ছবি প্রতীকী, সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে
বার্ধক্যে পুষ্টি সংক্রান্ত আলোচনায় আজকে আমরা জেনে নেব খাবারের তালিকায় কী কী উপাদান থাকা আবশ্যক এবং উপাদানগুলো কোথায় পাওয়া যাবে?
প্রতিদিন খাবারের তালিকায় থাকবে পর্যাপ্ত পরিমাণ ফল ও শাকসবজি
দৈনিক যেকোনও একটি বা দুটি ফল খাদ্যতালিকায় রাখুন। সেটা হতে পারে কলা, আপেল, কমলা, লিচু, পেঁপে, আম, নাশপাতি, বেদানা, পেয়ারা ইত্যাদি। অবশ্যই ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে কলা, লিচু, আম ইত্যাদি চলবে না। শাকসবজির ক্ষেত্রে টাটকা সবুজ সবজি তালিকায় রাখুন। তবে লক্ষ রাখবেন হজমে সমস্যা হচ্ছে কি না। পালংশাক, ব্রকলি, বাঁধাকপি, রংবেরঙের সবজি যেমন বেগুন, গাজর, টমেটো ইত্যাদিতে খনিজ ও ভিটামিন প্রচুর পরিমাণে থাকে। কিন্তু গ্যাস্ট্রিকের বা হজমের সমস্যা হলে সহজে হজম হয় এমন সবজি যেমন কাঁচা পেঁপে, লাউ ইত্যাদি খেতে পারেন। যাঁদের ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম আছে তাঁদের শাকজাতীয় খাবার গ্রহণ না করাই বাঞ্ছনীয়।
থাকতে হবে পর্যাপ্ত প্রোটিন
যদিও বয়স্কদের পেশিলুপ্তিকে বন্ধ করার জন্য যথেষ্ট প্রোটিন বা আমিষ প্রয়োজন, তবুও লক্ষ রাখতে হবে এই আমিষ প্রয়োজনের তুলনায় যেন বেশি না খাওয়া হয়। অধিক বয়সে বৃক্ক বা কিডনির কার্যকারিতা কমে যেতে থাকে। এতে অতিরিক্ত প্রোটিন এই বৃক্কের ওপর অবর্ণনীয় চাপ সৃষ্টি করতে পারে। অতএব আপনাদের খেতে হবে পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিন। তবে প্রোটিন গ্রহণের ক্ষেত্রে মাছ, মুরগি, মটরশুঁটি, ডাল, ডিম, বাদাম এবং যেকোনও সবজির বীজ খেতে পারেন। তবে কিডনির সমস্যা ও ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে থাকলে প্রোটিন গ্রহণের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের অবশ্যই পরামর্শ নিতে হবে। আমার চিকিৎসক জীবনের অভিজ্ঞতায় দেখেছি বহু প্রবীণ মানুষ প্রোটিনের অভাবে হাইপো প্রোটিনিমিয়া মূলত অ্যালবুমিন-এর অভাবে ভোগেন এবং যার কারণে হাত-পা এমনকী সারা শরীর ফুলে যায়। কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে প্রয়োজন হলে অ্যালবুমিন ইনফিউশন পর্যন্ত দিতে হয়। তাই বয়স্কদের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে পরিমিত প্রোটিন ভীষণভাবে আবশ্যিক।
সব ফ্যাটই কিন্তু খারাপ নয়
অনেকের ধারণা ফ্যাট মাত্রই খারাপ। বরং আমাদের শরীরে কোষের অন্যতম উপাদান ফ্যাট। তাছাড়া কিছু ফ্যাট হার্ট, মস্তিষ্ককে পর্যন্ত ভালো রাখতে সহায়তা করে। ক্যালোরিরও অন্যতম উৎস কিন্তু ফ্যাট। তাই ফ্যাট সম্পূর্ণ বাদ না দিয়ে ভালো ফ্যাটগুলো বেছে নিন। যেমন ওমেগা-৩ যুক্ত চর্বি মাছ বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছ এবং বাদাম ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডে পরিপূর্ণ। এসব খাবার মস্তিষ্ককে সতেজ রাখে ও আলঝেইমার প্রতিরোধে সহায়ক। স্যাচুরেটেড ফ্যাট যুক্ত খাবার যেমন বিস্কুট, কেক, পেস্ট্রি, প্রসেসড মিট, বার্গার, ভাজাভুজি, পটেটো চিপস, ক্রিপস, পিৎজা ইত্যাদি অবশ্যই বয়স্কদের জন্য বর্জনীয়।
