দ্য ওয়েডিং গেস্ট: ছবির একটি দৃশ্য।
দ্য ওয়েডিং গেস্ট
আমার এক মুভিবোদ্ধা বন্ধুকে যখন বললাম, দেব প্যাটেলের ছবি ‘দ্য ওয়েডিং গেস্ট’ দেখলাম। বেশ ভালো লেগেছে। ভাবছি একটা প্রতিবেদন লিখব! সে বলল ওটা কোনও ছবিই হয়নি। কোনও যুক্তি নেই। যেকোনও লোক ইচ্ছে করলেই বন্দুক কিনতে পারে না। গ্রামের বিয়েবাড়িতে প্রচুর লোক থাকে। একটা গুলির শব্দ হলে গোটা গ্রাম বেরিয়ে আসবে। পুলিশে সঙ্গে সঙ্গে খবর যাবে। বিয়ের কনেকে পাকিস্তানের কোনও গ্রাম থেকে ভাগিয়ে নিয়ে যাওয়া এত সহজ নয়… ইত্যাদি ইত্যাদি অসংখ্য কাহিনি সংক্রান্ত অনুযোগ-অভিযোগ!
আসলে এটাই হয়। আমাদের প্রত্যেকের ভালো লাগা এবং চাহিদা আলাদা আলাদা। কেউ কেউ ছবিতে একদল মানুষ কী কী সদর্থক করার চেষ্টা করেছেন সেটা খোঁজেন। ছোটখাট ত্রুটিবিচ্যুতি, শেষমূহুর্তে আবিষ্কার হওয়া ভুল থেকে যায়। সেগুলো নিয়েই কেউ মাথা ঘামান। আবার নিজের কাছে নিজে গুরুত্ব বাড়িয়ে নিজেই যারপরনাই আমোদ অনুভব করেন। কেউ সেগুলো মূল বর্ণনাকে ব্যহত না করলে গুরুত্ব দেন না।
আরও পড়ুন:
মুভি রিভিউ: মহারানি সিরিজের ৩ পর্বেই হুমার অভিনয় নজর কড়েছে
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৪৭: সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ও লৌকিক চিকিৎসা—বাইন ও গর্জন
সিনেমা আর থিয়েটার নিয়ে কে বেশি ভালো — এটা নিয়ে একটা বড় তর্ক হতে পারে। ওই ছোটবেলায় উত্তম-সৌমিত্র , হেমন্ত-মান্না, মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলের মতো সে যুগের চায়ে পে চর্চা। কিন্তু সিনেমা আর থিয়েটারে সুবিধে -অসুবিধে দুই-ই আছে। সিনেমার অভিনয়ে মেরামতির সু্যোগ আছে। কিন্তু অভিনয়ের ক্রমান্বয় উন্নতি সম্ভব নয়, থিয়েটারে সেটা সম্ভব। থিয়েটারে কোনও একটি শো’তে অসাবধানজনিত টেকনিক্যাল ভুল পরবর্তী শো’তে শুধরে নেওয়া যায়। সিনেমা অনেক বেশি খরচ সাপেক্ষ মাধ্যম। তাই কোনও একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্যে কোনও একটা টেকনিক্যাল ভুল শেষ মুহূর্তে ধরা পড়লে তা আর ঠিক করা সম্ভব হয় না।
আরও পড়ুন:
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬৩: বাবু ডাক্তার ও ‘ডাক্তারবাবু’
দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-২২: সরলাদেবী, এক পণ্ডিত মানুষ
যেকোনও শিল্প মাধ্যমের মধ্যে দিয়ে ভাবনার বহিঃপ্রকাশ কষ্টসাধ্য। চিত্রকলা, গান, সিনেমা, নাটক, নাচ বা যন্ত্রসঙ্গীত এক একটি ভাবনা থেকে গড়ে ওঠে। কখনও তা স্বপ্ন গড়তে পারে, আশাপূরণ করে। কখনও পারে না। আমার কাছে ‘দ্য ওয়েডিং গেস্ট’ ছবিটি একটি সিনেমা হয়ে উঠেছে। আমার আশা পূর্ণ করেছে।
জে, একজন ব্রিটিশ যুবক। লন্ডন থেকে সে পাকিস্তানের ইয়ংগানাবাদ এলাকায় আসে। দর্শক জানে না এই যুবক ঠিক কী করতে চায়। সে ভাড়ায় গাড়ি নেয়। রিভলবার কেনে। সেই সঙ্গে এটা বোঝা যায়, সে বড় কিছু একটা পরিকল্পনা করছে। জে খুঁজে খুঁজে গ্রামের একটি বিয়েবাড়িতে পৌঁছয়। রাতে ও গাড়িতে অপেক্ষা করে। গভীর রাতে কনে সামিরাকে বন্দুকের ভয় দেখিয়ে অপহরণ করে। একজন সশস্ত্র প্রহরী বাধা দিতে এলে জে তাকে গুলি করে। সামিরার মুখ টেপ দিয়ে বন্ধ। হাত পিছনে বাঁধা। সামিরাকে গাড়ির ডিকি মধ্যে নিয়ে জে পালিয়ে যায়। এই পুরো ছবিটাই বিয়েবাড়ির এক অনাহূত আগন্তুক জে আর বিয়ের কনে সামিরার পালিয়ে বেড়ানোর কাহিনি।
জে, একজন ব্রিটিশ যুবক। লন্ডন থেকে সে পাকিস্তানের ইয়ংগানাবাদ এলাকায় আসে। দর্শক জানে না এই যুবক ঠিক কী করতে চায়। সে ভাড়ায় গাড়ি নেয়। রিভলবার কেনে। সেই সঙ্গে এটা বোঝা যায়, সে বড় কিছু একটা পরিকল্পনা করছে। জে খুঁজে খুঁজে গ্রামের একটি বিয়েবাড়িতে পৌঁছয়। রাতে ও গাড়িতে অপেক্ষা করে। গভীর রাতে কনে সামিরাকে বন্দুকের ভয় দেখিয়ে অপহরণ করে। একজন সশস্ত্র প্রহরী বাধা দিতে এলে জে তাকে গুলি করে। সামিরার মুখ টেপ দিয়ে বন্ধ। হাত পিছনে বাঁধা। সামিরাকে গাড়ির ডিকি মধ্যে নিয়ে জে পালিয়ে যায়। এই পুরো ছবিটাই বিয়েবাড়ির এক অনাহূত আগন্তুক জে আর বিয়ের কনে সামিরার পালিয়ে বেড়ানোর কাহিনি।
আরও পড়ুন:
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৮৭: কবির জন্মদিনে প্রিয়জনের উপহার
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৪৫: কথার কথা মা নয়—সত্য জননী
জে সেই গ্রাম থেকে অনেকটা ড্রাইভ করার পর একটা নিরাপদ দূরত্বে পোঁছে সামিরাকে গাড়িতে বসায়। বাঁধন খুলে দেয়। জে সামিরাকে জানায়, তার প্রেমিক দীপেশ তাকে ১৫ হাজার পাউন্ড বা সাড়ে ১৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে সামিরাকে পাকিস্তান থেকে অপহরণ করার জন্য ভাড়া করেছে। জে সামিরাকে বলে এখন তার সামনে দুটো রাস্তা খোলা। এক: সামিরা তার পরিবারের সম্বন্ধ করা পাত্রকেই বিয়ে করতে বাড়ি ফিরে যাক। তা না হলে দীপেশের কাছে ফিরে যাবার জন্য সে জে-র সঙ্গে সহযোগিতা করুক।
ছবির একটি বিশেষ দৃশ্যে দেব ও রাধিকা।
এই পারিবারিক বিয়েতে অনিচ্ছুক, সামিরা শেষের পথটা বেছে নেয়। জাল পাসপোর্ট নিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে ওরা ভারতে পৌঁছয়। ভারতেই সামিরাকে দীপেশের হাতে তুলে দেওয়ার কথা। কিন্তু পাকিস্তানের সেই প্রহরীর মৃত্যুর পর সব হিসেব গরমিল হয়ে যায়। পুলিশ জে আর সামিরাকে ধাওয়া করবে এটা আন্দাজ করে দীপেশ তার মত পাল্টায়। সামিরাকে সঙ্গে নিতে অস্বীকার করে। সামিরাকে সে পাকিস্তানে ফিরিয়ে দিতে বলে। বিনিময়ে জে-কে সে আরও ২০ হাজার পাউন্ড মানে প্রায় ২১.৭৫ লক্ষ টাকা দেবে।
এরপর কী? জে কি রাজি হবে? শেষমেশ সামিরা কী করবে? এ সব জানতে নেটক্লিক্স- এ দেখুন ‘দ্য ওয়েডিং গেস্ট’। ছবিটির অন্যতম প্রযোজক স্লামডগ মিলিয়েনেয়ার খ্যাত দেব প্যাটেল। স্বাভাবিকভাবে এ ছবির চিত্রনাট্যের সিংহভাগ জুড়ে দেবের চরিত্র ‘জে’। সামিরার ভূমিকায় রাধিকা আপ্তে ও দীপেশের ছোট্ট ভূমিকায় জিম সর্ভ যথাযথ।
এরপর কী? জে কি রাজি হবে? শেষমেশ সামিরা কী করবে? এ সব জানতে নেটক্লিক্স- এ দেখুন ‘দ্য ওয়েডিং গেস্ট’। ছবিটির অন্যতম প্রযোজক স্লামডগ মিলিয়েনেয়ার খ্যাত দেব প্যাটেল। স্বাভাবিকভাবে এ ছবির চিত্রনাট্যের সিংহভাগ জুড়ে দেবের চরিত্র ‘জে’। সামিরার ভূমিকায় রাধিকা আপ্তে ও দীপেশের ছোট্ট ভূমিকায় জিম সর্ভ যথাযথ।
* * জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড। (Fiji)।