নিজের প্রযোজনায় ‘ছোটিসি মুলাকাত’ এর মাধ্যমে হিন্দি ছবির সাম্রাজ্যে পা রেখেছিলেন উত্তম কুমার। কিন্তু সেই ছবির মাধ্যমে সাফল্য পাননি তিনি। প্রযোজনার জগৎ থেকেও নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন। বাংলায় একের পর এক হিট ছবির নায়ক তখন তিনি। এর মধ্যে উত্তম কুমার অভিনীত দেয়া নেয়া, নিশিপদ্ম, স্ত্রী প্রভৃতি সুপার ডুপার হিট ছবি হিন্দিতে রিমেক করলেন বম্বের বিখ্যাত পরিচালক শক্তি সামন্ত।
এখন যে কাজটি শক্তি সামন্ত করলেন তাতে ছবির জগতে একটা ঝড় তুলতে পেরেছিলেন তিনি। শক্তিপদ রাজগুরুর লেখা ‘নয়াবসত’ উপন্যাসের চিত্ররূপ দিতে অগ্রণী হলেন শক্তি সামন্ত। ছবির নাম দিলেন ‘অমানুষ’। এর প্রধান চরিত্র মধু। সেই চরিত্রে তিনি নির্বাচন করলেন মহানায়ক উত্তম কুমারকে। হিন্দি বাংলা দুই ভাষাতেই নির্মিত হল এই ছবি।
যে সন্দেশখালি এখন সকলের মুখে মুখে সেই সময় (১৯৭৪ সালে) প্রায় জনশূন্য সেই স্থানকে আউটডোর শুটিংয়ের স্পট হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন শক্তি সামন্ত। সন্দেশখালি ২ নম্বর ব্লকের ভাঙ্গা তুষখালি গ্রামকে তিনি নির্বাচন করেছিলেন এই শুটিংয়ের স্পট হিসেবে।
যে সন্দেশখালি এখন সকলের মুখে মুখে সেই সময় (১৯৭৪ সালে) প্রায় জনশূন্য সেই স্থানকে আউটডোর শুটিংয়ের স্পট হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন শক্তি সামন্ত। সন্দেশখালি ২ নম্বর ব্লকের ভাঙ্গা তুষখালি গ্রামকে তিনি নির্বাচন করেছিলেন এই শুটিংয়ের স্পট হিসেবে।
আরও পড়ুন:
পর্দার আড়ালে, পর্ব-৪৯: শ্রদ্ধাঞ্জলি— প্রযোজক-গায়িকা অসীমা মুখোপাধ্যায়, অভিনেত্রী অঞ্জনা ভৌমিক ও গীতিকার মিল্টু ঘোষ
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৩৯: সুন্দরবনের ব্যাঘ্র-ইতিহাস
সুন্দরবন অঞ্চলের এই প্রত্যন্ত এলাকার মাঠঘাট, নদী নালা, এমনকি লঞ্চটি এখানকার সম্পত্তি। যে লঞ্চটিতে উত্তম কুমার কাজ করেছিলেন সেই লঞ্চটির নাম ছিল বিশ্বপ্রেম। কলকাতার বেলেঘাটা অঞ্চলের ব্যবসায়ী মোহনলাল গঙ্গোপাধ্যায়ের বাংলো ছিল ভাঙা তুষখালি গ্রামে। তিনি আবার খুব বন্ধু ছিলেন শক্তিপদ রাজগুরুর। তাই সেই গ্রামে মাঝে মাঝেই এসে বাংলোয় থাকতেন শক্তিপদ রাজগুরু। চিনেছিলেন সন্দেশখালিকে এবং সেই ভাবে করে তিনি চেনালেন শক্তি সামন্তকেও।
আরও পড়ুন:
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৪৬: বহু জনমের মায়া, ধরিল যে কায়া, ওগো ‘শিল্পী’ সে তো শুধু তোমারই ছায়া
হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-৩৪: নারী দিবস ও শিবরাত্রি
জনবসতিপূর্ণ একটা গ্রামের সেট তৈরি করা হল। শিল্পনির্দেশক শান্তি দাস দারুণভাবে গ্রামটিকে তৈরি করে নিতে পেরেছিলেন। আর একুশ দিনের জন্য লঞ্চটি ভাড়া নেয়া হয়েছিল। এ ছবি সারা ভারতে সুপার হিট। উত্তম কুমারের তুলনাই নেই। সঙ্গে ছিলেন শর্মিলা ঠাকুর, উৎপল দত্ত, অনিল চট্টোপাধ্যায়, অভি ভট্টাচার্য, প্রেমা নারায়ণ, মনমোহন, শম্ভু ভট্টাচার্য, অসিত সেন প্রমুখ শিল্পীরা। গীতিকার গৌরী প্রসন্ন মজুমদার। সুরকার শ্যামল মিত্র। গানে গানে ভরিয়ে দিয়েছিলেন কিশোর কুমার আশা ভোঁসলে।
আরও পড়ুন:
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৫৪: রাজনীতিতে, যুগান্তরেও স্বার্থচিন্তার আবহমান প্রভাব
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৩৭: শ্যামাসুন্দরী দেবীর লোকান্তর গমন
উত্তম কুমার কতখানি একনিষ্ঠ ছিলেন অভিনয়ে, সেকথা এই প্রতিবেদককে জানিয়েছিলেন পরিচালক শক্তি সামন্ত যখন তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম কলকাতা দূরদর্শনের ‘ক্লোজআপ’ অনুষ্ঠানে তখন তিনি জানিয়েছিলেন। সেখানে শক্তি সামন্ত বলছেন ‘ডাবল ভার্সন’ এর ছবির দুটি ভাষাতে শুটিং করছি। বাংলার অংশে কোনও কোনও শটে উত্তম কুমারের এনজি (নট গুড) হয়েছে। কিন্তু হিন্দি ভার্সানের টেকিং-এর সময় প্রতিটি শট একেবারেই ‘ওকে’। এতটাই ছিল নিষ্ঠা। —চলবে।
* পর্দার আড়ালে (Behind the scenes) : ড. শঙ্কর ঘোষ (Shankar Ghosh) বিশিষ্ট অধ্যাপক ও অভিনেতা।