সুষম খাদ্য আর সঙ্গে প্রয়োজন বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদান ও ভিটামিন
খাদ্যতালিকায় যেমন খাদ্য উপাদানের মূল খাদ্য শর্করা, প্রোটিন ও লিপিড যথোপযুক্ত পরিমাণে থাকা প্রয়োজন তেমনি প্রবীণদের সামগ্রিক শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যকে সুস্থ রাখতে প্রয়োজন বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ লবণ বা উপাদান-এর সঠিক মাত্রায় উপস্থিতি। যেমন ভিটামিন বি কমপ্লেক্স-এর অন্তর্গত ভিটামিনগুলো আমাদের শরীরের বিভিন্ন বিপাকীয় প্রক্রিয়ায় কো-এনজাইম ফ্যাক্টর হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ন্যাশনাল হেলথ অ্যান্ড নিউট্রিশন এগজামিনেশন সার্ভে (এনএইচএএনইএস)-এর প্রদত্ত সমীক্ষা বলছে এদেশের প্রবীণদের ৩০ থেকে ৭০ শতাংশ মানুষের খাদ্যতালিকায় প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ লবণের ইএআর (এস্টিমেটেড অ্যাভারেজ রিকোয়্যারমেন্ট) অনুপাতে ঘাটতি থাকে।
যে সমস্ত ভিটামিন প্রয়োজন
প্রতিটি ভিটামিনই গুরুত্বপূর্ণ হলেও লক্ষ রাখতে হবে বয়স্কদের ক্ষেত্রে যেন ভিটামিন বি কমপ্লেক্স বিশেষত বি১, বি২, বি৩, বি৫, বি৬, বি১২, ফলিক অ্যাসিড, এছাড়াও ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি, ভিটামিন-ই ইএআর (এস্টিমেটেড অ্যাভারেজ রিকোয়্যারমেন্ট) অনুপাতে থাকে।
যে সমস্ত খনিজ লবণ প্রয়োজন
খনিজ লবণ আমাদের শরীরে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শরীরের ওজনের মাত্র ০.০১ শতাংশ মাত্রায় বিদ্যমান এই ‘ট্রেস এলিমেন্টগুলো’ শরীরের বিভিন্ন এনজাইম, হরমোন এবং কোষকলার অংশবিশেষ হওয়ায় এগুলোও শরীরের জন্য অপরিহার্য। স্বল্প মাত্রার অথচ পুষ্টিকর এসব উপাদানকেই ‘এসেনশিয়াল ট্রেস এলিমেন্টস’ বলা হয়। হৃৎপিণ্ড থেকে শুরু করে অস্থি, কিডনি, পেশির কার্যকারিতা, এমনকী মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বয়স্কদের ক্ষেত্রে সোডিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন, ক্যালশিয়াম, জিঙ্ক, ম্যাগনেশিয়াম, কপার, সেলেনিয়াম, ফসফরাস, আয়োডিন, ম্যাঙ্গানিজ, কোবাল্ট, ক্রোমিয়াম ইত্যাদি ইএআর (এস্টিমেটেড অ্যাভারেজ রিকোয়্যারমেন্ট) অনুপাতে থাকা ভীষণ জরুরি।
কোথায় পাওয়া যাবে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স?
● মুরগির মাংস
● স্যামন, পাঙ্গাশ সহ বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ
● ডিম
● দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার
● শিম ও মটরশুঁটি
● কলা
● সবুজ শাকসবজি
● বাদাম
● সূর্যমুখী ও কুমড়োর বীজ
● গোরুর মাংস বিশেষ করে কলিজা।
কোথায় পাবেন ভিটামিন সি?
