ছবি : ঔর্ব চক্রবর্তী
বাসস্থান ও আবাসস্থলকে বলা হয় বাস্তু৷ আর বাসস্থান ও তৎসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলি যে শাস্ত্রে বর্ণনা করা হয়, সেই শাস্ত্রকে বলে বাস্তুশাস্ত্র৷ মুখ্যত বাস্তুশাস্ত্রের অন্তর্গত ভূমি সম্পর্কিত নগর ইত্যাদির নির্মাণ এবং গৃহের প্রধান অঙ্গ—যেমন, পুকুর, কুয়ো, জলাশয়, উদ্যান, বৃক্ষরোপণ ইত্যাদি বিষয়গুলি বর্ণনা করা হয় বাস্তুশাস্ত্রে৷
বাস্তুশাস্ত্রের সঙ্গে স্থাপত্যকলারও সম্পর্ক আছে৷ ঋগ্বেদ ও অথর্ববেদে এর উল্লেখ পাওয়া যায়৷ যদিও এটি একটা পৃথক শাস্ত্র, তবুও এর পরবর্তী আরও অনেক গ্রন্থ আছে৷ এ ক্ষেত্রে ‘বিশ্বকর্মা শিল্পম্’, ‘ময় শিল্পম্’, ‘বাস্তু রাজ বল্লভ’, ‘সমরাঙ্গন সূত্রধার’ উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ৷ মৎস্যপুরাণ, বিষ্ণুধর্মোত্তরপুরাণ, অগ্নিপুরাণ এবং গরুড়পুরাণ ইত্যাদিতে বাস্তুশাস্ত্র সম্পর্কীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি বর্ণনা করা হয়েছে৷
বাস্তু শব্দটি ‘বস্ নিবাস’ ধাতু থেকে নিষ্পন্ন হয়, যাকে বলা হয় বাসস্থান৷ এর মধ্যে গৃহ, দেবপ্রাসাদ, গ্রাম, নগর, পুরী, দুর্গ ইত্যাদির মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে৷ বাস্তুর শুভাশুভ পরীক্ষা অবশ্যই প্রয়োজনীয়৷ শুভ বাস্তুতে থাকার দরুন সেখানকার বাসিন্দাদের সুখ, সৌভাগ্য ও সমৃদ্ধি ইত্যাদির বৃদ্ধি হয়৷ অশুভ বাস্তুতে বসবাস করলে এর বিপরীত ফল হয়৷ বাস্তু শব্দের আর এক ব্যুৎপত্তির কথা আমরা বিভিন্ন বাস্তুশাস্ত্রে ও পুরাণাদিতে এইভাবে জানতে পারি৷
বাস্তুর আবির্ভাব সম্পর্কে মৎস্যপুরাণে (অধ্যায় ২৫) বলা হয়েছে, প্রাচীনকালে অন্ধকাসুর বধের সময় দেবাদিদেব মহাদেবের শিবের ললাট থেকে পৃথিবীতে যে স্বেদবিন্দু পড়েছিল, তার থেকে এক ভয়ংকর আকৃতির পুরুষের সৃষ্টি হয়৷ তার বিশাল মুখ বিস্তারিত ছিল৷ সে অন্ধকগণের রক্ত পান করেছিল৷ তাতেও তার তৃপ্তি হয়নি৷ তখন সে ক্ষুধায় ব্যাকুল হয়ে ত্রিলোক ভক্ষণে উদ্যত হয়৷ পরে দেবাদিদেব মহাদেবসহ অন্য দেবতাগণ তাকে পৃথিবীতে শুইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেন এবং বাস্তুদেবতারূপে প্রতিষ্ঠিত করেন৷ এ ছাড়া তার শরীরে সকল দেবতাকে প্রতিষ্ঠিত করা হয়৷ সেই থেকে তার শরীরে সকল দেবতা বসবাস করেন৷ বাস্তু এবং বাস্তুপুরুষ অথবা বাস্তুদেবতা নামে তার প্রসিদ্ধি হয়৷
