শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪


ছবি প্রতীকী। সংগৃহীত।

 

মিত্রভেদ

তাঁতির সেই বউটি ছিল একজন “পুংশ্চলি”। দেবদত্ত বলে এক পরপুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল তার। সংস্কৃত ভাষায় এই “পুংশ্চলি” শব্দটির আরও সুন্দর একটি প্রতিশব্দ আছে—“জঘনচপলা” পরপুরুষ দেখলেই তাদের ঊরুদেশ বা জঘনদুটি চঞ্চল হয়ে ওঠে।তাঁতির বউটিও ছিল সেই রকমই। অতিথি দেবশর্মাকে নিয়ে তাঁতি যখন তার বউকে বাড়ি ফিরে যেতে বলে, সে বউটি তখন খুব খুশি হয়ে মনে মনে তার জারপুরুষ সেই দেবদত্ত’র কথা চিন্তা করতে করতে বাড়ি ফিরে আসে। এই সমস্ত “জঘনচপলা” নারীরা এমনই সব সুযোগ খোঁজে। মেঘাচ্ছন্ন দিনে যখন চারিদিকে আঁধার নামে কিংবা নগরের সঙ্কীর্ণ গলিতে যেখানে পথচলা কঠিন হয়—মানুষজন কম আসে আর নিজের পতি যদি কখনও বিদেশে বা অন্যত্র কোথাও গিয়ে থাকে “জঘনচপলা” নারীদের পরম সুখের সময় সেগুলোই। পতির মনোহর শয্যা এবং তাতে সুন্দর টান-টান করে পাতা চাদর—কিছুই তাদের পছন্দ হয় না। সামান্য তৃণবল্লীর মতো তুচ্ছ আর হেয় করে তারা সেগুলিকে।

কামশাস্ত্রে বিদগ্ধ পণ্ডিতরা বলেন, কুলটা স্ত্রীরা স্বামীর কাছে এসে মিলনের সময় অত্যধিক লজ্জা দেখিয়ে মিলনকে নীরস করে তোলে; পুলকিত হয়ে স্বামী তার স্ত্রীর সঙ্গে পরিহাস করতে গেলে তা আদিখ্যেতা বলে তাকে নিরস্ত করে দেয়, আর পতির সুন্দর শৃঙ্গার বা সাজগোজ দেখে যাদের হাড়-মাস জ্বলে যায়। পণ্ডিতেরা তাদেরকেই কুলটা স্ত্রী বলে উল্লেখ করেছেন। তারা পুরুষ-বন্ধকী—যেকোনও পুরুষকে প্রেমজালে বেঁধে ফেলতে তারা পটু। নিজ পতির কোন গুণেই তাদের পরিতুষ্টি হয় না। আর সবচেয়ে বড় কথাটা যেটা সেটা হল কুলটা স্ত্রীরা পরিবারের কলঙ্ক, বংশের নিন্দা এবং সে জন্য পতির চোটপাট কিছুকেই ভয় পায় না। তাঁতির বউটি সেইরকমই এক “পুংশ্চলি”—সমর্থ স্বামী থাকলেও জারপুরুষ দেবদত্তের জন্য তার জঘনদেশ চঞ্চল হয়।

ব্রাহ্মণ অতিথি দেবশর্মাকে নিয়ে সেই তাঁতির বউটি বাড়িতে ফিরে তাঁকেবিছানা ছাড়া একটা ভাঙা চৌকিতে বসিয়ে অতিভক্তি দেখিয়ে বললেন, ভগবন! যতক্ষণ না আমি সখীদের সঙ্গে গল্পগুজব সেড়ে গাঁয়ের থেকে ফিরে না আসি ততক্ষণ আপনি সাবধানে আমাদের এই ঘরেতেই থাকুন।

