সোমবার ২৫ নভেম্বর, ২০২৪


সাজাব যতনে। ছবি : লেখক

পরিবার একান্নবর্তী হোক বা ‘কাহানী আপনা আপনা’ নিজেদের নিভৃত গৃহকোণটিকে নিয়ে কিন্তু আবেগের কোনও সীমা-পরিসীমা নেই মানুষের। কীভাবে, কোন সাজে সাজালে সে হয়ে উঠবে সবার মাঝে অনন্যা ও অন্যতমা এই নিয়ে মাথাব্যথার শেষ যেমন নেই তেমনই ইচ্ছানুযায়ী বাড়ি সাজানো আদৌ আপনার সাধ্যাতীত নয় তো? আপনার এই সমস্ত প্রশ্ন ও ধন্দের উত্তর নিয়ে থাকছেন বিশিষ্ট স্থপতি অনির্বাণ দত্ত

আলোচনার শিরোনাম দেখে হয়তো অনেকেই ভাববেন যে প্রথম পর্বেই এমন একটা ধোঁয়াশায় ভরা বিষয় নিয়ে কেন আলোচনা করতে বসলাম। না, এরকমটা ভেবে থাকলে কিন্তু একেবারেই ভুল ভাবছেন, আলোচনা কিছুটা ত্বরান্বিত হলেই আশা করি এহেন শিরোনামের সার্থকতা বুঝতে পারবেন। যদি এমনটা মনে হয়ে থাকে যে ঘর সাজানোর ক্ষেত্রে তো প্রয়োজন পার্থিব কিছু মাল-মশলা যেগুলি বাহ্যিক আবরণের ক্ষেত্রে থেকে আপনার বাড়ি এবং ঘরকে করে তুলতে পারে আকর্ষণীয়। সেক্ষেত্রে দৃষ্টির মতো ভাববাচ্যমূলক ধারণা আসছে কোথা থেকে? আসছে তার কারণ, ভাব এবং বস্তুর সম্মেলন ছাড়া কোনও শিল্পকর্মই প্রসিদ্ধির পর্যায়ে উন্নীত হতে পারে না, আর বাড়ি সাজানো, যেকোনও বাড়ির নিজস্ব প্রোটোটাইপ বা গঠনশৈলী যথাযথভাবে বুঝে তাকে যখন পরিপূর্ণতা দান করেন একজন স্থপতি, তখন তা একটি প্রকৃত শিল্পকর্মের থেকে কোনও অংশে কম গভীরতাপূর্ণ কোনও কাজ নয়। প্রতিটি বাড়িই তৈরি হয় একটি নিজস্ব ঘরানা মেনে। একজন স্থপতি যখন সেই নির্দিষ্ট ঘরানা মেনে সেই বাড়ির গৃহসজ্জার কাজে রত হন তখন তার সঙ্গে সঙ্গে স্থপতি হিসাবে আমরা সবসময়ই এটা আশা করে থাকি যে বাড়ির সদস্য হিসাবে আপনার বাড়ির সজ্জার প্রতি আপনার স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের কাজের অন্যতম পাথেয় হয়ে উঠবে। সেক্ষেত্রে বাড়ি সাজানোর আগে একজন স্থপতির কাছে আসার আগে বাড়ির সদস্য হিসাবে যেটি আপনার সর্বপ্রথম অবশ্য করণীয় সেটা হল আপনার বাড়িটিকে আগে ভালোভাবে বোঝা। ইট-কাঠ পাথরেরও নিজস্ব সত্তা থাকে। আপনার বাড়ির একান্ত সত্তাটিকে যদি আপনিই প্রাথমিকভাবে অনুভব করতে না পারেন তাহলে পরবর্তী পর্যায়ে আমাদেরকে বা একজন স্থপতির সঙ্গে কীভাবে আপনার বাড়ির যথার্থ পরিপূর্ণতার ধারণাটির আদান-প্রদান আপনি করতে পারবেন? তাই আপনার প্রথম কাজ আপনার গৃহসজ্জার প্রতি অপনার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গিটিকে স্বচ্ছ করে তোলা। আমার বিশ্বাস, আপনারা প্রথমেই নিজেদের কাছে নিজেরা এই বিষয়ে পরিষ্কার থাকবেন যে, নিছকই ট্রেন্ডের পথে হাঁটবেন কি না? অনুকরপ্রবৃত্তির চর্বিতচর্বণ করবেন নাকি আপনার বাড়ির নিজস্ব ঘরানাটিকে বুঝে নিয়ে সেই অনুযায়ী আপনি আপানার বাড়ির প্রতিটি কোণকে সাজিয়ে তুলতে চান তাহলে উভয়পক্ষের পক্ষেই কাজটা করা অনেকটা সহজ হয়ে যায়। কতটা পরিসরবহুল বা কত কম আসবাব বা বেশি আসবাবে আপনার বাড়িটি পরিপূর্ণতা পেতে পারে এই ধারণা কিন্তু প্রাথমিকভাবে আপনাকে নিজেকেই তৈরি করে নিতে হবে।

দ্বিতীয়ত, বাড়ি সাজানোর ক্ষেত্রে অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল আপনার সাধ্য তথা বাজেট। এক্ষেত্রে এটা বুঝে নেওয়াটা অত্যন্ত জরুরি যে আপনার প্রয়োজনীয়তা বা গৃহসজ্জার শর্তই কিন্তু আপনার বাজেটকে নিয়ন্ত্রণ করবে। আপনার বাজেট কিন্তু আপনার গৃহসজ্জার শর্তকে কখনওই নিয়ন্ত্রণ করবে না। অর্থাৎ আপনি ঠিক যেমনটা চাইছেন তেমনটা করার জন্য কিন্তু সেই পরিমাণ আর্থিক সহায়তা একজন স্থপতির লাগবেই। ব্যক্তিগত কাজের অভিজ্ঞতাসূত্রে অনেক সময়েই দেখেছি যে অনেকে মনে করে থাকেন ‘ঠিক যেমনটা চাইছি তেমনটা দর্শনীয় হলেই তো হল, তার জন্য জিনিস যদি একটু কম গুণগত মানসম্পন্ন হয় এবং আমার টাকা খানিকটা বাঁচানো যায় তাহলে ক্ষতি কী?’ ক্ষতি হল সেক্ষেত্রে সবটাই হবে প্রাথমিকভাবে দর্শনীয়, তার সৌন্দর্য বা আকর্ষণীয়তা কোনওটাই কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি হবে না। তাই গৃহসজ্জা বাজেট সম্পর্কে ভাবার আগে ভেবে নিন যেমনভাবে আপনি আপনার বাড়ির সজ্জানির্মাণ করাতে চাইছেন সেই অনুযায়ী আপনা সাধ্য রয়েছে কি না।

একজন স্থপতির কাজ চিন্তনসাপেক্ষ। নিছক আসবাব নির্মাণ করার হলে একজন স্থপতির প্রয়োজন হয় না, আর একজন স্থপতির সঙ্গে আপনার সুচিন্তিত মতামত যদি আপনি ভাগ করে নিতে না পারেন তাহলে কিন্তু কখনওই আপনার গৃহসজ্জা পরিপূর্ণতা পাবে না। তাই নিজের বাড়ি সম্পর্কে স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করুন এবং এক পরিপূর্ণ গৃহসজ্জার কারিগরের অন্যতম সহায়ক হয়ে উঠুন।

 


Skip to content