দেবতাগণ গৃহনির্মাণের সময় তাকে পুজো করার বর দিয়ে খুশি করেন৷ শুধু তাই নয়, বৈশ্যদের বলির জন্য এবং পুজো যাগযজ্ঞের সময়ও তার পুজোর বিধান প্রচলন করা হয়৷ সুতরাং আজও বাস্তুদেবতার পুজো হয়৷ দেবতাগণ তাকে বর দেন, ‘সব মানুষ তোমার পুজো করবে৷’ প্রাসাদ, ভবন নির্মাণকার্যে, পুকুর-জলাশয় খননের সময়, বাড়িঘর-মন্দিরের সংস্কারকার্য, নগর নির্মাণ, যজ্ঞমণ্ডপ নির্মাণ এবং যাগযজ্ঞ করার সময় বাস্তুর পুজো করতে বলা হয়েছে৷ সুতরাং, এই সব কাজ উপলক্ষে অত্যন্ত যত্নসহকারে বাস্তুপুরুষের পুজো করা দরকার৷
বাস্তুপুরুষই বাস্তুদেবতা বলে গণ্য হন৷ হিন্দু সংস্কৃতিতে দেবপুজোর বিধান আছে৷ এই পুজো সাকার ও নিরাকার উভয় রকমের হয়৷ সাকার পুজোয় দেবতার মূর্তিযন্ত্র অথবা চক্র তৈরি করে পুজো করার বিধান আছে৷ বাস্তু দেবতার পুজোর জন্যে বাস্তুর মূর্তি এবং চক্রও তৈরি করা হয়৷ একেই বাস্তুচক্র বলে৷ বাস্তুচক্র অনেক রকমের হয়৷ এতে ৪৯ থেকে এক সহস্রপদ পর্যন্ত হয়৷ এক এক উপলক্ষে এক এক রকমের পদের বাস্তুচক্রের বিধান আছে৷ সমস্ত রকমের গৃহনির্মাণ ৭৯ পদের, জীর্ণভবন বা বাড়ির সংস্কার কাজ ৪৯ পদের, প্রাসাদ বা মণ্ডল তৈরিতে ১০০ পদের, কুয়ো, পুকুর, জলাশয় ও উদ্যান, বন ইত্যাদি নির্মাণে ১৯৬ পদের বাস্তুচক্র তৈরি করা হয়৷ সিদ্ধলিঙ্গের প্রতিষ্ঠা, বিশেষ পুজো, প্রতিষ্ঠা, মহোৎসব, কোটি হোম-শান্তি, মরুভূমিতে গ্রাম, নগর, রাষ্ট্র ইত্যাদি নির্মাণে সহস্রপদের বাস্তুচক্রের নির্মাণ করা দরকার৷ সাধারণ বিষ্ণু-রুদ্রাদি যজ্ঞেও যজ্ঞমণ্ডপে যথাস্থান, নবগ্রহ, সর্বতোভদ্র মণ্ডলের স্থাপনের সঙ্গে নৈর্ঋতকোণে বাস্তুপীঠের স্থাপন করা অবশ্যই দরকার৷ প্রতিদিন মণ্ডলস্থ দেবতাগণের পুজো, উপাসনা এবং যথাসময়ে তাঁদের আহুতিও প্রদান করা হয়৷ কিন্তু বাস্তুশান্তি ইত্যাদির জন্যে বাস্তু যাগ-কর্মে বাস্তুপীঠেরই প্রাধান্য সব থেকে বেশি৷ বাস্তুদেবতার মূল মন্ত্র হল:
ওঁ বাস্তোষ্পতে প্রতি জানীহ্যস্মান্
ৎস্বাবেশো অনমীবো ভবানঃ৷
যৎ ত্বেমহে প্রতি তন্নো জুষস্বশং
নো ভব দ্বিপদে শং চতুষ্পদে৷৷ —ঋগ্বেদ
