শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪


অলঙ্করণ : সৌরভ চক্রবর্তী

স্কুলের দিনগুলোর কথা ভাবলে একটা নস্টালজিক ফিলিং শুধু আমার নয়, সবারই হয়। আমাদের জীবন গড়ে ওঠার প্রথম বুনিয়াদ কিন্তু আমাদের স্কুল শিক্ষা। জীবনের এতগুলো বছর পার হয়ে এসে যখন পিছন ফিরে তাকাই, তখন স্কুলের সেই সোনা-ঝরা দিনগুলোর অসংখ্য স্মৃতি হৃদয়ের মণিকোঠায় মাঝে মাঝে চিনচিন করে ওঠে। আনন্দ-বিষাদে গড়া সেই সব স্মৃতি। মাস্টারমশাইদের মুখগুলো মাঝে মাঝে মনে পড়ে, যাদের কেউই আজ আর বেঁচে নেই। অথচ তাদের কাছেই জীবন গড়ার প্রথম পাঠ পেয়েছিলাম।

আমার জীবনের প্রথম স্কুলের নাম ছিল মডেল কেজি স্কুল। সেই আমলে ইংরেজি স্কুল ছিল হাতে গোনা। বাবা-কাকারা আমাকে ছোটবেলা থেকেই পণ্ডিত বানাবেন বলে নিজেরা অনেক কষ্ট সহ্য করেও ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি করিয়ে ছিলেন। মনে আছে বৈদ্যনাথকাকার স্কুলভ্যানে আমরা হইহই করে স্কুলে যেতাম বাড়ি থেকে তিন কিলোমিটার দূরে। স্কুলে আমাদের নামিয়ে দিয়ে পরের ব্যাচ আনতে আবার গাড়ি ছুটত। সেই ফাঁকে আমরা চুটিয়ে ডাংগুলি খেলতাম, এ যুগের ছেলেমেয়েরা যে খেলার নামই জানে না। সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হল, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে লেখাপড়ার পাশাপাশি আমি শিখিয়েছিলাম ডাংগুলি খেলা এবং হুটোপাটি-মারামারি করা। প্রাইমারি স্কুলের অনেক স্মৃতিই এখন হারিয়ে গেছে। তবে মনে আছে, স্কুলে ভর্তি হওয়ার প্রথম দু-তিন দিন আমাকে ঘুমপাড়ানি ক্লাসে নিয়ে গিয়ে মেঝেতে পাতা বিছানায় জোর করে এক ঘণ্টা ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা হত। এই ধরনের ক্লাস বোধহয় এখন আর কোনও স্কুলেই নেই।

ক্লাস ফাইভে আমি ভর্তি হই স্থানীয় হরদয়াল নাগ আদর্শ বিদ্যালয়ে। ক্লাস এইট অব্দি সেখানেই ছিলাম অর্থাৎ চার বছর। প্রচণ্ড রাজনৈতিক হট্টগোল শুরু হওয়াতে সেই স্কুল থেকে গার্জিয়ানরা আমাকে অন্য স্কুলে নিয়ে যান ক্লাস নাইনে। হরদয়াল নাগ স্কুলে সেই সময় হেডমাস্টার হিসেবে পেয়েছিলাম শশাঙ্কশেখরবাবুকে। গৌরবর্ণ দীর্ঘ সুদর্শন চেহারার মানুষটি বড্ড কড়া ধাতের ছিলেন। রেগে গেলে ফরসা মুখটা লাল টকটকে লাগত, আমরা ভয়ে কাঁপতাম৷ উনি যেদিন আসতেন না, সারা ক্লাসে আনন্দের ঝড় বয়ে যেত। মনে পড়ে দুর্গাদাস স্যারের কথা। আদর্শবাদী কমিউনিস্ট এই মানুষটি অসাধারণ বাগ্মী ছিলেন। আমরা মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাঁর কাছে শুনতাম বিশ্বের নানা ইতিহাস। দামবাবুর কথা মনে পড়ে। উত্তর দিতে না পারলে যিনি সরাসরি ডাস্টার ছুঁড়ে মারতেন আমাদের দিকে। পণ্ডিত মশাই-এর কথা মনে আছে, যিনি বলতেন, দুষ্টুমি করলে পিছনে বেত দিয়ে দেব, বেত মারব কথাটা উনি কোনও সময় বলতেন না। ফাইভ থেকে এইট, প্রতিটি ক্লাসেই আমি প্রথম হতাম। অনেক প্রাইজও পেয়েছি। স্কুলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে মাস্টারমশাইদের আশীর্বাদ পেয়েছি। তবে স্পোর্টসে অংশ নিয়ে পুরস্কার পাওয়া দূরে থাক, প্রতি বিভাগেই লাস্ট হতাম।