লেবু ও লেবুজাতীয় সব টক ফল ভিটামিন সি-র চমৎকার উৎস। কমলা, মাল্টা, আঙুর, পেঁপে, আনারস, জাম ইত্যাদি ফলে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি। সবুজ পাতা গোত্রের সব সবজি ও শাকেও পাওয়া যাবে এই ভিটামিন। এ ছাড়া কাঁচালংকা, পুদিনাপাতা বা পার্সলে পাতা ভিটামিন সির ভালো উৎস।
কোথায় পাবেন ভিটামিন-ই?
প্রচুর খাবারে ভিটামিন-ই রয়েছে। বিভিন্ন খাবার যেমন চীনাবাদাম, আখরোট, বাদাম, উদ্ভিজ্জ তেল, কুসুম, গম, সয়াবিন এবং সূর্যমুখী ইত্যাদিতে ভিটামিন-ই প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়।
ভিটামিন ডি জাতীয় খাবার কী কী?
সামুদ্রিক, তৈলাক্ত এবং চর্বিযুক্ত মাছ, ডিমের কুসুম, মাশরুম, কমলার জুস, দুধ, ওটমিল, পনির, মাখন, ছানা, দই, গম, রাগী, বার্লি, বাদাম৷
সামগ্রিকভাবে কোন কোন খাবারে রয়েছে খনিজ লবণ?
মাংস, কলিজা, সামুদ্রিক মাছ, শিমজাতীয় সবজি, বাদাম, সম্পূর্ণ শস্যদানা যেমন; বাদামি চাল, কলা, আপেল, মুসাম্বি লেবু, গাঢ় সবুজ শাক-সবজি, পাকা টমেটো, লেটুস, পেঁয়াজ, গোলমরিচ এবং বিভিন্ন মশলা, ডালজাতীয় শস্য, চা, কফি, ডাবের জল ইত্যাদি খাদ্য হল সামগ্রিকভাবে খনিজ লবণের উৎস। আয়োডিনযুক্ত লবণ আয়োডিনের প্রধান উৎস।
খাদ্যতালিকায় ফাইবার রয়েছে তো?
বয়সের সঙ্গে সঙ্গে হজমশক্তি কমে যায়, পরিপাকতন্ত্রের চলন কমে যাওয়ার জন্য কোষ্ঠকাঠিন্য হয়, তাই খাদ্যতালিকায় ফাইবার রাখা জরুরি। হোলগ্রেন রাইস, লাল আটা বা ওটসে আছে ফাইবার। ফলমূল ও শাকসবজিতেও আছে। দরকার হলে ইসবগুল ইত্যাদি নিতে পারেন।
পর্যাপ্ত ক্যালশিয়াম রয়েছে তো খাবারে?
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যেহেতু আমাদের হাড় ক্ষয় হতে শুরু করে, তাই প্রতিদিনের রুটিনে পর্যাপ্ত ক্যালশিয়াম রাখা অত্যন্ত জরুরি। এতে অস্টিওপোরোসিস এবং হাড় ভাঙার মতো সমস্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব। ক্যালশিয়ামের কিছু ভালো উৎস হল দুধ, দই, চিজ, দুধের তৈরি যেকোনও খাবার, এর বাইরে ব্রকলি, টফু, বাদাম, বাঁধাকপি, শুকনো ফল যেমন কাঠ বাদাম ইত্যাদি।
ভোজ্য তেল কী হবে?
