ছবি; প্রতীকী। সংগৃহীত।
অযোধ্যার বঞ্চিত প্রতারিত কুমার রাম মায়ের কাছে দুঃসংবাদটি নিয়ে চললেন। তিনি যৌবরাজ্যাভিষেকের প্রত্যাখ্যাত যুবরাজ। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হবেন তাঁর ভাই কৈকেয়ীপুত্র ভারত। ইতিমধ্যে অন্তঃপুরে অন্যান্য রাজ মহিষীদের মধ্যে ক্রন্দন রোল উঠল। রাম, যে তাঁদের গর্ভজাত সন্তান তুল্য। গতির্যঃ শরণঞ্চাসীৎ স রামোঽদ্য প্রবৎস্যতি। রাম তাঁদের একযোগে গতি এবং আশ্রয়। জননী কৌশল্যার সঙ্গে একাসনে তাঁদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন তিনি। এ বিষয়ে কোন বৈষম্য নেই তাঁর। ক্রোধহীন, ক্রোধজয়ী রাম। দশরথের অন্যান্য মহিষীরা রাজাকেই দোষারোপ করতে লাগলেন। অবুদ্ধির্বত নো রাজা জীবলোকং চরত্যয়ম্। যো গতিং সর্বভূতানাং পরিত্যজতি রাঘবম্।।
এই বুদ্ধিহীন আমাদের রাজা, সকল প্রাণীর বিনাশে উদ্যত হয়েছেন, তাঁদের আশ্রয় রঘুনন্দনকে পরিত্যাগ করেছেন তিনি। বৎসহীন গাভীর মতো হাহাকার করে উঠলেন তাঁরা। সেই মর্মভেদী আর্তনাদ দশরথের কানে পৌঁছল। তিনি আরও মুষড়ে পড়লেন। প্রিয়জনদের কাতরতা রামের হৃদয় স্পর্শ করল। তিনি ভারাক্রান্ত মনে, অনুজ লক্ষ্মণকে সঙ্গে নিয়ে মা কৌশল্যার অন্তপুরে প্রবেশ করলেন। রাত্রিযাপন করে ব্রতপরায়ণা, শুদ্ধাচারিণী দেবী কৌশল্যা তখন শুভ্রবরণ শুদ্ধবসনে, পুত্রের কল্যাণে, অগ্নিহোত্র হবনরতা। বিবিধ উপাচার নিয়ে, কৌশল্যা ব্রতানুষ্ঠানে নিমগ্না। অকস্মাৎ, সমাগত পুত্রকে দেখে, ঘোটকী যেমন শাবকের দিকে ছুটে যায়, তেমনই আনন্দোচ্ছ্বাসে ছুটে গেলেন রামের সম্মুখে। জননীর চরণ স্পর্শ করলেন রামচন্দ্র। মা স্নেহভরে পুত্রকে বাহুডোরে বেঁধে আশীর্বাদে ভরিয়ে দিলেন। রাম, বৃদ্ধ ধার্মিক মহান রাজস্বীগণের আয়ু ও কীর্তি লাভ করে বংশোচিত ধর্ম পালন করেন যেন। বাছা রাঘব, ধার্মিক, সত্যপরায়ণ, পিতা রাজা দশরথ আজই তোমায় যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত করবেন।
সত্যপ্রতিজ্ঞং পিতরং রাজানং পশ্য রাঘব। অদ্যৈব ত্বাং স ধর্মাত্মা যৌবরাজ্যেঽভিষেক্ষ্যতি।। আসন বিছিয়ে পুত্রকে ভোজনে আহ্বান জানালেন জননী কৌশল্যা। বিনয়াবনত রামের গন্তব্য দণ্ডকারণ্য। মায়ের অনুমতিপ্রার্থী হয়ে এসেছেন তিনি। নতমস্তকে মায়ের অজ্ঞাত মর্মান্তিক বার্তাটি নিবেদন করলেন। জানালেন, চতুর্দশ হি বর্ষাণি বৎস্যামি বিজনে বনে। কন্দমূলফলৈর্জীবন্ হিত্বা মুনিবদামিষম্।। রামচন্দ্র এখন রামচন্দ্র এখন কন্দ, ফল, মূল ভক্ষণ করে মুনির মতো অরণ্যজীবনে অভ্যস্ত হতে চলেছেন। এখন এ আসন তাঁর জন্যে নয়। কুশঘাসের আসনে উপবেশনের সময় এখন। মহারাজ দশরথ, ভরতকে সিংহাসনে অভিষিক্ত করে, রামকে তপস্বীর বাসযোগ্য দণ্ডকারণ্যে নির্বাসিত করেছেন। কুঠারাঘাতে ছিন্ন শালদণ্ডটির মতো লুটিয়ে পড়লেন রানি। সযত্নে, ভূলুণ্ঠিতা কদলীর মতো সংজ্ঞাহীনা জননীকে তুলে ধরলেন রাম। কৌশল্যার পীড়িত অবস্থা ঠিক ভারবহনে ক্লান্ত ঘোটকীর মতো। তিনি প্রবল দুঃখে, আর্তস্বরে, বললেন, সন্তানহীনা হলেই বরং ভালো। গর্ভজাত পুত্র রামের কারণে, পুত্রহীনা নারীর দুঃখের অধিক দুঃখ, তাঁকে ভোগ করতে হচ্ছে। এখন দুঃখে আকুল হয়ে রানি কৌশল্যা আরও জানালেন, স্বামীর রাজত্বে সুখ জোটেনি কপালে। পুত্রের পুরুষাকারে সুখ লাভ করবেন এই আশায় বেঁচেছেন এতকাল। এখন সপত্নীদের যত বিরূপ মন্তব্য সহ্য করতে হবে তাঁকে। প্রধান মহিষী হয়েও অপ্রধানা হয়ে থাকবেন চিরকাল।
একজন স্ত্রীর এর থেকে অধিক দুঃখ আর কীই বা হতে পারে? রামের উপস্থিতিতেই তাঁর এই দশা। এরপরে রাম প্রবাসে গমন করলে, মৃত্যু হবে কৌশল্যার। রাজা দশরথ, চিরকাল অবহেলা করেছেন এই রানিকে। তিনি রাজার প্রিয়া নন। তাঁর মর্যাদা কৈকেয়ীর দাসীর তুল্য বা তাঁদের থেকেও অধমা তিনি। যারা এখন তাঁর সেবা করেন তারা কৈকেয়ীর পুত্র ভরতের শাসনাধীন রাজত্বে বাক্যালাপ পর্যন্ত করবেন না।
এই বুদ্ধিহীন আমাদের রাজা, সকল প্রাণীর বিনাশে উদ্যত হয়েছেন, তাঁদের আশ্রয় রঘুনন্দনকে পরিত্যাগ করেছেন তিনি। বৎসহীন গাভীর মতো হাহাকার করে উঠলেন তাঁরা। সেই মর্মভেদী আর্তনাদ দশরথের কানে পৌঁছল। তিনি আরও মুষড়ে পড়লেন। প্রিয়জনদের কাতরতা রামের হৃদয় স্পর্শ করল। তিনি ভারাক্রান্ত মনে, অনুজ লক্ষ্মণকে সঙ্গে নিয়ে মা কৌশল্যার অন্তপুরে প্রবেশ করলেন। রাত্রিযাপন করে ব্রতপরায়ণা, শুদ্ধাচারিণী দেবী কৌশল্যা তখন শুভ্রবরণ শুদ্ধবসনে, পুত্রের কল্যাণে, অগ্নিহোত্র হবনরতা। বিবিধ উপাচার নিয়ে, কৌশল্যা ব্রতানুষ্ঠানে নিমগ্না। অকস্মাৎ, সমাগত পুত্রকে দেখে, ঘোটকী যেমন শাবকের দিকে ছুটে যায়, তেমনই আনন্দোচ্ছ্বাসে ছুটে গেলেন রামের সম্মুখে। জননীর চরণ স্পর্শ করলেন রামচন্দ্র। মা স্নেহভরে পুত্রকে বাহুডোরে বেঁধে আশীর্বাদে ভরিয়ে দিলেন। রাম, বৃদ্ধ ধার্মিক মহান রাজস্বীগণের আয়ু ও কীর্তি লাভ করে বংশোচিত ধর্ম পালন করেন যেন। বাছা রাঘব, ধার্মিক, সত্যপরায়ণ, পিতা রাজা দশরথ আজই তোমায় যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত করবেন।