ক্লাস নাইনে আমাকে ভর্তি করা হল নিমতা উচ্চ বিদ্যালয়ে। তখনও সেকেন্ডারি-হায়ার সেকেন্ডারি শুরু হয়নি। নাইন-টেন-ইলেভেন অর্থাৎ তিন বছর এখানে পড়াশোনা করে আমি উচ্চমাধ্যমিক পাশ করি প্রথম বিভাগে এবং ন্যাশনাল স্কলারশিপ পাই। নতুন স্কুলে এসে প্রথমে একটু মানিয়ে নিতে অসুবিধা হত। পরিমল কংসবণিক নামে যে ছেলেটি তখন ফার্স্টবয় ছিল, তার সঙ্গে স্বাভাবিক কারণে একটা দূরত্বও তৈরি হয়েছিল। তবে এই স্কুলে মাস্টারমশাইদের আমি খুব নিবিড়ভাবে পেয়েছিলাম। অনেক স্মৃতি আছে তাঁদের নিয়ে। দু-একটি মজার স্মৃতির কথাই বলি। প্রথমেই বলি দুই পরিতোষের গল্প, একজন বড় পরিতোষ অর্থাৎ ব-প, আরেকজন ছোট পরিতোষ অর্থাৎ ছো-প। বড় পরিতোষ অর্থাৎ পরিতোষ মুখোপাধ্যায় আমাদের বাংলা পড়াতেন। শ্যামবর্ণের দীর্ঘদেহী চেহারা, অসম্ভব উজ্জ্বল দুটি চোখ, মুখের দিকে তাকালে আমাদের ভয়ে হাড় হিম হয়ে যেত। বাঘের মতো তাঁকে ভয় করতাম আমরা। পিছনে বলতাম, কালো বাঘ। ভীষণ মারকুটে ছিলেন। হয়তো কোনও ছাত্রকে প্রশ্ন করেছেন, ছাত্রটি উত্তর দিচ্ছে। উনি ছাত্রর ডেস্কের সামনে দাঁড়িয়ে তাঁর একটা হাত নিয়ে আস্তে আস্তে টেবিলে ঠুকছেন। উত্তর দেওয়া বন্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে হাতটা সজোরে ঠুকে দিতেন টেবিল ডেস্কে। এছাড়া বেতের বাড়ি, দু আঙুলের ফাঁকে পেনসিল ঢুকিয়ে চাপ দেওয়া, নীলডাউন করানো, কিংবা প্রকাশ্যে খেলার মাঠে দুজনকে পরস্পরের কান ধরে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে রাখা, এগুলো তো ছিলই। ভীষণ ভালো পড়াতেন, বিশেষ করে ব্যাকরণ। আজ যে একটু বাংলা লিখতে পড়তে শিখেছি, সেটা পরিতোষ স্যারের দান। কিন্তু কেন তিনি এমন ছিলেন, ছাত্র পেটাতে এত ভালোবাসতেন কেন! শুনতাম যৌবনে কলেজে পড়ার সময় উনি এবং তিমির স্যার একই মেয়ের প্রেমে পড়েছিলেন, কিন্তু মেয়েটির বিয়ে হয় তিমির স্যারের সঙ্গে। যে কারণে পরবর্তী জীবনে স্যার আর বিয়ে করেননি৷ থাকতেন এক বালবিধবা দিদির আশ্রয়ে। তিমির স্যারও আমাদের স্কুলে পড়াতেন। অকালে টিবি রোগে উনি মারা যান। তবে পরিতোষ স্যারের এই আচরণ অনেকটাই কমে আসে একটি ঘটনার পর। একদিন স্কুলে তিনি এক ছাত্রকে মারতে মারতে বলেছিলেন, পড়াশোনা তো করিস না, বাপ-মায়ের অন্ন ধ্বংস না করে মরে যেতে পারিস না। সেদিন বিকেলে পাড়ার মাঠে খেলার সময় বাজ পড়ে সেই ছেলেটি মারা যায়। ব্যাপারটা নিঃসন্দেহে কাকতালীয়। কিন্তু এই মর্মান্তিক ঘটনা স্যারের মনোজগতে ভয়ংকর প্রভাব ফেলে।

পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বড্ড কঠিন করতেন পরিতোষ স্যার। ক্লাস টেনে হাফ ইয়ারলিতে এত কঠিন প্রশ্ন হল যে মাত্র তিনজন পাশ করল। তখন ৩৬ শতাংশ ছিল পাশ মার্ক। আমি পেলাম ৩৯। আমরা যারা ভালো ফলের আশা করতাম, তারা গ্র্যাজুয়েট-পোস্ট গ্র্যাজুয়েট লেভেলের বাংলাবই তখন ঘাঁটাঘাঁটি করতাম। এর সুফল বুঝেছিলাম পরে। সেবার বোর্ডের হায়ার সেকেন্ডারি পরীক্ষায় আমরা কয়েকজন সাতের ঘরে নাম্বার পেয়েছিলাম। তখন মাল্টিপল চয়েস কোশ্চেন ছিল না। ১০০-তে ১০০ পাওয়া যেত না। সে সময় আমরা যারা ৪০/৫০ পেতাম, এখন পরীক্ষায় বসলে ১০০-তে অন্তত ২০০ পেতাম। একটা ঘটনা মনে পড়ে গেল। আমরা নিমতা স্কুলে যেখানে ক্লাস করতাম, তার পাশেই ছিল একটি পুকুর, তারপর একটি মাঠ। এখন আর পুকুরটা নেই, মাঠটা আছে। পুকুরপাড়ে বসে অনেকেই মাছ ধরতেন। আমরা টিফিন পিরিয়ডে জানলা দিয়ে ঢিল ছুঁড়ে ওদের কাজে বাধা দিতাম। একবার একটা বড় ঢিল গিয়ে একজনের কপালে লাগে, রক্ত বের হতে থাকে। সেই অবস্থায় সে ছুটে আসে স্কুলে অভিযোগ জানাতে। হেডমাস্টারমশাই পরিতোষ স্যারকে আমাদের ক্লাসে পাঠান। তিনি বেত হাতে আমাদের ক্লাসে আসেন। জনে জনে জিজ্ঞাসা করেন, কে এই দুষ্কর্ম করেছে? আমরা কেউ কোনও উত্তর দিই না। স্যার আশ্চর্য হয়ে যান! বলেন, উত্তর না পেলে প্রত্যেককে উনি বেত মারবেন। আমরা যথারীতি নিরুত্তর থাকি৷ আমাদের প্রত্যেককে দু’হাতে দুটো করে বেত মারেন, তারপর বলেন, তোদের এই ইউনিটি যেন সারা জীবন থাকে। তবে এটা জীবনে ভালো কাজে লাগাস, এমন খারাপ কাজে নয়। কথাগুলো বলে বেতটা ছুঁড়ে ফেলে ক্লাসরুম ছেড়ে চলে যান। যাবার আগে স্যারের চোখে আগুনের পাশাপাশি জল দেখেছিলাম আমরা। স্যার চলে যাবার পর এই দুষ্কর্মের নায়ক, ক্লাসের সবথেকে বখাটে ছাত্র বিকাশ হাউ হাউ করে কান্নায় ভেঙে পড়ে। তারপর থেকেই আমূল পালটে যায় বিকাশ। ওর সঙ্গে এখনও যোগাযোগ আছে আমার। জীবনে সেভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি ও৷ কিন্তু অসহায় মা-বাবাকে নিজের কাছে রেখে আমৃত্যু সেবা করে গেছে। ওর ধনী দাদারা কিন্তু মা বাবার কোনও দায়িত্ব নেয়নি। আসলে বিকাশ সত্যিকারের মানুষ হওয়ার পাঠটা পরিতোষ স্যারের কাছেই শিখেছিল।

