অলঙ্করণ: লেখক।
“না না না না না না না না/ বুঝলে দেবদুলাল/ ওয়াগানটা তো রোজ ভাঙ্গেনা/ এমনি ভালো ছেলে/ ওয়াগান ভাঙ্গে মাঝে মধ্যে/ বাইরে-টাইরে এলে”…
অক্টোবরের এক আর দুই তারিখ দুটো মনে রাখবেন। এমনিতেই পুজো পুজো গন্ধ। ফেস্টিভ মুড। কিন্তু এভাবে যদি শুরু হয়! কীভাবে শুরু? প্রথম দিন “বিশ্ব নিরামিষ দিবস”, দ্বিতীয় দিন “বিশ্ব অহিংসা দিবস”… মনে পড়বেই, বৈদিক যাগযজ্ঞ নিয়ে যখন খুব ঘটা-পটা… দান-গ্রহণের ব্যাপার স্যাপার, দানের উত্তুঙ্গ মাহাত্ম্য নিয়ে মন্ত্রে মন্ত্রে স্তুতি, তখন প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলনের প্রকাশ। যজ্ঞে নিরীহ ছাগলটাকে বলি দেওয়া নিয়ে খুব আপত্তি করলেন সিদ্ধার্থ বুদ্ধদেব। ছাগল মেরে তোমার কী উপকার হল হে? আমার উপকার পরে, আগে ছাগলটার উপকার হল খুব। এই সুযোগে স্বর্গের টিকিট কনফার্মড হয়ে গেল। সেটা কে করে দিত? চার্বাকরা একটু বেয়াড়া কথা বলবেন। এমন সুযোগ থাকলে নিজের পিতৃপুরুষদের বঞ্চিত করে, সামান্য ছাগলকে এগিয়ে দেওয়ার এই ঔদার্য নোটেবল বটে। তখন নোবেল ছিল না। শান্তির নোবেল-ও ছিল না, যাইহোক…
অক্টোবরের এক আর দুই তারিখ দুটো মনে রাখবেন। এমনিতেই পুজো পুজো গন্ধ। ফেস্টিভ মুড। কিন্তু এভাবে যদি শুরু হয়! কীভাবে শুরু? প্রথম দিন “বিশ্ব নিরামিষ দিবস”, দ্বিতীয় দিন “বিশ্ব অহিংসা দিবস”… মনে পড়বেই, বৈদিক যাগযজ্ঞ নিয়ে যখন খুব ঘটা-পটা… দান-গ্রহণের ব্যাপার স্যাপার, দানের উত্তুঙ্গ মাহাত্ম্য নিয়ে মন্ত্রে মন্ত্রে স্তুতি, তখন প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলনের প্রকাশ। যজ্ঞে নিরীহ ছাগলটাকে বলি দেওয়া নিয়ে খুব আপত্তি করলেন সিদ্ধার্থ বুদ্ধদেব। ছাগল মেরে তোমার কী উপকার হল হে? আমার উপকার পরে, আগে ছাগলটার উপকার হল খুব। এই সুযোগে স্বর্গের টিকিট কনফার্মড হয়ে গেল। সেটা কে করে দিত? চার্বাকরা একটু বেয়াড়া কথা বলবেন। এমন সুযোগ থাকলে নিজের পিতৃপুরুষদের বঞ্চিত করে, সামান্য ছাগলকে এগিয়ে দেওয়ার এই ঔদার্য নোটেবল বটে। তখন নোবেল ছিল না। শান্তির নোবেল-ও ছিল না, যাইহোক…
তবে মাংস গ্রহণের পর নাকি বুদ্ধদেবের মহাপরিনির্বাণ ঘটে, তিনি মৃত্যুরূপ অপূর্ব আরোগ্য লাভ করেন। তবে আমাদের কথা সে নিয়ে নয়। এই যে হিংসা ও হিংসা, উদ্ভিজ্জ ও প্রাণীজ আহারের দ্বন্দ্ব, খাদ্য-খাদকের ব্যাপার স্যাপার… বেশ ঘোরালো।
শাকপাতা খেয়ে ছাগল কিংবা হাতি দিব্যি আছে। বাঘ-সিংহ কিংবা মশা, রক্ত মাংসে মজে আছে। এ দিকে অহিংসা সর্বথা অবলম্বন করতে হবে। কিন্তু মশা মরছে। মুরগি হচ্ছে সবাই। মুরগিও জবাই হচ্ছে। ওদিকে মিস্টার এক্স কিংবা ম্যাডাম ওয়াই “আমি কি ঘাস খাই নাকি হে” বলে দাবড়াচ্ছেন। ম্যাডাম এফ কিংবা মিস্টার এম হাসিমুখে শাকাহার করে লোককে খুঁচিয়ে মারছেন, হাসিমুখে ছুরি শানাচ্ছেন, দাঁত ফোটাচ্ছেন কী নাক গলাচ্ছেন, নাক কাটছেন, খাটাচ্ছেন, কাটাচ্ছেন, ফোটাচ্ছেন, কামড়াচ্ছেন, খামচে, খাবলে, ভেঙে কিংবা চিবিয়ে কাঠি করছেন কিংবা, বাঁশ। মাথা খেয়ে, হাড়-মাস জ্বালিয়ে এই যে অহিংসার উদযাপন তার তাৎপর্য বলে শেষ হওয়ার নয়, শেষ যখন হবেই না, তো শুরু করেও লাভ নেই।