সত্যপ্রতিজ্ঞং পিতরং রাজানং পশ্য রাঘব। অদ্যৈব ত্বাং স ধর্মাত্মা যৌবরাজ্যেঽভিষেক্ষ্যতি।। আসন বিছিয়ে পুত্রকে ভোজনে আহ্বান জানালেন জননী কৌশল্যা। বিনয়াবনত রামের গন্তব্য দণ্ডকারণ্য। মায়ের অনুমতিপ্রার্থী হয়ে এসেছেন তিনি। নতমস্তকে মায়ের অজ্ঞাত মর্মান্তিক বার্তাটি নিবেদন করলেন। জানালেন, চতুর্দশ হি বর্ষাণি বৎস্যামি বিজনে বনে। কন্দমূলফলৈর্জীবন্ হিত্বা মুনিবদামিষম্।। রামচন্দ্র এখন রামচন্দ্র এখন কন্দ, ফল, মূল ভক্ষণ করে মুনির মতো অরণ্যজীবনে অভ্যস্ত হতে চলেছেন। এখন এ আসন তাঁর জন্যে নয়। কুশঘাসের আসনে উপবেশনের সময় এখন। মহারাজ দশরথ, ভরতকে সিংহাসনে অভিষিক্ত করে, রামকে তপস্বীর বাসযোগ্য দণ্ডকারণ্যে নির্বাসিত করেছেন। কুঠারাঘাতে ছিন্ন শালদণ্ডটির মতো লুটিয়ে পড়লেন রানি। সযত্নে, ভূলুণ্ঠিতা কদলীর মতো সংজ্ঞাহীনা জননীকে তুলে ধরলেন রাম। কৌশল্যার পীড়িত অবস্থা ঠিক ভারবহনে ক্লান্ত ঘোটকীর মতো। তিনি প্রবল দুঃখে, আর্তস্বরে, বললেন, সন্তানহীনা হলেই বরং ভালো। গর্ভজাত পুত্র রামের কারণে, পুত্রহীনা নারীর দুঃখের অধিক দুঃখ, তাঁকে ভোগ করতে হচ্ছে। এখন দুঃখে আকুল হয়ে রানি কৌশল্যা আরও জানালেন, স্বামীর রাজত্বে সুখ জোটেনি কপালে। পুত্রের পুরুষাকারে সুখ লাভ করবেন এই আশায় বেঁচেছেন এতকাল। এখন সপত্নীদের যত বিরূপ মন্তব্য সহ্য করতে হবে তাঁকে। প্রধান মহিষী হয়েও অপ্রধানা হয়ে থাকবেন চিরকাল।
একজন স্ত্রীর এর থেকে অধিক দুঃখ আর কীই বা হতে পারে? রামের উপস্থিতিতেই তাঁর এই দশা। এরপরে রাম প্রবাসে গমন করলে, মৃত্যু হবে কৌশল্যার। রাজা দশরথ, চিরকাল অবহেলা করেছেন এই রানিকে। তিনি রাজার প্রিয়া নন। তাঁর মর্যাদা কৈকেয়ীর দাসীর তুল্য বা তাঁদের থেকেও অধমা তিনি। যারা এখন তাঁর সেবা করেন তারা কৈকেয়ীর পুত্র ভরতের শাসনাধীন রাজত্বে বাক্যালাপ পর্যন্ত করবেন না।
প্রিয় রামের কাছে দেবী কৌশল্যা তাঁর সমস্ত দুঃখ, ক্ষোভ উজার করে দিলেন। তিনি সেই মুখরা, নিত্য কলহরতা, তিক্তবচনে অভ্যস্তা কৈকেয়ীর মুখোমুখি হবেন কী করে? তিনি রামের সপ্তদশ বছর বয়স অবধি এই দুঃখমুক্তির অপেক্ষায় দিন গুণেছেন এতকাল। দশ সপ্ত চ বর্ষাণি জাতস্য তব রাঘব। অতীতানি প্রকাঙ্ক্ষন্ত্যা ময়া দুঃখপরিক্ষয়ম্।। এখন এই জীর্ণ শরীরে, অসহনীয় হয়ে উঠেছে সপত্নীদের এই দুর্ব্যবহার। রামের পূর্ণিমার পূর্ণচন্দ্রের মতো মুখশ্রী অদর্শনে, তিনি যে একেবারে অনুদার কৃপণের মতো দীন জীবন কাটাবেন। অপশ্যন্তী তব মুখং পরিপূর্ণশশিপ্রভম্। কৃপণা বর্ত্তয়িষ্যামি কথং কৃপণজীবিকা।। কত সাধনায়, কত পরিশ্রমে, তিনি বাছা রামকে বড় করে তুলেছেন। আজ এই পোড়াকপালে সবকিছুই নিষ্ফল হল। বর্ষার নব জলোচ্ছ্বাসে মহানদীর কূল ভেঙে যায়।
কেন এই শোকের অভিঘাতেও তাঁর হৃদয় ভেঙে চৌচিড় হচ্ছে না কেন? এতটাই কঠিনহৃদয়া তিনি? যম তার প্রতি বিমুখ। সিংহবিক্রমে, যম, কেন এই কাতর, রোদনে আকুল, মৃগীসম দুর্বল কৌশল্যাকে হরণ করছেন না? তাঁর লৌহসম শরীরের সহনশীলতা ভেঙ্গে খানখান হল না, বজ্রকঠিন হৃদয়টিও বিদীর্ণ হল না এখনও। অকালে কারও মৃত্যু হয়না, এটিই প্রমাণিত হল। ব্রতপালন, নিয়ম, দান, উপবাস, তপস্যাদি যা কিছু তিনি করেছেন এতকাল তা যেন মরুভূমিতে উপ্ত বীজের মতো বিফল হল। তিনি পুত্রের সমব্যথী হয়ে রামের অনুগমনের ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। কারণ রাম বিনা তাঁর জীবন বৃথা। দুর্বল গাভীর মতো সামর্থ্যহীন হয়েও বৎস রামকে অনুসরণ করবেন জননী কৌশল্যা। পুত্রকে নিবিড় আলিঙ্গনে বদ্ধ করে আকুলভাবে বিলাপ করতে লাগলেন অযোধ্যার রাজ্ঞী কৌশল্যা।