এই আপাত ভয়ংকর মানুষটার মধ্যে একটা স্নেহশীল বুভুক্ষ পিতৃহৃদয় লুকিয়ে আছে, বুঝেছিলাম স্কুল ছাড়ার অনেক পরে। আমি তখন ডাক্তারি শুরু করেছি। স্যারের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। নিমতা ইস্কুলের ১২ ক্লাসের পঠন-পাঠন শুরু হওয়ার সময় স্যারকে বাদ দেবার চেষ্টা হয়েছিল শিক্ষক তালিকা থেকে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে৷ আমরা ওঁর ছাত্ররা আন্দোলন-পিকেটিং করে সেই যাত্রায় কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করেছিলাম স্যারকে রাখতে। ডাক্তারি পরামর্শ নিতে স্যার মাঝে মাঝে আমার বাড়ি আসতেন। সবার সামনেই স্কুলছাত্রের মতো ধমকাতেন আমাকে, তবে মারধর করতেন না। কেন স্যারের খোঁজ নিই না, এমন অভিমান করতেন ছেলেমানুষের মতো। শুধু আমার নয়, স্থানীয় অনেক ছাত্রর বাড়িতে গিয়েও খোঁজখবর নিতেন। তাদের সন্তানদের পড়াশোনার ব্যাপারে পরামর্শ দিতেন। স্কুল ছাড়ার পর আমরা প্রাক্তনরা, আরও বেশি বেশি করে স্যারকে ভালোবাসতে শুরু করলাম। আমি তখন বিয়ে করেছি। আমার একমাত্র কন্যার বয়স তখন বছর তিনেক। স্যার আমার বাড়িতে এলে ওর সঙ্গে খেলতেন। বলতেন, তোর বাবাকে যেমন বকেছি-মেরেছি, তোকেও তাই করব। শক্ত শক্ত বাংলা শেখাতেন। মনে আছে ‘প্রক্ষালন’ শব্দটি বলেছিলেন আমার মেয়েকে, সকালে উঠে প্রথমে বাথরুমে গিয়ে প্রক্ষালন করবে। একবার স্যারের বাড়িতে গিয়েছি, মেয়ে হঠাৎ পটি করে ফেলল, আমরা তো লজ্জায় এক শেষ। আমার বউ তাড়াতাড়ি পরিষ্কারে হাত লাগানোর চেষ্টা করতেই, বউকে সরিয়ে দিয়ে স্যার নিজে পরিষ্কার করলেন। আমি আশ্চর্য হয়ে ভাবলাম, এই সেই ভয়ংকর মানুষ, এই সেই কালো বাঘ, এত স্নেহ ভালোবাসা তাহলে কোথায় লুকানো ছিল এতদিন!

স্যারের মৃত্যুটি বড় বেদনাদায়ক৷ একদিন ভোরবেলা কলিংবেলের শব্দে ঘুম ভাঙল। দোতলা থেকে উঁকি দিয়ে দেখলাম স্যার দাঁড়িয়ে আছেন। নীচে গিয়ে দরজা খুলে দিলাম। আমার ড্রয়িং রুমে বসালাম স্যারকে। ঝোলা থেকে একটা এক্স রে বার করে আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন, দেখে বল তো আমার খারাপ কিছু হয়েছে নাকি! দেখে তো আমার বুকটা ধক করে উঠল। স্যারের বাম ফুসফুসের মাঝামাঝি একটা বিরাট ডিম্বাকৃতি শ্যাডো। বুঝে গেলাম লাং ক্যানসার। শুরু হল স্যারকে বাঁচানোর লড়াই। রেডিয়েশন-কেমোথেরাপি সবই হল। কিছুদিন ভালো থাকার পর আবার ক্যানসারের ছোবল। রোগ ছড়িয়ে পড়তে লাগল দেহের অন্যান্য অংশেও। অসাধারণ মনের জোর ছিল স্যারের। বীরের মতো লড়েই যাচ্ছিলেন। কিন্তু এবার শরীরের সঙ্গে মনও ভাঙতে শুরু করল। স্যারকে দেখতে প্রায়ই যেতাম ওঁর বাড়িতে। দীর্ঘকায় কৃশ মানুষটি যেন আরও কৃশ হয়ে বিছানায় মিশে যাচ্ছেন ধীরে ধীরে। মৃত্যুর আগের দিন। হাসপাতাল থেকে বাড়িতে নিয়ে এসে রাখা হয়েছে। চোখ বুজে রয়েছেন। তবু আমার স্ত্রী ধৃতি স্যারকে বারবার ডাকার পর একটু চোখ খুললেন। ধৃতি স্যারের হাতটা মুঠোতে নিয়ে কান্না ভেজা গলায় বলল, স্যার আপনি আপনার ছাত্র, আপনার ছেলের টানে বারবার ছুটে গেছেন আমাদের বাড়িতে। আর হয়তো কোনওদিনই যাবেন না। অনেক কষ্টে ঠোঁটের কোণে হাসি এনে স্যার বললেন, শুধু কি মা ছেলের জন্যই যেতাম, তোমার জন্য যেতাম না।

স্যার আজ অকপটে স্বীকার করি, আমার জীবনের সেরা শিক্ষক আপনি। হ্যাঁ এটাও স্বীকার করি, অনেকদিন খুব ভোরবেলা যখন বেল বাজিয়ে আমাদের ঘুম ভাঙাতেন, আমরা মাঝে মাঝে সত্যিই বিরক্ত হয়েছি। বহু সময় তো কারণ ছাড়াই আসতেন। আজ বুঝি, সেই আসা ছিল, শুধুই স্বার্থহীন ভালোবাসার টানে, সন্তানসমদের মুখগুলো একবার দেখবার টানে। অত ভোরে সেই বেল আর কেউ বাজায় না স্যার। আপনি বাজাবেন আর একবার! কথা দিচ্ছি, এবার আর বিরক্ত হব না। আপনাকে যে খুব মিস করি স্যার।

Skip to content