রবিবার ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫


ছবি প্রতীকী, সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে

অনেকের বাড়িতেই স্ট্রোকের রোগী রয়েছেন রোগী থাকেন। কিন্তু এরকম রোগীর কীভাবে যত্ন নেওয়া দরকার সে সম্পর্কে বেশিরভাগ মানুষের কোনও ধারণাই থাকে না। আর সে কারণেই সুস্থ হতে অনেকটা বেশি সময় লেগে যায়। সাধারণত মধ্যবিত্তের বাড়িতে স্ট্রোকের রোগীর দেখাশোনা পরিবারের সদস্যরাই করেন। অনেকে আবার দেখাশোনার জন্য কাউকে নিয়োগ করেন। যাঁরাই স্ট্রোকের রোগীর দেখাশোনা করুন না কেন সঠিক যত্নের জন্য বেশ কয়েকটি বিষয় আমাদের জেনে রাখা উচিত। নিয়মিত ফিজিওথেরাপির পাশাপাশি মাথায় রাখতে হবে রোগীকে নির্দিষ্ট সময় অন্তর তার স্থান বদল (পজিশন) করতে হবে। নয়তো বেডসোর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে প্রবল। অনেক সময় হাত বা পায়ের ‘পজিশন’ ঠিকমতো না থাকার কারণে শক্তভাব চলে আসে। ফলে পরবর্তীকালে তাদের ভালো করে হাঁটানো বা হাত দিয়ে প্রয়োজনীয় কাজ করাতে অসুবিধা হয়। ফিজিওথেরাপিস্ট হয়তো দিনে একবার বা দু’বার আসেন, কিন্তু বাকি সময়টা পরিবারের সদস্যদেরই যত্ন নিতে হবে। তাই পরিবারের সদস্যদের সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে। প্রতিদিন ভালো করে স্নান করানো, খাওয়ানো সবই নিয়মমাফিক করতে হবে। কারণ, এ সবের ওপরই রোগীর দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠা অনেকটা নির্ভর করে। সব সময়ই হাত-পা বালিশের ওপর একটা ‘সাপোর্টে’ রাখতে হয়। ভাঁজ করে রাখলে সেভাবেই ভাঁজ অবস্থায় হাতের মাসল শক্ত হয়ে যেতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ‘ফুট ড্রপ’ হয়ে যাওয়ার ভয়ে পায়ের পাতা বালিশের ‘সাপোর্ট’ দিয়ে রাখতে হয়। এক-দু’ঘণ্টা অন্তর রোগীকে পাশ ফেরাতে হবে। পাশ ফেরানোর সময় হাত এবং পায়ের মাঝখানে বালিশ দিয়ে দিন। যেদিকে প্যারালাইসিস হয়েছে, সেদিকের হাত খুব জোরে টেনে তোলা বা নামানো যাবে না। খুব যত্নসহকারে করতে হবে। অসাবধানতায় ‘শোল্ডার ডিসলোকেশন’ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ‘শোল্ডার ডিসলোকেশন’ হলে তাকে ঠিক করতে অনেকটা সমস্যা হয়। অনেকেই মনে করেন, মালিশ করলে হয়তো রোগী তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবেন। এটা ভুল ধারণা, কখনওই মালিশ করবেন না। নিশ্চয়ই তেল বা ক্রিম মাখাবেন, কিন্তু সেটা মালিশের মতো করে নয়। কারণ, মালিশ করলে হাত-পা শক্ত হয়ে যেতে পারে।
অনেক সময় স্ট্রোকের রোগীদের কথা বলার ক্ষমতা থাকে না। তখন আমাদের বোঝার চেষ্টা করতে হবে তিনি ঠিক কী বলতে চাইছেন। এতে তাঁদের মানসিক শক্তি বাড়বে। যেমন কখন খিদে পাচ্ছে, বসতে ইচ্ছে করছে কি না, ঘুমোতে চাইছেন কি না ইত্যাদি আমাদের বুঝতে হবে। না হলে তাঁরা মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন। আর তাই সেরে ওঠায় সমস্যা হয়। স্ট্রোকের রোগীকে রোগীর মতো না দেখে তাঁদের সঙ্গে সাধারণ স্বাভাবিক আচরণ করুন। যেটা ভালোবাসেন সেটা করতে দিন। যেমন বই পড়তে ভালোবাসলে পড়ায় সাহায্য করুন। টিভি দেখতে ইচ্ছে করলে দেখতে দিন। ভালো কিছু দেখলে বা শুনলে তাঁকে সুস্থ করে তোলার যে উদ্যোগ আপনারা নিয়েছেন তাতেও তিনি শামিল হবেন, সহযোগিতা করবেন। রোগীর ক্ষমতা অনুযায়ী তাঁদের ‘অ্যাক্টিভিটি’ হবে। এ ব্যাপারে ফিজিওথেরাপিস্ট আপনাকে বিস্তারিত বুঝিয়ে দেবেন। সারাদিনে কতটা ও কী ধরনের অ্যাক্টিভিটি করাতে হবে, কতক্ষণ বসাবেন, বসার ক্ষমতা না থাকলে কীভাবে সাপোর্ট দিয়ে বসাবেন, চেয়ারে বসানো যাবে কি না ইত্যাদি সবই বলে দেবেন তিনি। রোগীকে দ্রুত সুস্থ করে তুলতে ফিজিওথেরাপিস্টের জরুরি পরামর্শ মেনে চলার চেষ্ট করুন৷

যোগাযোগ: ৯০৫১৮৪৩৫৩১

Skip to content