দেবী কৌশল্যার বিলাপ সহ্য করতে পারলেন না রামের অনুজ লক্ষ্মণ। রানি কৌশল্যার এই ভেঙে পড়া দেখে উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলেন, রঘুনন্দন রাম, একজন নারীর কথায় রাজ্যলক্ষ্মীকে ত্যাগ করে বনে গমন করবেন—এটি তার অভিপ্রেত নয় মোটেই। পিতার সমালোচনায় সাহসী হলেন তিনি। রাজা দশরথ বৃদ্ধ হয়েছেন, তাঁর মতিগতি একেবারেই সরল সোজা নয়। বিশেষ করে তিনি বিষয়াসক্ত ও কামুক। তিনি কামের তাড়নায় কী না করতে পারেন? রঘুনন্দন রামের কী অপরাধ? কোনও ত্রুটিতো নেই তাঁর, যে কারণে রাষ্ট্র থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন তিনি? দীর্ঘ বনবাস তাঁর জন্য নির্দিষ্ট হয়েছে? অতি বড় অপরাধী বা শত্রুকেও রামের সমালোচনা করতে দেখেননি লক্ষ্মণ। এমন কোনও মানুষ নেই যিনি পরোক্ষভাবেও কখনও রামের কোনও দোষ খুঁজে পেয়েছেন। এমনকি ধর্মবোধ পর্যন্ত উপেক্ষা করে, অধার্মিক কোন রাজা, দেবপ্রতিম সরল উদার শত্রুদেরও সন্তানতুল্য রামচন্দ্রের মতো পুত্রকে অকারণে পরিত্যাগ করতে পারেন? সুতরাং কোন পুত্র,রাজা দশরথের বালকসুলভ এই লঘু সিদ্ধান্ত রাজোচিত অভিপ্রায় হিসেবে মনে স্থান দিতে পারেন কী? সুতরাং বিষয়টি পাঁচকান হওয়ার আগেই আপনি আমার সঙ্গে এই রাজ্যের শাসনদণ্ডটি অধিকার করুন। যাবদেব ন জানাতি কশ্চিদর্থমিমং নরঃ। তাবদেব ময়া সার্দ্ধমাত্মস্থং কুরু শাসনম্।।
কেন এই শোকের অভিঘাতেও তাঁর হৃদয় ভেঙে চৌচিড় হচ্ছে না কেন? এতটাই কঠিনহৃদয়া তিনি? যম তার প্রতি বিমুখ। সিংহবিক্রমে, যম, কেন এই কাতর, রোদনে আকুল, মৃগীসম দুর্বল কৌশল্যাকে হরণ করছেন না? তাঁর লৌহসম শরীরের সহনশীলতা ভেঙ্গে খানখান হল না, বজ্রকঠিন হৃদয়টিও বিদীর্ণ হল না এখনও। অকালে কারও মৃত্যু হয়না, এটিই প্রমাণিত হল। ব্রতপালন, নিয়ম, দান, উপবাস, তপস্যাদি যা কিছু তিনি করেছেন এতকাল তা যেন মরুভূমিতে উপ্ত বীজের মতো বিফল হল। তিনি পুত্রের সমব্যথী হয়ে রামের অনুগমনের ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। কারণ রাম বিনা তাঁর জীবন বৃথা। দুর্বল গাভীর মতো সামর্থ্যহীন হয়েও বৎস রামকে অনুসরণ করবেন জননী কৌশল্যা। পুত্রকে নিবিড় আলিঙ্গনে বদ্ধ করে আকুলভাবে বিলাপ করতে লাগলেন অযোধ্যার রাজ্ঞী কৌশল্যা।
দেবী কৌশল্যার বিলাপ সহ্য করতে পারলেন না রামের অনুজ লক্ষ্মণ। রানি কৌশল্যার এই ভেঙে পড়া দেখে উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলেন, রঘুনন্দন রাম, একজন নারীর কথায় রাজ্যলক্ষ্মীকে ত্যাগ করে বনে গমন করবেন—এটি তার অভিপ্রেত নয় মোটেই। পিতার সমালোচনায় সাহসী হলেন তিনি। রাজা দশরথ বৃদ্ধ হয়েছেন, তাঁর মতিগতি একেবারেই সরল সোজা নয়। বিশেষ করে তিনি বিষয়াসক্ত ও কামুক। তিনি কামের তাড়নায় কী না করতে পারেন? রঘুনন্দন রামের কী অপরাধ? কোনও ত্রুটিতো নেই তাঁর, যে কারণে রাষ্ট্র থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন তিনি? দীর্ঘ বনবাস তাঁর জন্য নির্দিষ্ট হয়েছে? অতি বড় অপরাধী বা শত্রুকেও রামের সমালোচনা করতে দেখেননি লক্ষ্মণ। এমন কোনও মানুষ নেই যিনি পরোক্ষভাবেও কখনও রামের কোনও দোষ খুঁজে পেয়েছেন। এমনকি ধর্মবোধ পর্যন্ত উপেক্ষা করে, অধার্মিক কোন রাজা, দেবপ্রতিম সরল উদার শত্রুদেরও সন্তানতুল্য রামচন্দ্রের মতো পুত্রকে অকারণে পরিত্যাগ করতে পারেন? সুতরাং কোন পুত্র,রাজা দশরথের বালকসুলভ এই লঘু সিদ্ধান্ত রাজোচিত অভিপ্রায় হিসেবে মনে স্থান দিতে পারেন কী? সুতরাং বিষয়টি পাঁচকান হওয়ার আগেই আপনি আমার সঙ্গে এই রাজ্যের শাসনদণ্ডটি অধিকার করুন। যাবদেব ন জানাতি কশ্চিদর্থমিমং নরঃ। তাবদেব ময়া সার্দ্ধমাত্মস্থং কুরু শাসনম্।।
আরও পড়ুন:
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৪১: কুরুপাণ্ডবদের দ্বৈরথ, সেই থেকে ভরতবংশীয়দের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে ঈর্ষার দহনজ্বালা জ্বলছে, আজও…
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-২৫: উদ্যানবাটিতে সারদা মায়ের ঠাকুরের শুশ্রূষা
লক্ষণ জ্যেষ্ঠকে আশ্বস্ত করে বললেন, তিনি ধনুক হাতে নিয়ে সর্বদাই রামের পাশে বিরাজ করবেন। যমের মুখোমুখি মানুষের মতো কেউই রামের বিরুদ্ধাচরণে সাহসী হবেন না। রামের সুরক্ষায় লক্ষ্মণ চরম পর্যায়ে যেতেও রাজি। যদি কেউ বিরুদ্ধাচরণ করেন তবে শাণিত তীরে এই অযোধ্যাকে জনশূন্য করে তুলবেন তিনি। ভরতের সমর্থক বা কল্যাণকামী, যেই হন তাঁদের সকলকে তিনি হত্যা করবেন। কারণ কোন নরম মানুষকে পরাজিত করা সহজ। রানি কৈকেয়ীর উৎসাহে, পরম সন্তোষে, যদি আমাদের পিতা আমাদেরকে শত্রু মনে করেন, তবে নিঃশংসয়ে তাঁকে বধ করাই উচিত। এ বিষয়ে লক্ষণের যুক্তি হল—উদ্ধত, কার্যাকার্যের বিষয়ে অজ্ঞ, বিপথগামী, গুরু শাসনের ঊর্ধ্বে নন। গুরোরপ্যবলিপ্তস্য কার্য্যাকার্য্যমজানতঃ।উৎপথং প্রতিপন্নস্য কার্য্যং ভবতি শাসনম্।।
