রবিবার ২৪ নভেম্বর, ২০২৪


অলঙ্করণ: লেখক।

জমদগ্নি শ্মশ্রূসঞ্চালন করে জিজ্ঞাসু নেত্রে প্রশ্ন করলেন, “দেব! সত্য ত্রেতাদি অপরাপর কালে যে বীর কৃতকর্মা যুগপুরুষগণের আগমন ঘটেছে, তাঁরা বহুলাংশেই সাবালক। শৈশবেই সিদ্ধ হয়েছে এমন নাবালকগণের তেমন একটা সংবাদ মেলে না, কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে। বালগোপাল, প্রহ্লাদ, হরিভক্ত ধ্রুব, নচিকেতা কিংবা রামচন্দ্র, কৃষ্ণ, বলদেব, গণেশ, এঁরা বাল্যে কি কৈশোরেই কৃতকর্মা, এঁদের তুল্য মহান শিশু-কিশোরগণ তত্তত্ যুগে ছিলেন, কুরুবংশীয় ভ্রাতৃগণ বিদ্যমান ছিলেন।
এর বিপরীতে দেবাদিদেব শিবের কোনওরূপ শৈশবকালের সংবাদ শ্রুত হয় না। তিনি স্বয়ম্ভূ। কলিযুগের মনুষ্যগণ অনন্যসাধারণ ও ক্রান্তদর্শী হবেন একথা জ্ঞাত হয়েছি। এঁরা অদ্ভুতকর্মা ও ব্রহ্মতুল্য, কখনও বা ব্রহ্মকেও অতিক্রম করবেন, একথাও অবগত হয়েছি। কলিযুগোদ্ভব মহামানবগণ কি অপরাপর যুগের কৃতবিদ্যগণের তুল্য প্রাপ্তবয়স্ক হয়েই খ্যাতকীর্তি হবেন নাকি বাল্যে কী কৈশোরেই তা অর্জন করবেন?”
আরও পড়ুন:

হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-২১: একদা কী করিয়া মিলন হল দোঁহে/ কী ছিল বিধাতার মনে

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৫২: সব ঘরই ‘তাসের ঘর’

বৈশম্পায়ন হেসে বললেন, “তোমরা অবগত আছো কিনা জানি না, কলিযুগে শিশুগণের জন্য একটি দিবস ধার্য হবে। এ প্রকৃতপক্ষে স্তন্যপায়ী কিংবা নাবালকগণের জন্যই, কিন্তু কালে কালে যারা কচি ও কাঁচা, নিজেকে শিশুতুল্য বলেই আত্মহারা হন, তারাও এই দিবসে বিশেষ প্রফুল্লতা বোধ করবেন। এঁরা “যাঃ যাঃ বাচ্চা ছেলে, নাক টিপলে দুধ পড়ে” জাতীয় বাগ্বৈদগ্ধ্যে পারঙ্গম হলেও “ছোটা ভীম”, “ছোটা গণেশ” প্রমুখ খ্যাতিমানগণের স্তব করবেন। এই উপাস্য ও কখনও কখনও উপাসকগণ আকারে নাতি, কর্মে ও বাক্যে বৃহৎ হয়ে ইঁচড়ে পক্বতার দোষে কলিযুগে সংক্রামিত করবেন। সুতরাং, কলিযুগীয় মহাত্মাগণ আদৌ শৈশবে বাস করবেন কিনা বলা বেজায় শক্ত।
প্রকৃতির নিয়মে তাঁরা যথাকালে শিশুসদৃশ রূপ পরিগ্রহ করবেন সত্য, তবে অন্তরঙ্গে তাঁরা প্রাপ্তবয়স্ক বলেই বোধ হবে। এই বৈশিষ্ট্য যাঁদের মধ্যে থাকবে তাঁদের “জ্যাঠা ছেলে” এই রহস্যঘন সম্বোধনে ভূষিত করা হবে। তাঁরা বিড়ি অর্থাত্ ধূম্রপানকালে দৃষ্টিগোচর হলে কর্ণ আকর্ষণ করে তাঁদের আপ্যায়িত করার বিধান কলিযুগের শাস্ত্রে দৃষ্ট হবে। ঘোরকলিতে এঁদের “পশ্চাত্পক্ব” বলা হবে। এঁরা “শিশু” হলেও তন্নামক বৃক্ষতুল্য গুরু হবেন, হট্ট থেকে হট্টান্তরে জীবগণকে বিপণনযোগ্য করে তোলাই এঁদের পুরুষার্থ, আকারে ও প্রজ্ঞায় পূর্ণতা লাভ করলে এঁরাই অবতাররূপে গণ্য হবেন।
আরও পড়ুন:

