ছবি সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে
বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী গিরিশচন্দ্র ঘোষ-এর নাট্যজীবনের পূর্ণাঙ্গ রূপ ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরেছেন অধ্যাপক অভিনেতা ড. শঙ্কর ঘোষ।
পর্ব- ৩
গিরিশচন্দ্রের শ্বশুরমশাই তাঁকে সওদাগরি অফিসের চাকরিতে ঢুকিয়ে দেন। তবে তাতে নাট্যপ্রীতি বা সংগীতপ্রীতির কোনও ঘাটতি হয়নি। ১৮৬৭ সালে বাগবাজার অ্যামেচার থিয়েটার প্রযোজিত মধুসূদনের ‘শর্মিষ্ঠা’ নাটকে গীতিকার হিসেবে নাট্যজগতে তিনি প্রবেশ করেন। ১৮৬৯ সালের অক্টোবর মাসে দুর্গাপূজার সময় বাগবাজারের মুখুজ্জেপাড়ায় প্রাণকৃষ্ণ হালদারের বাড়িতে দীনবন্ধু মিত্রের ‘সধবার একাদশী’র প্রথম অভিনয় হয়। এই নাটকে নিমচাঁদের ভূমিকায় গিরিশচন্দ্র রঙ্গমঞ্চে প্রথম অবতীর্ণ হন। অটলের চরিত্রে অভিনয় করেন অর্ধেন্দুশেখর মুস্তাফি। অতঃপর নানান উত্থানপতনের ইতিহাস। বারংবার বিভিন্ন সংস্থার প্রতিষ্ঠা, বিভিন্ন সংস্থায় যোগদান, অর্থ, যশ আবার ভাগ্যবিপর্যয় পালা করে চলতে থাকে।
গিরিশচন্দ্র প্রায় শতাধিক নাটক রচনা করেছিলেন। এর মধ্যে ৭৯টি নাটক বিভিন্ন প্রকারের। বারোটি নাটক কোনও না কোনও গ্রন্থের নাট্যরূপ হিসেবে লেখা। যেমন সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্রের দুর্গেশনন্দিনী, কপালকুণ্ডলা, মৃণালিনী, চন্দ্রশেখর, বিষবৃক্ষ, কৃষ্ণকান্তের উইল উপন্যাসগুলির নাট্যরূপ তিনি দিয়েছিলেন। রমেশচন্দ্র দত্তের মাধবীকঙ্কণ উপন্যাসের নাট্যরূপ তিনি দেন। মধুসূদন দত্তের মেঘনাদবধ কাব্যের নাট্যরূপ তিনি দিয়েছিলেন। নবীনচন্দ্র সেনের ‘পলাশীর যুদ্ধ’ কাব্যটির নাট্যরূপ তিনি দিয়েছিলেন। ‘মেঘনাদবধ কাব্যে’র নাট্যরূপ রাম ও মেঘনাদ উভয় চরিত্রে তাঁর অসাধারণ অভিনয় দেখে ‘সাধারণী’ পত্রিকার সম্পাদক অক্ষয়চন্দ্র সরকার গিরিশচন্দ্রকে ‘বঙ্গের গ্যারিক’ আখ্যায় ভূষিত করেছিলেন। তবে একথা মনে রাখা দরকার যে ইংল্যান্ডের বিখ্যাত অভিনেতা গ্যারিক নাট্যকার ছিলেন না। কিন্তু আমাদের গিরিশচন্দ্রের অনেক গুণ। নট হিসেবে তো বটেই, নাট্যকার হিসেবেও তাঁর কৃতিত্ব অবিস্মরণীয়। বাংলার সাধারণ রঙ্গমঞ্চের শিল্পীরা তাঁকে ‘নটগুরু’ বলেই প্রণাম করেন। শেক্সপিয়রের ম্যাকবেথ নাটকের অনুবাদ করে এবং স্বয়ং ম্যাকবেথ চরিত্রে অভিনয় করে গিরিশচন্দ্র কলকাতার নাট্যমোদী মহলে সাড়া জাগিয়েছিলেন।
