ছবি প্রতীকী, সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে।
পৃথিবীর চিকিৎসাবিজ্ঞান ইতিহাসের সুদীর্ঘ গবেষণালব্ধ ও তথ্যভিত্তিক চিকিৎসা হিসেবে আয়ুর্বেদ যুগে যুগে সর্বজনবিদিত।
এছাড়াও এটি জীবন সম্বন্ধীয় বিজ্ঞানের সংস্কারভিত্তিক সুবিশাল সংগ্রহ।
যেখানে রোগের চিকিৎসা অপেক্ষা রোগাক্রান্ত হওয়ার পূর্বেই সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘স্বস্থস্য স্বস্থরক্ষনম আতুরশ্চ বিকার প্রসমনঞ্চ’ অর্থাৎ প্রথমত সুস্থ ব্যক্তির স্বাস্থ্য রক্ষা করা এবং দ্বিতীয়ত রোগগ্রস্ত ব্যক্তির রোগ প্রশমন করা।
সুস্থ ব্যক্তির স্বাস্থ্য রক্ষা করার ক্ষেত্রে যে বিষয়টি সমস্ত ধারার চিকিৎসাবিজ্ঞানের সূত্র প্রায় এক তা হল: ইমিউনিটি বা অনাক্রমতা।
এককথায় শরীর তার যে নিজস্ব শক্তি দিয়েই রোগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যায় তাই অনাক্রমতা।
আয়ুর্বেদ দৃষ্টিকোণে অনাক্রমতা
আয়ুর্বেদ চিকিৎসাবিজ্ঞানের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শরীরের পোষকতত্ত্বর সারভাগকে ‘ওজো’ বলা হয় যা সর্বদা দেহস্থ রোগ প্রতিরোধে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করে থাকে।
এছাড়াও আয়ুর্বেদে বর্ণিত বিশেষ কিছু ভেষজ রয়েছে যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেমন:
● গুলঞ্চ (Tinosfora cordifolia)
এটি গ্রামবাংলায় গুড়ুচী, অমৃতা, ছিন্না, ভিষকপ্রিয়া নামে সুপরিচিত। এটি তিক্ত কশায় রসযুক্ত, রসায়ন গুণ সমৃদ্ধ, বল বৃদ্ধিকর, মেধ্য ত্রিদোষ শামক ভেষজ।
ভেষজ গুণে এটি আন্টিইনফ্লামেটরি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিএলার্জিক ও অনাক্রমতা বৃদ্ধিকারক।
সেবন বিধি
গুলঞ্চ স্বরস: ২০-৩০ মিলি সমপরিমাণ জল মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
গুলঞ্চ চূর্ণ: ১ গ্রাম পরিমাণ জলের সঙ্গে সেবনীয়।
গুলঞ্চ ভেজানো জল: ১/২ কাপ পরিমাণ সমপরিমাণ জলের সঙ্গে খালিপেটে সেব্য।
● অশ্বগন্ধা (Withania somnifera)
এটি একটি অতি পরিচিত বহুগুণসম্পন্ন ভেষজ যা মূলত বলবৃদ্ধিকর, অনিদ্রা নাশক, অনাক্রমতা বর্ধক, বৃষ্য এবং বাতব্যাধি রোগে হিতকর।
সেবন বিধি: অনুপান ও সহপান ভেদে অশ্বগন্ধা বিভিন্নভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে তবে মূলত দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে উষ্ণ দুধের সঙ্গে অশ্বগন্ধা মূলচূর্ণ ২ থেকে ৩ গ্রাম পরিমাণ সেব্য।
● আমলকী (Phyllanthus emblica)
আয়ুর্বেদশাস্ত্র মতে আমলকী ভেষজ গুণে ভরপুর ঔষধি। এটি অম্লরসপ্রধান, বয়স্থাপক, রসায়ন গুণযুক্ত। চ্যবনপ্রাশের মুখ্য উপাদান থেকে শুরু করে সৌন্দর্য চর্চায় এর জুড়ি মেলা ভার।
এটি প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, চক্ষুষ্য (চোখের পক্ষে উপকারী) ঔষধি।
প্রধানত চুল, দাঁত, ত্বক রোগ, স্থূলতা, পেটের রোগ, কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে আমলকীর বহুমুখী ব্যবহার হয়ে থাকে।
সেবন বিধি
আমলকী স্বরস: ১৫-২০ মিলি রোগ অনুযায়ী অনুপান সহ সেবনীয়।
আমলকী চূর্ণ: ২-৩ গ্রাম পরিমাণ সেবনীয়।
● ব্রাহ্মী (Bacopa monnieri)
মেধা, আয়ু, বল বৃদ্ধিতে আয়ুর্বেদশাস্ত্র জুড়ে ব্রাহ্মীর প্রশংসা করা হয়েছে।
এছাড়াও বিভিন্ন মানসিক ব্যাধি যেমন উন্মাদ, স্মৃতিনাশ, মৃগীরোগ ইত্যাদি রোগের চিকিৎসায় ব্রাহ্মী ফলপ্রদ।
