বাংলা চলচ্চিত্র জগতের কলাকুশলীদের নিয়ে ‘সময় আপডেটস’-এর বিশেষ বিভাগ ‘মুখোমুখি’। আজ আমাদের এই বিভাগে থাকছেন অভিনেতা বিশ্বনাথ বসু। কথা বলেছেন মোহনা বিশ্বাস।
● অভিনয়ে আসার জার্নিটা কেমন ছিল?
●● আমার বাবা থিয়েটার দেখতে আসতেন কলকতায়। তাই থিয়েটার নিয়ে বাড়িতে আলোচনা চলতই। সেখান থেকেই জেনেছিলাম, থিয়েটার এমন একটা মাধ্যম যেখান থেকে একজন অভিনেতাকে চেনা যেতে পারে। গ্রামে আমি বেশ কয়েকবার থিয়েটার, যাত্রা করেছিলাম। কলকাতায় আসার পর রামকৃষ্ণ মিশনের ‘গীতি আলেখ্য’ নামের একটি দল ছিল, সেখানে আমি যোগাযোগ করি৷ তারপর একজন আমাকে একটি শ্রুতিনাটকের জন্য বলে। সেখানে একটি কুকুরের শ্রেণিচরিত্র করেছিলাম। এটা করতে করতেই একটি থিয়েটারে সুযোগ পাই। সেই থেকে পরপর থিয়েটার করতে থাকি। ১৯৯৭-১৯৯৮ সালে আমি প্রচুর পথনাটিকা করেছি। তারপর কিছুদিন আমি সল্টলেকের একটি নাট্য সংস্থায় ব্যাকস্টেজে কাজ করেছিলাম। তারপর থিয়েটারের জন্য ঘুরে ঘুরে বেড়াতে থাকি।
● অভিনয় শেখা কীভাবে?
●● খড়দায় আমার ভাইয়ের বন্ধুর বাবার নাট্যসংস্থা ‘খারিজ’-এর সঙ্গে যোগাযোগ হয়৷ ‘খারিজ’ নাট্যসংস্থার প্রধান কনক রায় আমাকে অভিনয়ের প্রতি বোধ, চেতনা, অভিনয় নিয়ে ভাবা, তার যে পড়াশোনা সবকিছু শিখিয়েছিলেন। এই মানুষটার আমার জীবনে একটা বিরাট অংশ। এরপর সৌমিত্র বসুর একটি নাটক ছিল ‘অযোগ্য’ এবং এর পূর্ণাঙ্গ নাটকটি ছিল ‘সমান্তরাল’। সেখানে আমি অভিনয় করি আমার বয়সের চেয়ে অনেকটা বেশি বয়সের একটি চরিত্রে। এটা করার পর আমার মধ্যে বেশ কনফিডেন্স আসে। আর তারপর সিনেমাপাড়ার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ি। কিন্তু থিয়েটার আমি করতে থাকি। এরপর ২০০০ সালে আমি সিনেমায় চলে আসি এবং সিরিয়াল করতে শুরু করি। এর পর থেকে আমি খুব একটা নাটক করতে পারিনি সময়ের অভাবে। এরপর ২০০৪ সালে ‘ধ্যাত তেরি কা’ ধারাবাহিকে আমার চরিত্রটা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এরপর রমাপ্রসাদ বণিকের মৃত্যুর পর ‘ভ্যাবলাই ভালো’ নাটকে অভিনয় করেছিলাম। এই নাটকের প্রায় ১৯টি শো ছিল। ওদের আরও একটি নাটক ‘অনুকূল’ নামে। সেখানে একজন ডাক্তারের চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম। আর বরাবরই আমার স্ক্রিনের প্রতি একটা টান ছিল। পরবর্তীকালে আমি নিজেও একটি থিয়েটারের গ্রুপ তৈরি করেছি। যার নাম চরৈবেতি। সেখানেও আমি থিয়েটার করি৷
● আপনার শিক্ষা ও ছেলেবেলা কোথায় কেটেছে?