২৩ বছর বয়সে প্রথম পুত্র লাভ করে গিরিশচন্দ্রের সে কী আনন্দ! কিন্তু সেই পুত্রের অকালপ্রয়াণ হয়। শোকাচ্ছন্ন হয়ে পড়েন তিনি। দ্বিতীয় পুত্র সুরেন্দ্রনাথের জন্ম হয় বছর দুই বাদে। সেই পুত্র বিখ্যাত দানীবাবু। একটি কন্যা হল সরোজিনী। গিরিশচন্দ্রের যখন ৩১ বছর বয়স তখন তাঁর পত্নীবিয়োগ হয়। পারিবারিক চাপে তাঁকে আবার বিয়ে করতে হয়। এবারের স্ত্রীর নাম সুরত কুমারী। থিয়েটারপ্রেমী এক মাড়োয়ারি প্রতাপচাঁদ জহুরী গিরিশচন্দ্রকে তাঁর নাট্যশালায় পুরো সময় দেওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি শুরু করলেন। এদিকে পার্কার সাহেব গিরিশচন্দ্রকে চাকরি ছাড়তে দিতে কিছুতেই রাজি হলেন না। তবু গিরিশচন্দ্র নাট্যশালাকে প্রাধান্য দিলেন। এই প্রথম গিরিশচন্দ্র থিয়েটারের কাজে বেতনভোগী হলেন। বাঙালির হৃদয়ানুভবের পাঁজরে হাত দিলেন; বুঝলেন রামায়ণ-মহাভারত বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনি বাঙালিকে আচ্ছাদিত করে রেখেছে।
ন্যাশনাল থিয়েটারে যখন তিনি অধ্যক্ষ ছিলেন তখন তার মালিক ছিলেন প্রতাপচাঁদ জহুরী। তিনি প্রচুর অর্থ উপার্জন করতে থাকেন কিন্তু শিল্পী-কলাকুশলীদের আর্থিক দাবিদাওয়ার প্রতি তিনি উদাসীন ছিলেন। সকলে গিরিশচন্দ্রের কাছেই অনুযোগ জানাতেন। অগত্যা গিরিশচন্দ্র প্রতাপচাঁদের থিয়েটার ছেড়ে বেরিয়ে এলেন দলবল নিয়ে। প্রথমে সবাই বিচলিত হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু এই সমস্যার সন্তোষজনক সমাধান পাওয়া গেল। প্রতাপচাঁদের থিয়েটারে নিয়মিত নাটক দেখতে আসতেন এক মাড়োয়ারি তরুণ-যুবক দর্শক। নাম তাঁর গুর্মুখ রায়। তিনি নতুন নাট্যশালা খুলবার প্রতিশ্রুতি দিলেন।
ছবি : লেখক
গিরিশচন্দ্র প্রায় শতাধিক নাটক রচনা করেছিলেন। এর মধ্যে ৭৯টি নাটক বিভিন্ন প্রকারের। বারোটি নাটক কোনও না কোনও গ্রন্থের নাট্যরূপ হিসেবে লেখা। যেমন সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্রের দুর্গেশনন্দিনী, কপালকুণ্ডলা, মৃণালিনী, চন্দ্রশেখর, বিষবৃক্ষ, কৃষ্ণকান্তের উইল উপন্যাসগুলির নাট্যরূপ তিনি দিয়েছিলেন। রমেশচন্দ্র দত্তের মাধবীকঙ্কণ উপন্যাসের নাট্যরূপ তিনি দেন। মধুসূদন দত্তের মেঘনাদবধ কাব্যের নাট্যরূপ তিনি দিয়েছিলেন। নবীনচন্দ্র সেনের ‘পলাশীর যুদ্ধ’ কাব্যটির নাট্যরূপ তিনি দিয়েছিলেন। ‘মেঘনাদবধ কাব্যে’র