বৃহস্পতিবার ৩০ জানুয়ারি, ২০২৫


তপসে ও আমোদি মাছ।

আমাদের বাজারে যে সব ছোট মাছ পাওয়া যায়, তাদের মধ্যে চাহিদার বিচারে তোপশে মাছ অন্যতম। সুস্বাদু এই মাছটির রঙের বাহার এবং এর সাতটি লম্বা শুঁড়, মাছের জগতে একে স্বাতন্ত্র্য এনে দিয়েছে। সোনালি-হলুদ মাছটিকে আমাদের রাজ্যের উপকূলবর্তী এলাকায় বিশেষত সুন্দরবন অঞ্চলে দেখা যায়। সাধারণত অগভীর সমুদ্রে এদের বাস।
মার্চের শুরু থেকেই এদের মোহনায় দেখতে পাওয়া যায়। কারণ, এই সময়ে এরা মোহনায় প্রজননের জন্যে ভিড় করে। যে কোনও কারণেই হোক, সে জলবায়ু পরিবর্তন বা অন্য কোনও কারণে, গত দু’ এক বছরে এদের সংখ্যা বেশ কমে গিয়েছে। আর সেই কারণেই হয়তো বাজারে এই মাছটির দামও বেশ চড়া।
আরও পড়ুন:

বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৯৩: আপনার জলাশয়ের জল কতটা পরিশুদ্ধ জানিয়ে দেবে মাছ

এই দেশ এই মাটি, পর্ব-৩৭: সুন্দরবনের নদীবাঁধের ভবিতব্য

তোপশে মাছের পছন্দের খাবার হল, খুব ছোট মাছ ও অমেরুদণ্ডী জলজ প্রাণী। এই মাছটির একটি পুষ্টিগত বিশেষত্ব হল, এটি সায়ানোকোবালামিন বা ভিটামিন বি-১২ তে খুব সমৃদ্ধ। খুব কম মাছেই এই পরিমাণে এটিকে পাওয়া যায়। এ ছাড়াও অবশ্য আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালশিয়াম ও পটাশিয়ামেরও ভালো উৎস এই মাছ।
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৫১: কচ, দেবযানী ও মহান শুক্রাচার্য— প্রেম, প্রতিহিংসা, উদারতায় অনন্য তিন দৃষ্টান্ত?

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৩৪: মা সারদার সন্তানসম শিষ্যের দেহরক্ষা

এই রকমই আরেকটি মাছ হল আমোদি মাছ। সুন্দরবন অঞ্চলে যথেষ্ট পরিমাণে পাওয়া যায়। গোল্ডেন অ্যানকভি নামে অন্যত্র অভিহিত এই মাছটি সুস্বাদু এবং পুষ্টিগুণেও অনন্য। বিভিন্ন অত্যাবশ্যক খনিজ মৌলের আকর বললেও কম বলা হয়। এই দুটি মাছকে সুন্দরবন অঞ্চলে উপযুক্তভাবে শুকিয়ে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে, বিপনন উপযোগী মোড়কে বাজারজাত করতে পারলে ওই অঞ্চলের মানুষের আয়ের একটি ভালো উৎস হতে পারে। আশা রাখব, আগামী দিনে সুন্দরবন উপকূলে এই মাছ দুটি, স্থানীয় মানুষদের জীবন ও জীবিকায় হয়তো উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করবে।
* বাঙালির মৎস্যপুরাণ (Bangalir Matsya Purana – Fish) : ড. প্রতাপ মুখোপাধ্যায় (Pratap Mukhopadhyay) অবসরপ্রাপ্ত প্রধান মৎস্যবিজ্ঞানী, ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান পরিষদ, ভারত সরকার।

Skip to content