বেশিরভাগ সময়ই প্রবীণদের জন্য ভোজ্য তেল কী হওয়া উচিত এই নিয়ে বিভিন্ন দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। এত ভাবার কিছু নেই। আমাদের দেশে প্রচলিত সরষের তেলও কিন্তু বেশ স্বাস্থ্যকর। কিন্তু একই তেল গরম করে বারবার রান্না করা উচিত নয়। এক্ষেত্রে খাদ্যগুণ নষ্ট হয়ে যায়।
আমেরিকান হার্ট ফাউন্ডেশনের সুপারিশ অনুযায়ী নিম্নলিখিত ভোজ্য তেলগুলোতে খারাপ লিপিড অর্থাৎ ট্রান্স ও স্যাচুরেটেড ফ্যাটি আ্যসিডের বদলে ভালো লিপিডের অর্থাৎ মনো ও পলি স্যাচুরেটেড ফ্যাটি আ্যসিডের প্রাধান্যের কারণে প্রবীণদের জন্য স্বাস্থ্যকর বলা হয়েছে—
● অলিভ তেল
● সূর্যমুখী তেল
● সরষের তেল
● সয়াবিন তেল
● ক্যানোলা তেল
● কর্ন বা ভুট্টার তেল
● চীনা বাদাম তেল
● কুসুম ফুলের তেল
এছাড়া বিশেষজ্ঞরা উক্ত তেলগুলোর সংমিশ্রণে তৈরি তেলের ব্যবহারকে অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর বলে মনে করেন।
লেখক: কর্ণধার ‘বাঁচবো’, সহ সম্পাদক জেরিয়াট্রিক সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া, পশ্চিমবঙ্গ শাখা৷ উপদেষ্টা, প্রোটেক্ট দ্যা ওয়ারিয়ার্স। যোগাযোগ : ‘বাঁচবো’, ফোন : ৯৯০৩৩৮৮৫৫৬
দৈনিক যেকোনও একটি বা দুটি ফল খাদ্যতালিকায় রাখুন। সেটা হতে পারে কলা, আপেল, কমলা, লিচু, পেঁপে, আম, নাশপাতি, বেদানা, পেয়ারা ইত্যাদি। অবশ্যই ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে কলা, লিচু, আম ইত্যাদি চলবে না। শাকসবজির ক্ষেত্রে টাটকা সবুজ সবজি তালিকায় রাখুন। তবে লক্ষ রাখবেন হজমে সমস্যা হচ্ছে কি না। পালংশাক, ব্রকলি, বাঁধাকপি, রংবেরঙের সবজি যেমন বেগুন, গাজর, টমেটো ইত্যাদিতে খনিজ ও ভিটামিন প্রচুর পরিমাণে থাকে। কিন্তু গ্যাস্ট্রিকের বা হজমের সমস্যা হলে সহজে হজম হয় এমন সবজি যেমন কাঁচা পেঁপে, লাউ ইত্যাদি খেতে পারেন। যাঁদের ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম আছে তাঁদের শাকজাতীয় খাবার গ্রহণ না করাই বাঞ্ছনীয়।
যদিও বয়স্কদের পেশিলুপ্তিকে বন্ধ করার জন্য যথেষ্ট প্রোটিন বা আমিষ প্রয়োজন, তবুও লক্ষ রাখতে হবে এই আমিষ প্রয়োজনের তুলনায় যেন বেশি না খাওয়া হয়। অধিক বয়সে বৃক্ক বা কিডনির কার্যকারিতা কমে যেতে থাকে। এতে অতিরিক্ত প্রোটিন এই বৃক্কের ওপর অবর্ণনীয় চাপ সৃষ্টি করতে পারে। অতএব আপনাদের খেতে হবে পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিন। তবে প্রোটিন গ্রহণের ক্ষেত্রে মাছ, মুরগি, মটরশুঁটি, ডাল, ডিম, বাদাম এবং যেকোনও সবজির বীজ খেতে পারেন। তবে কিডনির সমস্যা ও ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে থাকলে প্রোটিন গ্রহণের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের অবশ্যই পরামর্শ নিতে হবে। আমার চিকিৎসক জীবনের অভিজ্ঞতায় দেখেছি বহু প্রবীণ মানুষ প্রোটিনের অভাবে হাইপো প্রোটিনিমিয়া মূলত অ্যালবুমিন-এর অভাবে ভোগেন এবং যার কারণে হাত-পা এমনকী সারা শরীর ফুলে যায়। কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে প্রয়োজন হলে অ্যালবুমিন ইনফিউশন পর্যন্ত দিতে হয়। তাই বয়স্কদের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে পরিমিত প্রোটিন ভীষণভাবে আবশ্যিক।
