অনন্তরম
ভাষা: মালয়ালম
প্রযোজনা: কে রবিন্দ্রণ নায়ার
কাহিনি চিত্রনাট্য সংলাপ ও নির্দেশনা: আদুর গোপালাকৃষ্ণণ
অভিনয়: মামুটি, অশোকন, শোভনা
সময়সীমা: ১২৫মিনিট
দেখা যাবে: ইউটিউবে
বিশ্ব চলচ্চিত্রে ভারতীয় ভাবধারার সত্যজিৎ-ঋতিক-মৃণাল অধ্যায়ের যোগ্য উত্তরসূরি দক্ষিণী চিত্রপরিচালক আদুর গোপালাকৃষ্ণণ। পুরো নাম মৌত্তাথু গোপালাকৃষ্ণণ উন্নিথন। আদুরের এখন বয়স ৮২। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন ১৬ বার। কেরলের রাজ্য চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন ১৭ বার। ১৯৮৪ তে পদ্মশ্রী, ২০০৬ তে পদ্মবিভূষণ এবং ২০০৪ এ দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কারে ভূষিত এই পরিচালক। ইকনমিক্স, পলিটিকাল সাইন্স এবং পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন-সহ স্নাতক আদুর গোপালাকৃষ্ণণ তামিলনাড়ুতে সরকারি আধিকারিক হিসেবে চাকরি করতেন। ১৯৬২ সালে চাকরি ছেড়ে পুণে ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া (এফটিআইআই)-তে যোগদান।
১৯৭২ সালে প্রথম ছবি ‘স্বয়ংভরম’ মালায়ালাম চলচ্চিত্রে যুগান্তর আনে। মস্কো, মেলবোর্ন, লন্ডন এবং প্যারিসে উচ্চ প্রশংসিত হল এই ছবি। এরপর একে একে কড়িয়েত্তাম, এলিপ্পাথিয়ম, মুখামুখম, অনন্তরম, মাথিলুকাল, বিধেয়ন, কথাপুরুষাণ ভারতীয় তথা বিশ্ব চলচ্চিত্রে বিশেষভাবে আকর্ষিত হল। ২০০৭ সালে আদুর শেষ ছবি করেছেন ‘নালু পেন্নুঙ্গাল’ (ফোর উইমেন) চারজন ভিন্নধারার মহিলাকে নিয়ে চারটি ছোট ছবির একটি সংকলন। তার ঠিক আগের ছবি ‘নিঝালকুত্থু’।
১৯৭২ সালে প্রথম ছবি ‘স্বয়ংভরম’ মালায়ালাম চলচ্চিত্রে যুগান্তর আনে। মস্কো, মেলবোর্ন, লন্ডন এবং প্যারিসে উচ্চ প্রশংসিত হল এই ছবি। এরপর একে একে কড়িয়েত্তাম, এলিপ্পাথিয়ম, মুখামুখম, অনন্তরম, মাথিলুকাল, বিধেয়ন, কথাপুরুষাণ ভারতীয় তথা বিশ্ব চলচ্চিত্রে বিশেষভাবে আকর্ষিত হল। ২০০৭ সালে আদুর শেষ ছবি করেছেন ‘নালু পেন্নুঙ্গাল’ (ফোর উইমেন) চারজন ভিন্নধারার মহিলাকে নিয়ে চারটি ছোট ছবির একটি সংকলন। তার ঠিক আগের ছবি ‘নিঝালকুত্থু’।
আসলে ভালোলাগার রকমফের আছে। কারও টানটান রহস্য-রোমাঞ্চ সিরিজ ভালো লাগে, কারও ভালো লাগে একা একা জীবনানন্দ দাশের কবিতা পড়তে। এই ভালোলাগাটার জন্য ভিন্ন ভিন্ন মানুষ হতে হয় না আমাদের মনের ভিন্ন ভিন্ন অবস্থাতে এই দুটোই ভালো লাগতে পারে। কবিতার ভাষা কবিতার উপলব্ধি যেহেতু রহস্য রোমাঞ্চ সিরিজের মতো সর্বদা ঘটমান কিছু নয়, তাই কবিতার গতি সব সময়ই ধীর স্থির ভাবে বয়ে যাওয়া। যারা সেলুলয়েডে কাব্যিক ছবি তৈরি করেন বা করার চেষ্টা করেন, সে চলচ্চিত্রের ভাষা অন্য। ধীর স্থির বহমান কাব্যময়তায় উজ্জ্বল। আদুরের ছবি এমনই। কাব্যময় মিস্টিক। যত না দেখার শোনার জানার, ততটাই অনুভবের উপলদ্ধির।
এখন অনেকে বলেন এটা নাকি গতির যুগ! লম্বা লেখা পড়ার পাঠক নেই। লম্বা কথা শোনার শ্রোতা নেই। মার্গীয় সংগীতের সমঝদার নেই। একটুতেই মানুষের মন নাকি অন্যত্র উড়ে যায়। তাই লোককে ধরে বেঁধে রাখতে সবকিছুতেই এসএমএস-এর চুটকি দাওয়াই। চুটকি গল্প চুটকি উপন্যাস চুটকি নাটক। মাত্র দুটি বা তিনটি ছত্রে সুরবাঁধা চুটকি পরিশ্রমে একটি আস্ত গান। তাতে আবার কেকের টপিং-এর মতো চুটকি সরগমের কালোয়াতি। এতেই বাজিমাত। সিনেমাতেও ক্যামেরার চলনে কাহিনির বলনে অমন চুটকি টুকলি কালোয়াতি। তাতেই একেকজন বিদগ্ধ বিশিষ্টজনের সৃষ্টি হচ্ছে অহরহ।