কোন শক্তি রাজার আয়ত্তাধীন, যার সামর্থ্যহেতু রাজা, রামের ন্যায্যপ্রাপ্য রাজ্যটি ভরতকে দান করতে চাইছেন? আপনার ও আমার সঙ্গে শত্রুতা করে ভরতকে রাজ্য দান করবার শক্তি কার আছে? ত্বয়া চৈব ময়া চৈব কৃত্বা বৈরমনুত্তমম্।কাস্য শক্তিঃ শ্রিয়ং দাতুং ভরতায়ারিশাসনম্।।
রানি কৌশল্যার কাছে সত্য, ধনু, দানের পুণ্যফল ও ইষ্টবস্তুর নামে শপথ করে বললেন, অনুরক্তোঽস্মি ভাবেন ভ্রাতরং দেবি তত্ত্বতঃ। হে দেবি, আমি একান্তভাবে ভায়ের অনুগত। রামচন্দ্র আগুনে বা গভীর অরণ্যে যেখানেই প্রবেশ করবেন, রানি কৌশল্যা নিশ্চিন্তমনে এটাই বিশ্বাস রাখবেন যে, লক্ষ্মণ তার পূর্বেই সেখানে উপস্থিত আছেন। উদীয়মান সূর্যের মতো লক্ষ্মণ স্ববীর্যবত্তায় কৌশল্যার মনের নৈরাশ্যের অন্ধকার দূর করবেন। দৃঢ়কণ্ঠে জানালেন তিনি— কৈকেয়ীতে আসক্ত, অনুদার, বালকসুলভ অপরিণতবুদ্ধির, নিন্দিত রাজাকে বধ করব আমি। হনিষ্যে পিতরং বৃদ্ধং কৈকেয্যাসক্তমানসম্। কৃপণঞ্চ স্থিতং বাল্যে বৃদ্ধভাবেন গর্হিতম্।।
রোরুদ্যমানা কৌশল্যা লক্ষ্মণের উদ্দীপক সান্ত্বনাবাক্যে কিছুটা আশ্বস্ত হয়ে রামকে আবারও অনুরোধ জানালেন, ভায়ের পরামর্শ অনুযায়ী সপত্নী কৈকেয়ীর সিদ্ধান্ত অনুসারে, শোকাকুলা কৌশল্যাকে পরিত্যাগ করে রাম বনবাসে যেতে পারেননা। আর ধর্মাচরণ যদি তাঁর অভীপ্সিত হয়ে থাকে তাহলে স্বস্থানে থেকে, মায়ের সেবা করাই শ্রেষ্ঠধর্ম। মায়ের শুশ্রূষা করেই তপস্যারত ঋষি কাশ্যপ দেবলোকে গমন করেছিলেন। পিতা রাজা দশরথ যেমন পূজ্য, একইভাবে মা কৌশল্যাও তাঁর পূজনীয়া। মায়ের আদেশ, রাম যেন বনগমন না করেন। পুত্রসাহচর্যে তৃণভোজনও তাঁর কাছে শ্রেয়। রাম বিনা সুখতো দূরের কথা, প্রাণধারণেও তিনি অক্ষম। শোকার্তা মাকে দেখেও যদি রাম বনে যান তবে মা কৌশল্যা প্রায়োপবেশন অর্থাৎ মৃত্যুকামনায় অনশনে ব্রতী হবেন। এ জীবন তিনি আর রাখবেন না। যদি ত্বং যাস্যসি বনং ত্যক্ত্বা মাং শোকলালসাম্। অহং প্রায়মিহাশিষ্যে ন চ শক্ষ্যামি জীবিতুম্।।
কোন শক্তি রাজার আয়ত্তাধীন, যার সামর্থ্যহেতু রাজা, রামের ন্যায্যপ্রাপ্য রাজ্যটি ভরতকে দান করতে চাইছেন? আপনার ও আমার সঙ্গে শত্রুতা করে ভরতকে রাজ্য দান করবার শক্তি কার আছে? ত্বয়া চৈব ময়া চৈব কৃত্বা বৈরমনুত্তমম্।কাস্য শক্তিঃ শ্রিয়ং দাতুং ভরতায়ারিশাসনম্।।
রানি কৌশল্যার কাছে সত্য, ধনু, দানের পুণ্যফল ও ইষ্টবস্তুর নামে শপথ করে বললেন, অনুরক্তোঽস্মি ভাবেন ভ্রাতরং দেবি তত্ত্বতঃ। হে দেবি, আমি একান্তভাবে ভায়ের অনুগত। রামচন্দ্র আগুনে বা গভীর অরণ্যে যেখানেই প্রবেশ করবেন, রানি কৌশল্যা নিশ্চিন্তমনে এটাই বিশ্বাস রাখবেন যে, লক্ষ্মণ তার পূর্বেই সেখানে উপস্থিত আছেন। উদীয়মান সূর্যের মতো লক্ষ্মণ স্ববীর্যবত্তায় কৌশল্যার মনের নৈরাশ্যের অন্ধকার দূর করবেন। দৃঢ়কণ্ঠে জানালেন তিনি— কৈকেয়ীতে আসক্ত, অনুদার, বালকসুলভ অপরিণতবুদ্ধির, নিন্দিত রাজাকে বধ করব আমি। হনিষ্যে পিতরং বৃদ্ধং কৈকেয্যাসক্তমানসম্। কৃপণঞ্চ স্থিতং বাল্যে বৃদ্ধভাবেন গর্হিতম্।।
রোরুদ্যমানা কৌশল্যা লক্ষ্মণের উদ্দীপক সান্ত্বনাবাক্যে কিছুটা আশ্বস্ত হয়ে রামকে আবারও অনুরোধ জানালেন, ভায়ের পরামর্শ অনুযায়ী সপত্নী কৈকেয়ীর সিদ্ধান্ত অনুসারে, শোকাকুলা কৌশল্যাকে পরিত্যাগ করে রাম বনবাসে যেতে পারেননা। আর ধর্মাচরণ যদি তাঁর অভীপ্সিত হয়ে থাকে তাহলে স্বস্থানে থেকে, মায়ের সেবা করাই শ্রেষ্ঠধর্ম। মায়ের শুশ্রূষা করেই তপস্যারত ঋষি কাশ্যপ দেবলোকে গমন করেছিলেন। পিতা রাজা দশরথ যেমন পূজ্য, একইভাবে মা কৌশল্যাও তাঁর পূজনীয়া। মায়ের আদেশ, রাম যেন বনগমন না করেন। পুত্রসাহচর্যে তৃণভোজনও তাঁর কাছে শ্রেয়। রাম বিনা সুখতো দূরের কথা, প্রাণধারণেও তিনি অক্ষম। শোকার্তা মাকে দেখেও যদি রাম বনে যান তবে মা কৌশল্যা প্রায়োপবেশন অর্থাৎ মৃত্যুকামনায় অনশনে ব্রতী হবেন। এ জীবন তিনি আর রাখবেন না। যদি ত্বং যাস্যসি বনং ত্যক্ত্বা মাং শোকলালসাম্। অহং প্রায়মিহাশিষ্যে ন চ শক্ষ্যামি জীবিতুম্।।
আরও পড়ুন:
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-২৭: হিন্দু-মুসলিম মিশ্র দেবতা সত্যনারায়ণ ও সত্যপীর
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৫০: কুষ্টি বিচার, না কি রক্ত বিচার! জরুরি কোনটা?
