি সকলের কাছেই প্রশংসাভাজন হয়েছিলেন।
বিনোদিনী তাঁর ‘আমার কথা’ বা ‘বিনোদিনীর কথা’ গ্রন্থে দক্ষযজ্ঞের বর্ণনা প্রসঙ্গে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘এখানকার (স্টার থিয়েটার-এর) প্রথম অভিনয় দক্ষযজ্ঞ। ইহাতে গিরিশ বাবুমহাশয় দক্ষ, অমৃত মিত্র (মহাদেব ), অমৃতলাল বসু (দধীচি) আমি সতী, কাদম্বিনী (প্রসূতি) এবং অন্যান্য সুযোগ লোক সকল নানাবিধ অংশ অভিনয় করিয়াছিলেন। প্রথম দিনের সে লোকারণ্য খড়খড়ি দেওয়ালে লোক সব ঝুলিয়া ঝুলিয়া বসে থাকা দেখিয়া আমাদের বুকের ভেতর দুর দুর করিয়া—বর্ণনাতীত।’ গিরিশচন্দ্রের শেষ ১৫ বছরের লিপিকর ও নিত্য সহচর অবিনাশচন্দ্র গঙ্গোপাধ্যায় এই অভিনয় সম্বন্ধে লিখছেন, ‘গিরিশচন্দ্রের দক্ষের ভূমিকাভিনয় যিনি একবার দেখিয়াছেন, বোধহয় তিনি তাহা জীবনে ভুলিতে পারেন নাই। ব্রহ্মার বরে দক্ষ প্রজাপতি—প্রজা সৃষ্টি
করিবার শক্তি লাভ করিয়াছিলেন। গিরিশচন্দ্রের অসাধারণ অভিনয়ে—তাঁহার অদ্ভুত ভাবভঙ্গিতে যথার্থই যেন তাঁহাকেই সৃষ্টিকর্তা বলিয়া বোধ হইত। নটসূর্য অহীন্দ্র চৌধুরী দক্ষযজ্ঞ নাটক ও তার অভিনয় সম্বন্ধে লিখেছেন, ‘দক্ষযজ্ঞের দক্ষ চরিত্র গিরিশচন্দ্রের একটি অপূর্ব সৃষ্টি। বাংলা নাট্যসাহিত্যে সমতুল অন্য কোন চরিত্র খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। দক্ষরাজ প্রজাপতি—প্রজার প্রতি তাঁর যথেষ্ট স্নেহ, শিবের প্রতি তাঁর অসীম ঘৃণা এবং শিবকে অপমানিত করার একটি দুরন্ত বাসনা সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে।’
এই নাটকে গানগুলির মধ্যে রয়েছে ফিরে যাও প্রেমিক সন্ন্যাসী, কিলো তোর ক্ষ্যাপা দিগম্বর, বাবার সঙ্গে খেলে মা নিবে কোলে, আয় জবা আনি নইলে কি দিব পায়, মদনমোহন মুরালিধারী প্রভৃতি। ১৮৮৬ সালের ১৮ জানুয়ারি রবিবার শ্রীরামকৃষ্ণ স্টার থিয়েটার দক্ষযজ্ঞ অভিনয় দেখতে এসেছিলেন।
সঙ্গে ভক্তদের মধ্যে ছিলেন সেবক লাটু ও দেবেন্দ্রনাথ মজুমদার। লাটু মহারাজ তাঁর স্মৃতিকথায় দক্ষযজ্ঞ নাটকের অভিনয় প্রসঙ্গে জানাচ্ছেন, ‘একদিন দশমহাবিদ্যা (শেষে ইহারই দক্ষযজ্ঞ নাম হয়) পালা হচ্ছিল। সেখানে গিরিশবাবুকে বলতে শুনলেন ‘শিব নাম আর না রাখিব ধরায়’ উনি বললেন ‘শালা বলে কি শিব নাম আর না রাখিব ধরায়। শালা আচ্ছা শিক্ষা দিচ্ছে। এসব শুনতে নেই।’ গিরিশচন্দ্র যেই শুনলেন ঠাকুর চলে যেতে চান, সেই পোশাক এসে গেলেন, বললেন, ‘আর একটু শুনুন।’ ঠাকুর বলেন ‘এসব কি লিখেছ শিব নাম আর না রাখিব ধরায়, এসব কি লিখতে আছে?’ উনি বললেন, ‘পেটের দায়ে লিখতে হয়’ গিরিশবাবুর কথা শুনে তিনি আরও কিছুক্ষণ নাটকটি দেখলেন। এই হল দক্ষযজ্ঞ বৃত্তান্ত।