বাস্তুশাস্ত্রের সঙ্গে স্থাপত্যকলারও সম্পর্ক আছে৷ ঋগ্বেদ ও অথর্ববেদে এর উল্লেখ পাওয়া যায়৷ যদিও এটি একটা পৃথক শাস্ত্র, তবুও এর পরবর্তী আরও অনেক গ্রন্থ আছে৷ এ ক্ষেত্রে ‘বিশ্বকর্মা শিল্পম্’, ‘ময় শিল্পম্’, ‘বাস্তু রাজ বল্লভ’, ‘সমরাঙ্গন সূত্রধার’ উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ৷ মৎস্যপুরাণ, বিষ্ণুধর্মোত্তরপুরাণ, অগ্নিপুরাণ এবং গরুড়পুরাণ ইত্যাদিতে বাস্তুশাস্ত্র সম্পর্কীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি বর্ণনা করা হয়েছে৷
বাস্তু শব্দটি ‘বস্ নিবাস’ ধাতু থেকে নিষ্পন্ন হয়, যাকে বলা হয় বাসস্থান৷ এর মধ্যে গৃহ, দেবপ্রাসাদ, গ্রাম, নগর, পুরী, দুর্গ ইত্যাদির মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে৷ বাস্তুর শুভাশুভ পরীক্ষা অবশ্যই প্রয়োজনীয়৷ শুভ বাস্তুতে থাকার দরুন সেখানকার বাসিন্দাদের সুখ, সৌভাগ্য ও সমৃদ্ধি ইত্যাদির বৃদ্ধি হয়৷ অশুভ বাস্তুতে বসবাস করলে এর বিপরীত ফল হয়৷ বাস্তু শব্দের আর এক ব্যুৎপত্তির কথা আমরা বিভিন্ন বাস্তুশাস্ত্রে ও পুরাণাদিতে এইভাবে জানতে পারি৷
বাস্তুর আবির্ভাব সম্পর্কে মৎস্যপুরাণে (অধ্যায় ২৫) বলা হয়েছে, প্রাচীনকালে অন্ধকাসুর বধের সময় দেবাদিদেব মহাদেবের শিবের ললাট থেকে পৃথিবীতে যে স্বেদবিন্দু পড়েছিল, তার থেকে এক ভয়ংকর আকৃতির পুরুষের সৃষ্টি হয়৷ তার বিশাল মুখ বিস্তারিত ছিল৷ সে অন্ধকগণের রক্ত পান করেছিল৷ তাতেও তার তৃপ্তি হয়নি৷ তখন সে ক্ষুধায় ব্যাকুল হয়ে ত্রিলোক ভক্ষণে উদ্যত হয়৷ পরে দেবাদিদেব মহাদেবসহ অন্য দেবতাগণ তাকে পৃথিবীতে শুইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেন এবং বাস্তুদেবতারূপে প্রতিষ্ঠিত করেন৷ এ ছাড়া তার শরীরে সকল দেবতাকে প্রতিষ্ঠিত করা হয়৷ সেই থেকে তার শরীরে সকল দেবতা বসবাস করেন৷ বাস্তু এবং বাস্তুপুরুষ অথবা বাস্তুদেবতা নামে তার প্রসিদ্ধি হয়৷
দেবতাগণ গৃহনির্মাণের সময় তাকে পুজো করার বর দিয়ে খুশি করেন৷ শুধু তাই নয়, বৈশ্যদের বলির জন্য এবং পুজো যাগযজ্ঞের সময়ও তার পুজোর বিধান প্রচলন করা হয়৷ সুতরাং আজও বাস্তুদেবতার পুজো হয়৷ দেবতাগণ তাকে বর দেন, ‘সব মানুষ তোমার পুজো করবে৷’ প্রাসাদ, ভবন নির্মাণকার্যে, পুকুর-জলাশয় খননের সময়, বাড়িঘর-মন্দিরের সংস্কারকার্য, নগর নির্মাণ, যজ্ঞমণ্ডপ নির্মাণ এবং যাগযজ্ঞ করার সময় বাস্তুর পুজো করতে বলা হয়েছে৷ সুতরাং, এই সব কাজ উপলক্ষে অত্যন্ত যত্নসহকারে বাস্তুপুরুষের পুজো করা দরকার৷
