রবিবার ১০ নভেম্বর, ২০২৪


 

কেকে ও শিবানী

অরুণাভ এবং বাবলির যোগাযোগ নিয়ে প্রণয়ের সন্দেহের মাত্রা ক্রমশ বাড়ছে। কিন্তু অরুণাভ এখন টেলিভিশনের পরিচিত মুখ। পয়সা দিয়ে চারটি গুন্ডা পাঠিয়ে তাকে ধমকধামক দিলে ফল হিতে-বিপরীত হতে পারে। আর গোপনে দু’জনের ছবি তুলে পরকীয়ার অপরাধে বাবলিকে যে প্রণয় ডিভোর্স দিয়ে দেবে তেমন কোনও সম্ভাবনাই নেই। কারণ বাবলির বসুন্ধরা ভিলায় থাকা না থাকা এখন আর প্রণয়ের উপর নির্ভরশীল নয়।

তরুণকান্তি পুত্রবধূ বাবলিকেই সমস্ত অধিকার দিয়ে দিয়েছেন। প্রণয়কান্তির নিজের অস্তিত্বই এখন খানিকটা প্রশ্নের মুখে। বুবু বা গৌরবকে অপমান করা এবং বসুন্ধরা গ্রুপ ছেড়ে স্বদেশ ছেড়ে বিদেশ চলে যাওয়ার অন্যতম কারণ হয়ে ওঠা প্রণয়কান্তি এখন এ বাড়ির বেশিরভাগ এর কাছেই চক্ষুশূল।

কিন্তু বাবলি ও অরুণাভর যোগাযোগটা প্রণয়কান্তি কিছুতেই হজম করতে পারছে না। অথচ বাবলির নিজের দিক থেকে যে সে এই সম্পর্ক নিয়ে কী ভীষণ সাবধানী সেটা প্রণয়কান্তি জানে না। ভাবতেও পারে না। প্রণয় যদি বাবলিকে বুঝতো, বাবলির মন বুঝতো তাহলে হয়তো পুরোটা না হলেও কিছুটা আন্দাজ করতে পারতো। প্রণয় বোঝে না সেটা বাবলির মতোতাঁরও দূর্ভাগ্য। দুটো মানুষের দাম্পত্যে মনোমালিন্য ঘটে, মিটেও যায়। দীর্ঘ জীবনযাপনে যে অধিকারবোধ বা অবসেশন তৈরি হয় সেখান থেকেই যত ভুল বোঝাবুঝি রাগারাগি মান-অভিমানের আচমকা শুরুর মতো আচমকা শেষ হয়। কিন্তু শেষমেশ হাতে রইল পেন্সিলের মতো থেকে যায় পরস্পরের কাছে নিজস্ব নারী ও পুরুষের বিশ্বস্ত অস্তিত্ব। সেটাই সম্পর্ককে রোদ-জল-হাওয়া দিয়ে সব ঝড়ঝাপটা থেকে বাঁচিয়ে রাখে।

অরূণাভ যাতে কোনওরকম ভুল না বোঝে বাপাছে সে ভুল করেও বাবলির নিজস্ব বৃত্তে পা না রাখতে পারে তাই বাবলি সর্বদা একটা সতর্ক দূরত্ব বজায় রাখে। সে নিজেই নিজের চারপাশে সম্ভ্রমের তীর দিয়ে গণ্ডী কেটে রেখেছে, যাতে মূহুর্তের মানসিক বা শারীরিক দূর্বলতায় কখনই অনুভূতির রাবণ সে গণ্ডী টপকাতে না পারে।
আরও পড়ুন:

দুই বাংলার উপন্যাস: বসুন্ধরা এবং..., পর্ব-৩৪: ভুল চিকিৎসার জন্য ক্ষতিপূরণ দিয়েছিল ডাঃ অর্কপ্রভ

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৬৬: সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ও লৌকিক চিকিৎসা—ছাগল ক্ষুরি ও ধানি ঘাস

