শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪


চেনা মুখ অচেনা মানুষের শুটিংয়ে সাহিত্যিক প্রতিভা বসুর বাড়িতে।

আমি যখন ডাক্তারি পড়ি, সেই সত্তর দশকের মধ্যভাগে, তখন অভিনয় জগতের উজ্জ্বল তারকা ছিলেন শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়। এবং তিনি একজন ডাক্তারও ছিলেন। রীতিমতো মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে পাশকরা ডাক্তার। ডাক্তার-অভিনেতা বলতে সে সময় সবাই এক ডাকে শুভেন্দুদাকে চিনত। ডাক্তারি পড়ার সময় যখন নাটক করছি, স্টুডিও পাড়ায় উঁকিঝুঁকি মারছি, তখন মনের কোণে একটা সুপ্ত বাসনা ধীরে ধীরে পল্লবিত হচ্ছে। ডাক্তারি পাশ করেও তো অভিনয় জগতে আসা যায়! এবং এ ব্যাপারে শুভেন্দুদাকে মনে মনে গুরু মানতে শুরু করেছি। ওঁর বেশকিছু নাটকও তখন দেখা হয়ে গেছে। অমরকণ্টক, বিলকিস বেগম, সাহেব ইত্যাদি। কিন্তু মুখোমুখি পরিচয়ের সুযোগ তখনও হয়নি।

সে সুযোগ এল অনেক পরে, নব্বইয়ের দশকে। তখন সিনেমার পাশাপাশি দূরদর্শনে সাপ্তাহিক সিরিয়াল, টেলিফিল্ম এগুলো সবে দেখানো শুরু হয়েছে। ওই সময় দূরদর্শনে একটি দর্শকপ্রিয় সাপ্তাহিক সিরিয়াল ছিল, ‘চেনা মুখ অচেনা মানুষ’। বিভিন্ন বিষয়ের সেলিব্রেটিরা তাঁদের অন্যকিছু প্রতিভার নিদর্শন রাখতেন এই অনুষ্ঠানে। পার্থ চক্রবর্তী এটি প্রযোজনা করতেন। গোটা চারেক পর্বের সঞ্চালক ছিলাম আমি। সৌমিত্র-সুপ্রিয়া, গুপি-বাঘা, নাট্যজগতের কুমার রায়-মনোজ মিত্র, এমন বেশ কিছু জুটিকে নিয়ে প্রোগ্রাম করেছিলাম। প্রযোজক পার্থদা আমাকে বললেন, ‘শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে পরিচয় আছে? উনিও তো আপনার মতো ডাক্তার-অভিনেতা। দেখুন ওঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে ওঁকে নিয়ে প্রোগ্রাম করতে পারেন কি না! ওঁর সঙ্গে আমি রাখতে চাইছি সাহিত্যিক প্রতিভা বসুকে। প্রতিভাদির সঙ্গে আমার কথা হয়ে গেছে।’