বিডন স্ট্রিটের স্টার থিয়েটার প্রথম নাটক দক্ষযজ্ঞ থেকে প্রহ্লাদচরিত্র বিবাহ বিভ্রাট পর্যন্ত ১ বছর ৪ মাস-এর ওপর এখানে যতগুলি নাটক অভিনীত হয়েছে, সেগুলির সুরকার ও সংগীত শিক্ষক ছিলেন বেণীমাধব অধিকারী (বেনি ওস্তাদ নামে সমধিক পরিচিত)। প্রতিষ্ঠিত মঞ্চশিল্পী জহরলাল ধর ছিলেন এই নাটকের মঞ্চসজ্জাকর। রঙ্গমঞ্চে নাটকীয়ভাবে একের পর এক দশমহাবিদ্যার (কালী, তারা, ষোড়শী, ভুবনেশ্বরী, ভৈরবী, ছিন্নমস্তা, ধূমাবতী, বগলা, মাতঙ্গী, কমলা) বিস্ময়কর আবির্ভাব ও তিরোভাব এই নাটকটিকে অত্যন্ত জনপ্রিয় করে তুলেছিল। কাচের ওপর আলো ফেলে জহরলাল সবিশেষ দক্ষতার সঙ্গে সতীর দশমহাবিদ্যার দশটি রূপকে দর্শকমণ্ডলীর সামনে তুলে ধরেছিলেন। সেকালের বাংলা মঞ্চ শিল্পের ইতিহাসে এটি একটি অবিস্মরণীয় যুগান্তকারী ঘটনা এবং এই অতুলনীয় কৃতিত্বের জন্য তিনি সকলের কাছেই প্রশংসাভাজন হয়েছিলেন।
বিনোদিনী তাঁর ‘আমার কথা’ বা ‘বিনোদিনীর কথা’ গ্রন্থে দক্ষযজ্ঞের বর্ণনা প্রসঙ্গে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘এখানকার (স্টার থিয়েটার-এর) প্রথম অভিনয় দক্ষযজ্ঞ। ইহাতে গিরিশ বাবুমহাশয় দক্ষ, অমৃত মিত্র (মহাদেব ), অমৃতলাল বসু (দধীচি) আমি সতী, কাদম্বিনী (প্রসূতি) এবং অন্যান্য সুযোগ লোক সকল নানাবিধ অংশ অভিনয় করিয়াছিলেন। প্রথম দিনের সে লোকারণ্য খড়খড়ি দেওয়ালে লোক সব ঝুলিয়া ঝুলিয়া বসে থাকা দেখিয়া আমাদের বুকের ভেতর দুর দুর করিয়া—বর্ণনাতীত।’ গিরিশচন্দ্রের শেষ ১৫ বছরের লিপিকর ও নিত্য সহচর অবিনাশচন্দ্র গঙ্গোপাধ্যায় এই অভিনয় সম্বন্ধে লিখছেন, ‘গিরিশচন্দ্রের দক্ষের ভূমিকাভিনয় যিনি একবার দেখিয়াছেন, বোধহয় তিনি তাহা জীবনে ভুলিতে পারেন নাই। ব্রহ্মার বরে দক্ষ প্রজাপতি—প্রজা সৃষ্টি
করিবার শক্তি লাভ করিয়াছিলেন। গিরিশচন্দ্রের অসাধারণ অভিনয়ে—তাঁহার অদ্ভুত ভাবভঙ্গিতে যথার্থই যেন তাঁহাকেই সৃষ্টিকর্তা বলিয়া বোধ হইত। নটসূর্য অহীন্দ্র চৌধুরী দক্ষযজ্ঞ নাটক ও তার অভিনয় সম্বন্ধে লিখেছেন, ‘দক্ষযজ্ঞের দক্ষ চরিত্র গিরিশচন্দ্রের একটি অপূর্ব সৃষ্টি। বাংলা নাট্যসাহিত্যে সমতুল অন্য কোন চরিত্র খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। দক্ষরাজ প্রজাপতি—প্রজার প্রতি তাঁর যথেষ্ট স্নেহ, শিবের প্রতি তাঁর অসীম ঘৃণা এবং শিবকে অপমানিত করার একটি দুরন্ত বাসনা সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে।’
এই নাটকে গানগুলির মধ্যে রয়েছে ফিরে যাও প্রেমিক সন্ন্যাসী, কিলো তোর ক্ষ্যাপা দিগম্বর, বাবার সঙ্গে খেলে মা নিবে কোলে, আয় জবা আনি নইলে কি দিব পায়, মদনমোহন মুরালিধারী প্রভৃতি। ১৮৮৬ সালের ১৮ জানুয়ারি রবিবার শ্রীরামকৃষ্ণ স্টার থিয়েটার দক্ষযজ্ঞ অভিনয় দেখতে এসেছিলেন।
সঙ্গে ভক্তদের মধ্যে ছিলেন সেবক লাটু ও দেবেন্দ্রনাথ মজুমদার। লাটু মহারাজ তাঁর স্মৃতিকথায় দক্ষযজ্ঞ নাটকের অভিনয় প্রসঙ্গে জানাচ্ছেন, ‘একদিন দশমহাবিদ্যা (শেষে ইহারই দক্ষযজ্ঞ নাম হয়) পালা হচ্ছিল। সেখানে গিরিশবাবুকে বলতে শুনলেন ‘শিব নাম আর না রাখিব ধরায়’ উনি বললেন ‘শালা বলে কি শিব নাম আর না রাখিব ধরায়। শালা আচ্ছা শিক্ষা দিচ্ছে। এসব শুনতে নেই।’ গিরিশচন্দ্র যেই শুনলেন ঠাকুর চলে যেতে চান, সেই পোশাক এসে গেলেন, বললেন, ‘আর একটু শুনুন।’ ঠাকুর বলেন ‘এসব কি লিখেছ শিব নাম আর না রাখিব ধরায়, এসব কি লিখতে আছে?’ উনি বললেন, ‘পেটের দায়ে লিখতে হয়’ গিরিশবাবুর কথা শুনে তিনি আরও কিছুক্ষণ নাটকটি দেখলেন। এই হল দক্ষযজ্ঞ বৃত্তান্ত।