ভাষা: হিন্দি
প্রযোজনা: অনুভব সিনহা
চিত্রনাট্য: সুধীর মিশ্র নিসর্গ মেহেতা শিবা বাজপেয়ী
সংলাপ: সুধীর মিশ্র নিসর্গ মেহেতা অপূর্ব ধর বাদ্গালিয়ান
কাহিনিনির্দেশনা: সুধীর মিশ্র
অভিনয়ে: নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী, ভূমি পেডনেকর, সুমিত ভ্যাস, শারিব হাসমি প্রমুখ
সময়সীমা: ১২৬ মিনিট
দেখা যাবে: নেটফ্লিক্সে
আফওয়া শব্দের বাংলা অর্থ গুজব। যে গুজব আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাপনকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করে। ইনফরমেশন শেয়ারিং-এর এই দুনিয়ায় গুড-ব্যাড-আগলি —সব ধরনের খবর বাতাসের আগে ছড়িয়ে পড়ে। আঙুলের ছোঁয়ায় পোস্ট অফিসের মতো ছাপ দিয়ে আমরা খবর পৌঁছে দিয়ে আরও পাঁচজন মানুষকে। পিয়ন যেমন চিঠি পড়ে না জন্ম-মৃত্যু-বিবাহ সব খবর একই রকম নির্লিপ্ততায় পৌঁছে দিই আমরাও ঠিক একই রকম নির্লিপ্ত দায়িত্বহীনতায় আমার কাছে পৌঁছনো খবরকে আর সকলকে পৌঁছে দিয়ে ভাবি একটা কাজ করা গেল। খবরটা কী? তার কোনও গুরুত্ব আছে কিনা আদপে সেটা সত্যি কিনা—এসব নিয়ে ভাবার ইচ্ছে বা সময় কোনটাই আমাদের নেই।
এই ভাবেই গুজব ছড়ায়। জেনে বা না জেনে আমার আপনার মতোই সাধারণ মানুষ গুজবে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে ফেলেন। না চেয়েও করে ফেলেন। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে ছবি তৈরি করেছেন চিত্রপরিচালক সুধীর মিশ্র। স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং পরবর্তীকালে স্বাধীন ভারতে মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন কংগ্রেস দলের বরিষ্ঠ নেতা দ্বারকাপ্রসাদ মিশ্র। তিনি সুধীর মিশ্রের পিতামহ।
বাবা দেবেন্দ্রনাথ মিশ্র ছিলেন লখনউ ফিল্ম সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। বাদল সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ পরিচয় ছিল সুধীরের। ভাই সুধাংশু মিশ্র পুনা ফিল্ম ইনস্টিটিউটের ছাত্র ছিলেন। কিন্তু সুধীর নিজে কোনও ইনস্টিটিউটে ফিল্ম তৈরি শেখেননি। তিনি দর্শন বিষয়ে স্নাতকোত্তর করেছেন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ১৯৮০ সালে সুধীর মুম্বই চলে আসেন। কুন্দন শাহ নির্মিত জনপ্রিয় কমেডি ‘জানে ভি দো ইয়ারো’-এর চিত্রনাট্য লিখেছিলেন সুধীর। সহ নির্দেশনার কাজ করেছিলেন সৈয়দ আখতার মির্জার ‘মোহন জোশী হাজির হো’ এবং বিধুবিনদ চোপড়ার ‘খামশ’ ছবিতে।
বাবা দেবেন্দ্রনাথ মিশ্র ছিলেন লখনউ ফিল্ম সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। বাদল সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ পরিচয় ছিল সুধীরের। ভাই সুধাংশু মিশ্র পুনা ফিল্ম ইনস্টিটিউটের ছাত্র ছিলেন। কিন্তু সুধীর নিজে কোনও ইনস্টিটিউটে ফিল্ম তৈরি শেখেননি। তিনি দর্শন বিষয়ে স্নাতকোত্তর করেছেন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ১৯৮০ সালে সুধীর মুম্বই চলে আসেন। কুন্দন শাহ নির্মিত জনপ্রিয় কমেডি ‘জানে ভি দো ইয়ারো’-এর চিত্রনাট্য লিখেছিলেন সুধীর। সহ নির্দেশনার কাজ করেছিলেন সৈয়দ আখতার মির্জার ‘মোহন জোশী হাজির হো’ এবং বিধুবিনদ চোপড়ার ‘খামশ’ ছবিতে।
আরও পড়ুন:
মুভি রিভিউ: ‘সজনী শিন্ডে কা ভাইরাল ভিডিয়ো’ সামাজিক বার্তা দেয়
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬১: ‘বন্ধু’ তোমার পথের সাথী
