মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।

কিছুদিন পরেই আমরা বিশ্ব সংস্কৃতির মঞ্চে স্বীকৃতি পাওয়া দুর্গোৎসবে মেতে উঠব। নিজেদের মাতিয়ে তোলার জন্য আমরা জমা-কাপড়, গয়না কেনাকাটা সেরে ফেলেছি। কোন দিন কি পরব, আর দশমীতে মা দুর্গাকে বিদায় দিতে গিয়ে লাল সিঁদুরের খেলায় সবাই মিলে মেতে উঠব, সেই সবের প্রস্তুতি চলছে। সেই সব প্রস্তুতি চলুক। কিন্তু আমার মনে হল, এই প্রস্তুতির মাঝে দুটি ঘটনার কথা একটু বলে আমাদের মেয়েদের সাজ সজ্জার মধ্যে কীভাবে পিতৃতন্ত্র নাক গলিয়ে মেয়েদের শরীর থেকে শুরু করে তার গায়ের রং এবং সর্বোপরি তাকে কেমন করে একবার যৌনতার প্রতীক সাজিয়ে আবার তা কেড়ে নেয় তা বোঝার চেষ্টা করব।

কিছুদিন আগেই কামদুনিকাণ্ড নিয়ে হাই কোর্টের রায় বেরল। রায়ের থেকে যে বিষয়টি আমাদের বুক কাঁপিয়ে দেয় সেটি হল মেয়েটিকে গণধর্ষণ করে পা দুটি টেনে নাভি পর্যন্ত ছিঁড়ে দেওয়া। এই ধরনের হত্যা বিবরণ আমরা পড়েছি কীভাবে ইউরোপের বন্দিদের শাস্তি দেওয়া হত তার ইতিহাস পড়তে গিয়ে। তারপর বহু জল গড়িয়ে গিয়েছে গঙ্গা, ভলগা সব নদী দিয়ে। একটি গণতান্ত্রিক দেশে কীভাবে এরকম হত্যাকাণ্ড হতে পারে একটি মেয়ের শরীরে? অনেকে বিলকিস বানুর কোথাও বলবেন।

এই দুই নৃশংস অত্যাচারের ঘটনার পাশে রাখছি ঐশ্বর্যা রাই বচ্চনের ঘটনা। তিনি কিছুদিন আগে একটি ফ্যাশন শোতে যোগ দিয়েছিলেন। এখানে বলে রাখি যখন ঐশ্বর্যা রাই সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে জয়ী হয়েছিলেন তখন বলা হয়েছিল তিনি ভারতকে গর্বিত করেছেন। এখন তার সেই ফ্যাশন শোয়ের ছবি দেখে জনগণ জানাচ্ছেন ঐশ্বর্যের বয়স হয়েছে। তিনি মোটা হয়ে গিয়েছেন। তাঁকে দেখতে ভালো লাগছে না। জনগণের এই কথায় বলা যায়, বয়েই গিয়েছে! কিন্তু তলিয়ে দেখলে বলা যাবে নারীদের উপর অনুশাসনের চাপ অনেক বেশি।
এই অনুশাসনের চাপের সঙ্গে আমি মধ্য যুগীয় অনুশাসনের সঙ্গে মিল পাই বেশি। বর্তমান সমাজে ক্রমাগত নারীদের শ্রেণি বিভাজন করা হচ্ছে। কে নারীবাদী, কে নয়, বয়স অনুযায়ী বিভাজন, লেখা পড়া অনুযায়ী বিভাজন, পরিবারের সমাজে প্রতিপত্তি অনুযায়ী বিভাজন, জাতি অনুযায়ী বিভাজন, কি ধরনের কাজ করে সেই অনুযায়ী বিভাজন, গায়ের রং অনুযায়ী বিভাজন, বিবাহিত না অবিবাহিত নাকি বিধবা সেই অনুযায়ী বিভাজন। তারপর এই তথ্য শুধু রাষ্ট্রের কাজে, যেমন পুরসভা যেখানে বিয়ের খরচের জন্য রুপশ্রী পাওয়া যায়, স্কুল সেখানে দেখতে ভালো, রং ফর্সাদের না না রকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। এমন ঘটনার কথা বলে শেষ করা যাবে না। অন্য দিকে রাষ্ট্রের পাশাপাশি এই বিভাজিত তথ্য দিয়ে তৈরি হচ্ছে সমাজ নীতি। এই সমাজনীতি নারীর উপর মালিকানার দায় শুধু পিতৃতন্ত্রের উপর দিয়ে রাখেনি। বরং এমন সুকৌশলে অনুশাসনের দড়ি বিস্তার করিয়েছে যে রাষ্ট্র, পুঁজিবাদ, সমাজ সবাই বিভিন্ন দিক থেকে নারীকে বেঁধে রাখছে। পাশবিক অত্যাচার থেকে সিঁদুর খেলায় যোগদান করতে উৎসাহ দেওয়ার মধ্যে দিয়ে নারীকে দিয়ে পিতৃতন্ত্রের প্রতি দায়বদ্ধতা তৈরি করে দেওয়া হয়।

