শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪


গিরিশচন্দ্র।

গিরিশচন্দ্র ঘোষ গ্রেট ন্যাশনাল থিয়েটারে থাকাকালীন বঙ্কিমচন্দ্রের ‘কপালকুণ্ডলা’ উপন্যাসের নাট্যরূপ দিয়েছিলেন। কিন্তু পাণ্ডুলিপিটি রক্ষিত না থাকার জন্য, ক্লাসিক থিয়েটারে যখন তিনি এই উপন্যাসে নাট্যরূপ দেবার জন্য চেষ্টা করলেন, তখন তাঁকে নতুন করে আবার লিখতে হল। একরাত্রে চারজন লেখক নিয়ে বসে তিনি ‘কপালকুণ্ডলা’ নাটক আকারে পরিণত করেন। এত দ্রুত রচনা সত্ত্বেও গিরিশচন্দ্রের তুলিকায় কপালকুণ্ডলা বিশেষ রূপ প্রস্ফুটিত হয়েছিল। বঙ্কিমচন্দ্রকে অক্ষুণ্ন রেখে কাপালিকে মুখ দিয়ে তান্ত্রিক সাধন তত্ত্বের যে আভাস গিরিশচন্দ্র দিয়েছিলেন, তাতে দর্শকগণ একটু নতুনত্বের স্বাদ পেয়েছিলেন।
নব রূপে তৈরি হওয়া ‘কপালকুণ্ডলা’ ক্লাসিক থিয়েটারের প্রথম অভিনীত হয়েছিল ১৯০১ সালের ৩১ মে। প্রথম দিনের অভিনয় যাঁরা অংশগ্রহণ করেছিলেন তাঁদের মধ্যে রয়েছেন অমরেন্দ্রনাথ দত্ত (নবকুমার), অঘোরনাথ পাঠক (কাপালিক), প্রবোধচন্দ্র ঘোষ (জাহাঙ্গির) দানীবাবু (বালক) কুসুমকুমারী (কপালকুণ্ডলা) তারাসুন্দরী (মতিবিধি) ভুবনেশ্বরী (মেহেরুন্নিসা) রানিমণি (শ্যামা) লক্ষ্মীমণি (পেশমান) প্রমুখ।
আরও পড়ুন:

নাট্যকার গিরিশচন্দ্রের সন্ধানে, পর্ব-৪৬: গিরিশচন্দ্রের ‘পাণ্ডব গৌরব’ নাটক প্রথম অভিনীত হয় ক্লাসিক থিয়েটারে

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৩৯: পথের প্রান্তে রয়ে গিয়েছে সে হাজার তারার ‘লক্ষহীরা’

নবকুমার কপালকুণ্ডলা কাপালিক প্রভৃতি চরিত্রগুলিতে অমর দত্ত কুসুমকুমারী অঘোরনাথ পাঠক প্রমুখ শিল্পীরা বিশেষ কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন। কিন্তু মতি বিবির ভূমিকায় বিশেষত নবকুমার কর্তৃক তাঁর প্রত্যাখ্যানের দৃশ্যে তারাসুন্দরীর অভিনয় অত্যন্ত আকর্ষণীয় হয়েছিল। কপালকুণ্ডলা নাটকের অভিনয়ে রজনীর বিভিন্ন দিনে এটা দেখা গিয়েছে যে, গিরিশচন্দ্র ঘোষ একসঙ্গে পাঁচটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন। সে পাঁচটি চরিত্র হল যথাক্রমে অধিকারী মশাই, চটি রক্ষক, মাতাল, মুটে ও প্রতিবেশী। প্রত্যেকটি চরিত্রেই তিনি ভিন্ন ভিন্ন রকমের অভিনয় করে সকলের প্রশংসা লাভ করেছিলেন।
আরও পড়ুন:

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-২০: সুন্দরবনের বসন্ত রোগ নিরাময়কারী দেবী শীতলা

কলকাতার পথ-হেঁশেল, পর্ব-১২: তেত্রিশের ঐতিহ্য

নবরূপে নির্মিত কপালকুণ্ডলায় গিরিশচন্দ্র কয়েকটি নূতন দৃশ্য রচনা করেছিলেন যেগুলি আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছিল। এমনকি গিরিশচন্দ্র এই নাটকের জন্য একাধিক গান রচনা করেছিলেন। সেখানে তিনি কাপালিকের মুখে দুটি গান এবং শ্যামা সুন্দরীর মুখে একটি গানকে ব্যবহার করেছিলেন। শ্যামা সুন্দরী গানটি উল্লেখ করার মতো “তোমার কাঁচা পিরিতি জানো না /পুরুষ-পরশ পিরিত মাখা ঠেকলে পরে হয় সোনা।” গিরিশচন্দ্র যে বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন এই কপালকুণ্ডলা নাট্যরূপেই তা আরেকবার প্রমাণিত হয়েছিল।—চলবে।
* নাট্যকার গিরিশচন্দ্রের সন্ধানে (Girish Chandra Ghosh – Actor – Theatre) : ড. শঙ্কর ঘোষ (Shankar Ghosh) বিশিষ্ট অধ্যাপক ও অভিনেতা।

Skip to content