১৯৮৭ তে করলেন প্রথম ছবি ‘ইয়ে ওহ মঞ্জিল তো নেহি’। প্রথম বানানো সেরা ছবি হিসেবে পুরস্কৃত হলেন। ১৯৮৮ সালে ‘ম্যাঁয় জিন্দা হুঁ’। ১৯৯৬ তে ‘ইস রাত কি সুবহ নেহি’। ২০০৩ এ ‘চামেলি’, ২০০৫ সালে ‘হাজার খোয়াইশে অ্যাইসি’। এরপর ‘খোয়া খোয়া চাঁদ’, ইয়ে শালি জিন্দগি, ইনকার। ২০১৮ সালে দেবদাসের নতুন আঙ্গিক ‘দাস দেব’। ২০২০ সালে নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী’র অতুলনীয় অভিনয়ে সমৃদ্ধ মনু জোসেফের পুরস্কৃত উপন্যাস ‘সিরিয়াস মেন’। এরপর আবার নওয়াজ ও ভূমি, সুমিতকে নিয়ে নতুন ছবি ‘আফওয়া’।
আরও পড়ুন:
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৩২: সরকারবাড়ির ছেলেদের সঙ্গে শ্রীমার বুড়ি-বুড়ি খেলা
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৩৪: সুন্দরবনের মৃত ও মৃতপ্রায় নদী
এই ছবিতে আজকের রাজনীতির নগ্ন দিকটিকে স্পষ্ট করা হয়েছে। রাহাব নামে একজন সফল ব্যবসায়ী সওয়ালপুর গ্রাম হয়ে একটি সরু রাস্তা ধরে চলেছিলেন অনেকটা দূরে নাহারগড় দুর্গে। সেখানে তাঁর স্ত্রী সাহিত্য উৎসবে উপস্থিত রয়েছে। তার সঙ্গে দেখা করতে চলেছেন রাহাব। রাস্তায় নেহাত কাকতালীয়ভাবে রাজনৈতিক মদতপুষ্ট স্থানীয় গুন্ডা চন্দন তার দলবল নিয়ে সেখানে পৌঁছয়। রাজনীতির নেতা ভিকি মিছিল করে যাচ্ছিল। সেই মিছিলে কে বা কারা ঢিল ছুঁড়ে মারে। চন্দন তার দলবল নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। মুসলমানদের উপর চড়াও হয়। আচমকা গোলমাল বেঁধে যায়। সে সময় চন্দনের হাতে একটি মাংসের দোকানের কষাই খুন হয়ে যায়।
আরও পড়ুন:
আপনার সন্তান কি প্রায়ই কাঁদে? শিশুর কান্না থামানোর সহজ উপায় বলে দিচ্ছেন ডাক্তারবাবু
রাক্ষসের ভূমিকায় অভিনয়ের জন্য বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র ঢুকে গেলেন বেতারকেন্দ্রে
নিবেদিতা (নিবি) ভিকির বাগদত্তা। নিবেদিতার বাবা জ্ঞান সিং এই এলাকার বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতা। চন্দনের হাতে এই আচমকা খুনের কারণে আগামী নির্বাচনে পার্টির রাজনৈতিক ক্ষতি হতে পারে। সুতরাং জ্ঞান সিং চন্দনকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেন। এদিকে এই খুনোখুনির রাজনীতিতে ভিকির প্রত্যক্ষ মদত আছে এই মন্তব্য করায়, নিবির সঙ্গে ভিকির কথা কাটাকাটি হয়। ভিকির অজান্তে নিবি বাড়ি ছেড়ে যায়। ভিকির দলের ছেলেরা নিবিকে মাঝ রাস্তায় পাকড়াও করে। দুর্ভাগ্যবশত রাহাব তখন সেই রাস্তা দিয়েই যাচ্ছিল। একা মহিলা রাস্তার মধ্যে বিপদে পড়েছেন ভেবে রাহাত তাঁকে সাহায্য করতে গাড়িতে তুলে নেয়। ঠিক এখান থেকেই গল্পের ধারা বদলে যায়।
নিবি এবং রাহাবকে ধরার জন্য ভিকির সোশ্যাল মিডিয়া সেল রাহাব আর নিবিকে জড়িয়ে গুজব ছড়িয়ে দেয়। একটি হিন্দু মেয়েকে অপহরণ করে নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে একটি মুসলমান ছেলে। এটি লাভ জিহাদ। এরপর একটার পর একটা ছড়িয়ে পড়া গুজব, গুজবে উদভ্রান্ত দুর্বিনীত মারমুখি জনতা। রাজনৈতিক নেতাদের চাটুকারিতায় ব্যস্ত পুলিশ প্রশাসন। আর এ সবের মধ্যে নিতান্ত নিরাপরাধ দুটি মানুষ রাহাব আর নিবির বাঁচার জন্য ক্রমাগত পালাতে থাকা নিয়ে দুরন্ত গতিতে ছুটতে থাকে সুধীর মিশ্রের ছবি ‘আফওয়া’। অসাধারণ অভিনয়ে এই পুরো ছবিকে ভয়ংকর ভাবে বাস্তব করে তুলেছেন নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী, ভূমি পেডনেকর, সুমিত ভ্যাস, শারিব হাসমি প্রমুখ।
* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।