শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪


অরণ্যের পথে।

‘উদ্ভ্রান্ত সেই আদিম যুগে, স্রষ্টা যখন নিজের প্রতি অসন্তোষে নতুন সৃষ্টিকে বারবার করছিলেন বিধ্বস্ত,
তাঁর সেই অধৈর্যে ঘন-ঘন মাথা-নাড়ার দিনে রুদ্র সমুদ্রের বাহু প্রাচী ধরিত্রীর বুকের থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গেল তোমাকে,
বাঁধলে তোমাকে বনস্পতির নিবিড় পাহারায় কৃপণ আলোর অন্তঃপুরে।
সেখানে নিভৃত অবকাশে তুমি সংগ্রহ করছিলে দুর্গমের রহস্য,
চিনছিলে জলস্থল-আকাশের দুর্বোধ সংকেত,
প্রকৃতির দৃষ্টি-অতীত জাদু মন্ত্র জাগাচ্ছিল তোমার চেতনাতীত মন।
বিদ্রূপ করছিলে ভীষণকে বিরূপের ছদ্মবেশে,
শঙ্কাকে চাচ্ছিলে হার মানাতে আপনাকে উগ্র করে বিভীষিকার প্রচণ্ড মহিমায়
তাণ্ডবের দুন্দুভিনিনাদে।’

দশ হাজার ফুট ওপর থেকে প্রথম দর্শনে এই কয়েকটা পংক্তি বেরিয়ে এসেছিল খুব স্বতঃস্ফূর্তভাবেই। তবে আফ্রিকা নয়, আমি চলেছি আমাজনের উদ্দেশে। আপাতত গন্তব্য রারেনবাক, বলিভিয়ান আমাজনের প্রান্তে এক ছোট্ট শহর। এখান থেকেই শুরু হবে আমার ‘আমাজন অভিযান’। রাজধানী লা-পাজ থেকে রওনা দিয়েছি প্রায় ঘণ্টা দুয়েক আগে। আধ ঘণ্টা পঁয়তাল্লিশ মিনিটের ছোট্ট উড়ান আর তার প্রান্তেই আমার ছোট্টবেলার অভিযান।
আমার আমাজন দেখার ইচ্ছে ১৯৯৭ সালে ‘অ্যানাকোন্ডা’ ছায়াছবিটি দেখার পর থেকেই। তখন আমার বছর দশেক বয়স। গ্লোব সিনেমা হলে মা, বাবা, আর আমি। সেই একটা বিরাট বড় সাপ সবাইকে খেয়ে নিচ্ছে, সব কিছু ভেঙে দিচ্ছে, সে কী হিংস্রতা! তাকে কাবু করতে নাজেহাল হয়ে গেল নায়ক থেকে শুরু করে খলনায়ক পর্যন্ত সবাই। তো, সেই থেকে আমার ইচ্ছা আমি অ্যানাকোন্ডা দেখব৷ আর মা-বাবার দৌলতে জানা গেল যে সেই সাপ নাকি শুধু আমাজনের জঙ্গলে পাওয়া যায়। স্কুলে বন্ধুদের মধ্যে শুরু হল আলোচনা। কোথায় আমাজন, কেমন জঙ্গল সেটা! স্কুলের ভূগোলের স্যার বললেন, পাঁচটা দেশ জুড়ে নাকি একটাই ঘন জঙ্গল। সেখানে নাকি সূর্যের আলো ঢোকে না। আর অ্যানাকোন্ডা কেন, আরও কত রকমের জন্তুজানোয়ার পাখপাখালির কথা যে বললেন সেসব বর্ণনা করাই ভার।

অ্যানাকোন্ডার খোঁজে।

আজ এই দু’ দশক পরে তিরিশ পেরিয়েও সেসব গল্প যেন মনের মধ্যে স্পষ্ট ফুটে উঠছিল। তবে পার্থক্য হল: মেঘলা দিনে ওই আদিগন্তবিস্তৃত ঘন সবুজের সমারোহ যখন দিগন্ত পারে পৃথিবীর বক্রতা অতিক্রম করে এগিয়ে চলে; সেই রূপ মনের মধ্যে আনন্দের থেকে ভয় এবং আশঙ্কার উদ্রেক করে অনেকটা বেশি। তার ওপরে আমি বরাবরই একটু অ্যাডভেঞ্চার পাগল। কাজেই আগাম কোনও ট্যুর প্ল্যান নিয়ে বা হোটেলে থাকা নিয়ে কোনও চিন্তাভাবনা করে আসিনি। ভাবখানা এই যে দেখাই যাক না কী হয়! ঠিক কিছু না কিছু ব্যবস্থা হয়েই যাবে৷ বেঁচে ফিরে আসতে পারলেই হল। —চলবে

ছবি : লেখক

বাইরে দূরে

লেখা পাঠানোর নিয়ম : এই বিভাগে পাঠকদের সঙ্গে আপনার সেরা ভ্রমণ অভিজ্ঞতার কাহিনি ভাগ করে নিতে পারেন। ভ্রমণ কাহিনি লিখতে হবে ১০০০ শব্দের মধ্যে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে বেশ কিছু ছবি ও ছোট ছোট ভিডিও ক্লিপ পাঠাতে হবে। ছবি ও ভিডিও ক্লিপ লেখকেরই তোলা হতে হবে। ওয়াটারমার্ক থাকা চলবে না। ইমেল : samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content