এ বার প্রশ্ন আসবে পাশবিক অত্যাচারের পরেই কীভাবে সিঁদুর খেলার কথা বলছি?
এই দুটো বিষয় নারীকে অনুশাসন করার জন্য। এই যে একটু আগে বললাম নারীকে বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত করা হচ্ছে। সেই বিভাজনের উদ্দ্যেশ্য হল একদিকে বলা কেমন নারী সমাজের জন্য উপযুক্ত, আবার কাদের উপযুক্ত মনে করছে না। যাদের উপযুক্ত মনে করা হচ্ছে না তার কারণ ওই বিভাজনের প্রক্রিয়াতে লুকিয়ে রাখা হয়েছে ।তাদের সমাজ সহজে ছাড়বে না চরম অত্যাচারের শিকার করিয়ে ফেলে দেবে, যে ভাবে আমরা ভাগাড়কে ব্যবহার করি।

সমাজের গ্রহণীয় নারীদের সঙ্গে একটি বিষয়কে চমৎকার ভাবে জুড়ে দেওয়া হয়েছে, সেটি হল বিবাহিত নারী। মুখ্য উদ্দ্যেশ্য ছিল নারীর সন্তান ধারণ করার ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণ করা এবং সমাজে বিসকামিতাকে প্রাধান্য দেওয়া। বিবাহিত নারীকে তুলনা করা হচ্ছে দেবী লক্ষ্মীর সঙ্গে। বিয়ের সঙ্গে সোনার অলঙ্কারকে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। সোনা ধাতুকে মহিমান্বিত করা হয়েছে। বলা হয়েছে সোনা উর্বরতার প্রতীক। লক্ষ্মী পাঁচালীতে দেবীর বর্ণনাতে এই সালঙ্কারা রূপের বর্ণনা দিয়ে মেয়েদের এই রূপটিকেই গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। গাত্র বর্ণ ফর্সা হলে তবেই দেবীর মতো দেখতে হবে। তাহলেই বাড়িতে শ্রীর আগমন হবে। বাড়ির সমৃদ্ধির প্রকাশ হবে সালাঙ্কারা হয়ে ফর্সা বউ বাড়িতে থাকলে। আর সেই সঙ্গে বলা হল কন্যার পিতা যত বেশি সোনা দিয়ে মেয়ের বিয়ে দিতে পারবেন, ততই তাঁর মৃত্যুর পর স্বর্গ লাভের সম্ভাবনা বাড়বে।
আরও পড়ুন:

বৈষম্যের বিরোধ-জবানি, পর্ব-৪০: ভরণপোষণ অধিকারের নামে বজ্জাতি

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-১৫: সারদা মায়ের রোগ নিরাময়

সোনার চকচকে রূপ, সহজে ক্ষয় না হওয়া মনোভাবের সঙ্গে সমাজে নারী এবং তার পরিবারের অবস্থান জুড়ে গেল। অন্য দিকে তার এই গয়না শ্বশুর বাড়িতেও সামাজিক অবস্থান বদলে দিল। যত বেশি সোনা নিয়ে আসতে পারবে তার শ্বশুর বাড়িতে কদর বাড়তে থাকবে। সমাজ বলবে গয়না আছে যখন তখন বাড়িতে সম্পদ আছে। সামাজিক সুবিধের ভাগ সেই নারীর তুলনায় তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন ভোগ করবে বেশি। এখনও মেয়ের বিয়েতে বাবা মা কত গয়না দিল তাই নিয়ে পুরুষ নারী উভয় মহলেই আলোচনা চলে।

বিবাহ সূত্রে পাওয়া গয়নাকেই বলা হয় স্ত্রী ধন। মেয়েদের বলা হয় এই গয়না তাদের বিপদে আপদে রক্ষা করবে। এই গয়না দেওয়ার পরিবর্তে তাদের অস্থাবর সম্পত্তি মানে জমির উপর তাদের অধিকার কে নস্যাৎ করে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে নারীদের শরীরের উপর অধিকারকেও নাকচ করে দেওয়া হয় যখন তাদের বাধ্য করা হয় পুত্র সন্তানের জন্ম দিতে । আবার অন্য দিকে দেখা যায় বিধবা দের গয়না পরতে দেওয়া হয় না। কারণ? সোনার মতো উজ্জ্বল ধাতু যা আসলে রজস্বলা নারীর প্রতীক হয়ে গিয়েছে তার প্রভাব একজন বিধবার উপর পড়লে সমাজে অনর্থ বেঁধে যাবে। বিধবাকে যে ভাবে কঠোরতার মধ্যে দিয়ে নিজের সতীত্বকে রক্ষা করতে হয় সেই পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়াবে সোনার গয়না। অর্থাৎ সোনার গয়না নারীদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করে এবং এই বিভাজন উচ্চ ,নীচের , সুবিধাভোগী ভেদ তৈরি করে। নারী এই সুবিধে পাওয়ার জন্য স্বামীর সেবা করে যাবে, নিজের প্রাণ বিসর্জন দিয়ে দেবে। পুরুষ আর একটি বিয়ে করে আবার নিজের , বংশের প্রাণরক্ষা করবে।

একদল নারীকে গয়না পরতে বলা হচ্ছে সমাজ থেকে পুরুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠার জন্য। অন্য দিকে আর এক দলকে বলা হচ্ছে, পুরুষদের থেকে দূরে রাখতে হবে নিজেদের শরীরকে। তাই তারা গয়না পরতে পারবে না। তাহলে ভেবে দেখুন আপনি গয়না পরতে ভালোবাসেন এই বিষয়টি সমাজের নির্মাণ। আপনি ছোট থেকে সেই নির্মাণ প্রক্রিয়ার অংশ থেকে গিয়েছেন। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে সেই প্রক্রিয়া চলছে।
আরও পড়ুন:

পরিযায়ী মন, পর্ব-১০: চটকপুরের নিরালায়

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-১৭: সুন্দরবনের শিশুরক্ষক পাঁচুঠাকুর

এই বিভাজন শুধু সধবা বা বিধবা নয় আপনি কোন ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত আছেন সেটাও নির্ধারণ করে দেয় আপনার গয়না পরাকে। যিনি শিক্ষিকা তিনি কেন গয়না পরবেন বা কেন সাজবেন বা লিপস্টক পরবেন? সমাজ বলে শিক্ষিকার নৈতিকতা থাকে নিজেকে নিরাভরণ রাখার মধ্যে। কিন্তু শিক্ষিকা ভালো পড়াচ্ছেন কিনা সেটা দেখা হয় না। অন্যদিকে যারা নার্সের কাজ করেন তাদেরকেও সাজতে বারণ করা হয়। এক্ষেত্রে রোগীর গুরুত্ব যাতে না কমে সেই বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া হয়। আবার যিনি অভিনেত্রী বা বিউটি স্যালনে কাজ করেন তাদের বলা হয় সাজগোজ না করলে মানায় না। অথচ পর্নগ্রাফিতে ছাত্র-শিক্ষিকা বা নার্স ও রোগীর যৌন সম্পর্ক দেখালে সমাজ রে রে করে তেড়ে আসে না। উল্টে ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটলে বা যৌন অপরাধ ঘটলে প্রথমেই সমাজ নারীর সাজগোজ নিয়ে চুল চেরা বিশ্লেষণ করতে শুরু করে।

সাজের সঙ্গে নৈতিকতার চাবুক জুড়ে প্রহার না করলে সমাজের মান থাকে না। নারী নিজের ইচ্ছেয় সাজগোজ করবে কবে? এই প্রশ্ন এখন উঠতে শুরু করেছে কিন্তু বার বার আমরা নৈতিকতার প্রশ্ন তুলে ফেলছি নারীর সাজগোজ নিয়ে। এই সুযোগ নিয়ে ফেলেছে বিউটি ইন্ডাস্ট্রি। নারীর আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হচ্ছে বোল্ড রঙের লিপস্টিক আর হালকা সোনার গয়নাকে। কিন্তু কিছুতেই বলছে না নারীর আত্মবিশ্বাস নারী নিজে খুঁজে নেবে নিজের মত করে।

