![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/02/Ramakrishna-3.jpg)
ভক্তি ও ভক্ত নিয়ে বিস্তর ভাবনা-চিন্তা করা হয়। সরল বিশ্বাস না থাকলে ভগবান লাভ হয় না। অনন্ত শক্তি মহামায়া কারও কারও মধ্যে কৃপা করে সে শক্তি প্রদান করেন, যাতে তাঁকে লাভ করা যায়। অনন্তের খেলা কে বুঝবে! ‘কোন কোন ভাগ্যবানে বুঝিবারে পায়।’ শ্রীরামকৃষ্ণের জীবনচরিত অনুধ্যান করলে অনুভব করা যায়, এই সমাধিবান পুরুষটি কতটাই জগৎ এবং জাগতিক বিষয়ে অস্পৃহ। জগৎ যে অনিত্য তাঁর থেকে ভালো আর কেউ অনুভব করেননি।
ঠাকুর বলতেন, এ জগৎটা যদি সত্য হতো তাহলে তিনি কামারপুকুরটা সোনা দিয়ে মুড়ে দিতেন। কিন্তু ক্ষণে ক্ষণে ভগবত বিলাসী অবতার পুরুষ জগতের মঙ্গল ও কল্যাণ চেয়েছেন। এমন অনেক জায়গায় বলা হয়ে থাকে; ভগবান জগতের কল্যাণের জন্য অবতীর্ণ হন। কিন্তু আর অন্যভাবে বললে, তাঁরা মানুষের কল্যাণে, জগতের সত্যতা কতখানি বা অসত্যতায় কতটা উপলব্ধি করিয়ে দিতে চান। তাঁরা চান মানুষের কল্যাণ, সাধুতার রক্ষা। সৃষ্টি থেকে আজ অবধি যারা অবতার প্রথিত পুরুষ হয়ে এসেছেন তাঁরা প্রত্যেকেই, সত্য, ন্যায়, অকপটতা, সরলতার পূর্ণ প্রতীক। সঙ্গে সঙ্গে আবার লোক-ব্যবহারে নিপুন। মনে হয়, অন্তরের অন্তস্থল থেকে কোন বিশেষ শক্তি তাঁদের পরিচালিত করে। তাঁদের বুদ্ধি বা মতলব খাটিয়ে যে এমন কিছু করেন, তা নয়। অন্তত শ্রীরামকৃষ্ণ, শ্রীশ্রীমা, স্বামীজীর জীবনে, তাঁদের পার্ষদদের জীবনে দেখা যায়।
আরও পড়ুন:
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/06/Ramakrishna-1.jpg)
অনন্ত এক পথ পরিক্রমা, পর্ব-৪৫: ভক্তির পথ—কর্ম, জ্ঞান ও যোগের থেকেও অধিকতর শ্রেষ্ঠ
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/11/Samay-Updates_Sundarban-1.jpg)
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-২২: সুন্দরবনে গোয়াল পুজো আর ‘ধা রে মশা ধা’
এই প্রসঙ্গে ঠাকুরের এক কথা, “ওরে, অনেক তপস্যা অনেক সাধনার ফলে লোকে সরল উদার হয়। সরল না হলে ঈশ্বরকে পাওয়া যায় না; সরল বিশ্বাসীর কাছেই তিনি আপনার স্বরূপ প্রকাশ করেন।” সরলতা আর বোকামি সাধারণ ভাবে দেখলে অনেকটা একই রকম দেখায়। শ্রীশ্রী ঠাকুর আবার সতর্ক করে দিতেন, ভক্ত হবি তা বলে বোকা হবে কেন? প্রায় প্রত্যেকেই গুলিয়ে ফেলি। ভক্তির প্রকাশ দেখানো আর বোকামি করা সমান্তরাল রেখার মতো পাশাপাশি যায়। কিন্তু, অদূর-ই বোঝা যায় যে, সে ঠকে গিয়েছে।
শ্রীরামকৃষ্ণ লৌকিক ব্যবহারেও যে কেমন নিপুন ছিলেন তা তার কথায় ও কাজে বোঝা যেত। তিনি বলতেনও যে, যখন তিনি সমাধিস্থ থাকতেন তাঁর কাপড়ের ঠিক থাকতো না; কিন্তু যখন জগতের হুঁশ থাকতো কোন কাজ বিন্দুমাত্র এদিক ওদিক হতো না। সে পঞ্চবটির মাতালকে হুঁকো দিয়ে সামলানোই হোক বা মথুরবাবু বা কেশব সেন দের-ই হোক। অনন্ত রূপ শ্রীরামকৃষ্ণ কে বোঝা যে সত্য সত্যই কঠিন! তাঁর মতো সামঞ্জস্যতা করতে, সারদানন্দ, যোগানন্দ অন্যান্য অন্তরঙ্গেরাও আর অন্য কাউকেই দেখেনি।
আরও পড়ুন:
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/11/Samay-Updates_Travel-1.jpg)
পরিযায়ী মন, পর্ব-১৪: কুর্গের সবুজ দুর্গ
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/11/Health.jpg)
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৪৫: কানে তালায় কানের ড্রপ?
স্বামী যোগানন্দ তখন শ্রীরামকৃষ্ণের কাছে আসা যাওয়া করতেন। একটি কড়াই-এর প্রয়োজন থাকায় যোগানন্দকে বড়বাজারে কড়াই কিনতে পাঠালেন। যোগানন্দ খুব লাজুক প্রকৃতির ছিলেন। সরলতা তার মজ্জাগত। তিনি দোকানিকে ধর্মভয় দেখিয়ে বললেন, ‘দেখো বাবু ঠিক ঠিক দাম নিয়ে ভালো জিনিস দিও ফাটা ফুটো না হয়।’ দোকানীও যেন অনেক দেখে শুনে একটা কড়াই যোগেন মহারাজের হাতে দিলেন। তিনিও বিশ্বাস করে, না দেখেই কড়াই খানি নিয়ে দক্ষিণেশ্বরে এসে দেখলেন, যে কড়াই খানি ফাটা।
শ্রীশ্রী ঠাকুর সে কথা শুনে বললেন, “সে কি রে? জিনিসটা আনলি তা দেখে আনলিনি? দোকানী ব্যবসা করতে বসেছে; সে তো আর ধর্ম করতে বসেনি। তার কথায় বিশ্বাস করে ঠকে এলি? ভক্ত হবি, তা বলে বোকা হবি? লোকে তোকে ঠকিয়ে নেবে? ঠিক ঠিক জিনিস দিলে কি না দেখে তবে দাম দিবি; ওজন কম দিলে কি না তা দেখে নিবি; আবার যেসব জিনিসের ফাউ পাওয়া যায় সে সব জিনিস কিনতে গিয়ে ফাউ টি পর্যন্ত ছেড়ে আসবিনি।”
আরও পড়ুন:
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/11/samayupdates-comics.jpg)
ক্যাবলাদের ছোটবেলা, পর্ব-২৩: অকালে খেয়েছ কচু, মনে রেখো কিছু কিছু
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/03/Michel-Platini.jpg)
বিশ্বসেরাদের প্রথম গোল, পর্ব-৭: ফুটবলের শিল্পী: বিশ্বের দশজনের একজন
দেখ কাণ্ড! যাঁর জগত সমন্ধে নির্মোহ; নিঃসন্দেহে জগত কে অন্য রূপে দেখেন কিন্তু আবার জগতের প্রতিটি বিষয়ে কেমন সচেতন। নিঃসন্দেহে তাঁর এই উক্তি, তীক্ষ্ণ বিচারশীলতার পরিচয় বহন করে। শ্রীশ্রীমা বলতেন ঠাকুর, তাকে গৃহস্থলীর প্রতিটি কাজ, তার সঙ্গে, পরিবারের কার সাথে কেমন ব্যবহার করতে হয়, সেসব থেকে শুরু করে ব্রহ্মজ্ঞান পর্যন্ত সমস্ত কিছু শিখিয়েছেন। প্রতিটি ঘটনার প্রতি তাঁর দৃষ্টি থাকত। বলতেন, নৌকায় উঠার সময় সবার আগে গিয়ে উঠবে, আর নামার সময় সব দেখেশুনে সবার শেষে নামবে। তিনি চাইতেন প্রতিটি কাজ সুচারু ও সঠিকভাবে পূর্ণরূপে হোক। তিনি অনন্তের সন্ধানে যেমন দিতেন তেমন আবার তিনি জাগতিক অগোছালো, অপূর্ণতাকেও সরিয়ে দিতে চাইতেন। —চলবে।
* অনন্ত এক পথ পরিক্রমা (Ananta Ek Patha Parikrama) : স্বামী তত্ত্বাতীতানন্দ (Swami Tattwatitananda), সম্পাদক, রামকৃষ্ণ মিশন, ফিজি (Fiji)।