বুঝলাম পার্থদা অনেকটা এগিয়ে গেছে। কিন্তু আমার তো তখনও শুভেন্দুদার সঙ্গে পরিচয়ই হয়নি। ফোন নাম্বার জোগাড় করে একদিন ফোন করলাম। আমার পরিচয় পেয়ে খুব আন্তরিকভাবে কথা বললেন আমার সঙ্গে, বললেন একদিন বাড়িতে আসতে। গলফ গ্রিন টিভি সেন্টারের পাশেই ছিল ওঁর ফ্ল্যাট। একদিন সেখানে হাজির হলাম, সঙ্গে নিলাম দে’জ পাবলিশিং থেকে প্রকাশিত আমার গোটা তিনেক বই। বেল বাজাতে নিজেই দরজা খুলে দিলেন, মজা করে বলে উঠলেন, ডক্টর-অ্যাক্টর অমিতাভ সুস্বাগতম। ঘরে ঢুকেই ড্রয়িং রুম। অত বড়মাপের একজন অভিনেতার সামনে প্রথমে একটু ইতস্তত লাগছিল। মিনিট দশেকের মধ্যেই সেটা কেটে গেল। ঘণ্টা দেড়েক নানা বিষয় নিয়ে চুটিয়ে আড্ডা হল। ততক্ষণে আমি ওঁর কাছে তুমি থেকে তুই হয়ে গেছি। ড্রইং রুমের বাঁ দিকের দেয়ালে সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে ওঁর বিশাল একটি ফটো। পাশেই চার্লি চ্যাপলিনের একটি অর্ধ দেওয়ালজোড়া ফটো। এমন ফটো আমি রবি ঘোষের বাড়ির ড্রইং রুমেও দেখেছি। শুভেন্দুদার বাড়িতে সেদিন অন্য কেউ ছিলেন না, নিজেই আমার জন্য লিকার চা করে নিয়ে এলেন। বিস্কুট আর চানাচুর দিয়ে আমার প্রিয় অভিনেতার হাতে তৈরি চা খেতে খেতে নিজেকে বেশ ভিআইপি বলে মনে হচ্ছিল। এরপর বহুবার শুভেন্দুদার বাড়িতে গেছি, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আড্ডা হয়েছে। শতকরা একশোভাগ নাস্তিক এবং বাম মনোভাবাপন্ন মানুষ ছিলেন। একদিন বললেন, দুর্গাপূজার অঞ্জলির মন্ত্র জানিস। ওই যে আছে না, ত্র্যম্বকে গৌরী। ছোটবেলায় গ্রামে পুরুতমশাই উচ্চারণ করতেন, ত্রম বকে গৌরী। আর আমি ভাবতাম গৌরী কাকে বকে, কেনই বা বকে!

বাড়ির নাম ‘কবিতা’। সাহিত্যিক বুদ্ধদেব বসুর এই বাড়িটি সাহিত্যজগতে একসময় একটি তীর্থস্থান ছিল। বহু বিখ্যাত মানুষের পদধূলি পড়েছে এখানে। বুদ্ধদেব বসু গত হওয়ার পর তাঁর সহধর্মিণী প্রখ্যাত সাহিত্যিক প্রতিভা বসু এখানেই থাকতেন। বার্ধক্যজনিত নানা রোগে বিব্রত থাকলেও তিনি তখনও লিখে চলেছেন। সানন্দা পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে, জীবনের জলছবি। ‘কবিতা’ বাড়িতেই শ্যুটিং হয়েছিল ‘চেনা মুখ অচেনা মানুষে’র এই পর্বের। দুই গুণী মানুষের মাঝে পড়ে আমার সেদিনের অবস্থা হয়েছিল, হংস মধ্যে বক যথা। সেদিন নানা কথার পাশাপাশি দু-চার কলি গান শুনিয়েছিলেন প্রতিভা দেবী। শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায় অভিনয়ের পাশাপাশি যে গানটিও ভালোই করেন, সেটা আমরা সবাই তখন জানতাম। কবি সুকান্তর ‘একটি মোরগের কাহিনী’-র রেকর্ড তখন বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। শুভেন্দুদাও আবৃত্তির পাশাপাশি গান গেয়েছিলেন ওই অনুষ্ঠানে। তবে শুভেন্দুদার গান আমি ওঁর বাড়িতে বসে একবার শুনেছি। উদাত্ত গলায় আমাকে গেয়ে শুনিয়েছিলেন রবিঠাকুরের ‘আঁধার রাতের একলা পাগল’। খালি গলায় এমন গান শুনে আমি মোহিত হয়ে বলে উঠেছিলাম, অনেকদিন তো চর্চা করো না, এমন গলা ছেড়ে গাইলে কীভাবে! আমাকে বললেন, আমি আর কী গাইলাম রে! তুই যদি ভানুদার গান শুনতিস! আউটডোরে শ্যুটিং শেষে পানাহারের সঙ্গে ভানুদা একের পর এক রবীন্দ্রসংগীত তাল-সুর-লয় ঠিক রেখে গেয়ে যেতেন। আর উত্তমদার কথা কী বলব! অমন রোমান্টিক মেলোডিয়াস ভয়েস, এখনও ভাবলে গায়ে কাঁটা দেয়।

সেই সময় শুভেন্দুদা ছিলেন স্টুডিও পাড়ার ডাক্তার। একনিষ্ঠ রোগী এবং শিক্ষার্থী ছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। সৌমিত্রদার বরাবরই ভীষণ কৌতূহল ছিল মেডিকেল লাইন নিয়ে। নিজেও বহু গুণী ডাক্তার সঙ্গ করেছেন। ডাক্তারের চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করেছেন বেশ কিছু সিনেমাতেও। পরবর্তীকালে যতবার মুখোমুখি হয়েছি, উনি আমায় ডাক্তারি বিষয় নিয়ে কোনও না কোনও প্রশ্ন করতেনই। ডাক্তারি প্রফেশন ছেড়ে কেন শুধুমাত্র অভিনয়কেই প্রফেশন করেছিলেন শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়, অনেকের মতো সে কৌতূহল আমারও ছিল। একদিন জিজ্ঞেস করে বসলাম। বললেন, ‘ডাক্তারিতে ভর্তি হয়েছিলাম বাবার ইচ্ছানুসারে। স্টুডেন্ট হিসেবে খুব একটা খারাপ ছিলাম না। ডাক্তারিটা ভালো লাগত না, সেটাও কিন্তু ঠিক কথা নয়। আসলে ছাত্রাবস্থায় আমি গণনাট্যর সংস্পর্শে আসি, নাটক করা শুরু করি, ওদের সম্মেলনেও যেতাম। এক সময় দেখলাম, অভিনয়টাই আমাকে বেশি টানছে। এটাও বুঝেছিলাম, অভিনয়ের মাধ্যমেই বেশি লোকের কাছে আমি পৌঁছতে পারব। আমাদের সময় প্রায় ৭০০ জন প্রতিবছর ডাক্তারিতে পড়ার সুযোগ পেত। তার থেকে আমার মতো একজন বাদ পড়লে এ রাজ্যের চিকিৎসা জগৎ কাঙাল হয়ে পড়বে, এমনটা ভাবার কোনও কারণ ছিল না।’