সোনার গয়নার পাশাপাশি বিবাহিত নারীকে শাঁখা আর পলা পরতে বলা হয়। ইদানিং কালের গয়নার বিজ্ঞাপনে দেখান হচ্ছে হাতে মোটা শাঁখা এবং পলা পরলে হাত কত সুন্দর লাগে। প্রকৃত বিবাহিত নারী মনে হয়।এই দেখাটাও যে সমাজের নির্মাণ আমরা বুঝতে পারি না। আমাদের বলা হয় মুখ গোল তাই গোল দেখি। নিজে কেমন দেখতে তাও আমরা বুঝে উঠতে পারি না। ভারতের সব জায়গায় শাঁখা পলা পরার প্রচলন নেই। পূর্ব ভারতে বা দক্ষিণ ভারতে সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলে দেখা যায়।
আরও পড়ুন:

কলকাতার পথ-হেঁশেল, পর্ব-৯: আহা, মরি—কেটেলবেরি

ইতিহাস কথা কও, কোচবিহারের রাজকাহিনি, পর্ব-১৩: সাগর দীঘির ধারে হিরণ্যগর্ভ শিবমন্দির ও মধুপুর ধাম

সেই অর্থে বলা যেতে পারে সারা ভারতে প্রচলিত নয় শাঁখা পরা। শাঁখা পরার সঙ্গে অসুরের গল্পের পৌরাণিক আভাস পাওয়া যায় বটে কিন্তু শঙ্খকে বিজয়ের প্রতীক, সম্পদের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়েছে। নারীকে জয় করা হয়েছে সেই কথা জানান দেওয়ার জন্য শঙ্খ পরার বিধান দেওয়া হয়েছে। লাল পলা রজস্বলা বোঝাতে মূলত ব্যবহার করা হয়। লোহা যাকে আমরা নোয়া বলি, পরতে হয় সমাজকে জানান দিতে যে সেই নারী কারও অধীন। আসলে বিবাহ নারীর জীবনে বিভিন্ন ধরনের বন্ধনের শিকল নিয়ে আসে। এই সব গয়না সমাজকে বলার জন্য যে, সে কোন কোন শৃঙ্খলে আবদ্ধ।

এর পর আসে সিঁদুরের কথা। রামায়ণ এবং মহাভারতে সিঁদুরের দুই রকম ঘটনার কথা বলা আছে কিন্তু দুটো ঘটনার নির্যাস বলে একজন পুরুষ প্রথম সিঁদুর পরাবে। সেই সিঁদুর পরান মানে আবারও একবার সমাজের সামনে একজন নারীকে একজন পুরুষ জয় করে নিয়ে এল। এতে নারী একজন পুরুষের অধীনস্থ হল। নারীর সিঁথি থেকে সিঁদুর মুছে যাবে সেই দিন যে দিন তার স্বামীর মৃত্যু হবে। এখনও যাদের স্বামীরা হারিয়ে যান তাদের স্ত্রী সিঁদুর পরে যান কোনো খবর না পাওয়া অবধি। স্বামীর মৃত্যুর পর হাতের শাঁখা, পলা সব ভেঙে দেওয়া হয়, তারপর সিঁদুর মুছে দেওয়া হয়। পুরো ঘটনা তেই পিতৃ তন্ত্রের প্রভাবশালী ছায়া চোখে পড়ে। দশমীর পর দেবী বিদায় কলে ওই স্বামীর মঙ্গল কামনা করাই সিঁদুর খেলার মূল কথা কারণ এই বিদায় খেলার পরেই ঘরে এসে স্বামীকে প্রণাম করতে হয়। এখন কর্পোরেট কালচারাল অনুষ্ঠানে এই প্রথার নাট্যরূপ দেখিয়ে পুরস্কার জেতার গল্প শুনতে পাই। তাই সিঁদুরের ব্যবহার যতই হবে, ততই পিতৃতন্ত্রের জয়গান হতেই থাকবে। আর বাজারে চুল পড়ে যায় বলে লিকুইড সিঁদুরে বাজার ছেয়ে যায়।

গয়না পরব কিনা বা পরলেও কীভাবে পরব সেই চেতনা একটি মেয়ের যেমন থাকা দরকার তেমনি যে ছেলে বিয়ে করতে যাচ্ছে একটি মেয়েকে সেও বলবে গয়না না পরলেও মেয়েটিকে একটি গুণী, বুদ্ধিদীপ্ত মেয়ে মনে হচ্ছে, রূপে লক্ষ্মী নয়।
* বৈষম্যের বিরোধ-জবানি (Gender Discourse): নিবেদিতা বায়েন (Nibedita Bayen), অধ্যাপক, সমাজতত্ত্ব বিভাগ, পি আর ঠাকুর গভর্নমেন্ট কলেজ।

Skip to content