বাস্তুপুরুষই বাস্তুদেবতা বলে গণ্য হন৷ হিন্দু সংস্কৃতিতে দেবপুজোর বিধান আছে৷ এই পুজো সাকার ও নিরাকার উভয় রকমের হয়৷ সাকার পুজোয় দেবতার মূর্তিযন্ত্র অথবা চক্র তৈরি করে পুজো করার বিধান আছে৷ বাস্তু দেবতার পুজোর জন্যে বাস্তুর মূর্তি এবং চক্রও তৈরি করা হয়৷ একেই বাস্তুচক্র বলে৷ বাস্তুচক্র অনেক রকমের হয়৷ এতে ৪৯ থেকে এক সহস্রপদ পর্যন্ত হয়৷ এক এক উপলক্ষে এক এক রকমের পদের বাস্তুচক্রের বিধান আছে৷ সমস্ত রকমের গৃহনির্মাণ ৭৯ পদের, জীর্ণভবন বা বাড়ির সংস্কার কাজ ৪৯ পদের, প্রাসাদ বা মণ্ডল তৈরিতে ১০০ পদের, কুয়ো, পুকুর, জলাশয় ও উদ্যান, বন ইত্যাদি নির্মাণে ১৯৬ পদের বাস্তুচক্র তৈরি করা হয়৷ সিদ্ধলিঙ্গের প্রতিষ্ঠা, বিশেষ পুজো, প্রতিষ্ঠা, মহোৎসব, কোটি হোম-শান্তি, মরুভূমিতে গ্রাম, নগর, রাষ্ট্র ইত্যাদি নির্মাণে সহস্রপদের বাস্তুচক্রের নির্মাণ করা দরকার৷ সাধারণ বিষ্ণু-রুদ্রাদি যজ্ঞেও যজ্ঞমণ্ডপে যথাস্থান, নবগ্রহ, সর্বতোভদ্র মণ্ডলের স্থাপনের সঙ্গে নৈর্ঋতকোণে বাস্তুপীঠের স্থাপন করা অবশ্যই দরকার৷ প্রতিদিন মণ্ডলস্থ দেবতাগণের পুজো, উপাসনা এবং যথাসময়ে তাঁদের আহুতিও প্রদান করা হয়৷ কিন্তু বাস্তুশান্তি ইত্যাদির জন্যে বাস্তু যাগ-কর্মে বাস্তুপীঠেরই প্রাধান্য সব থেকে বেশি৷ বাস্তুদেবতার মূল মন্ত্র হল:
ৎস্বাবেশো অনমীবো ভবানঃ৷
যৎ ত্বেমহে প্রতি তন্নো জুষস্বশং
নো ভব দ্বিপদে শং চতুষ্পদে৷৷ —ঋগ্বেদ
এর অর্থ, হে বাস্তুদেব, আমরা আপনার প্রকৃত উপাসক, এ কথা আপনি সম্পূর্ণরূপে বিশ্বাস করুন৷ আমাদের স্তুতি প্রার্থনা শুনে আপনি আমাদের আধি-ব্যাধি থেকে মুক্ত করে দিন৷ আমরা যে ধনৈশ্বর্যের কামনা করি, আপনি তা পরিপূর্ণ করে দিন? এই সঙ্গে এই বাস্তুক্ষেত্রে অথবা গৃহে বসবাসকারী আমাদের স্ত্রী-পুত্রাদি পরিবার পরিজনের যেন কল্যাণ হয়; আমাদের গবাদি পশু, অশ্ব ও অন্যান্য চতুষ্পদ প্রাণীরও যেন কল্যাণ হয়৷
বৈদিক সাহিত্য অনুসারে ‘বাস্তোষ্পতি’ সাক্ষাৎ পরমাত্মারই নামান্তর৷ কারণ, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডই হল বাস্তুর রূপ অর্থাৎ বাস্তুর স্বামী৷ আগম ও পুরাণ অনুসারে বাস্তুপুরুষ নামে এক ভয়ানক উপদেবতার ওপর ব্রহ্মা, ইন্দ্র প্রমুখ অষ্টলোকপাল-সহ ৪৫ জন দেবতা অধিষ্ঠান করেন৷ এঁরা বাস্তুর কল্যাণ করেন৷ কর্মকাণ্ডগ্রন্থে এবং গৃহ্যসূত্রে এর উপাসনা ও যজ্ঞের জন্যে পৃথক পৃথক মন্ত্র নির্দিষ্ট করে আছে৷