শুভেন্দুদাকে শ্রুতিনাটকের জগতে আমিই প্রথমে নিয়ে এসেছিলাম। ঘটনাটা একটু খুলেই বলি। তখন প্রতি বছর পঁচিশে ডিসেম্বর থেকে পয়লা জানুয়ারি বেলঘরিয়ার ভৈরব গাঙ্গুলি কলেজের মাঠে বিরাট ঘটা করে বেলঘরিয়া উৎসব হত। একবার উদ্যোক্তারা এলেন আমার সঙ্গে কথা বলতে। শুভেন্দুদার সঙ্গে আমার যে তখন ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে, সেটা ওরা জানতেন। অনুরোধ করলেন, ওঁর সঙ্গে যৌথভাবে কিছু পরিবেশন করতে। আমি শুভেন্দুদার সঙ্গে যোগাযোগ করলাম। বললাম, আমার লেখা শ্রুতিনাটক আমরা দুজনে মিলে পরিবেশন করতে পারি, যদি তুমি রাজি থাকো। শুভেন্দুদা বলল, একদিন আমার ফ্ল্যাটে আয়। সামনাসামনি কথা বলি। আমার সদ্য প্রকাশিত ‘এক ডজন শ্রুতিনাটক’ বইটি নিয়ে দাদার মুখোমুখি বসলাম। দাদা সব শুনে বলল, কোন নাটক করতে চাস, একটু পড়ে শোনা। আমি তিনটি নাটক পড়লাম। ট্রিটমেন্ট, তৃতীয় পক্ষ এবং কালব্যাধি। দাদা প্রথম দুটি নাটক ফাইনাল করল। প্রথমটি ১৫ মিনিটের, দ্বিতীয়টি ২৫ মিনিটের। প্রথম নাটকে দুটি চরিত্র, ডাক্তার এবং রোগী। আমি করলাম ডাক্তার, শুভেন্দুদা রোগীর চরিত্র। তৃতীয় পক্ষ নাটকটিতে তিনটি চরিত্র ছিল। শুভেন্দুদা করল ডাক্তারের চরিত্র। ওঁর স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সেই সময়ের প্রখ্যাত আবৃত্তিকার তুলসী রায় এবং ক্যানসারাক্রান্ত প্রেমিকের চরিত্রটি করেছিলাম আমি। দিন চারেক রিহার্সাল করেছিলাম এবং সেই সময় শুভেন্দুদাকে শিক্ষক হিসেবে পেয়ে অনেক কিছু শিখেছিলাম। যেদিন অনুষ্ঠান ছিল, সেদিন সন্ধ্যাবেলায় শুভেন্দুদা আমার বাড়িতে এলেন। আমার নতুন চেম্বারের উদ্বোধন করলেন। ওঁকে দেখার জন্য বেশ ভিড় হয়েছিল। সবার সঙ্গে কথা বললেন, ছবি তুললেন। তারপর একবার রিহার্সাল করে আমরা বেলঘরিয়া উৎসব মঞ্চে পৌঁছে গেলাম রাত সাড়ে আটটা নাগাদ। শুভেন্দুদার নাম ঘোষণা হতেই একটানা হাততালি, মঞ্চে উঠে এত দর্শক দেখে শুভেন্দুদাও খুব খুশি হয়েছিলেন। আমরাও জমিয়ে প্রোগ্রাম করেছিলাম। অনুষ্ঠান শেষে উদ্যোক্তাদের দেওয়া ৫০০০ টাকার খাম তুলে দিয়েছিলাম ওঁর হাতে। উনি তার থেকে হাজার টাকা দিলেন তুলসী রায়কে, পাঁচশো আমাকে, পাঁচশো ড্রাইভারকে। বাকি তিন হাজার টাকা নিজের জন্য রাখলেন। বারবার দাদাকে বললাম, ওরা কিন্তু টাকাটা তোমার জন্যই দিয়েছে, তুলসীকে পাঁচশো টাকা দিলেই হবে। তুমি যে আমার অনুরোধে আমার সঙ্গে এখানে শ্রুতিনাটক করলে, এতেই আমি খুশি। আমার টাকার দরকার নেই। দাদা বলল, সব জায়গায় দাতব্য করতে নেই রে। শিল্পীর একটা মর্যাদা তো আছে। তুই তো প্রোগ্রামটার জন্য কম খাটিসনি। এটা তোর প্রাপ্য।

আমার বাড়িতে চেম্বারের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে।

এরপরে আমরা কলকাতার রোটারি সদনে ইএনটি ডাক্তারদের কনফারেন্সে এবং রবীন্দ্র সদনে আইএমএ রাজ্য শাখার কনফারেন্সে শ্রুতিনাটকের অনুষ্ঠান করেছিলাম। সেগুলো ছিল ডাক্তারদের অনুষ্ঠান, যেজন্য শুভেন্দুদা এক টাকাও পারিশ্রমিক নেননি। আসলে উনি অভিনয় জগতের এই নতুন মাধ্যম শ্রুতিনাটকটিকে ভালোবেসে ফেলেছিলেন, খুব এনজয়ও করতেন। আমাকে একাধিকবার একথা বলেওছেন। নতুন নাটক লিখলেই ফোন করে ওঁকে পড়ে শোনাতে যেতাম।

