স্কেচ: গৌতম চট্টোপাধ্যায়।
ছোটবেলায় শুনতাম বেশি ঘুমোলে নাকি ব্রেন ‘ডাল’ হয়ে যায়। কথাটা যে একেবারে মিথ্যে নয়, ডাক্তার হয় সেটা পরবর্তীকালে বুঝেছি। একটা প্রাচীন প্রবাদ আছে, ‘কাজের মধ্যে দুই, খাই আর শুই’। বিলাসী, স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনে এর সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বোকা বাক্স দর্শনটাও যোগ করতে হবে বই কি! নারকোলেপসি নামে একটি অসুখ আছে, যে অসুখে অনেকে অকারণেই বেশি বেশি ঘুমোন। সকাল দশটায় ঘুম থেকে উঠে খাওয়ার পর দুপুরে ভাত ঘুম অন্তত দু’ঘণ্টা, আবার রাত দশটায় শয্যায় গমন। ঘুমবিলাসীরা ভোজনবিলাসীও হন। ফলে খুব তাড়াতাড়ি মোটা হয়ে যান। আর মোটা হলে তো রোগের শেষ থাকে না।
লেপটিন এবং অ্যাড্রিনালিন নামক হরমোনের হঠাৎ বাড়া-কমা দেখা যায় ঘুমবিলাসীদের মধ্যে। এর সঙ্গে সম্পর্ক আছে মেদবৃদ্ধির। লেপটিন হরমোনটি আমাদের দেহে কম সংশ্লেষ হলে খিদে বেড়ে যেতে পারে, কারণ মস্তিষ্কের হাঙ্গার সেন্টারটিকে নিউরোপেপটাইড ওয়াই নামক একটি উৎসেচকের সাহায্যে আংশিক নিয়ন্ত্রণ করে থাকে লেপটিন।খিদে বেড়ে যাওয়া মানেই বেশি খাওয়া, নিট ফল মোটা হওয়া।
লেপটিন এবং অ্যাড্রিনালিন নামক হরমোনের হঠাৎ বাড়া-কমা দেখা যায় ঘুমবিলাসীদের মধ্যে। এর সঙ্গে সম্পর্ক আছে মেদবৃদ্ধির। লেপটিন হরমোনটি আমাদের দেহে কম সংশ্লেষ হলে খিদে বেড়ে যেতে পারে, কারণ মস্তিষ্কের হাঙ্গার সেন্টারটিকে নিউরোপেপটাইড ওয়াই নামক একটি উৎসেচকের সাহায্যে আংশিক নিয়ন্ত্রণ করে থাকে লেপটিন।খিদে বেড়ে যাওয়া মানেই বেশি খাওয়া, নিট ফল মোটা হওয়া।
আবার বেশি ঘুমোলে আমাদের দেহে ইনসুলিন হরমোনের গ্রাহক কোষ বা রিসেপ্টরে গন্ডগোল দেখা দেয়। ফলে ইনসুলিনের বিরুদ্ধে একটা প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে, ইনসুলিন আর তার স্বাভাবিক কাজ করতে পারে না। এর ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে গিয়ে টাইপ টু বা ইনসুলিন ডিপেন্ডেন্ট ডায়াবেটিস দেখা যায়। এছাড়া ঘুমবিলাসীদের রক্তে ইনসুলিন বিরোধী নানা হরমোন যেমন গ্রোথ হরমোন, অ্যাড্রিনালিন, স্টেরয়েড, গ্লুকাগন ইত্যাদি বেশি পরিমাণে ক্ষরিত হওয়ার ফলে ডায়াবেটিসের আশঙ্কা বাড়ে। কারণ আমরা সবাই জানি যে ইনসুলিনই রক্তে গ্লুকোজের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করে।
বেশি ঘুমোনো মানেই বেশি করে মোটা হওয়া। আর তার থেকে ডায়াবেটিস ছাড়াও উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইড এবং কোলেস্টেরল বেড়ে গিয়ে হার্ট অ্যাটাক ও ব্রেন স্ট্রোকের সম্ভাবনা, ফ্যাটি লিভার ইত্যাদি নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে।
বেশি ঘুমোনো মানেই বেশি করে মোটা হওয়া। আর তার থেকে ডায়াবেটিস ছাড়াও উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইড এবং কোলেস্টেরল বেড়ে গিয়ে হার্ট অ্যাটাক ও ব্রেন স্ট্রোকের সম্ভাবনা, ফ্যাটি লিভার ইত্যাদি নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে।
আরও পড়ুন:
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৪৮: সকালবেলাই হাঁটতে হবে?
