বুধবার ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪


‘দ্য লাস্ট সাপার’— লিওনার্দো দা ভিঞ্চি। ছবি: সংগৃহীত।

কীরা কাকীমা হাসছে। শ্যানন এ সব নিয়ে একেবারে চিন্তিত নয়, সে অনেকটা দূরে ক্যানভাস স্যুইংগিং প্যানেল মাল্টিপল ডিসপ্লে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে একটার পর একটা পুরোনো পেন্টিং দেখছে।

এরকম জিনিস সচরাচর মেলে না, বুবু মানে পিসিমণির ছোটছেলে গৌরব সিটি ব্যাঙ্কের কোন কাজে অস্ট্রেলিয়া থেকে নিউ ইর্য়ক গিয়েছিল সেখানে কোনও এক জায়গায় এটা দেখে কিনে তার ন’মামা পেন্টিংটা আর্টিস্ট তরুণকান্তি জন্য পাঠিয়েছে। তবে বসুন্ধরা ভিলায় নয়, জিনিসটা এসেছে বাবু মানে তারক নিয়োগীর কাছে। তাঁর সঙ্গে বুবু নিয়ম করে অন্তত সপ্তাহে একবার কথা বলে। একেবারে মিস্ত্রি নিয়ে স্টুডিয়োর দেওয়ালে লাগিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে বুবু। একটা ঢাউস অ্যালবামের কভার দুটো দু’পাশে ছড়িয়ে দেওয়ালে স্ক্রু দিয়ে শক্ত করে সেঁটে দিলে আমরা যেভাবে পাতা উলটে উলটে ছবি দেখতে পারি ঠিক তেমন। ছোটসাইজ হলে ২৫টা ফ্রেম, বড়সড় হলে ১০টা। গুগল করে দেখছি ডিস্কাউন্ট ধরে পাঠাবার খরচ বাদ দিয়েও প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা দাম।
সচরাচর মা-কাকীমার ঠোকাঠুকি লাগলে বাঙালি মেয়েরা কথা এড়িয়ে ঘুরিয়ে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সামলাবার চেষ্টা করে। শ্যাননের সে দায় নেই। দু’জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ নিজেদের মধ্যে কোনও একটা বিষয় নিয়ে আরগু করছে করুক, তাতে মাঝখান থেকে তার কথা বলার বা মাথা ঘামানোর কোন প্রয়োজন নেই।
আরও পড়ুন:

দুই বাংলার উপন্যাস: বসুন্ধরা এবং..., পর্ব-২৭: ফুলকাকার ইচ্ছে ছিল বারাণসীর দশাশ্বমেধ ঘাটে চিতাভস্ম বিসর্জন দেবেন

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৭৩: দুই মহর্ষির দ্বন্দ্বে কি ‘ইতি ও নেতি’র বিরোধেরই প্রতিফলন?

ন’কাকীমাকে আরও বিপদে ফেলতে কীরা কাকীমা কথা শুরু করল—
—লেট মি প্লেস মাই টপ ফাইভ! দ্য স্টাররি নাইট বাই ভ্যান গগ, বার্থ অফ ভেনাস। স্যান্ডো বত্তিচেল্লি, দা ভিঞ্চি’স দ্য লাস্ট সাপার, অ্যাম কিপিং মোনালিসা আউট অফ দ্য লিস্ট, নেক্সট দ্য গ্রেট আন্টিওয়্যারপেইন্টিং বাই পাব্লো পিকাসো, হোয়াটস দ্য নেম দাদা? ওন নাইন্টিন থার্টিসেভেন বম্বিং
অবাক চোখ তাকিয়ে থাকতে থাকতে স্তম্ভিত তরুণকান্তি বলে উঠলেন—
—১৯৩৭, নাজি অ্যাটাক অন গারনিকা।
—ইয়েস দ্য নেম ইস গারনিকা, দেন দ্য সিস্টিন চ্যাপেল ফ্রেস্কো বাই মাইকেলেঞ্জেলো, দেন দ্য স্কুল অফ এথেন্স বাই রাফায়েল, চুসিং ফাইভ বেষ্ট ইস ভেরি, টাফ দ্য সাররিয়েল পেন্টিং অফ সালভাদর ডালি, দ্য টাইটেল ইস….. দ্য পার্সিসস্টেন্স অফ …। দাদা হোয়াটস দ্যাট?
ন’কাকা ভাবতে লাগলেন—
—আই থিংক…
—ইয়েস, ইট ইস মেমরি… পার্সিসস্টেন্স অফ মেমরি।
আরও পড়ুন:

