ছবি: প্রতীকী।
পৃথিবীতে মানুষ একরকম নয়, তাদের মধ্যে নানারকম ভাগাভাগি আছে। এই ভাগাভাগি থেকেই বৈষম্য, আর বৈষম্য থেকেই দুর্বিপাক। ছোট-বড়, মেজ-সেজ, কিংবা, উঁচু নিচু মোটা সরু, সেয়ানা কী ক্যাবলা এই সব হরেক কিসিমের ভেদ বিভেদ নিয়েই সাহিত্য-শিল্পের লড়াই। বৈচিত্র্য ভালো, কিন্তু বৈষম্য তা নয়। কিন্তু মুশকিল হল, হাতের পাঁচটা আঙুল সমান নয় বলে যে উদাহরণ টেনে আনা হয়, তা বৈচিত্র্যের, কিন্তু বৈষম্যের প্রশ্নেও সেকথা বলেই তেলে-জলে মিশিয়ে দেওয়ার একটা চেষ্টা চলে।
ধরা যাক, হাবু ভালো দৌড়তে পারে বলে গাবুকেও তাই-ই করতে হবে, এমনটা চাপিয়ে দিতে চাইলে যদি বলা হয়, হাতের পাঁচটা আঙুল সমান নয় যেমন, তেমন সকলেই এক কাজ সমান দক্ষতায় করতে পারবে এমনটা আশা করাও ঠিক নয়। গাবু ভালো ছবি আঁকে, হাবু পারবে তেমন করতে? এই হল বৈচিত্র্য।
আরও পড়ুন:
ক্যাবলাদের ছোটবেলা, পর্ব-৩৬: আহা শ্রীরাধিকে চন্দ্রাবলী কারে রেখে কারে ফেলি
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৬২: সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ও লৌকিক চিকিৎসা— সুখদর্শন ও হুড়ো
কিন্তু একদল দুষ্টু ছেলে আরেক দল শান্ত ছেলের প্রাণ ওষ্ঠাগত করে দিল, আর কেউ কেউ হাতের পাঁচটা আঙুলের তত্ত্ব দিয়ে সেটাকেই নিয়ম করে তুলতে চাইলে তা হল বৈষম্যকে সার জল দিয়ে পুষ্ট করা। পৃথিবীতে আর মানুষের দুনিয়াতে এই দুরকম নিয়ে ভারি গোল বাঁধে। উদোর বোঝা বুধোর ঘাড়ে চাপিয়ে দিব্যি একটা ভুল বোঝা আর ভুল বোঝানোর প্রক্রিয়া চলে। তখন দেখা যায় পৃথিবীতে দুরকম মানুষ আছে। একদল জুনিয়র, একদল সিনিয়র।
আরও পড়ুন:
দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-৩৪: সরলাদেবী—নির্ভীক এক সরস্বতী
পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৫৪: স্বার্থান্বেষীকেও চিনতে শেখায় এই গ্রন্থ
পরিবারে, কিংবা ক্লাসের বেঞ্চ দখলে, কর্মক্ষেত্রে কিংবা পাবলিক প্লেসে, বক্তৃতায়, হরতালে, মেলার মাঠে, খেলার মাঠে, ট্রেনে, বাসে, দখলদারি, দুনিয়াদারি থেকে অভ্যুত্থানে, রাজদ্বারে কিংবা জেনারেশন গ্যাপে জুনিয়র আর সিনিয়রের তরজা চলতে থাকে। একদল আরেক দলকে বোকা, ক্যাবলা, গঙ্গারাম বলে আমোদ পায়, আরেকদল অন্যদলের শ্রদ্ধা, সম্মান পাওয়ার জন্য লড়াই চালায়।
আরও পড়ুন:
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯৭: কী করে গল্প লিখতে হয়, ছোটদের শিখিয়েছিলেন অবনীন্দ্রনাথ
পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-৭০: জন্মান্তরের সুরসাধক আরডি বর্মন
একদল ‘আমাদের কাল’, ‘স্বর্ণযুগ’ ইত্যাদি নিয়ে বেশ খুশি থাকে আর অন্যদলকে তা জানিয়ে আনত করতে চায়। অন্যদলের তা মানতে ভারি বয়েই গেল। এই বিসম্বাদে একদল মনে মনে জেতে, আরেক দলও মনে মনে জেতে। দুতরফ-ই ভাবে, অন্যরা বুঝি হেরে গেল। এই মনস্তাত্ত্বিক চাপা লড়াইয়ে সকলেই নিজেকে ভারি বিজ্ঞ আর পরম পাকা ভেবে উল্টোদিকের অচলায়তনটা ভাঙতে চায়। সেই মহাভারতের অনেক আগে থেকে পাগলা দাশুর যুগ হয়ে আজও সিনিয়র জুনিয়ররা এ ভাবে লড়েছে, লড়ছে।
আরও পড়ুন:
বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-৮: জোসেফ কনরাড ও জেসি কনরাড—আমি রূপে তোমায় ভোলাব না…/৩
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৫৯: হারিয়ে যাওয়ার ‘জীবন তৃষ্ণা’
সিনিয়রের নেতৃত্বে, দেখানো পথে জুনিয়র চলেছে, মহাজন যে পথে যায় তাই-ই পথ হয়ে উঠেছে, এই ‘বড়দের মেনে চলা’ যেমন সত্য, তেমনই “ছোট মুখে বড় কথা” শোনার মতো, সমমর্মী হতে পারার মতো ‘বড়’ কি অনায়াসেই হয়ে ওঠা যায়?
* ক্যাবলাদের ছোটবেলা (kyablader-chotobela): লেখক: ড. অভিষেক ঘোষ (Abhishek Ghosh) সহকারী অধ্যাপক, বাগনান কলেজ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগ থেকে স্নাতকস্তরে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত। স্নাতকোত্তরের পর ইউজিসি নেট জুনিয়র এবং সিনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপ পেয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগে সাড়ে তিন বছর পূর্ণসময়ের গবেষক হিসাবে যুক্ত ছিলেন। সাম্বপুরাণের সূর্য-সৌরধর্ম নিয়ে গবেষণা করে পিএইচ. ডি ডিগ্রি লাভ করেন। আগ্রহের বিষয় ভারতবিদ্যা, পুরাণসাহিত্য, সৌরধর্ম, অভিলেখ, লিপিবিদ্যা, প্রাচ্যদর্শন, সাহিত্যতত্ত্ব, চিত্রকলা, বাংলার ধ্রুপদী ও আধুনিক সাহিত্যসম্ভার। মৌলিক রসসিক্ত লেখালেখি মূলত: ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে। গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়ে চলেছে বিভিন্ন জার্নাল ও সম্পাদিত গ্রন্থে। সাম্প্রতিক অতীতে ডিজিটাল আর্ট প্রদর্শিত হয়েছে আর্ট গ্যালারিতে, বিদেশেও নির্বাচিত হয়েছেন অনলাইন চিত্রপ্রদর্শনীতে। ফেসবুক পেজ, ইন্সটাগ্রামের মাধ্যমে নিয়মিত দর্শকের কাছে পৌঁছে দেন নিজের চিত্রকলা। এখানে একসঙ্গে হাতে তুলে নিয়েছেন কলম ও তুলি। লিখছেন রম্যরচনা, অলংকরণ করছেন একইসঙ্গে।