শাকপাতা খেয়ে ছাগল কিংবা হাতি দিব্যি আছে। বাঘ-সিংহ কিংবা মশা, রক্ত মাংসে মজে আছে। এ দিকে অহিংসা সর্বথা অবলম্বন করতে হবে। কিন্তু মশা মরছে। মুরগি হচ্ছে সবাই। মুরগিও জবাই হচ্ছে। ওদিকে মিস্টার এক্স কিংবা ম্যাডাম ওয়াই “আমি কি ঘাস খাই নাকি হে” বলে দাবড়াচ্ছেন। ম্যাডাম এফ কিংবা মিস্টার এম হাসিমুখে শাকাহার করে লোককে খুঁচিয়ে মারছেন, হাসিমুখে ছুরি শানাচ্ছেন, দাঁত ফোটাচ্ছেন কী নাক গলাচ্ছেন, নাক কাটছেন, খাটাচ্ছেন, কাটাচ্ছেন, ফোটাচ্ছেন, কামড়াচ্ছেন, খামচে, খাবলে, ভেঙে কিংবা চিবিয়ে কাঠি করছেন কিংবা, বাঁশ। মাথা খেয়ে, হাড়-মাস জ্বালিয়ে এই যে অহিংসার উদযাপন তার তাৎপর্য বলে শেষ হওয়ার নয়, শেষ যখন হবেই না, তো শুরু করেও লাভ নেই।
আরও পড়ুন:
হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-১৬: আজগুবি ‘নয়’, আজগুবি নয়, সত্যিকারের কথা!
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-১৩: নহবতবাড়ির ‘এতটুকু বাসা’
জল খেয়ে মাতাল হয়ে যাচ্ছে কেউ কেউ, কেউ বা রক্ত চেটেই বাঘ থেকে নরখাদক হচ্ছে, কেউ বা ডিম ফোটাচ্ছে। আবার সবার চেয়ে খেতে ভালো… পাউরুটি আর ঝোলাগুড়? ধুর “মশা”ই! “সবচেয়ে ভালো খেতে গরীবের রক্ত”…সর্বত্র আঁশটে গন্ধ…ফিশি!! দুদু-ভাতুর দল “আমাকে দলে নাও না গো” বলে কেঁদে বেড়াচ্ছে।
অন্যদিকে, বাঘ বা সিংহ হতে পারলে আপনি খুশি। এমনকী, বাঘের বাচ্চা হলেও আপনাকে ঠেকায় কে! কিন্তু সেই প্রশংসনীয় কাজ যারা করছে, ছাগল কিংবা ভেড়ার দল, তাদের বাচ্চা বলে আপনি নিজেকে দুঃস্বপ্নেও ভাববেন না। ওদিকে কুকুর ঘাসে মুখ দিচ্ছে। আপনি তার শরীর নিয়ে বিশেষ উদ্বিগ্ন, আপনার হিতাকাঙ্ক্ষী কেউ এত প্রীতি দেখে দুজনকে জন্য-জনক সম্বন্ধে জুড়ে দিলেই… ব্যস… আপনার থেকে খারাপ আর কেউ নেই। যাইহোক, আমরা সেসব চাই না, ওতে আমাদের কোনও আগ্রহ নেই মশাই।
অন্যদিকে, বাঘ বা সিংহ হতে পারলে আপনি খুশি। এমনকী, বাঘের বাচ্চা হলেও আপনাকে ঠেকায় কে! কিন্তু সেই প্রশংসনীয় কাজ যারা করছে, ছাগল কিংবা ভেড়ার দল, তাদের বাচ্চা বলে আপনি নিজেকে দুঃস্বপ্নেও ভাববেন না। ওদিকে কুকুর ঘাসে মুখ দিচ্ছে। আপনি তার শরীর নিয়ে বিশেষ উদ্বিগ্ন, আপনার হিতাকাঙ্ক্ষী কেউ এত প্রীতি দেখে দুজনকে জন্য-জনক সম্বন্ধে জুড়ে দিলেই… ব্যস… আপনার থেকে খারাপ আর কেউ নেই। যাইহোক, আমরা সেসব চাই না, ওতে আমাদের কোনও আগ্রহ নেই মশাই।
আরও পড়ুন:
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৪৯: অনেক যতনে ‘বড়দিদি’-র পর্ব রাখিনু সেথা
দেশের প্রথম আধুনিক চিত্রকর নিরীহের হত্যা মানতে না পেরে গৃহত্যাগী হন
আসল কথা হল, আপনি বোতাম আঁটা জামার নিচে শান্তশিষ্ট মানুষ। লেজ কিংবা গোবত্স, মানে গোবেচারা আপনি কেন হবেন? ছি ছি। আপনি শাকাহারী এবং অহিংস। শুধু মাঝে মাঝে ইচ্ছে হলে সেই নন্দলালের ভাবী জামাই-এর মতো একটু আধটু পেঁয়াজ খান।
আপনি এমনিতে ভালো ছেলে। প্রথম দশদিন অহিংস পদ্ধতিতে “দাও না গো বাবা” বলে খেলনা বন্দুকটা দাবী করেছিলেন, না না, অনুরোধ। শেষে দেখলেন “নান্যঃ পন্থাঃ বিদ্যতে অয়নায়”… বসে পড়লেন বড় রাস্তায়, অনুরোধ-উপরোধ হয়ে গেল… অবরোধ… কাজ হল দ্রুত… আপনার হাতে বন্দুক উঠে এল.. ঢিচক্যাঁও… দুম!!