পরিশেষে রানির কণ্ঠে যেন আশীর্বাদের পরিবর্তে অভিশাপবার্তা? রাম যদি সিদ্ধান্তে অটল থাকেন তাহলে,লৌকিক পৃথিবীতে যে সব বিখ্যাত দুঃখের দৃষ্টান্ত আছে তোমার ভাগ্যেও সেই রকম দুঃখ-ই নির্দিষ্ট রইল। ততস্ত্বং প্রাপ্স্যসে পুত্র নিরয়ং লোকবিশ্রুতম্
রাম এতসব আদর্শবিরোধী বক্তব্যে একটুও বিচলিত হলেন না। নিজসিদ্ধান্তে অনড় থেকে দৃঢ়কন্ঠে বললেন, পিতার বাক্য লঙ্ঘন করবার শক্তি তাঁর নেই। নতমস্তকে মাকে প্রসন্ন করছেন তিনি। বনে তাকে যেতেই হবে। এটাই তার চরম মতো। তিনি বিখ্যাত পৌরাণিক দৃষ্টান্ত তুলে ধরলেন। ঋষি কুণ্ড পিতার আদেশে অধর্মাচরণ করে, প্রাণীহত্যারূপ অধর্মাচরণ গোবধ করেছিলেন। রামের নিজের সূর্যবংশে, পিতা সগরের আদেশে পুত্ররা পৃথিবীখননে প্রবৃত্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন। জমদগ্নিপুত্র পরশুরাম পিতার আদেশে মা রেনুকাকে কুঠার দ্বারা নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছিলেন। এইসব বিখ্যাত উদাহরণগুলি উদ্বুদ্ধ করেছে রামচন্দ্রকে।তিনি পিতৃসত্য রক্ষা করবেন। ধার্মিক ব্যক্তিত্বদের ধর্মাচরণের দৃষ্টান্তগুলি তাঁর পাথেয়। পিতৃবাক্যপালনে কোন পতন নেই, নেই কোনও স্খলন। এটি অকার্য নয়।
লক্ষ্মণকে বললেন জ্যেষ্ঠর প্রতি তার যে প্রীতিময় আস্থা এবং লক্ষ্মণের নিজের শক্তি, শৌর্য এবং দুর্ধর্ষ তেজ সকলই তিনি বিশেষভাবে জানেন।নিঃসন্দেহে মায়ের দুঃখের শেষ নেই ঠিকই। মা কিন্তু পুত্রের সদভিপ্রায় এবং শান্তিবিষয়ক মনোভাব বুঝতে পারছেন না। তাই তাঁর এই গভীর দুঃখানুভব। কিন্তু লক্ষ্মণের এমন হাহাকাররূপ প্রতিক্রিয়া আশানুরূপ নয়। ধর্মেই সত্য প্রতিষ্ঠিত, পিতার প্রস্তাব ধর্মসঙ্গত।তাই সেটি কার্যে পরিণত করা, তাঁর কর্তব্য। পিতার আদেশ অন্যথা করতে রাম অপারগ। সুতরাং অনুজের প্রতি রামের উপদেশ – ক্ষত্রিয়ধর্মাশ্রিত এই নৃশংসতার ক্রুরবুদ্ধি পরিত্যাগ করে প্রকৃত ধর্ম অবলম্বন কর। তদেতাং বিসৃজানার্য্যাং ক্ষত্রধর্ম্মাশ্রিতাং মতিম্। ধর্ম্মমাশ্রয় মা তৈক্ষ্ণ্যং মদ্বুদ্ধিরনুগম্যতাম।।
রাম, কাতরকণ্ঠে,মা কৌশল্যর অনুমতি প্রার্থনা করলেন। আনুষ্ঠানিকবিধিমতে মাঙ্গলিক বিদায় আয়োজন সম্পন্ন করুন। রামপ্রতিজ্ঞা করছেন, নির্দিষ্ট বনবাসকাল উত্তীর্ণ করবার পরে আবার অযোধ্যাতে তিনি ফিরে আসবেন। তিনি বনে বাস করে পিতৃসত্য পালন করবেন। মা কৌশল্যা দেবী, সুমিত্রা দেবী, বৈদেহী সীতা, লক্ষণ ও রামচন্দ্র, সকলেরই রাজা দশরথের আদেশ পালন করাই সনাতন ধর্ম।বনবাসে প্রেরণরূপ আয়োজন মা কৌশল্যা যেন সম্পন্ন করেন।
রামের সেই ধর্ম সংগত বচন শুনে কৌশল্য দেবী সংজ্ঞা হারালেন। জ্ঞান ফিরে পেয়ে আবার বললেন পিতার মতো মা সমানভাবে পূজনীয়া। তাঁর আদেশ অমান্যকরাও উচিত নয়। পুত্রবিচ্ছিন্না মায়ের, জীবন, বন্ধু-বান্ধব, কোনও কিছুরই প্রয়োজন নেই। শুধু রামের সঙ্গে মুহূর্তকাল অবস্থানেই একমাত্র মঙ্গল তাঁর। রাম দুঃখের আগুনে দগ্ধ হতে হতে দুঃখার্ত লক্ষ্মণ এবং হিতাহিতজ্ঞানশূন্যা মাকে ধর্মসঙ্গত প্রবোধবাক্যে বোঝাতে লাগলেন, লক্ষ্মণের শৌর্য ও ভ্রাতৃভক্তি তাঁর অবিদিত নয়। শুধু মায়ের মতো, লক্ষ্মণেরও রামের মহদুদ্দেশ্য বুঝবার মানসিকতার অভাব রয়েছে। ধর্ম, অর্থ, কাম এই তিন পুরুষার্থের মধ্যে যে কোনও লৌকিক সুখই ধর্মনির্ভর। ধর্মানুসারী পুত্রবতী পত্নীর মতোই ধর্মাচরণ সকলের অভিপ্রেত। ধর্মের অনুষ্ঠানে ত্রিবর্গের ফললাভ হয়। সেই ধর্মানুষ্ঠান সর্বদাই কাম্য।
