স্কেচ: গৌতম চট্টোপাধ্যায়।
প্রদীপ আর অদিতির সংসারে নতুন অতিথির আগমনে সারা বাড়ি জুড়েই খুশির হওয়া। কিন্তু বছর দুয়েকের মধ্যেই সবাই খেয়াল করলেন, শিশুটি ঠিক মতো বাড়ছে না, কপালটা চওড়া হচ্ছে, নাক বসে যাচ্ছে, ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে, পেটটা ফুলছে। ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতেই তিনি কয়েকটি রক্ত পরীক্ষা করাতে বললেন। আর তাতেই ধরা পড়লো শিশুটি থ্যালাসিমিয়ায় ভুগছে।
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৪৯: বেশি ঘুম শরীরের পক্ষে ভালো?
শ্রীরামকৃষ্ণের প্রিয় শিষ্যের দর্শন তো রোজ পাওয়া যাবে না/২
বিয়ের আগে যে সব পরীক্ষা করা জরুরি
বিয়ের আগে কী কী পরীক্ষা করানো দরকার, সেগুলো একটু জেনে নেওয়া যাক। চাইলে তো আপনি মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত হাজারটা পরীক্ষা করাতে পারেন। কিন্তু নানা কারণেই সেটা সম্ভব নয়, প্রয়োজনও নেই। আমাদের উদ্দেশ্য পাত্র-পাত্রীর মধ্যে কোনও দুরারোগ্য বা বংশগত রোগ আছে কিনা, সে সম্বন্ধে একটা ধারণা করে নেওয়া, যাতে তাদের বিবাহ পরবর্তী জীবন নীরোগ হয়। আরেকটা কথা, এই পরীক্ষাগুলো করিয়ে কারও কোনও অস্বাভাবিকতা ধরা পড়ার অর্থ এই নয় যে বিয়েটা তখনই ভেঙে দিতে হবে। আসল উদ্দেশ্য হল সাবধানতা, ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে এগনো।
আবার এই পরীক্ষাগুলো করলেই যে সব অসুখ জেনে ফেলা যাবে তাও নয়। বহু পরিবারে নানা ধরনের মানসিক রোগের ইতিহাস থাকে। পাত্র বা পাত্রী সেই রোগের শিকার হয়ে দীর্ঘদিন ওষুধ খাচ্ছেন, তাও হতে পারে। কিংবা কারও কোনও শারীরিক অক্ষমতা আছে, যা পরবর্তীকালে সন্তান জন্ম দেওয়ার বেলায় প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করতে পারে। এসব বিষয়ে অনেকে গোপন করেন, অনেকে ভালো করে জানেনও না। প্রেমের বিয়ে হলে জানা বোঝার ব্যাপারটা একটু বেশি থাকে। তবে পাশ্চাত্য দেশগুলোর মতো সব ব্যাপারটা তো এদেশে এতোটা খুল্লামখুল্লা হয়ে যায়নি যে বিয়ের আগেই পাত্র-পাত্রী পরস্পরের দেহ-মনের সব অলিগলিতে হানা দিয়ে বেড়াবেন!
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-২৬: সুন্দরবনের গবাদি-পশুরক্ষক মানিক পীর
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৫৫: সুর হারানো হারানো সুর
রক্ত পরীক্ষাগুলোর মধ্যে রয়েছে রক্তের গ্রুপিং, আরএইচ ফ্যাক্টর, থ্যালাসেমিয়া, হিমোফিলিয়া, এডস, সুগার, উচ্চ রক্তচাপের ইতিহাস থাকলে লিপিড প্রোফাইল। এ ছাড়া লিভার ফাংশন টেস্ট ইত্যাদি। ক্রোমোজোম স্টাডি করে অনেক বংশগত রোগের সুলুক সন্ধান করা যায়। তবে বিয়ের আগে এটা না করলেও চলে। বরং মাতৃকুল কিংবা পিতৃকুলে যদি কোনও দুরারোগ্য বংশগত রোগের ইতিহাস থাকে, তাহলে সন্তান জন্ম দেওয়ার আগে যে কোনও দম্পতির উচিত কোনও জেনেটিক এক্সপার্টের পরামর্শ নেওয়া এবং প্রয়োজনে গর্ভধারণের পর গর্ভস্থ শিশুর জিন সংগ্রহ করে স্টাডি করে দেখে নেওয়া যে শিশুটি কোনও রোগ নিয়ে জন্মাবে কিনা!
দশভুজা, শক্তিরূপেন সংস্থিতা, পর্ব-১: তিনকন্যা
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৭৬: রবীন্দ্রনাথ চা নয়, প্রতিদিন সকালে কফি খেতেন
তবে সেদিনটি হয়তো খুব বেশি দূরে নয়, যেদিন নিছক কুষ্টি বিচার নয়, জিন বিচার করেই বিয়ের সানাই বাজবে। ক্রেডিট কার্ডের মতো জিন কার্ড পকেটে নিয়েই পাত্র-পাত্রীরা ঘুরে বেড়াবেন। কম্পিউটারে ফেললেই জানা যাবে, কার সঙ্গে কার পটবে? নিছক ভাব ভালোবাসার ফাঁদে পড়ে কেউ আর সময় নষ্ট করবেন না। হয়তো বা জিন মিলিয়েই প্রেম করবেন পরের জেনারেশনের প্রেমিক প্রেমিকারা। কুষ্টির স্থান হবে মিউজিয়ামে।
দেখতে দেখতে ‘এগুলো কিন্তু ঠিক নয়’ ধারাবাহিকের লেখাগুলো পঞ্চাশ পর্বে পৌঁছে গেল। ‘সময় আপডেটস’-এর সম্পাদক স্নেহাশিস সাউ যখন এই ধরনের লেখা লিখতে আমাকে উৎসাহিত করেছিলেন, তখন আমার মনে প্রশ্ন জেগেছিল দীর্ঘ প্রায় ৩৮ বছরের লেখালেখির জীবনে সব কথাই তো বলা হয়ে গিয়েছে, লেখা হয়ে গিয়েছে। আর নতুন করে কি বলবো! তবু ওর আবদারে শুরু করেছিলাম এক বছর আগে এই ধরনের লেখা। পাঠকদের হয়তো আমার লেখাগুলো পছন্দ হয়েছিল, তারা হয়তো শরীর স্বাস্থ্য নিয়ে তাদের নানা জিজ্ঞাসার উত্তর আমার লেখাগুলোর মধ্যে পেয়েছিলেন—তাই এতদিন ধরে এই বিভাগটি সচল রাখতে পারলাম। এবার সকলকে সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বিদায় নেবার পালা। আগামী বছর হয়তো অন্য কোনও নতুন বিষয় নিয়ে আবার এই বিভাগে ফিরে আসতে পারি। আবার নাও পারি। শেষ কথাও বলবে সময়।
যোগাযোগ: ৯৮৩০২১৭৯২৮