এখন অনেকে বলেন এটা নাকি গতির যুগ! লম্বা লেখা পড়ার পাঠক নেই। লম্বা কথা শোনার শ্রোতা নেই। মার্গীয় সংগীতের সমঝদার নেই। একটুতেই মানুষের মন নাকি অন্যত্র উড়ে যায়। তাই লোককে ধরে বেঁধে রাখতে সবকিছুতেই এসএমএস-এর চুটকি দাওয়াই। চুটকি গল্প চুটকি উপন্যাস চুটকি নাটক। মাত্র দুটি বা তিনটি ছত্রে সুরবাঁধা চুটকি পরিশ্রমে একটি আস্ত গান। তাতে আবার কেকের টপিং-এর মতো চুটকি সরগমের কালোয়াতি। এতেই বাজিমাত। সিনেমাতেও ক্যামেরার চলনে কাহিনির বলনে অমন চুটকি টুকলি কালোয়াতি। তাতেই একেকজন বিদগ্ধ বিশিষ্টজনের সৃষ্টি হচ্ছে অহরহ।
আরও পড়ুন:
রিভিউ: ক্রাইম থ্রিলারে সাজানো সামাজিক পচনের গল্প, ‘দহাড়’-এ দাপটের সঙ্গে গর্জন সোনাক্ষীর
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৫৭: হারায়ে খুঁজি চন্দ্রনাথ
কিন্তু যাঁরা সত্যি সত্যি ভালো সিনেমা দেখতে চান, তারা বেশিদিন এসব দেখতে দেখতে যাতে ক্লান্ত হয়ে না পড়েন তাই মাঝে মাঝে সুযোগ পেলে ক্ল্যাসিক সিনেমা দেখা উচিত। পাঠকদের আরণ্যক পড়া উচিত। শ্রোতাদের কাজী সব্যসাচীর আবৃত্তি, উস্তাদ বড়ে গোলাম আলি, পণ্ডিত ভীমসেন যোশির গান শোনা উচিত। অন্তরের সৎ শক্তিকে জাগরূক করতে এসব খুব প্রয়োজনীয়। তা না হলে আসল আর নকল ঢাকাই জামদানির তফাত বোঝা যাবে না।
মালায়ালাম ‘অনন্তরম’ শব্দের বঙ্গার্থ হল ‘এরপর’। বহির্বিশ্বে এই ছবিটি মোনোলগ নামে বিখ্যাত। ছবির মূল চরিত্র অজয়নের আত্মকথনের জবানিতে ছবিটি তৈরি হয়েছে। সরলমাত্রিক গল্প বলা বা লিনিয়র স্টোরি টেলিং-এর যে প্রচলিত ধরনের সঙ্গে আমরা পরিচিত, একটি চরিত্রের বা বহুল চরিত্রের বর্ণনা, বিবৃতি তার বা তাদের জীবনের ঘটনাক্রম এবং ক্লাইম্যাক্স বা পরিণতি। প্লেনের ওড়ার ভাষায় টেক অফ-ক্রুজিং-ল্যান্ডিং। কিন্তু এই ছবিতে আদুর গল্প বলার চিরাচরিত ধারাকে ভেঙেছেন। ছবিটি ১৯৮৭ সালে চেকোস্লোভাকিয়ায় কার্লোভিভ্যারি ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভেলে গুরুত্বপূর্ণ ফিপ্রেস্কি পুরস্কার লাভ করে। জাতীয় পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ পরিচালনা শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্য এবং শ্রেষ্ঠ শব্দ সংযোজনার জন্য পুরস্কৃত হয়। একটি চ্যানেলের ভোটাভুটিতে ১০০ বছরের শ্রেষ্ঠ ভারতীয় ছবির মধ্যে একটি বলে গণ্য হয়েছে অনন্তরম।
মালায়ালাম ‘অনন্তরম’ শব্দের বঙ্গার্থ হল ‘এরপর’। বহির্বিশ্বে এই ছবিটি মোনোলগ নামে বিখ্যাত। ছবির মূল চরিত্র অজয়নের আত্মকথনের জবানিতে ছবিটি তৈরি হয়েছে। সরলমাত্রিক গল্প বলা বা লিনিয়র স্টোরি টেলিং-এর যে প্রচলিত ধরনের সঙ্গে আমরা পরিচিত, একটি চরিত্রের বা বহুল চরিত্রের বর্ণনা, বিবৃতি তার বা তাদের জীবনের ঘটনাক্রম এবং ক্লাইম্যাক্স বা পরিণতি। প্লেনের ওড়ার ভাষায় টেক অফ-ক্রুজিং-ল্যান্ডিং। কিন্তু এই ছবিতে আদুর গল্প বলার চিরাচরিত ধারাকে ভেঙেছেন। ছবিটি ১৯৮৭ সালে চেকোস্লোভাকিয়ায় কার্লোভিভ্যারি ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভেলে গুরুত্বপূর্ণ ফিপ্রেস্কি পুরস্কার লাভ করে। জাতীয় পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ পরিচালনা শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্য এবং শ্রেষ্ঠ শব্দ সংযোজনার জন্য পুরস্কৃত হয়। একটি চ্যানেলের ভোটাভুটিতে ১০০ বছরের শ্রেষ্ঠ ভারতীয় ছবির মধ্যে একটি বলে গণ্য হয়েছে অনন্তরম।
আরও পড়ুন:
অসমের আলো-অন্ধকার, পর্ব-৪: বরাকপারের কথা
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৩৬: গলা সাধলেই লতাকণ্ঠী?