রাম এতসব আদর্শবিরোধী বক্তব্যে একটুও বিচলিত হলেন না। নিজসিদ্ধান্তে অনড় থেকে দৃঢ়কন্ঠে বললেন, পিতার বাক্য লঙ্ঘন করবার শক্তি তাঁর নেই। নতমস্তকে মাকে প্রসন্ন করছেন তিনি। বনে তাকে যেতেই হবে। এটাই তার চরম মতো। তিনি বিখ্যাত পৌরাণিক দৃষ্টান্ত তুলে ধরলেন। ঋষি কুণ্ড পিতার আদেশে অধর্মাচরণ করে, প্রাণীহত্যারূপ অধর্মাচরণ গোবধ করেছিলেন। রামের নিজের সূর্যবংশে, পিতা সগরের আদেশে পুত্ররা পৃথিবীখননে প্রবৃত্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন। জমদগ্নিপুত্র পরশুরাম পিতার আদেশে মা রেনুকাকে কুঠার দ্বারা নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছিলেন। এইসব বিখ্যাত উদাহরণগুলি উদ্বুদ্ধ করেছে রামচন্দ্রকে।তিনি পিতৃসত্য রক্ষা করবেন। ধার্মিক ব্যক্তিত্বদের ধর্মাচরণের দৃষ্টান্তগুলি তাঁর পাথেয়। পিতৃবাক্যপালনে কোন পতন নেই, নেই কোনও স্খলন। এটি অকার্য নয়।
লক্ষ্মণকে বললেন জ্যেষ্ঠর প্রতি তার যে প্রীতিময় আস্থা এবং লক্ষ্মণের নিজের শক্তি, শৌর্য এবং দুর্ধর্ষ তেজ সকলই তিনি বিশেষভাবে জানেন।নিঃসন্দেহে মায়ের দুঃখের শেষ নেই ঠিকই। মা কিন্তু পুত্রের সদভিপ্রায় এবং শান্তিবিষয়ক মনোভাব বুঝতে পারছেন না। তাই তাঁর এই গভীর দুঃখানুভব। কিন্তু লক্ষ্মণের এমন হাহাকাররূপ প্রতিক্রিয়া আশানুরূপ নয়। ধর্মেই সত্য প্রতিষ্ঠিত, পিতার প্রস্তাব ধর্মসঙ্গত।তাই সেটি কার্যে পরিণত করা, তাঁর কর্তব্য। পিতার আদেশ অন্যথা করতে রাম অপারগ। সুতরাং অনুজের প্রতি রামের উপদেশ – ক্ষত্রিয়ধর্মাশ্রিত এই নৃশংসতার ক্রুরবুদ্ধি পরিত্যাগ করে প্রকৃত ধর্ম অবলম্বন কর। তদেতাং বিসৃজানার্য্যাং ক্ষত্রধর্ম্মাশ্রিতাং মতিম্। ধর্ম্মমাশ্রয় মা তৈক্ষ্ণ্যং মদ্বুদ্ধিরনুগম্যতাম।।
রাম, কাতরকণ্ঠে,মা কৌশল্যর অনুমতি প্রার্থনা করলেন। আনুষ্ঠানিকবিধিমতে মাঙ্গলিক বিদায় আয়োজন সম্পন্ন করুন। রামপ্রতিজ্ঞা করছেন, নির্দিষ্ট বনবাসকাল উত্তীর্ণ করবার পরে আবার অযোধ্যাতে তিনি ফিরে আসবেন। তিনি বনে বাস করে পিতৃসত্য পালন করবেন। মা কৌশল্যা দেবী, সুমিত্রা দেবী, বৈদেহী সীতা, লক্ষণ ও রামচন্দ্র, সকলেরই রাজা দশরথের আদেশ পালন করাই সনাতন ধর্ম।বনবাসে প্রেরণরূপ আয়োজন মা কৌশল্যা যেন সম্পন্ন করেন।
রামের সেই ধর্ম সংগত বচন শুনে কৌশল্য দেবী সংজ্ঞা হারালেন। জ্ঞান ফিরে পেয়ে আবার বললেন পিতার মতো মা সমানভাবে পূজনীয়া। তাঁর আদেশ অমান্যকরাও উচিত নয়। পুত্রবিচ্ছিন্না মায়ের, জীবন, বন্ধু-বান্ধব, কোনও কিছুরই প্রয়োজন নেই। শুধু রামের সঙ্গে মুহূর্তকাল অবস্থানেই একমাত্র মঙ্গল তাঁর। রাম দুঃখের আগুনে দগ্ধ হতে হতে দুঃখার্ত লক্ষ্মণ এবং হিতাহিতজ্ঞানশূন্যা মাকে ধর্মসঙ্গত প্রবোধবাক্যে বোঝাতে লাগলেন, লক্ষ্মণের শৌর্য ও ভ্রাতৃভক্তি তাঁর অবিদিত নয়। শুধু মায়ের মতো, লক্ষ্মণেরও রামের মহদুদ্দেশ্য বুঝবার মানসিকতার অভাব রয়েছে। ধর্ম, অর্থ, কাম এই তিন পুরুষার্থের মধ্যে যে কোনও লৌকিক সুখই ধর্মনির্ভর। ধর্মানুসারী পুত্রবতী পত্নীর মতোই ধর্মাচরণ সকলের অভিপ্রেত। ধর্মের অনুষ্ঠানে ত্রিবর্গের ফললাভ হয়। সেই ধর্মানুষ্ঠান সর্বদাই কাম্য।
আরও পড়ুন:
দশভুজা, শক্তিরূপেন সংস্থিতা, পর্ব-২: একলা চলো রে…
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৭৭: আস্তাবলে সহিসদের রাখি পরাতে রবীন্দ্রনাথ ছুটে গিয়েছিলেন
শুধু অর্থচিন্তা বিদ্বেষভাব সৃষ্টি করে বা একমাত্র কামাসক্তিও প্রশংসনীয় নয়। ধর্ম ব্যতীত কোনটিই সম্পূর্ণ নয়। পিতা বা গুরু কিংবা রাজা যদি বৃদ্ধ হন, তিনি কামের বশবর্তী হয়ে বা ক্রোধান্বিত অবস্থায় বা লঘু পরিহাসবশত যদি কোন আদেশ করেন তবে তা, যে কোনও সচ্চরিত্র ধার্মিক ব্যক্তিই অবহেলা করতে পারেন না। রাজা দশরথ পিতা এবং গুরু। তাঁর আদেশ অবশ্যই পালনীয়।দেবী কৌশল্যার স্বামীই ধর্ম ও আশ্রয়।স্বামীর জীবদ্দশায় তাঁকে পরিত্যাগ করে তাঁর বনগমন ধর্মসঙ্গত নয়। রামচন্দ্র জানালেন, জীবন ক্ষণস্থায়ী। শুধুমাত্র রাজ্যলাভের কারণে চিরন্তন, মহান, যশ বিসর্জন দিতে পারবেন না তিনি। তাই ধর্মবিরুদ্ধ, তুচ্ছ, পার্থিব রাজ্যসুখভোগে অনিচ্ছা তাঁর।