অনেকের ধারণা ফ্যাট মাত্রই খারাপ। বরং আমাদের শরীরে কোষের অন্যতম উপাদান ফ্যাট। তাছাড়া কিছু ফ্যাট হার্ট, মস্তিষ্ককে পর্যন্ত ভালো রাখতে সহায়তা করে। ক্যালোরিরও অন্যতম উৎস কিন্তু ফ্যাট। তাই ফ্যাট সম্পূর্ণ বাদ না দিয়ে ভালো ফ্যাটগুলো বেছে নিন। যেমন ওমেগা-৩ যুক্ত চর্বি মাছ বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছ এবং বাদাম ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডে পরিপূর্ণ। এসব খাবার মস্তিষ্ককে সতেজ রাখে ও আলঝেইমার প্রতিরোধে সহায়ক। স্যাচুরেটেড ফ্যাট যুক্ত খাবার যেমন বিস্কুট, কেক, পেস্ট্রি, প্রসেসড মিট, বার্গার, ভাজাভুজি, পটেটো চিপস, ক্রিপস, পিৎজা ইত্যাদি অবশ্যই বয়স্কদের জন্য বর্জনীয়।
খাদ্যতালিকায় যেমন খাদ্য উপাদানের মূল খাদ্য শর্করা, প্রোটিন ও লিপিড যথোপযুক্ত পরিমাণে থাকা প্রয়োজন তেমনি প্রবীণদের সামগ্রিক শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যকে সুস্থ রাখতে প্রয়োজন বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ লবণ বা উপাদান-এর সঠিক মাত্রায় উপস্থিতি। যেমন ভিটামিন বি কমপ্লেক্স-এর অন্তর্গত ভিটামিনগুলো আমাদের শরীরের বিভিন্ন বিপাকীয় প্রক্রিয়ায় কো-এনজাইম ফ্যাক্টর হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ন্যাশনাল হেলথ অ্যান্ড নিউট্রিশন এগজামিনেশন সার্ভে (এনএইচএএনইএস)-এর প্রদত্ত সমীক্ষা বলছে এদেশের প্রবীণদের ৩০ থেকে ৭০ শতাংশ মানুষের খাদ্যতালিকায় প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ লবণের ইএআর (এস্টিমেটেড অ্যাভারেজ রিকোয়্যারমেন্ট) অনুপাতে ঘাটতি থাকে।
প্রতিটি ভিটামিনই গুরুত্বপূর্ণ হলেও লক্ষ রাখতে হবে বয়স্কদের ক্ষেত্রে যেন ভিটামিন বি কমপ্লেক্স বিশেষত বি১, বি২, বি৩, বি৫, বি৬, বি১২, ফলিক অ্যাসিড, এছাড়াও ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি, ভিটামিন-ই ইএআর (এস্টিমেটেড অ্যাভারেজ রিকোয়্যারমেন্ট) অনুপাতে থাকে।
খনিজ লবণ আমাদের শরীরে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শরীরের ওজনের মাত্র ০.০১ শতাংশ মাত্রায় বিদ্যমান এই ‘ট্রেস এলিমেন্টগুলো’ শরীরের বিভিন্ন এনজাইম, হরমোন এবং কোষকলার অংশবিশেষ হওয়ায় এগুলোও শরীরের জন্য অপরিহার্য। স্বল্প মাত্রার অথচ পুষ্টিকর এসব উপাদানকেই ‘এসেনশিয়াল ট্রেস এলিমেন্টস’ বলা হয়। হৃৎপিণ্ড থেকে শুরু করে অস্থি, কিডনি, পেশির কার্যকারিতা, এমনকী মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বয়স্কদের ক্ষেত্রে সোডিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন, ক্যালশিয়াম, জিঙ্ক, ম্যাগনেশিয়াম, কপার, সেলেনিয়াম, ফসফরাস, আয়োডিন, ম্যাঙ্গানিজ, কোবাল্ট, ক্রোমিয়াম ইত্যাদি ইএআর (এস্টিমেটেড অ্যাভারেজ রিকোয়্যারমেন্ট) অনুপাতে থাকা ভীষণ জরুরি।