তখন বইমেলা হত ময়দানে। প্রতিবছর দে’জ পাবলিশিং থেকে আমার বই প্রকাশ হত ঘটা করে একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। বিভিন্ন জগতের বেশ কিছু সেলিব্রিটি প্রতিবছরই আমার আমন্ত্রণে এই অনুষ্ঠানে আসতেন। অনুষ্ঠান হত মূলমঞ্চে, ইউবিআই অডিটোরিয়ামে। শুভেন্দুদা পরপর তিন বছর বইমেলায় আমার অনুষ্ঠানে এসেছেন আমার নতুন বইয়ের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করতে। একবারের ঘটনা বলি। যেদিন আমার অনুষ্ঠান, তার আগের দিন রাতে তুমুল বৃষ্টি হল, বইমেলা প্রাঙ্গণে জল দাঁড়িয়ে গেল, বেশ কিছু স্টল ভেঙেও পড়ল। আমি দে’জ পাবলিশিং-এর কর্ণধার সুধাংশুদার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করলাম। উনি বললেন, সকাল থেকে পাম্প চালিয়ে জল বার করা হচ্ছে, বালি ফেলে জলকাদা ঢাকার কাজ শুরু হয়ে গেছে, অনুষ্ঠান বাতিল করবেন না। করুন। একটু বাদেই শুভেন্দুদা ফোন করলেন আমার ল্যান্ড লাইনে। ওঁকে পুরো পরিস্থিতিটা বুঝিয়ে বললাম। আমার জোরাজুরিতে তিনি সেদিন বিকেলে নির্দিষ্ট সময়েই বৃষ্টিভেজা বইমেলাতে এসেছিলেন আমার বই উদ্বোধন করতে। ইচ্ছে করলে পরিস্থিতির অজুহাতে তিনি না-ই আসতে পারতেন। কিন্তু এসেছিলেন ভালোবাসার টানে। আমার অনুরোধে একবার আমার লেখা একটি বইয়ের ভূমিকাও লিখে দিয়েছিলেন। ঝরঝরে বাংলা লিখতেন, আমৃত্যু সাহিত্যানুরাগীও ছিলেন।

জীবনের শেষ প্রান্তে এসে ভীষণ কষ্ট পেয়েছেন মানুষটি। নিজে ডাক্তার ছিলেন, তৎসত্ত্বেও একসময়ে খুবই ধূমপান করতেন। সিওপিডি বাসা বেঁধেছিল তার বুকে। জীবনের শেষ কটা মাস অক্সিজেনের সিলিন্ডার ছিল তার নিত্যসঙ্গী। দূর থেকে খোঁজখবর নিয়েছি দাদার। কাছে গিয়ে দেখার ইচ্ছে আর হয়নি। তারপর তো বছর দশেক আগে উনি চলেই গেলেন। শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য ছুটে গিয়েছিলাম কেওড়াতলা মহাশ্মশানে। সেদিন আমার ডিউটি ছিল ব্যারাকপুর বিবেকানন্দ মিশনে। না গিয়ে উপায় ছিল না। ডিউটি শেষ করে ট্রাফিক জ্যামে ধাক্কা খেতে খেতে যখন শ্মশানে গিয়ে পৌঁছলাম, তার দশ মিনিট আগেই দাদাকে ফার্নেসে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। বউদি এবং পুত্র অপুর (শাশ্বত) সঙ্গে দেখা করে আপন-মনেই ফিরে এসেছিলাম। দাদাকে শেষ দেখা দেখতে না পারার দুঃখটা আমার সারা জীবনই থাকবে। পাশাপাশি শুভেন্দুদার একটা কথা আমি সারাজীবন মনে রাখব। ‘দেখ অমিতাভ, আমি ডাক্তারিটা পুরোপুরি ছেড়েই অভিনয় এসেছিলাম। তুই কিন্তু ডাক্তারি করতে করতে অভিনয়ে এসেছিস। বিয়ে করেছিস। বাবা হয়েছিস। কাজেই এই আনসারটেন ওয়ার্ল্ডে হোল টাইমার হবার চেষ্টা এখন আর করিস না। মনের খিদে মেটানোর জন্য যেটুকু করার তাই করবি।’ আজও সেটাই করে চলেছি শুভেন্দুদা।

Skip to content