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-২৫: সুন্দরবনে বসন্ত রোগের দেবতা বসন্ত রায়
ডিমেনশিয়া হল চিত্তভ্রংশ রোগ আর অ্যালঝাইমার হলেও স্মৃতিভ্রংশ রোগ। বেশি ঘুমোনোর ফলে ডিমেনসিয়া হতে পারে। সারা বিশ্বে এই মুহূর্তে প্রতি চার সেকেন্ডে একজন করে ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। স্মৃতি, বুদ্ধি, ঘুম— সবকটিরই নিয়ন্ত্রক হলো মস্তিষ্কের বিশেষ বিশেষ অঞ্চল। আমাদের করোটি বা খুলির খোপে সযত্নে রক্ষিত থাকে মস্তিষ্ক, যার গড় ওজন প্রায় দেড় কেজির মতো। এতে থাকে প্রায় ১০ কোটি কোষ। মস্তিষ্কের মূল ভাগ তিনটি। অগ্রমস্তিষ্ক, মধ্য মস্তিষ্ক এবং পশ্চাৎ মস্তিষ্ক। অগ্র মস্তিষ্কে থাকে সেরিব্রাম এবং থ্যালামাস ও হাইপোথ্যালামাস। সেরিব্রামের বিভিন্ন অংশের সাহায্যেই আমরা দেখি, শুনি, কথা বলি ও অন্যান্য কাজ করি। মস্তিষ্ক থেকে সারা দেহে কোনও সংবাদ বা অনুভূতি পৌঁছয় স্নায়ু বা নার্ভের মাধ্যমে। আবার দেহের নানা অংশের গ্রাহক স্নায়ুকোষ বা রিসেপ্টর নানা অনুভূতিকে গ্রহণ করে মস্তিষ্কে পাঠিয়ে দেয়।
আরও পড়ুন:
চলো যাই ঘুরে আসি, অন্নপূর্ণা বেস ক্যাম্পের পথে, পর্ব-৩: অবশেষে অভাবনীয় প্রাপ্তি ও স্বপ্নপূরণ
হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-২৪: মাটি তোদের ডাক দিয়েছে…
দুটি স্নায়ুর সংযোগস্থলে একটু ফাঁক থাকে, যাকে বলে সন্নিকর্ষ বা সাইন্যাপস। এখানে ক্ষরিত হয় নানা ধরনের রাসায়নিক, যাদের বলে স্নায়ু প্রেরক বা নিউরোট্রান্সমিটার, যাদের মাধ্যমে বৈদ্যুতিক উত্তেজনা পূর্ববর্তী স্নায়ু প্রান্ত থেকে সঞ্চারিত হয় পরবর্তী স্নায়ু প্রান্তে, তার থেকে যায় পরেরটিতে। এভাবেই অলিম্পিকের রিলে রেসের মতো দৌড়তে থাকে স্নায়ু অনুভূতি এক নার্ভ থেকে আরেক নার্ভে। আর এই দৌড়ের ব্যাটন হল নানা স্নায়ুপ্রেরক। প্রায় পঞ্চাশটির মতো স্নায়ুপ্রেরক এ পর্যন্ত আবিষ্কার করতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা। এর কোনওটি স্নায়ু উত্তেজক, কোনওটি বা নিস্তেজক। সেরোটনিন হল মস্তিষ্ক নিস্তেজক একটি স্নায়ু প্রেরক, যা আমাদের ঘুম পাড়াতে সাহায্য করে।
আরও পড়ুন:
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-২৩: ঠাকুর সন্নিধানে সারদার কল্যাণব্রতে দীক্ষা
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৭৫: রাণুর মধ্যে মাধুরী
বেশি ঘুমিয়েদের মস্তিষ্কে সেরোটনিন বেশি ক্ষরিত হয়। ডিমেনশিয়ায় বেশ কয়েকটি স্নায়ু প্রেরক রাসায়নিকের ক্ষরণ ভীষণভাবে কমে যায়। যার মধ্যে প্রধান হল অ্যাসিটাইল কোলিন এবং কোলিন অ্যাসিটাইল ট্রান্সফারেজ। মস্তিষ্কের কর্টেক্স এবং হিপোক্যাম্পাস অংশে এই ক্ষরণ বেশি কমে। এ ছাড়া গ্লুটামেট, সোমাটোস্ট্যানিন, কোলিসিস্টোকাইনিন এবং সাবস্টেন্স পি-এর মতো স্নায়ুপ্রেরকের ক্ষরণও কমে যায়। নিট ফল, ভুলে যাওয়া রোগ বা ডিমেনশিয়া।
শেষ কথা হল, সুস্থ থাকার জন্য ঘুম আমাদের অবশ্যই প্রয়োজন, তবে তা ছয় থেকে নয় ঘণ্টার বেশি নয়। অতিরিক্ত ঘুম অবশ্যই এক ধরনের অসুখ যা পরবর্তীকালে নানা সমস্যার সৃষ্টি করে। বেশি ঘুমিয়েরা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন।
যোগাযোগ: ৯৮৩০২১৭৯২৮
শেষ কথা হল, সুস্থ থাকার জন্য ঘুম আমাদের অবশ্যই প্রয়োজন, তবে তা ছয় থেকে নয় ঘণ্টার বেশি নয়। অতিরিক্ত ঘুম অবশ্যই এক ধরনের অসুখ যা পরবর্তীকালে নানা সমস্যার সৃষ্টি করে। বেশি ঘুমিয়েরা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন।
যোগাযোগ: ৯৮৩০২১৭৯২৮
* এগুলো কিন্তু ঠিক নয় (Health Tips): ডাঃ অমিতাভ ভট্টাচার্য (Amitava Bhattacharrya), বিশিষ্ট স্বাস্থ্য বিজ্ঞান লেখক। পেশায় কান নাক গলা (ক্যানসার) বিশেষজ্ঞ হলেও মানুষটি আদতে ভীষণ আড্ডাবাজ এবং নাটক প্রাণ। এ পর্যন্ত ছোট বড় মিলিয়ে শতাধিক নাটক লিখেছেন। পরিচালনা করেছেন ৩০টিরও বেশি নাটক। দূরদর্শন এবং আকাশবাণীর অভিনয় পুরস্কার পেয়েছেন। বেলঘরিয়া থিয়েটার আকাডেমি নামে নিজে একটি নাটকের দল পরিচালনা করেন। দে’জ পাবলিশিং থেকে এ পর্যন্ত প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৫২। নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রাখেন বছর ভর।