অজয়ন নামের এক অনাথ শিশুকে এক ডাক্তার আশ্রয় দিয়েছিলেন। ছেলেটি অত্যন্ত মেধাবী। কিন্তু কোনও কিছুতেই সে স্থির থাকতে পারে না। সর্বদা তার মধ্যে একটা অস্থিরতা, সিদ্ধান্তহীনতা কাজ করে। তার পালক বাবার বড় ছেলে বালুর বিয়ে হয় সুমা নামের একটি সুন্দরী মেয়ের সঙ্গে। অদ্ভুতভাবে প্রথম দেখার পরই অজয়ন তার সম্পর্কে বৌদির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। এর ফলে অজয়নের মধ্যে অসম্ভব অন্তর্দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। সে নিজেকে সরিয়ে নেয়। শেষে এক মর্মান্তিক পরিস্থিতিতে কাহিনি শেষ হয়। অজয়ন আবার একটি নতুন কাহিনি বলতে শুরু করে। এ গল্পে অজয়নের জীবনে আসে নলিনী নামের একটি সুন্দরী মেয়ে।
আরও পড়ুন:
ক্যাবলাদের ছোটবেলা, পর্ব-২৬: স্বপ্নে আমার মনে হল
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-২৬: বৃন্দাবনে জননী সারদা
এই গল্পে বোঝা যায় অজয়নের প্রেমিক মন বাস্তব আর কল্পনার মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। এই গল্প মিশে রয়েছে তার শৈশবের নির্যাস। এই দুটি আলাদা আলাদা গল্প একই সূত্রে মিশে যায় যখন দর্শক দেখে নলিনী আর সুমা একই মানুষ। নলিনী অজয়নের থেকে হঠাৎ দূরে চলে গিয়েছিল। মানসিকভাবে চুরমার হয়ে গিয়েছিল অজয়ন। সেই সময় তার পালক পিতা ডাক্তারবাবু গিয়েছিলেন তার খোঁজ নিতে। অজয়নের মানসিক ভারসাম্যহীনতা দেখে পালকপিতাও খুব কষ্ট পেয়েছিলেন। কিছুদিন বাদে তিনি মারা যান। অজয়ের মনে হয় যে তার জন্যই এই দুঃখজনক পরিস্থিতি ঘটে গিয়েছে। এর কিছুদিন বাদে বালুর বিয়ে হয় সুমার সঙ্গে।
আদুর গোপালকৃষ্ণন
সুমাকে দেখার পর থেকেই অজয়নের মনের মধ্যে তার ছেড়ে যাওয়া পূর্বপ্রেমিকা নলিনী ফিরে আসে সুমার চেহারা নিয়ে। অথবা সুমাকেই সে মনে মনে নলিনী ভাবতে শুরু করে। এই পরিণতিতে আমরা শুনি অজয়ন বলছে তার ঠিক খেয়াল হচ্ছে না যে পুরো কাহিনিটা সে ঠিকঠাক বলতে পেরেছে কিনা। ছবি যখন শেষ হয় আমরা দেখি অজয়ন তার শৈশবে ফিরে গিয়েছে এবং পুকুরঘাটের সিঁড়ি গুনে গুনে সে জলের দিকে যাচ্ছে। প্রথমবার ঠিকমতো গুনে পরেরবার গুনে দেখবার সময় সে বিজোড় সংখ্যাগুলোকে বাদ দিয়ে গুনতে থাকে। এ ভাবেই ছবি দর্শকের কাছে এই সারিয়াল ছবির মূলসুর আদুর গোপালাকৃষ্ণণ পৌঁছে দেন এক অদ্ভুত অনবদ্য প্রতীকি কাব্যময়তায়। অন্ততরম ভারতীয় চলচ্চিত্রের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছবি। তাই সেই ছবির আলোচনা চুটকিতে শেষ করা গেল না।
* ফিল্ম রিভিউ: জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। দ্বিতীয় খণ্ড লিখেছেন।