জননীকে ধর্মোপদেশ শান্ত করে অক্ষুব্ধচিত্তে বনগমনে উদ্যোগী হলেন রামচন্দ্র। রামচন্দ্রের বনগমনের সিদ্ধান্তে ব্যাকুল মায়ের মানসিকতা বা তাঁর প্রতিক্রিয়া একজন স্নেহবিহ্বলা ভারতীয় মায়ের অনুরূপ। শুধু তাঁর নয় অন্যান্য অন্তঃপুরিকাদের মন স্পর্শ করেছিল রামচন্দ্রের আসন্ন বিচ্ছেদবেদনাবোধ, এতটাই রামের মনোমোহিনী আকর্ষণী শক্তি। সে শক্তি অন্তঃসারশূন্য নয়,রাম যেন তাঁদের জীবনরেখার নির্ধারক। এই আত্মিকসম্পর্কবিনির্মাণে রাম সাধারণ মানুষের মানবিক মুখ হয়ে উঠেছেন।
রামের দীর্ঘ অনুপস্থিতিজনিত দুঃখের ছায়া দীর্ঘায়িত হয়েছে, কৌশল্যার শোকের বর্ণনায়। গভীর আগ্রহে আসন পেতে আহার পরিবেশনে উদগ্রীব মাকে প্রত্যাখ্যান করে রাম যখন ঘোষণা করলেন রাজোচিত রাজভোগ নয়,বনবাসীর কুশাসন এবং সাত্ত্বিক আহারই অভ্যাস করছেন তিনি। দীর্ঘ সংসারজীবনে বঞ্চিতা, অবহেলিতা ভারতীয় নারী পুত্রের স্বাবলম্বী হওয়ার অপেক্ষায় আশায় বুক বেঁধে অপেক্ষা করেন,পরিশেষে আশাভঙ্গের নিদারুণ ক্ষোভে মৃতবৎসা গাভীর মতো সংসারে অপাঙক্তেয় হয়ে ওঠেন। ঠিক তেমনই হয়তো কৌশল্যার সঙ্গে নিজের সাদৃশ্যে সান্ত্বনা খুঁজেপান আজও কেউ কেউ।
প্রিয়সন্তানের কাছে মনের গভীরে জমে থাকা ক্ষোভ, দুঃখজ্বালা উগরে দিয়ে মনের সংক্ষোভকে স্তিমিত করবার বৃথা চেষ্টা করেছেন কৌশল্যা। তাঁর আত্মহননের হুমকি অরণ্যে রোদন হয়েছে। রাজমহলের স্বাচ্ছন্দ্য বিসর্জন দিয়ে পুত্রের বনবাসকালীন কৃচ্ছ্রসাধনের জীবনে সঙ্গী হতে চেয়েছেন, যা, যে কোনও স্নেহশীলা মায়ের মনের প্রতিচ্ছবি। তবে তাঁর যুক্তি মনকে নাড়া দেয় যখন তিনি পিতৃসত্যরক্ষায় অনমনীয় রামের মনস্তাত্ত্বিক জটিলতায় আঘাত দিয়ে দাবি করেন মায়ের সম্মানপ্রাপ্তি পিতার অনুরূপ, কেন নয়?তখন এটি বোধ হয় একটি অসমাপ্ত জটিল গাণিতিক সমাধানের মতো মনে হয়।
জননীকে ধর্মোপদেশ শান্ত করে অক্ষুব্ধচিত্তে বনগমনে উদ্যোগী হলেন রামচন্দ্র। রামচন্দ্রের বনগমনের সিদ্ধান্তে ব্যাকুল মায়ের মানসিকতা বা তাঁর প্রতিক্রিয়া একজন স্নেহবিহ্বলা ভারতীয় মায়ের অনুরূপ। শুধু তাঁর নয় অন্যান্য অন্তঃপুরিকাদের মন স্পর্শ করেছিল রামচন্দ্রের আসন্ন বিচ্ছেদবেদনাবোধ, এতটাই রামের মনোমোহিনী আকর্ষণী শক্তি। সে শক্তি অন্তঃসারশূন্য নয়,রাম যেন তাঁদের জীবনরেখার নির্ধারক। এই আত্মিকসম্পর্কবিনির্মাণে রাম সাধারণ মানুষের মানবিক মুখ হয়ে উঠেছেন।
রামের দীর্ঘ অনুপস্থিতিজনিত দুঃখের ছায়া দীর্ঘায়িত হয়েছে, কৌশল্যার শোকের বর্ণনায়। গভীর আগ্রহে আসন পেতে আহার পরিবেশনে উদগ্রীব মাকে প্রত্যাখ্যান করে রাম যখন ঘোষণা করলেন রাজোচিত রাজভোগ নয়,বনবাসীর কুশাসন এবং সাত্ত্বিক আহারই অভ্যাস করছেন তিনি। দীর্ঘ সংসারজীবনে বঞ্চিতা, অবহেলিতা ভারতীয় নারী পুত্রের স্বাবলম্বী হওয়ার অপেক্ষায় আশায় বুক বেঁধে অপেক্ষা করেন,পরিশেষে আশাভঙ্গের নিদারুণ ক্ষোভে মৃতবৎসা গাভীর মতো সংসারে অপাঙক্তেয় হয়ে ওঠেন। ঠিক তেমনই হয়তো কৌশল্যার সঙ্গে নিজের সাদৃশ্যে সান্ত্বনা খুঁজেপান আজও কেউ কেউ।
প্রিয়সন্তানের কাছে মনের গভীরে জমে থাকা ক্ষোভ, দুঃখজ্বালা উগরে দিয়ে মনের সংক্ষোভকে স্তিমিত করবার বৃথা চেষ্টা করেছেন কৌশল্যা। তাঁর আত্মহননের হুমকি অরণ্যে রোদন হয়েছে। রাজমহলের স্বাচ্ছন্দ্য বিসর্জন দিয়ে পুত্রের বনবাসকালীন কৃচ্ছ্রসাধনের জীবনে সঙ্গী হতে চেয়েছেন, যা, যে কোনও স্নেহশীলা মায়ের মনের প্রতিচ্ছবি। তবে তাঁর যুক্তি মনকে নাড়া দেয় যখন তিনি পিতৃসত্যরক্ষায় অনমনীয় রামের মনস্তাত্ত্বিক জটিলতায় আঘাত দিয়ে দাবি করেন মায়ের সম্মানপ্রাপ্তি পিতার অনুরূপ, কেন নয়?তখন এটি বোধ হয় একটি অসমাপ্ত জটিল গাণিতিক সমাধানের মতো মনে হয়।
ছবি; প্রতীকী। সংগৃহীত।
