রবিবার ২৪ নভেম্বর, ২০২৪


ফেসেস অ্যারাউন্ড মি। অলঙ্করণ : প্রচেতা।

 

ফিওনা রায়ান

পাত্রী সুজাতাকে কেমন দেখতে কেমন তার মানসিক গঠন এ সব বিচার করার প্রশ্নই ওঠেনি। মেজদিদির পরিচিত দিল্লিপ্রবাসী বাঙালি পাত্রীকে পুত্রবধু করার প্রতিশ্রুতি দেবার পর স্বর্ণময়ী ফুলকাকা ডাক্তার বিমলকান্তিকে বিয়ের বিষয়ে জানান। এটা যে ঠাকুমার জীবনের এক চরম ভুল সিদ্ধান্ত ছিল সেটা তিনি সারা জীবন মনে রেখেছিলেন। আমার ঠাকুমা স্বর্ণময়ী আমার মায়ের কাছে প্রায়ই বলতেন যে, তাঁর একটা সিদ্ধান্তে দুটো জীবন নষ্ট হয়ে গেল, না তরুণকান্তি সুখী হলেন না সুজাতা।

সুজাতার মতোই কোন একটি ছেলের সঙ্গেই তার বিয়ে হতে পারত। তা হলো না। সুজাতার মনে হল বসুন্ধরাভিলা, স্বর্ণময়ী, বিমলকান্তি তরুণকান্তি সকলে তাকে ঠকিয়েছে। আর তরুণকান্তি বসুন্ধরা ভিলা আর মায়ের মর্যাদা রাখতে গিয়ে সুজাতাকে বিয়ে করতে রাজি হলেন। যার সঙ্গে মাসখানেক একত্রে থাকা অসম্ভব এটা বুঝতে পেরেও নীলকণ্ঠ হয়ে তাকে নিয়েই জীবন কাটানোর সিদ্ধান্ত নিলেন। আবারও সেই বসুন্ধরা ভিলা তাঁর মা বাবা ঠাকুমার মর্যাদা ঐতিহ্য। কিন্তু আমার বোন সানন্দার বেলায় বা তনিমার বেলায় এসব নিয়ে তারাও ভাবেনি। বসুন্ধরা ভিলাও তাদের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছে। কিন্তু প্রণয়ের চরম অপমানের পরেও বাবলিকে চলে যেতে দেয়নি এই পরিবার তাকে আঁকড়ে ধরেছে! তরুণকান্তি প্রণয়কে শাস্তি দিয়ে ব্যবসা থেকে তাঁর প্রাপ্য মাসোহারার উত্তরাধিকার বাবলিকে দিয়েছেন।
আরও পড়ুন:

দুই বাংলার উপন্যাস: বসুন্ধরা এবং..., পর্ব-২৯: আজও কীরা কাকিমা এবং তার মেয়েদের প্রতি ঈর্ষা কমেনি ন’কাকিমার

বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-৭: জোসেফ কনরাড ও জেসি কনরাড—ভালোবাসিবে বলে ভালোবাসিনে/২

পুরুষ যেমন পুরুষকে টেক্কা দিতে চায় মেয়েরা তেমনি মেয়েদের টক্কর দিতে চায়। স্কুল-কলেজ বা অফিস-কাছারিতে নারী-পুরুষে যে দ্বন্দ্ব যে হয় না তানয় কিন্তু তাতে সেই জোশ থাকে না। আবার পুরুষ সাজপোশাক পরে নারীপুরুষ সকলের সামনে নিজেকে পরিপাটিভাবে প্রকাশ করার জন্য কিন্তু নারীর সাজগোজ আভরণ সবকিছুই মূলত যে নারীদের চমকিত করার উদ্যেশ্যে শতকরা একশোভাগ ঠিক না হলেও একথা সত্যি।
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৭৪: রাজা দশরথ, রাম, লক্ষ্মণ, সীতা সকলেই কি এক একটি জীবনবোধের প্রতীক?