লেবু ও লেবুজাতীয় সব টক ফল ভিটামিন সি-র চমৎকার উৎস। কমলা, মাল্টা, আঙুর, পেঁপে, আনারস, জাম ইত্যাদি ফলে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি। সবুজ পাতা গোত্রের সব সবজি ও শাকেও পাওয়া যাবে এই ভিটামিন। এ ছাড়া কাঁচালংকা, পুদিনাপাতা বা পার্সলে পাতা ভিটামিন সির ভালো উৎস।
প্রচুর খাবারে ভিটামিন-ই রয়েছে। বিভিন্ন খাবার যেমন চীনাবাদাম, আখরোট, বাদাম, উদ্ভিজ্জ তেল, কুসুম, গম, সয়াবিন এবং সূর্যমুখী ইত্যাদিতে ভিটামিন-ই প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়।
সামুদ্রিক, তৈলাক্ত এবং চর্বিযুক্ত মাছ, ডিমের কুসুম, মাশরুম, কমলার জুস, দুধ, ওটমিল, পনির, মাখন, ছানা, দই, গম, রাগী, বার্লি, বাদাম৷
মাংস, কলিজা, সামুদ্রিক মাছ, শিমজাতীয় সবজি, বাদাম, সম্পূর্ণ শস্যদানা যেমন; বাদামি চাল, কলা, আপেল, মুসাম্বি লেবু, গাঢ় সবুজ শাক-সবজি, পাকা টমেটো, লেটুস, পেঁয়াজ, গোলমরিচ এবং বিভিন্ন মশলা, ডালজাতীয় শস্য, চা, কফি, ডাবের জল ইত্যাদি খাদ্য হল সামগ্রিকভাবে খনিজ লবণের উৎস। আয়োডিনযুক্ত লবণ আয়োডিনের প্রধান উৎস।
বয়সের সঙ্গে সঙ্গে হজমশক্তি কমে যায়, পরিপাকতন্ত্রের চলন কমে যাওয়ার জন্য কোষ্ঠকাঠিন্য হয়, তাই খাদ্যতালিকায় ফাইবার রাখা জরুরি। হোলগ্রেন রাইস, লাল আটা বা ওটসে আছে ফাইবার। ফলমূল ও শাকসবজিতেও আছে। দরকার হলে ইসবগুল ইত্যাদি নিতে পারেন।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যেহেতু আমাদের হাড় ক্ষয় হতে শুরু করে, তাই প্রতিদিনের রুটিনে পর্যাপ্ত ক্যালশিয়াম রাখা অত্যন্ত জরুরি। এতে অস্টিওপোরোসিস এবং হাড় ভাঙার মতো সমস্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব। ক্যালশিয়ামের কিছু ভালো উৎস হল দুধ, দই, চিজ, দুধের তৈরি যেকোনও খাবার, এর বাইরে ব্রকলি, টফু, বাদাম, বাঁধাকপি, শুকনো ফল যেমন কাঠ বাদাম ইত্যাদি।
বেশিরভাগ সময়ই প্রবীণদের জন্য ভোজ্য তেল কী হওয়া উচিত এই নিয়ে বিভিন্ন দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। এত ভাবার কিছু নেই। আমাদের দেশে প্রচলিত সরষের তেলও কিন্তু বেশ স্বাস্থ্যকর। কিন্তু একই তেল গরম করে বারবার রান্না করা উচিত নয়। এক্ষেত্রে খাদ্যগুণ নষ্ট হয়ে যায়।
আমেরিকান হার্ট ফাউন্ডেশনের সুপারিশ অনুযায়ী নিম্নলিখিত ভোজ্য তেলগুলোতে খারাপ লিপিড অর্থাৎ ট্রান্স ও স্যাচুরেটেড ফ্যাটি আ্যসিডের বদলে ভালো লিপিডের অর্থাৎ মনো ও পলি স্যাচুরেটেড ফ্যাটি আ্যসিডের প্রাধান্যের কারণে প্রবীণদের জন্য স্বাস্থ্যকর বলা হয়েছে—
এছাড়া বিশেষজ্ঞরা উক্ত তেলগুলোর সংমিশ্রণে তৈরি তেলের ব্যবহারকে অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর বলে মনে করেন।
লেখক: কর্ণধার ‘বাঁচবো’, সহ সম্পাদক জেরিয়াট্রিক সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া, পশ্চিমবঙ্গ শাখা৷ উপদেষ্টা, প্রোটেক্ট দ্যা ওয়ারিয়ার্স। যোগাযোগ : ‘বাঁচবো’, ফোন : ৯৯০৩৩৮৮৫৫৬