পিতৃসত্যপালনে রামপ্রদত্ত পৌরাণিক দৃষ্টান্তগুলি হয়তো মহাকাব্যের উদাহরণমাত্র, সেগুলি খুব জোরালো মানবিক আবেদনে সমৃদ্ধ বলে গ্রাহ্য হতে পারে কী?জমদগ্নিপুত্রের মাতৃহত্যা বা সগরপুত্রদের আত্মক্ষয়ী প্রচেষ্টা কোনটিই হয়তো কোন সদর্থক আবেদনের সাড়া ফেলতে পারে না, আধুনিক ব্যস্ত বাস্তবজীবনে। ভারতীয় মননে, সদর্থক ও নাস্ত্যর্থক দুয়ের যোগবিয়োগে এক সামগ্রিক প্রভাব হয়তো মহাকাব্যিক বিস্তার। ভারতীয় পারিবারিক পরিমণ্ডলে মুষ্টিমেয় কয়েকটি ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত ছাড়া আজও নীতিনির্ধারণে কর্ত্রী অপেক্ষা কর্তার ভূমিকা অবিসংবাদী। রামচন্দ্রের এ বিষয়ে যুক্তি, ধর্মবোধের নিক্তিতে পরিমিত হয়েছে।
যৌবনে উত্তীর্ণ লক্ষ্মণ আবেগে স্ফুরিত নবীন প্রজন্মের প্রতিনিধি।তিনি পিতাকে স্ত্রৈণ, কামুক, প্রখর বিষয়াসক্ত, মতিভ্রমহীন বৃদ্ধ হিসেবে চিহ্নিত করে অভিযোগের আঙ্গুল তুলেছেন নির্দ্বিধায়। আধুনিক ভারতীয় নবীন প্রজন্মের প্রতিনিধি যেন তিনি। পিতার আচরণের চুলচেড়াবিচার করেছেন লক্ষ্মণ। প্রয়োজনে তাঁকে নিঃশংসয়ে হত্যা করতেও তাঁর হাত কেঁপে উঠবে না – এ কথা দ্বর্থহীনভাষায় তিনিই ঘোষণা করতে পারেন। সেই যৌবন আবেগতাড়িত হলেও অকাট্য যুক্তিবোধে আস্থাশীল, সে যৌবন, পিতার সমালোচনায় মুখর হয়ে ওঠে,গুরুর আচরণও প্রশ্নাতীত নয়, বলে মনে করে। শুধুমাত্র রামের ছায়াসঙ্গী হিসেবে নয়,লক্ষ্মণের জ্যেষ্ঠর প্রতি সৌভ্রাতৃত্ববোধ তাঁকে প্রবাদপ্রতিম বিখ্যাত ভায়ের ইমেজে পরিণত করেছে যুগান্তরেও।
এই দুই বিরুদ্ধমতাবলম্বীকে একটিমাত্র যুক্তিবোধে নস্যাত করেছেন রামচন্দ্র সেটি হল ধর্মবোধ। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদাধিকারীর আদেশপালন যে কোন সুনাগরিকের কর্তব্য। একজন ভাবি প্রজানুরঞ্জক রাজার কণ্ঠে কথা বলেছেন তিনি। পিতার নৈতিকবোধ যেখানে দুর্বল তখন পরিণতবুদ্ধি সন্তানের কর্তব্য হল তা জাগিয়ে তোলা। রামচন্দ্র সেটিই করেছেন। বহুমাত্রিক রাজনীতিতে আরও একটি কালোরঙ যুক্ত হতে পারত যদি রাম স্নেহদৌর্বল্য,হৃদয়াবেগকে প্রাধান্য দিতেন। সেটি হতে দেননি মহাকাব্যকার। রাম,ধর্মের মোড়কে সামগ্রিকভাবে মানবধর্মকেই গুরুত্ব দিয়েছেন। আর মানবধর্মের বিজয়রথের গতি যে চিরন্তন, যুগান্তরেও সে গতি,রুদ্ধ করবে কে?—চলবে।
যৌবনে উত্তীর্ণ লক্ষ্মণ আবেগে স্ফুরিত নবীন প্রজন্মের প্রতিনিধি।তিনি পিতাকে স্ত্রৈণ, কামুক, প্রখর বিষয়াসক্ত, মতিভ্রমহীন বৃদ্ধ হিসেবে চিহ্নিত করে অভিযোগের আঙ্গুল তুলেছেন নির্দ্বিধায়। আধুনিক ভারতীয় নবীন প্রজন্মের প্রতিনিধি যেন তিনি। পিতার আচরণের চুলচেড়াবিচার করেছেন লক্ষ্মণ। প্রয়োজনে তাঁকে নিঃশংসয়ে হত্যা করতেও তাঁর হাত কেঁপে উঠবে না – এ কথা দ্বর্থহীনভাষায় তিনিই ঘোষণা করতে পারেন। সেই যৌবন আবেগতাড়িত হলেও অকাট্য যুক্তিবোধে আস্থাশীল, সে যৌবন, পিতার সমালোচনায় মুখর হয়ে ওঠে,গুরুর আচরণও প্রশ্নাতীত নয়, বলে মনে করে। শুধুমাত্র রামের ছায়াসঙ্গী হিসেবে নয়,লক্ষ্মণের জ্যেষ্ঠর প্রতি সৌভ্রাতৃত্ববোধ তাঁকে প্রবাদপ্রতিম বিখ্যাত ভায়ের ইমেজে পরিণত করেছে যুগান্তরেও।
এই দুই বিরুদ্ধমতাবলম্বীকে একটিমাত্র যুক্তিবোধে নস্যাত করেছেন রামচন্দ্র সেটি হল ধর্মবোধ। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদাধিকারীর আদেশপালন যে কোন সুনাগরিকের কর্তব্য। একজন ভাবি প্রজানুরঞ্জক রাজার কণ্ঠে কথা বলেছেন তিনি। পিতার নৈতিকবোধ যেখানে দুর্বল তখন পরিণতবুদ্ধি সন্তানের কর্তব্য হল তা জাগিয়ে তোলা। রামচন্দ্র সেটিই করেছেন। বহুমাত্রিক রাজনীতিতে আরও একটি কালোরঙ যুক্ত হতে পারত যদি রাম স্নেহদৌর্বল্য,হৃদয়াবেগকে প্রাধান্য দিতেন। সেটি হতে দেননি মহাকাব্যকার। রাম,ধর্মের মোড়কে সামগ্রিকভাবে মানবধর্মকেই গুরুত্ব দিয়েছেন। আর মানবধর্মের বিজয়রথের গতি যে চিরন্তন, যুগান্তরেও সে গতি,রুদ্ধ করবে কে?—চলবে।
* মহাকাব্যের কথকতা (Epics monologues of a layman): পাঞ্চালী মুখোপাধ্যায় (Panchali Mukhopadhyay) অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপিকা, সংস্কৃত বিভাগ, যোগমায়া দেবী কলেজে।