নাট্যরূপ রাম ও মেঘনাদ উভয় চরিত্রে তাঁর অসাধারণ অভিনয় দেখে ‘সাধারণী’ পত্রিকার সম্পাদক অক্ষয়চন্দ্র সরকার গিরিশচন্দ্রকে ‘বঙ্গের গ্যারিক’ আখ্যায় ভূষিত করেছিলেন। তবে একথা মনে রাখা দরকার যে ইংল্যান্ডের বিখ্যাত অভিনেতা গ্যারিক নাট্যকার ছিলেন না। কিন্তু আমাদের গিরিশচন্দ্রের অনেক গুণ। নট হিসেবে তো বটেই, নাট্যকার হিসেবেও তাঁর কৃতিত্ব অবিস্মরণীয়। বাংলার সাধারণ রঙ্গমঞ্চের শিল্পীরা তাঁকে ‘নটগুরু’ বলেই প্রণাম করেন। শেক্সপিয়রের ম্যাকবেথ নাটকের অনুবাদ করে এবং স্বয়ং ম্যাকবেথ চরিত্রে অভিনয় করে গিরিশচন্দ্র কলকাতার নাট্যমোদী মহলে সাড়া জাগিয়েছিলেন।
২৩ বছর বয়সে প্রথম পুত্র লাভ করে গিরিশচন্দ্রের সে কী আনন্দ! কিন্তু সেই পুত্রের অকালপ্রয়াণ হয়। শোকাচ্ছন্ন হয়ে পড়েন তিনি। দ্বিতীয় পুত্র সুরেন্দ্রনাথের জন্ম হয় বছর দুই বাদে। সেই পুত্র বিখ্যাত দানীবাবু। একটি কন্যা হল সরোজিনী। গিরিশচন্দ্রের যখন ৩১ বছর বয়স তখন তাঁর পত্নীবিয়োগ হয়। পারিবারিক চাপে তাঁকে আবার বিয়ে করতে হয়। এবারের স্ত্রীর নাম সুরত কুমারী। থিয়েটারপ্রেমী এক মাড়োয়ারি প্রতাপচাঁদ জহুরী গিরিশচন্দ্রকে তাঁর নাট্যশালায় পুরো সময় দেওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি শুরু করলেন। এদিকে পার্কার সাহেব গিরিশচন্দ্রকে চাকরি ছাড়তে দিতে কিছুতেই রাজি হলেন না। তবু গিরিশচন্দ্র নাট্যশালাকে প্রাধান্য দিলেন। এই প্রথম গিরিশচন্দ্র থিয়েটারের কাজে বেতনভোগী হলেন। বাঙালির হৃদয়ানুভবের পাঁজরে হাত দিলেন; বুঝলেন রামায়ণ-মহাভারত বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনি বাঙালিকে আচ্ছাদিত করে রেখেছে।
ন্যাশনাল থিয়েটারে যখন তিনি অধ্যক্ষ ছিলেন তখন তার মালিক ছিলেন প্রতাপচাঁদ জহুরী। তিনি প্রচুর অর্থ উপার্জন করতে থাকেন কিন্তু শিল্পী-কলাকুশলীদের আর্থিক দাবিদাওয়ার প্রতি তিনি উদাসীন ছিলেন। সকলে গিরিশচন্দ্রের কাছেই অনুযোগ জানাতেন। অগত্যা গিরিশচন্দ্র প্রতাপচাঁদের থিয়েটার ছেড়ে বেরিয়ে এলেন দলবল নিয়ে। প্রথমে সবাই বিচলিত হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু এই সমস্যার সন্তোষজনক সমাধান পাওয়া গেল। প্রতাপচাঁদের থিয়েটারে নিয়মিত নাটক দেখতে আসতেন এক মাড়োয়ারি তরুণ-যুবক দর্শক। নাম তাঁর গুর্মুখ রায়। তিনি নতুন নাট্যশালা খুলবার প্রতিশ্রুতি দিলেন।
ছবি : লেখক