সেবন বিধি
ব্রাহ্মী স্বরস: ২ চামচ করে দিনে দুবার।
ব্রাহ্মী চূর্ণ: ২-৩ গ্রাম পরিমাণ উষ্ণ দুধের সঙ্গে সেবনীয়।
● নিয়মিত সকালে চব্যনপ্রাশ খেলে ব্যাধিক্ষমত্ব বাড়ে।
● উষ্ণ গোদুগ্ধের সঙ্গে হলুদগুঁড়ো মিশিয়ে নিয়মিত খেলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়।
● শরীর সুস্থ রাখতে আদা, গোলমরিচ, লবঙ্গ, দারুচিনি সমৃদ্ধ চা পানও উপকারী। এছাড়াও নিয়মিত দিনচর্যা, ঋতুচর্যা মেনে চললে পাশাপাশি বিরুদ্ধ আহার বর্জন ও দেহের বেগসমূহ (ক্ষুধা, তৃষ্ণা, মলবেগ, মূত্রবেগ, নিদ্রা বেগ, হাঁচি বেগ) ইত্যাদি ধারণ না করলে মানুষ অনেক রোগে আক্রান্ত হওয়া থেকে দূরে থাকে।
লেখক: আয়ুর্বেদ মেডিকেল অফিসার (উত্তর চণ্ডীপুর সদর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, মানিকচক, মালদা)
এছাড়াও এটি জীবন সম্বন্ধীয় বিজ্ঞানের সংস্কারভিত্তিক সুবিশাল সংগ্রহ।
যেখানে রোগের চিকিৎসা অপেক্ষা রোগাক্রান্ত হওয়ার পূর্বেই সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘স্বস্থস্য স্বস্থরক্ষনম আতুরশ্চ বিকার প্রসমনঞ্চ’ অর্থাৎ প্রথমত সুস্থ ব্যক্তির স্বাস্থ্য রক্ষা করা এবং দ্বিতীয়ত রোগগ্রস্ত ব্যক্তির রোগ প্রশমন করা।
সুস্থ ব্যক্তির স্বাস্থ্য রক্ষা করার ক্ষেত্রে যে বিষয়টি সমস্ত ধারার চিকিৎসাবিজ্ঞানের সূত্র প্রায় এক তা হল: ইমিউনিটি বা অনাক্রমতা।
এককথায় শরীর তার যে নিজস্ব শক্তি দিয়েই রোগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যায় তাই অনাক্রমতা।
আয়ুর্বেদ চিকিৎসাবিজ্ঞানের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শরীরের পোষকতত্ত্বর সারভাগকে ‘ওজো’ বলা হয় যা সর্বদা দেহস্থ রোগ প্রতিরোধে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করে থাকে।
এছাড়াও আয়ুর্বেদে বর্ণিত বিশেষ কিছু ভেষজ রয়েছে যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেমন:
এটি গ্রামবাংলায় গুড়ুচী, অমৃতা, ছিন্না, ভিষকপ্রিয়া নামে সুপরিচিত। এটি তিক্ত কশায় রসযুক্ত, রসায়ন গুণ সমৃদ্ধ, বল বৃদ্ধিকর, মেধ্য ত্রিদোষ শামক ভেষজ।
ভেষজ গুণে এটি আন্টিইনফ্লামেটরি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিএলার্জিক ও অনাক্রমতা বৃদ্ধিকারক।
এটি একটি অতি পরিচিত বহুগুণসম্পন্ন ভেষজ যা মূলত বলবৃদ্ধিকর, অনিদ্রা নাশক, অনাক্রমতা বর্ধক, বৃষ্য এবং বাতব্যাধি রোগে হিতকর।
আয়ুর্বেদশাস্ত্র মতে আমলকী ভেষজ গুণে ভরপুর ঔষধি। এটি অম্লরসপ্রধান, বয়স্থাপক, রসায়ন গুণযুক্ত। চ্যবনপ্রাশের মুখ্য উপাদান থেকে শুরু করে সৌন্দর্য চর্চায় এর জুড়ি মেলা ভার।
এটি প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, চক্ষুষ্য (চোখের পক্ষে উপকারী) ঔষধি।
প্রধানত চুল, দাঁত, ত্বক রোগ, স্থূলতা, পেটের রোগ, কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে আমলকীর বহুমুখী ব্যবহার হয়ে থাকে।
মেধা, আয়ু, বল বৃদ্ধিতে আয়ুর্বেদশাস্ত্র জুড়ে ব্রাহ্মীর প্রশংসা করা হয়েছে।
এছাড়াও বিভিন্ন মানসিক ব্যাধি যেমন উন্মাদ, স্মৃতিনাশ, মৃগীরোগ ইত্যাদি রোগের চিকিৎসায় ব্রাহ্মী ফলপ্রদ।
লেখক: আয়ুর্বেদ মেডিকেল অফিসার (উত্তর চণ্ডীপুর সদর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, মানিকচক, মালদা)