●● আমার বেড়ে ওঠা কলকাতা থেকে ৭৫ কিলোমিটার দূরে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বসিরহাট মহকুমার আড়বালিয়া গ্রামে। ওখানেই আমার দেশের বাড়ি। ছোটবেলা থেকেই পর্দা অর্থাৎ সিনেমা, সিরিয়াল আমাকে খুব টানত। সেইসময় স্কুলের নাটকে অভিনয় করেছি। তারপর ১৯৯৬ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর কলকাতায় চলে আসি। স্কটিশ চার্চ কলেজে বাংলা অনার্স নিয়ে ভর্তি হই।
● আপনি পজিটিভ, নেগেটিভ চরিত্রের পাশাপাশি কমেডিও করেছেন। কোন চরিত্রটা বেশি চ্যালেঞ্জিং বলে আপনার মনে হয়?
●● পজিটিভ, নেগেটিভ বা কমেডি যে চরিত্রই হোক না কেন কোনও অভিনেতা যদি সেই চরিত্রটার ভিতরে প্রবেশ করে, তাহলে অভিনেতাদের কাছে প্রতিটা দিনই চ্যালেঞ্জিং। আমার কাছেও প্রতিটা দিন প্রতিটা চরিত্রই চ্যালেঞ্জিং।
● পিলুতে আপনাকে বাঙাল ভাষায় কথা বলতে দেখা যাচ্ছে। এটা কি আপনাকে আলাদা করে শিখতে হয়েছে?
●● নাহ্, এই বাঙাল ভাষা আমাকে আলাদা করে শিখতে হয়নি। আমি নিজে বাংলাদেশি নই, তবে আমার মা বাঙাল। গ্রামে ছোটবেলা থেকেই ভাষা, লোকের কথা বলার ধরন এগুলো আমি বেশ রপ্ত করেছিলাম। তাই বাঙাল ভাষাটাও আমাকে আলাদা করে শিখতে হয়নি।
● জিৎ সত্রাগ্নির নাটক ‘চিলেকোঠায়’ আপনার চরিত্রটা কেমন?
●● নাটকটা সুন্দর লিখেছেন। চরিত্রটাও খুবই ভালো। এটা আমার কাছে একটা বিরাট প্রাপ্তি।
● বর্তমান সময়ে ওটিটির যুগে থিয়েটারের গুরুত্ব কতটা বলে আপনি মনে করেন?
●● থিয়েটার সবসময় গুরুত্ব পাবে। একজন অভিনেতা যিনি একজন থিয়েটার শিল্পী তাঁর কাছে অভিনয় শেখাটাই আসল। আর এই অভিনয় শোখার এবং সবার সামনে তা তুলে ধরার সুযোগটা থিয়েটার ছাড়া আর কোথাও পাওয়া যাবে না। তাই থিয়েটার কোনওদিনই তার গুরুত্ব হারাবে না। সরাসরি অভিনয় দেখার যে অনুভূতি সেটা মানুষ কখনওই ভুলবে না। থিয়েটার অনেক মডিফাই হয়েছে। শুধু তাই নয়, আগামী দিনে থিয়েটার আরও সুন্দর হবে।
● আপনার পরবর্তী কাজ কী?
●● ‘অচেনা উত্তম’ ছবিতে তরুণকুমার-এর চরিত্রে আমাকে দেখা যাবে। এছাড়াও, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় পরিচালিত সিনেমা ‘অভিযান’-এ জহর রায়-এর চরিত্রে অভিনয় করছি। রাজ মুখোপাধ্যায়ের সিনেমা ‘বিচার’-এ অভিনয় করছি। নচিকেতা চক্রবর্তীর লেখায় ও সুবীর মণ্ডলের পরিচালনায় আসছে ‘শর্ট কাট’। সেখানেও একটি চরিত্রে অভিনয় করছি আমি৷
ছবি সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে।