বুধবার ২৭ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি প্রতীকী

আগে অফিসের কাজের সঙ্গে ঘরের কাজ করেও বেশ চনমনে থাকত সৌম্যদীপ। কিন্তু গত কয়েকমাস ধরে অল্পতেই ক্লান্তি গ্রাস করেছে তাঁকে। কেন এত ক্লান্তি কিছুতেই বুঝতে পারছেন না। কিছুই করতে ভালো লাগে না। খালি মনে হয় শুয়ে থাকি। অবশেষে ধরা পড়ল ব্লাড সুগারের মাত্রা এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে বছর চল্লিশের সৌম্যদীপের কিডনিতে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। যদি আপনিও সারাদিন অস্বাভাবিক ক্লান্ত বোধ করেন তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কারণ অযথা ক্লান্ত থাকার আড়ালে লুকিয়ে থাকতে পারে রক্তে ব্লাড সুগারের মাত্রা বাড়ার মতো গুরুতর সমস্যা। যা ঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু না করলে শরীরের অন্য কোনও অঙ্গেও প্রভাব ফেলতে পারে।

কেন হয় ক্লান্তি
ডায়াবেটিস হলে আমাদের রক্তে ব্লাড সুগারের মাত্রা বেড়ে যায়। রক্তের গ্লুকোজ হল অসমোটিক্যালি অ্যাক্টিভ সাবস্টেন্স। অর্থাৎ ডায়াবেটিস হলে গ্লুকোজ শরীর থেকে জল টেনে নেয়। কিন্তু রক্ত সঞ্চালনের সময় যদি গ্লুকোজ বেশি থাকে তখন গ্লুকোজ কোষের জলের অংশ কমিয়ে দেয়। ফলে আমাদের শরীরে ডিহাইড্রেশন হয়ে যায় এবং কোষগুলি সংকুচিত হয়ে গিয়ে ভালোমতো কাজ করতে পারে না৷ সেজন্যই সুগার থাকলে রোগীর সব সময় ক্লান্তি, দুর্বলতা, ঘুম ঘুম ভাব অনুভূত হয়। তাই ডায়াবেটিস না থাকলে অথবা ডায়াবেটিস চিহ্নিত হওয়ার পরও রোগীর অস্বাভাবিক ক্লান্তিভাব হলে অবশ্যই প্রাথমিকভাবে গ্লুকোমিটার দিয়ে সুগার ঠিক আছে কি না দেখে নেওয়া উচিত।

আমাদের বুঝতে হবে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকলে অস্বাভাবিক ক্লান্তিভাব কমে যায়। তাই নিয়মিত ডায়াবেটিসের ওষুধ খেলেও যদি ক্লান্তিভাব না যায় তাহলে রক্তে সুগারের মাত্রা বেড়ে গিয়েছে বলেই আশঙ্কা করা হয়। কিন্তু যে সকল রোগী ইনসুলিন নেন তাঁরা ছাড়া সাধারণত নিয়মিত কারওরই সুগার টেস্ট করা হয় না। আবার বেশিরভাগ রোগী সুগার নিয়ন্ত্রণে আছে কি না জানতে ফাস্টিং সুগার পরীক্ষা করান। কিন্তু ফাস্টিং সুগার টেস্ট করে সুগার নিয়ন্ত্রণে আছে কি না সঠিভাবে জানা যায় না। কারণ ব্লাড সুগার মাপার আগের দু-এক দিনের মধ্যে বেশি কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার খেলে রোগীর সুগার বেশি আসার সম্ভাবনা থাকে যা রোগীর আসল সুগারের মাত্রা নয়। তাই রক্তের সঠিক ব্লাড সুগারের মাত্রা জানার সবচেয়ে বিজ্ঞানসম্মত পরীক্ষা হল রোগীর তিন মাসের গড় সুগারের মাত্রার অর্থাৎ এইচবিএ১সি টেস্ট। এই এইচবিএ১সি যদি ৭-এর নীচে থাকে তাহলে ব্লাড সুগার খুব ভালো নিয়ন্ত্রণে আছে বলে ধরা হয়।
থাইরয়েডের যোগসূত্র
থাইরয়েডের সঙ্গে ডায়াবেটিসের নিবিড় যোগসূত্র রয়েছে। অনেক সময় থাইরক্সিন হরমোন কম নিঃসরণ হলে অর্থাৎ হাইপোথাইরয়েড হলে একইভাবে ক্লান্তিভাবের লক্ষণ দেখা যায়। আবার ডায়াবেটিস এবং হাইপোথাইরয়েড দু’টি অসুখেই প্রথম দিকে রোগীর ওজন বেড়ে যাওয়ায়, পেশি ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যদিও পরে ডায়াবেটিক রোগীর অস্বাভাবিক ওজন কমে যায়। একইসঙ্গে ডায়াবেটিক রোগীদের থাইরয়েড হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকার পরও যদি ক্লান্তিভাব আসে সেক্ষেত্রে প্রথমেই রোগীর থাইরয়েড হরমোন টেস্ট করা হয়। সেই পরীক্ষার রিপোর্ট ঠিক থাকলে রোগীর ভিটামিন ডি, রক্তাল্পতা, হার্টের সমস্যা রয়েছে কি না দেখা হয়।

 


Skip to content