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৫৬: নান্দনিক শিক্ষায় উৎসাহী ছিলেন শ্রীমা

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৫০: পুত্রস্নেহে অন্ধ হলে পিতাকেও ধৃতরাষ্ট্রের মতো দুর্দশা ভোগ করতে হয়

সুজাতাকে এরপর ইন্ডিয়ান কন্টেম্পোরারি আর্টিস্টদের পেন্টিং নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন কীরা কাকীমা ভাগ্যিস একটা ফোন এসেছিল সুজাতার, সেই ফোনের ছুতো করেই সেদিন কোনও মতে ঘর ছেড়ে মান বাঁচিয়ে ছিলেন সুজাতা।
আরও পড়ুন:

গীতা: সম্ভবামি যুগে যুগে, পর্ব-৩: কাঁটা হেরি ক্ষান্ত কেন কমল তুলিতে

বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-৫: বার্নার্ড শ ও শার্লটি—যদি প্রেম দিলে না প্রাণে/১

আসলে সংসারে নিজেকে নিজের অস্তিত্বকে জোর করে যারা প্রমাণ করার চেষ্টা করেন তারা সবকিছুর মধ্যে প্রতিযোগিতা খুঁজে বেড়ান। তাদের সবসময় মনে হয় তারা হেরে যাচ্ছে, যাকে তিনি হিংসা করেন সে বোধহয় অনেকটা এগিয়ে গেল, টপকে গেল তাকে। নিজের কাজ নিজের ভাবনা বাদ দিয়ে সারাক্ষণ সেই অন্য মানুষটির পুঙ্খানুপুঙ্খ খোঁজখবর নিতে থাকেন। আসলে ঈর্ষা এক ভয়ঙ্কর জটিল আবেগ, যা প্রেমঘটিত বা বন্ধুত্ব অথবা পারিবারিক সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতার ক্ষেত্রেও দেখা যায়। অপরের সঙ্গে নিজের তুলনায় যদি মনে হয় আমি পিছিয়ে পড়েছি তখনই না চাইলেও নিজের অজান্তেই মনের মধ্যে ঈর্ষা দানা বাঁধতে থাকে।
আরও পড়ুন:

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৫৯: সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ও লৌকিক চিকিৎসা—কালি লতা ও পান লতা

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯৬: স্রোতস্বিনী পদ্মায় লাফিয়ে কবির কটকি চটি-উদ্ধার

নদীর ওপার সর্বদা বেশি সাজানো বেশি সুন্দর। তাই তাই এ পারে বসে কষ্ট হয়! কাউকে দেখে মনে হয় সে বা তারা, আমি বা আমাদের থেকে বেশি সুখী। তারা অনেক বেশি শান্তি স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন কাটাচ্ছে মনে হয় দুনিয়ার সব সমস্যা রোগভোগ ঝঞ্ঝাট সব আমি বা আমাদের জন্য। এ ভাবেই হিংসার তীব্রতা মন এবং শরীরের ওপরেও ভীষণ প্রভাব ফেলে। আসলে ঈর্ষা মনের এক ব্যাধি। —চলবে।
* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।
 

গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম

‘সময় আপডেটস’-এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন। বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন। ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না। গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content