বিনোদনের জগতে লোকে গসিপ খুঁজে বেড়ায়। তাই সে কখনোই অরুণাভর জগতের কোনও অনুষ্ঠানে পা মাড়ায় না।শ্বশুরমশায়ের দেখাশোনার অজুহাতে এড়িয়ে যায়। মাঝে মাঝে বাবলির মনে হয় একটা সন্তান থাকলে এই সময় বড় ভালো হতো। বসুন্ধরা ভিলায় বাড়ি ভর্তি হেলথ অ্যাটেনডেন্ট। মধ্যবিত্ত বাড়ির মত বৌমাকে শ্বশুরমশাইয়ের ওষুধ এবং জলের গ্লাস নিয়ে পেছনে গিয়ে বলতে হয় না ‘বাবা ওষুধটা খেয়ে নিন’… কিন্তু সন্তানের দায়িত্ব কোন সচেতন মা কারো হাতে দিয়ে নিশ্চিন্ত হতে পারেন না। অত্যন্ত সম্পদশালী ধনী ব্যবসায়ীর পরিবারভুক্ত হলেও না। কিন্তু প্রণয়ের সঙ্গে তার সম্পর্কে একটা অদৃশ্য দেওয়াল তৈরি হয়ে গিয়েছে। আর বোধহয় সে দেওয়াল ভাঙ্গবার নয়। কিন্তু প্রথম থেকে বাবলি আপ্রাণ চেষ্টা করেছে। সব অপমান অভিমান ভুলে নিজের আত্মমর্যাদাকে জলাঞ্জলি দিয়ে মানিয়ে নেবার চেষ্টা করেছে। পারেনি । তাই এখন হাল ছেড়ে দিয়েছে।
আরও পড়ুন:

দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-৩৯: ভারতের বিপ্লবী মেয়েরা এবং অন্তরে রবীন্দ্রনাথ

হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-৫২: পুলক রাখিতে নারি (কেল)

ছোটকা কমলকান্তি টেলিভিশন প্রোডাকশনের ব্যবসা শুরু করলেন, বসুন্ধরা এন্টারটেইনমেন্ট। বাবার উপন্যাস নিয়ে সিরিয়াল তৈরির ইচ্ছে ছোটকার। বাবার লেখা গল্পে ভালো ভালো ছবি হয়েছে, তিনি চট করে টেলিভিশনের জন্যে উপন্যাস দেবেন না। আর ছোটকা তার প্রথম প্রোডাকশন বাবার উপন্যাস নিয়েই করবেন। অগত্যা ছোটকা আমার মা সুরঙ্গমার শরণাপন্ন হলেন।
— দেখ সেজবৌদি তুই না বললে সেজদা রাজি হবে না।
—তুই তো জানিস ছোট্টু লেখা দেওয়ার ব্যাপারে তোর সেজদা ভয়ানক খুঁতখুঁতে, একবার আমার মুখের ওপর না বলে দিলে সেটা হজম করা কিন্তু আমার পক্ষে বড্ড কঠিন হবে।
—আমার সেজদাকে আমি তোর থেকে বেশিদিন চিনি। সেজদা তোকে না বলতেই পারবে না। আমি সিওর ছোটকার আন্দাজে কোন ভুল ছিল না। কিন্তু আমার বাবা তাঁর লেখার ব্যাপারে খুব স্পর্শকাতর ছিলেন। একটা শর্ত জুড়ে দিলেন ধারাবাহিকের চিত্রনাট্য মাকে দেখিয়ে নিতে হবে। ছোটকা এককথায় রাজি। মাকে প্রজেক্টে যুক্ত করে রাখার একটা সুপ্তবাসনা ছোটকার ছিলই, সে এককথায় শর্ত মেনে নিল। মহরত শটের ক্ল্যাপস্টিক দিতে হল মাকে। বহু বহুবছর বাদে সিনেক্যামেরার পর ভিডিও ক্যামেরার সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন সুরঙ্গমা।
আরও পড়ুন:

বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-৮: জোসেফ কনরাড ও জেসি কনরাড—আমি রূপে তোমায় ভোলাব না…/৩

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৬৩: বেলুড়মঠে শ্রীমায়ের অভিনন্দন

ছোটকা চেয়েছিলেন শিবানী গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করুন। কিন্তু শিবানী জানালো সে আর ফিল্ম বা টেলিভিশনের ক্যামেরার সামনে অভিনয় করতে চায় না। সিনেমা বা টিভি কোথাওই শিবানী আর কাজ করবে না, ক্যামেরার সামনে অভিনয়ের সব শখ মিটে গিয়েছে তার। সিনেমার মোহ তার জীবনের অনেক ক্ষতি করে দিয়েছে। থিয়েটার তাকে আবার ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করেছে, থিয়েটারের কাছে সে ভয়ঙ্করভাবে ঋণী।
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৮২: খটকা

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯৭: কী করে গল্প লিখতে হয়, ছোটদের শিখিয়েছিলেন অবনীন্দ্রনাথ

ছোটকার মনোগত ইচ্ছে ছিল শিবানীকে টেলিভিশন ব্যবসায় অংশীদার করার, কিন্তু বসুন্ধরা এন্টারটেইনমেন্টে শিবানীকে যুক্ত করবে কোনও হিসেবে। আবার মুশকিল আসান সেজবৌদি সুরঙ্গমার শরণাপন্ন হলেন বসুন্ধরা ভিলার কনিষ্ঠ সন্তান কমলকান্তি ওরফে কে কে।
—সমস্যাটা শিবানী নয় ছোট্টু সমস্যা তুই নিজে। শিবানীকে তুই পছন্দ করিস, ওর জন্যে ওর পরিবারের জন্যে কিছু করতে তোর ভালো লাগে। কিন্তু এটাকে ভালবাসা বলে না।ওর অতীতটা তুই মানতে পারিস না। কারণ সেই অতীতের অস্তিত্ব প্রমাণ এখানে এই কলকাতা শহরে রয়ে গেছে। সেটা তোকে ভাবাচ্ছে। তুই যদি অচেনা অজানা সাধারণ কোনও ছেলে হতিস তাহলে এতদিনে শিবানীকে বিয়ে করে ফেলতিস ওর অতীত বর্তমান জেনেই ওর ভবিষ্যতের দ্বায়িত্ব নিতিস। কিন্তু সেটা পারছিস না তুই দেশের অন্যতম বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বিনয়কান্তি দত্তের ছেলে, বসুন্ধরা ভিলার সদস্য, সাহিত্যিক অমলকান্তি দত্ত তোর দাদা। এগুলো তোর সম্ভ্রমের জায়গা এগুলো বাজি রেখে শিবানীকে তুই ঘরে নিয়ে আসতে পারছিস না। মেয়েটা খুব ভালো। এসব ওর কাছে জলের মতো স্পষ্ট। মেয়েটা তোকে তোর পারিবারিক মর্যাদাকে শ্রদ্ধা করে, না হলে এতদিনে তোকে বিয়ে করে বসুন্ধরা ভিলায় এসে উঠতো।
—এগুলো আমি সব জানি সেজবৌদি, আমি কী করবো তুই বল—
—তুই যা চাইছিস সেটা শিবানীকে বল, সব শুনে ও কী বলে দেখ। টেলিফোনে নয়, মুখোমুখি কথা বলবি ছোটকা যেদিন শিবানীর বাড়ি গিয়ে তাকে সব বলবে ঠিক করলো সেদিন শিবানীর জীবনে বড় এক অঘটন ঘটে গেল।—চলবে।
* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।
 

গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম

‘সময় আপডেটস’-এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন। বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন। ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না। গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content