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৫৩: রাজনীতিতে উন্নতির জন্য নিন্দা বা প্রশংসা ব্যক্তিগত পরিসরে করাই শ্রেয়, সভায় নয়

সুজাতা ঘর ছেড়ে যাবার পর তরুণকান্তি অবাক হয়ে সেদিন কীরা কাকিমা জিজ্ঞেস করেছিলেন—
—আজ এই ঘটনাটা না ঘটলে কীরা তো আমি জানতেই পারতাম না যে পেইন্টিং নিয়ে তোমার এতটা জানা!
কীরা কাকিমা লজ্জিত হয়ে বললেন—

—প্লিজ ডোন্ট এম্বারস মি দাদা। আমি কম কম জেনিছি। আমার মায়ের কাছ থেকে শুনিছিলাম। অনেক ভালো ভালো ছবি দেখিছিলাম। মাই মাদার টোল্ড মি লট অ্যাবাউট দোজ পিকচারস।
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৭৭: কথা কিছু কিছু

দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-৩৪: প্রতিমাদেবী— এক দুঃখবতীর কথা

শ্যানন বলেছিল কীরা কাকীমার মা মানে শ্যাননের দিদিমা ফিওনা রায়ান আয়ারল্যান্ডের বিখ্যাত হিউগ লেন গ্যালারির আর্ট কিউরেটর ছিলেন। কীরা ছোটবেলায় ভালো ছবি আঁকতেন। কিন্তু নিজে আর্ট কিউরেটর হয়েও ফিওনা মেয়েকে শিল্পীর অনিশ্চিত জীবন দিতে চাননি। তাই পড়াশোনায় অত্যন্ত মেধাবী কীরা রায়ানকে তিনি ডাক্তারি পড়ান। আর ডাক্তারির মতো কঠিন বিষয়ে পড়াশোনা করতে গিয়ে ছবি আঁকার ভাবনা ক্রমশ বিলীন হয়ে যায়। তবে ছবির প্রতি ভালোবাসাটা তার আজও রয়েছে।
সব শোনার পর তরুণকান্তি বলেছিলেন—
—আজ তো তুমি সবই জানো কীরা, বিমল নিজের মতে বিদেশিনীকে বিয়ে করেছে এটা বসুন্ধরা ভিলার ওপর খুব বড় ধাক্কা ছিল। আমার ঠাকুরমা মেনে নিয়েছিলেন আমার বাবা মেনে নিয়েছিলেন কিন্তু মা কিছুতেই মানতে পারেননি। তাই বহুদিন ধরে বাড়িতে এ নিয়ে বিশেষকোনও কথাও হয়নি। তাই রায়ন পরিবারের বিষয়ে আমাদের কিছুই জানা হয়নি। জানা হয়নি যে আমাদের কীরা কত ভালো ছবি আঁকতো।
আরও পড়ুন:

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯৬: স্রোতস্বিনী পদ্মায় লাফিয়ে কবির কটকি চটি-উদ্ধার

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৫০: কুষ্টি বিচার, না কি রক্ত বিচার! জরুরি কোনটা?

একজন শিল্পবোদ্ধাকে আবিষ্কার করলে যেভাবে এক শিল্পীর চোখমুখ ঝকঝক করে ঠিক একই উৎসাহ ও আবেগ নিয়ে তরুণকান্তি বললেন—
—টু সেলিব্রেট দিস ওয়ান্ডারফুল নিউজ। আমি তোমাকে একটা গিফট দেব। বাট অন ওয়ান কন্ডিশন আমার একটা ছবি, খুব প্রিয় অনেকে কিনতে চেয়েছেন, কিন্তু আমি বিক্রি করিনি। ওই যে, দ্য ফেসেস অ্যারাউন্ড মি, ওই ছবিটা আমি তোমাকে গিফট করব। তোমাদের নিয়ে যেতে হবে না আমি এখান থেকে প্রপার প্যাকিং করে পাঠিয়ে দেব। বাট দ্য কন্ডিশন ইজ তোমার আঁকা একটা ছবি আমাকে গিফট করতে হবে।—চলবে।
* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।
 

গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়মসা

‘সময় আপডেটস’-এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন। বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন। ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না। গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content