যদিও পুকুর, জলাশয়, কুয়ো, গ্রাম, নগর ও গৃহ, প্রাসাদ এবং ইত্যাদি নির্মাণে বিভিন্ন প্রকার পদের বাস্তুমণ্ডল তৈরির বিধান আছে, তবুও এই দুইয়ের মধ্যে সামান্য তফাতও আছে৷ ৮১টি পদযুক্ত বাস্তুমণ্ডল রচনায় উত্তর-দক্ষিণ এবং পূর্ব-পশ্চিম থেকে ১০-১০ রেখা টানা হয় এবং চক্র রচনার সময় ২০ জন দেবীর নাম উল্লেখসহ নমস্কার মন্ত্র উচ্চারণ করে রেখা টানার কাজ সম্পূর্ণ করা হয়৷ এরকমভাবেই চতুঃষষ্ঠী পদ বাস্তুমণ্ডলকে উভয়দিক থেকে ৯-৯ রেখা টানা হয়৷ বাস্তুবেদিতে সাদা কাপড় পেতে তাতে কুমকুম ইত্যাদি দিয়ে পূর্ব-পশ্চিমে ৯টি রেখা আঁকতে হবে৷ এই ৯টি রেখা ৯ জন দেবীর প্রতিনিধিত্ব করে৷ এদের রেখাদেবতাও বলা হয়৷ রেখা আঁকার সময় ক্রমশ নাম অথবা বেদমন্ত্র উচ্চারণ করে এই দেবীদের নমস্কার করতে হয়৷ রেখাদেবীদের নাম হল: লক্ষ্মী, যশোমতী, কান্তা, সুপ্রিয়া, বিমলা, শ্রী, সুভাগা, সুমতি এবং ইড়া৷ এইরকমভাবেই উত্তর-দক্ষিণের রেখাদেবীদের নাম হল: ধান্যা, প্রাণা, বিশালা, স্থিরা, ভদ্রা, স্বাহা, জয়া, নিশা এবং বিরজা৷ অনুরূপে চতুঃষষ্ঠী বাস্তুচক্রকে নির্দিষ্ট রঙের চাল অথবা চূর্ণ ইত্যাদি দিয়ে ভরাট করার পর ৪৫ জন দেবতাকে আবাহন-প্রতিষ্ঠা করে নানা উপচার দিয়ে পূজা করা দরকার৷ মণ্ডলস্থ দেবতাদের নাম এই রকম: ১. শিখীন, ২. পর্জন্য, ৩. জয়ন্ত, ৪. কুলিশায়ুধ, ৫. সূর্য, ৬. সত্য, ৭. ভৃশ, ৮. আকাশ, ৯. বায়ু, ১০. পুষা, ১১. বিতথ. ১২ বৃহৎক্ষত, ১৩. যম, ১৪. গন্ধর্ব, ১৫. ভৃঙ্গরাজ, ১৬. মৃগ ১৭. পিতৃ, ১৮. দৌবারিক, ১৯. সুগ্রীব, ২০. পুষ্পদন্ত, ২১. বরুণ, ২২. অসুর, ২৩. শেষ, ২৪. পাপ, ২৫. রোগ, ২৬. অহি, ২৭. মুখ্য, ২৮. ভল্লাট, ২৯. সোম, ৩০. সর্প, ৩১. অদিতি, ৩২. দিতি, ৩৩. অপ্, ৩৪. আপবৎস্য, ৩৫. অর্যমা, ৩৬. সাবিত্র, ৩৭. সবিতা, ৩৮. বিবস্বান, ৩৯. বিবুধাধিপ, ৪০. জয়ন্ত, ৪১. মিত্র, ৪২. রাজযক্ষ্মা, ৪৩. রুদ্র, ৪৪. পৃথ্বীধর এবং ৪৫. ব্রহ্মা৷