চলো যাই ঘুরে আসি, অন্নপূর্ণা বেস ক্যাম্পের পথে, পর্ব-১: টি-হাউসের সামনের পাহাড়ের শৃঙ্গ-রা যেন রঙের উৎসবে মেতে উঠেছে

ইতিহাস কথা কও, পর্ব-১৫: দেবদেউল কথা ও গোসানিমারি কামতেশ্বরী মন্দির

শিশুদিবস এঁদের-ও, আর যাঁরা দৃশ্যতঃ শৈশব-কৈশোর-যৌবনাদি অতিক্রম করে করে পুনরায় মনে মনে ত্রয়োদশবর্ষীয় কিংবা তত্তুল্য ক্ষুদ্র হবেন, তাঁদের জন্য-ও। কলিকালে ক্ষুদ্র-ই বৃহৎ। তাকে বৃহত্ হয়ে উঠতে হয় না, বরং বৃহৎ-ই সংক্ষেপে ধরা দেয়। যেমন লিটল ম্যাগ থেকে ছোটগল্প, ভাবার্থ থেকে সারমর্ম, জিস্ট থেকে সিনপসিস, সর্বত্রই সেই নিষ্কর্ষের দাবি। অপরাপর যুগের শৈশব সম্ভাবনাগর্ভ কিন্তু পরিপুষ্টির অপেক্ষা রাখে। কলির শৈশব স্বয়ংসম্পূর্ণ। এখানেই কলির মাহাত্ম্য, হে মুনিগণ! বিলম্ব কেন! কলিযুগে শিশু হয়ে আত্মপ্রকাশ করুন। আপনারা চরিতার্থ হবেন। অলমিতি।” —চলবে।
* হুঁকোমুখোর চিত্রকলা : লেখক: ড. অভিষেক ঘোষ (Abhishek Ghosh) সহকারী অধ্যাপক, বাগনান কলেজ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগ থেকে স্নাতকস্তরে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত। স্নাতকোত্তরের পর ইউজিসি নেট জুনিয়র এবং সিনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপ পেয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগে সাড়ে তিন বছর পূর্ণসময়ের গবেষক হিসাবে যুক্ত ছিলেন। সাম্বপুরাণের সূর্য-সৌরধর্ম নিয়ে গবেষণা করে পিএইচ. ডি ডিগ্রি লাভ করেন। আগ্রহের বিষয় ভারতবিদ্যা, পুরাণসাহিত্য, সৌরধর্ম, অভিলেখ, লিপিবিদ্যা, প্রাচ্যদর্শন, সাহিত্যতত্ত্ব, চিত্রকলা, বাংলার ধ্রুপদী ও আধুনিক সাহিত্যসম্ভার। মৌলিক রসসিক্ত লেখালেখি মূলত: ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে। গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়ে চলেছে বিভিন্ন জার্নাল ও সম্পাদিত গ্রন্থে। সাম্প্রতিক অতীতে ডিজিটাল আর্ট প্রদর্শিত হয়েছে আর্ট গ্যালারিতে, বিদেশেও নির্বাচিত হয়েছেন অনলাইন চিত্রপ্রদর্শনীতে। ফেসবুক পেজ, ইন্সটাগ্রামের মাধ্যমে নিয়মিত দর্শকের কাছে পৌঁছে দেন নিজের চিত্রকলা। এখানে একসঙ্গে হাতে তুলে নিয়েছেন কলম ও তুলি। লিখছেন রম্যরচনা, অলংকরণ করছেন একইসঙ্গে।

Skip to content