সোমবার ২৫ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি প্রতীকী, সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে।

আমাদের দেশের একটি বড় অংশ সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকার মধ্যে পড়ে, ফলত খুব স্বাভাবিকভাবেই ভারতবর্ষে সামুদ্রিক মাছের এক বিপুল সম্ভার লক্ষণীয়। আর বাংলার প্রসঙ্গে বলতে গেলে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার সুন্দরবন এলাকা এবং মেদিনীপুরের সুবিস্তৃত উপকূলবর্তী অঞ্চলের কথা অবশ্য উল্লেখ্য। এই এলাকাগুলিতে মূলত মাছ শুষ্ক করে প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে যে সমস্ত জায়গায় এইজাতীয় মাছের চাহিদা বেশি রয়েছে সেই সমস্ত স্থানে আমদানি করা হয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা মিষ্টি জলের মাছ খেয়ে বর্তমানে এতটাই অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি যে আমাদের রাজ্যে বিপুল সামুদ্রিক মাছের সম্ভার থাকলেও আমরা এখনও সামু্দ্রিক মাছ খেতে অভ্যস্ত হয়ে উঠত পারিনি, ফলত এক বৃহৎ অংশের পৌষ্টিক গুণাগুণ লাভের দিক থেকে আমাদের শরীর বঞ্চিত হচ্ছে।

সামুদ্রিক মাছে রয়েছে দীর্ঘশৃঙ্খল এন-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, কোলিন, আয়োডিনসহ এমন কিছু খনিজ উপাদান যা মিষ্টি জলের মাছ থেকে পাওয়া সম্ভব নয়। আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ হৃদরোগজনিত সমস্যা, বিপাকীয় সমস্যা বা হাইপোথাইরয়েডিজমের মতো গুরুতর অসুখে ভোগেন, যার একটি অন্যতম কারণ হল কোলিন, আয়োডিন বা প্রয়োজনীয় কিছু ফ্যাটি অ্যাসিডের অভাব। এই উপাদানগুলি কিন্তু আমরা অনায়াসেই পেতে পারি সামুদ্রিক মাছ থেকে। ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয় মানুষের মধ্যে সামুদ্রিক মাছের গুরুত্ব সঠিকভাবে বোঝানোর জন্য কিছু প্রচারমূলক কর্মসূচি আমাদের গ্রহণ করা উচিত। যেমন রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে এবং বিভিন্ন এনজিওগুলির তরফ থেকেও কিছু কর্মসূচির উদ্যোগ নেওয়া উচিত। এই কর্মসূচিগুলির মাধ্যমে জনসাধারণের মধ্যে শারীরিক সক্ষমতা ও পৌষ্টিক গুণাগুণ বৃদ্ধিতে সামুদ্রিক মাছের ভূমিকা সম্পর্কে কিছু প্রচারবার্তা ছড়িয়ে দিতে হবে। পাশাপাশি যে অণুপুষ্টি বা মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টসগুলি সামুদ্রিক মাছ থেকেই কেবল পাওয়া যায় সেগুলির অভাবে মানুষ কী কী ধরনের শারীরিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে, সে বিষয়েও বিস্তারিতভাবে প্রচারকার্য চালানো প্রয়োজন।

বর্তমান সময় আমরা ওষুধের ওপর আমাদের গোটা জীবনটাই প্রায় ছেড়ে দিয়েছি। ওষুধের ওপর নির্ভরতা খানিকটা কমিয়ে আমরা যদি কিছুটা হলেও আমাদের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে পারি তাহলে আমাদের জীবনের সামগ্রিক পরিকাঠামোতে কিন্তু অনেকটাই বদল আনা সম্ভবপর হতে পারে। ঠিক তেমনই মিষ্টি জলের মাছের পাশাপাশি সামুদ্রিক মাছ খাওয়ার অভ্যাসও কিন্তু ওষুধের প্রতি নির্ভরতা থেকে আমাদেরকে অনেকটাই মুক্তি দিতে পারে। তাই খাদ্যাভ্যাস বদলান, ওষুধ নির্ভরতা থেকে বেরোন, সুস্থ থাকুন, মাছেভাতে থাকুন।

* বাঙালির মৎস্যপুরাণ (Bangalir Matsya Purana – Fish) : ড. প্রতাপ মুখোপাধ্যায় (Pratap Mukhopadhyay) অবসরপ্রাপ্ত প্রধান মৎস্যবিজ্ঞানী, ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান পরিষদ, ভারত সরকার।
 

অনুলিখন: সুমন্ত দাস


Skip to content