প্রযোজক-গায়িকা অসীমা মুখোপাধ্যায়, অভিনেত্রী অঞ্জনা ভৌমিক ও গীতিকার মিল্টু ঘোষ।
২০ ফেব্রুয়ারি চলে গেলে সুরকার প্রযোজিকা গায়িকা অসীমা মুখোপাধ্যায়। তাঁর প্রযোজিত ‘চৌরঙ্গী’ ছবির জন্য তিনি প্রথমে ভেবেছিলেন সুরকার হিসেবে নেবেন শচীন দেব বর্মণকে। কিন্তু শচীন দেব বর্মণ তখন হিন্দি ছবিতে এতই ব্যস্ত যে সময় দিতে পারলেন না। অসীমা মুখোপাধ্যায়ের অন্যতম সংগীত শিক্ষক ছিলেন শৈলেন মুখোপাধ্যায়। তিনি অসীমাকে উৎসাহ দিলেন। অসীমাকে বললেন নিজেকেই সুরসংযোজনা করতে। সেই ভাবে সুরকার হিসেবে অসীমা প্রবেশ করলেন বাংলা ছবিতে।
শংকরের বহু পঠিত উপন্যাস ‘চৌরঙ্গী’র চিত্ররূপে অসীমা ব্যবহার করেছিলেন তিন তিনটে গান। দুটি আধুনিক। অপরটি রবীন্দ্রসঙ্গীত। রবীন্দ্রসঙ্গীত হল—”এই কথাটি মনে রেখো”। ছবির অন্যতম নায়িকা অঞ্জন ভৌমিকের লিপে ছিল গানটি। চরিত্রের নাম সুজাতা। গানটি গাইলেন প্রতিমা বন্দোপাধ্যায়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই ছবির নায়িকা অঞ্জনা ভৌমিক গত ১৭ ফেব্রুয়ারি প্রয়াত হয়েছেন।
আরও পড়ুন:
পর্দার আড়ালে, পর্ব-৪৮: পুরীতে ‘নির্জন সৈকতে’র শুটিংয়ে একসঙ্গে চার চারটি শাড়ি পরে হাজির হয়েছিলেন ছায়া দেবী
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-২৯: সুরের আকাশে ঘটালে তুমি স্বপ্নের ‘শাপমোচন’
‘চৌরঙ্গী’ ছবির আধুনিক গান দুটির গীতিকার মিল্টু ঘোষ। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি গীতিকার মিল্টু ঘোষ চলে গেলেন পরপারে। মিল্টু ঘোষের লেখা এই ছবির গান দুটি হল—”বড় একা লাগে এই আঁধারে” এবং “কাছে রবে কাছে রবে”। প্রথম গানটির গায়ক মান্না দে। গানটি ছিল স্যাটা বোসের (উত্তম কুমার) লিপে। দ্বিতীয় গানটির গায়ক হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। গানটি ছিল অনিন্দের (বিশ্বজিৎ) লিপে।
আরও পড়ুন:
এই দেশ এই মাটি, অসমের আলো অন্ধকার, পর্ব ১০: অসমে রবীন্দ্রনাথ
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৫২: রামচন্দ্রের বনবাসগমনের সিদ্ধান্তে নৈতিকতার জয়? নাকি পিতার প্রতি আনুগত্যের জয় ঘোষণা?
মান্না দে-র গানটি পরিচালক পিনাকী মুখোপাধ্যায়ের পছন্দ হয়নি। তিনি গানটি রাখতেই চাননি এই ছবিতে। সে কথা তিনি প্রযোজিকা সুরকার অসীমাকে জানালেন। শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেল অসীমার। তিনি পুরো বিষয়টাই মহানায়ক উত্তমকুমারের গোচরে আনলেন। মহানায়ক তাঁকে আশ্বস্ত করলেন। বস্তুত উত্তমকুমারের হস্তক্ষেপে গানটি ছবিতে ব্যবহৃত হয়েছিল। কেমন হল, তা তো আজ ইতিহাসই বলে দিয়েছে। নীরবে উত্তমকুমার এমন অনেক কাজ বাংলা ছবির উন্নতির জন্য করে গিয়েছেন।
আরও পড়ুন:
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৩৫: মা সারদার ভ্রাতৃবিয়োগ
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৮১: কবির ‘গানের ভাণ্ডারী’ দিনেন্দ্রনাথ বৈষয়িক-কারণে শান্তিনিকেতন ত্যাগ করেছিলেন
‘চৌরঙ্গী’ ছবিতেই আরেকটি ঘটনার কথা উল্লেখ করা যাক। ছবির জন্য প্রথমে চিত্রনাট্য লিখেছিলেন পিনাকী মুখোপাধ্যায়ের প্রধান সহকারী অমল সরকার। কিন্তু সেই চিত্রনাট্য উত্তম কুমারের মনে ধরল না। উনি প্রত্যেকদিন সন্ধেবেলা শুটিং সেরে বাড়ি ফিরে ময়রা স্ট্রিটের ফ্ল্যাটে অমল সরকারকে নিয়ে নতুন করে চিত্রনাট্য লেখার কাজ শুরু করেছিলেন। উত্তম কুমার ডিক্টেট করতেন আর অমল সরকার সেটা লিখতেন। পরিচালক পিনাকী মুখোপাধ্যায় চেয়েছিলেন ছবির টাইটেল কার্ডে চিত্রনাট্যকার হিসেবে উত্তম কুমারের নাম যাক। কিন্তু উত্তম কুমার তাতে সম্মত হননি। চিত্রনাট্যকার হিসেবে অমল সরকারের নামই গিয়েছিল টাইটেল কার্ডে। এই তথ্য পিনাকী মুখোপাধ্যায় এই প্রতিবেদককে জানিয়েছিলেন যখন পিনাকী মুখোপাধ্যায়ের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছিল কলকাতা দূরদর্শনের ক্লোজআপ অনুষ্ঠানে তখন। —চলবে।
* পর্দার আড়ালে (Behind the scenes) : ড. শঙ্কর ঘোষ (Shankar Ghosh) বিশিষ্ট অধ্যাপক ও অভিনেতা।