এরপর মণ্ডলের বাইরে ঈশান, আগ্নেয়, নৈর্ঋত এবং বায়ব্য কোণগুলিতে ক্রমশ চরকি, বিদারী, পুতনা, পাপরাক্ষসীরা পুনঃ পূর্বাদি চার দিকে স্কন্দ, অর্যমা, মৃজভক এবং পিলিপিচ্ছ দেবতাদের স্থাপন করা দরকার৷ এরপর পূর্বাদি দিকে ক্রমশ ইন্দ্র, অগ্নি, যম, নৈর্ঋত, বরুণ, বায়ু, কুবের, ঈশান, ব্রহ্মা এবং অনন্ত—এই দশ দিকপালকে আবাহন করে তার পুজো করা উচিত৷ অনুরূপে চক্রস্থ সকল দেবতাকে আবাহন, প্রতিষ্ঠা এবং বৈদিক, পৌরাণিক অথবা নামমন্ত্র দ্বারা পুজো করা উচিত৷ বাস্তুচক্রের উত্তরে বাস্তুকলস স্থাপন করে তার পুজো করে তাতে মূর্তির বিধিপূর্বক প্রাণপ্রতিষ্ঠা করা উচিত৷ তারপর বিধিপূর্বক বাস্তোষ্পতি অথবা বাস্তুদেবতার পুজো আরাধনা করে শেষে চক্রস্থ দেবতাদের ও বাস্তুদেবতাদের পায়েস বলি দিয়ে সর্বসুখ শান্তি কল্যাণের জন্য ওঁদের কাছে প্রার্থনা করতে হবে৷
অষ্ট আয়ুধ স্থাপন
সর্বতোভদ্রমণ্ডলের বাইরে স্বত্ব-পরিধির আটটি কোণে অষ্ট দিকপালের অষ্ট আয়ুধকে আবাহন করে তাদের পুজো করা হয়৷ উত্তর, ঈশান, পূর্ব ইত্যাদি আটটি দিকের সোম, শিব, ইন্দ্র ইত্যাদি অধিষ্ঠাতা দেবতা আছেন৷ তাঁদের আয়ুধ হল গদা, শূল, বজ্র ইত্যাদি৷ তালিকা দেখলেই ব্যাপারটি পরিষ্কার হয়ে যাবে৷
বৈদিক সাহিত্য অনুসারে ‘বাস্তোষ্পতি’ সাক্ষাৎ পরমাত্মারই নামান্তর৷ কারণ, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডই হল বাস্তুর রূপ অর্থাৎ বাস্তুর স্বামী৷ আগম ও পুরাণ অনুসারে বাস্তুপুরুষ নামে এক ভয়ানক উপদেবতার ওপর ব্রহ্মা, ইন্দ্র প্রমুখ অষ্টলোকপাল-সহ ৪৫ জন দেবতা অধিষ্ঠান করেন৷ এঁরা বাস্তুর কল্যাণ করেন৷ কর্মকাণ্ডগ্রন্থে এবং গৃহ্যসূত্রে এর উপাসনা ও যজ্ঞের জন্যে পৃথক পৃথক মন্ত্র নির্দিষ্ট করে আছে৷
যদিও পুকুর, জলাশয়, কুয়ো, গ্রাম, নগর ও গৃহ, প্রাসাদ এবং ইত্যাদি নির্মাণে বিভিন্ন প্রকার পদের বাস্তুমণ্ডল তৈরির বিধান আছে, তবুও এই দুইয়ের মধ্যে সামান্য তফাতও আছে৷ ৮১টি পদযুক্ত বাস্তুমণ্ডল রচনায় উত্তর-দক্ষিণ এবং পূর্ব-পশ্চিম থেকে ১০-১০ রেখা টানা হয় এবং চক্র রচনার সময় ২০ জন দেবীর নাম উল্লেখসহ নমস্কার মন্ত্র উচ্চারণ করে রেখা টানার কাজ সম্পূর্ণ করা হয়৷ এরকমভাবেই চতুঃষষ্ঠী পদ বাস্তুমণ্ডলকে উভয়দিক থেকে ৯-৯ রেখা টানা হয়৷ বাস্তুবেদিতে সাদা কাপড় পেতে তাতে কুমকুম ইত্যাদি দিয়ে পূর্ব-পশ্চিমে ৯টি রেখা আঁকতে হবে৷ এই ৯টি রেখা ৯ জন দেবীর প্রতিনিধিত্ব করে৷ এদের রেখাদেবতাও বলা হয়৷ রেখা আঁকার সময় ক্রমশ নাম অথবা বেদমন্ত্র উচ্চারণ করে এই দেবীদের নমস্কার করতে হয়৷ রেখাদেবীদের নাম হল: লক্ষ্মী, যশোমতী, কান্তা, সুপ্রিয়া, বিমলা, শ্রী, সুভাগা, সুমতি এবং ইড়া৷ এইরকমভাবেই উত্তর-দক্ষিণের রেখাদেবীদের নাম হল: ধান্যা, প্রাণা, বিশালা, স্থিরা, ভদ্রা, স্বাহা, জয়া, নিশা এবং বিরজা৷ অনুরূপে চতুঃষষ্ঠী বাস্তুচক্রকে নির্দিষ্ট রঙের চাল অথবা চূর্ণ ইত্যাদি দিয়ে ভরাট করার পর ৪৫ জন দেবতাকে আবাহন-প্রতিষ্ঠা করে নানা উপচার দিয়ে পূজা করা দরকার৷ মণ্ডলস্থ দেবতাদের নাম এই রকম: ১. শিখীন, ২. পর্জন্য, ৩. জয়ন্ত, ৪. কুলিশায়ুধ, ৫. সূর্য, ৬. সত্য, ৭. ভৃশ, ৮. আকাশ, ৯. বায়ু, ১০. পুষা, ১১. বিতথ. ১২ বৃহৎক্ষত, ১৩. যম, ১৪. গন্ধর্ব, ১৫. ভৃঙ্গরাজ, ১৬. মৃগ ১৭. পিতৃ, ১৮. দৌবারিক, ১৯. সুগ্রীব, ২০. পুষ্পদন্ত, ২১. বরুণ, ২২. অসুর, ২৩. শেষ, ২৪. পাপ, ২৫. রোগ, ২৬. অহি, ২৭. মুখ্য, ২৮. ভল্লাট, ২৯. সোম, ৩০. সর্প, ৩১. অদিতি, ৩২. দিতি, ৩৩. অপ্, ৩৪. আপবৎস্য, ৩৫. অর্যমা, ৩৬. সাবিত্র, ৩৭. সবিতা, ৩৮. বিবস্বান, ৩৯. বিবুধাধিপ, ৪০. জয়ন্ত, ৪১. মিত্র, ৪২. রাজযক্ষ্মা, ৪৩. রুদ্র, ৪৪. পৃথ্বীধর এবং ৪৫. ব্রহ্মা৷
এরপর মণ্ডলের বাইরে ঈশান, আগ্নেয়, নৈর্ঋত এবং বায়ব্য কোণগুলিতে ক্রমশ চরকি, বিদারী, পুতনা, পাপরাক্ষসীরা পুনঃ পূর্বাদি চার দিকে স্কন্দ, অর্যমা, মৃজভক এবং পিলিপিচ্ছ দেবতাদের স্থাপন করা দরকার৷ এরপর পূর্বাদি দিকে ক্রমশ ইন্দ্র, অগ্নি, যম, নৈর্ঋত, বরুণ, বায়ু, কুবের, ঈশান, ব্রহ্মা এবং অনন্ত—এই দশ দিকপালকে আবাহন করে তার পুজো করা উচিত৷ অনুরূপে চক্রস্থ সকল দেবতাকে আবাহন, প্রতিষ্ঠা এবং বৈদিক, পৌরাণিক অথবা নামমন্ত্র দ্বারা পুজো করা উচিত৷ বাস্তুচক্রের উত্তরে বাস্তুকলস স্থাপন করে তার পুজো করে তাতে মূর্তির বিধিপূর্বক প্রাণপ্রতিষ্ঠা করা উচিত৷ তারপর বিধিপূর্বক বাস্তোষ্পতি অথবা বাস্তুদেবতার পুজো আরাধনা করে শেষে চক্রস্থ দেবতাদের ও বাস্তুদেবতাদের পায়েস বলি দিয়ে সর্বসুখ শান্তি কল্যাণের জন্য ওঁদের কাছে প্রার্থনা করতে হবে৷
অষ্ট আয়ুধ স্থাপন
সর্বতোভদ্রমণ্ডলের বাইরে স্বত্ব-পরিধির আটটি কোণে অষ্ট দিকপালের অষ্ট আয়ুধকে আবাহন করে তাদের পুজো করা হয়৷ উত্তর, ঈশান, পূর্ব ইত্যাদি আটটি দিকের সোম, শিব, ইন্দ্র ইত্যাদি অধিষ্ঠাতা দেবতা আছেন৷ তাঁদের আয়ুধ হল গদা, শূল, বজ্র ইত্যাদি৷ তালিকা দেখলেই ব্যাপারটি পরিষ্কার হয়ে যাবে৷
* বাস্তুবিজ্ঞান (Vastu Shastra): সুরেন্দ্র কাপুর (Surendra Kapoor), বিশিষ্ট বাস্তুবিদ।