তবে এমনিতে আপনি ওরকম নন।
আপনি এমনিতে ভালো ছেলে। প্রথম দশদিন অহিংস পদ্ধতিতে “দাও না গো বাবা” বলে খেলনা বন্দুকটা দাবী করেছিলেন, না না, অনুরোধ। শেষে দেখলেন “নান্যঃ পন্থাঃ বিদ্যতে অয়নায়”… বসে পড়লেন বড় রাস্তায়, অনুরোধ-উপরোধ হয়ে গেল… অবরোধ… কাজ হল দ্রুত… আপনার হাতে বন্দুক উঠে এল.. ঢিচক্যাঁও… দুম!!
তবে এমনিতে আপনি ওরকম নন।
আরও পড়ুন:
পালকিতে যেতে যেতে লেখা হয়েছিল ‘বর্ণপরিচয়’
পরিযায়ী মন, পর্ব-৮: চোখিধানির জগৎখানি
আচ্ছা, ঐ পলাণ্ডু না পেঁয়াজ কী যেন, আমিষ না নিরামিষ? এত জটিল করেন কেন মশাই সবকিছু। গাধা স্বচ্ছ জলটা গুলিয়ে খায়। অহিংসা তো স্বচ্ছতা। আর স্বচ্ছ না থাকলে হয়! ঝকঝকে পোষাক পরে হাতের ছুরিটা একটু দায়িত্ব নিয়ে সামলাতেই হয়। না হলে, আদিম মানুষের সঙ্গে তফাত্ কোথায়? সভ্য-টভ্য হয়েই বা হলটা কী! যাহোক যে কথাটা হচ্ছিল; ওই জামাই বাবাজীবন “বুঝলে দেবদুলাল
পেঁয়াজটা তো রোজ খায়না / এমনি ভালো ছেলে/ পেঁয়াজটা খায় একটু আধটু মাংস-টাংস খেলে”
খাইসে!! ছোঃ ছোঃ ছ্যাঃ ছ্যাঃ ম্যাগো!!!
পেঁয়াজটা তো রোজ খায়না / এমনি ভালো ছেলে/ পেঁয়াজটা খায় একটু আধটু মাংস-টাংস খেলে”
খাইসে!! ছোঃ ছোঃ ছ্যাঃ ছ্যাঃ ম্যাগো!!!
* কোমুখোর চিত্রকলা : লেখক: ড. অভিষেক ঘোষ (Abhishek Ghosh) সহকারী অধ্যাপক, বাগনান কলেজ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগ থেকে স্নাতকস্তরে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত। স্নাতকোত্তরের পর ইউজিসি নেট জুনিয়র এবং সিনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপ পেয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগে সাড়ে তিন বছর পূর্ণসময়ের গবেষক হিসাবে যুক্ত ছিলেন। সাম্বপুরাণের সূর্য-সৌরধর্ম নিয়ে গবেষণা করে পিএইচ. ডি ডিগ্রি লাভ করেন। আগ্রহের বিষয় ভারতবিদ্যা, পুরাণসাহিত্য, সৌরধর্ম, অভিলেখ, লিপিবিদ্যা, প্রাচ্যদর্শন, সাহিত্যতত্ত্ব, চিত্রকলা, বাংলার ধ্রুপদী ও আধুনিক সাহিত্যসম্ভার। মৌলিক রসসিক্ত লেখালেখি মূলত: ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে। গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়ে চলেছে বিভিন্ন জার্নাল ও সম্পাদিত গ্রন্থে। সাম্প্রতিক অতীতে ডিজিটাল আর্ট প্রদর্শিত হয়েছে আর্ট গ্যালারিতে, বিদেশেও নির্বাচিত হয়েছেন অনলাইন চিত্রপ্রদর্শনীতে। ফেসবুক পেজ, ইন্সটাগ্রামের মাধ্যমে নিয়মিত দর্শকের কাছে পৌঁছে দেন নিজের চিত্রকলা। এখানে একসঙ্গে হাতে তুলে নিয়েছেন কলম ও তুলি। লিখছেন রম্যরচনা, অলংকরণ করছেন একইসঙ্গে।