এই বলে বেশ সাজগোজকরে শৃঙ্গার রচনা করে যখন দেবদত্তের সঙ্গে সে দেখা করতে বেরোবে ঠিক তখনই সে দেখে যে দূরে দরজার বাইরে মদমত্ত অবস্থায় তার স্বামী সেই তাঁতিটি এসে উপস্থিত হয়েছে। তাঁতিকে দেখেই তাঁতির বউটি মুখ ঘুড়িয়ে ঘরের মধ্যে পালিয়ে গিয়ে সমস্ত সাজগোজ ছেড়ে ফেলে আগের মতন সাদামাটা পোষাকে এসে উপস্থিত হল। তাঁতিটি ছিল জাতে মাতাল তালে ঠিক। মদের নেশা চোখে লেগে থাকলেও এক ঝলকে সেজেগুজে থাকা বউকে চিনে নিতে সময় লাগেনি তার। হতে পারে নেশাটা হয়তো তখনও এতটা ঘন হয়নি।

কিছুদিন ধরে স্ত্রীর এইসব বিষয় নিয়ে যে সব কানাঘুষো চলছে তারও কানে সেসব কিছুটা যে আসেনি তা নয়; তাই সন্দেহটা আগে থেকেই ছিল আর আজ নিজের চোখেরএভাবে সাজগোজ করা দেখে সমস্ত সন্দেহের নিরসন হয়ে গেল তার। ক্রোধে মাথায় রক্ত উঠে গেলো তার। নেশায় চোখ দুটো তার লাল হয়ে আছে।ঘরের মধ্যে ঢুকে তীব্র ভাষায় সে তাঁতি তার বউকে আক্রমণ করে বললে, ওরে শালী বেশ্যা! এই সময়ে এতো রাত্রে সেজেগুজে কোথায় যাচ্ছিলি?—“আঃ পাপে! পুংশ্চলি! ক্ব প্রস্থিতাসি?”

তাঁতির বউটি বললে, তোমার কাছ থেকে বাড়ি ফিরে আসা অবধি কোথাও বেরোইনি আমি। মদ খেয়ে বানিয়ে বানিয়ে এ সব যা নয় তাই কি সব বলছো তুমি? পণ্ডিতেরা ঠিকই বলেন, নিজের শরীরের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মাটিতে পড়ে যাওয়া, ভুল-ভাল বকা কিংবা বায়ু, পিত্ত আর কফ মিলেমিশে সন্নিপাত রোগ হয়ে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, এ সবই বেশি মদ খেয়ে মাতাল হওয়ার চিহ্ন। শুধু কি তাই? বারুণী বা মদ যে কি মারাত্মক, তার প্রভাব দিবাকর সূর্যের উপরেও কিন্তু কম নয়। পাঠকদের এ প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে ভারতীয় পৌরাণিক পরম্পরা অনুযায়ী দশদিকের দশজন দিকপাল দেবতা আছেন। যেমন পূর্ব দিকের দেবতা হলেন অগ্নি তেমনই পশ্চিম দিকের পশ্চিমদিকের অধীশ্বর হলেন স্বয়ং বরুণ দেব।

বরুণ হলেন জলের দেবতা; আর মদ জিনিষটির মূলেও সেই জল আছে বলে, মদের আরেক নাম হল বারুণী। সূর্যের মতো তেজদীপ্ত দেবতাও পশ্চিমাকাশে বরুণদেবের অধীনে যখন আসেন, তিনিও যেন মদমত্তই হয়ে যান। মদ্যপ ব্যক্তির মতন তেজ তো তাঁর তখন কমেই যায়, উপরন্তু মধ্য গগণ ত্যাগ করে পশ্চিমাকাশে সূর্যের আলোর ঝিকিমিকি-কম্পনও দেখা যায় গোধূলিতে। ঠিক যেমন বারুণীর নেশায় মদমত্ত ব্যক্তির হাত কাঁপে পা টলে, সূর্যদেবেরও অবস্থা হয় তথৈবচ। নেশাতুর মানুষের চোখের মতো সূর্যদেবও পশ্চিমাকাশে বারুণীর প্রভাবেই যেন রক্তবর্ণ ধারণ করেন। তাই তাঁতির বউয়ের জবাব হল, যেখানে সূর্যের মতন তেজস্বী দেবতারও বারুণীর প্রভাবে এমন অবস্থা হয়, সেখানে তাঁতির মতন এক অতি সাধারণ মানুষের এসব ভুল-ভ্রান্তি তো হতেই পারে। তাঁতি-বউ ঝাঁঝিয়ে বললে, মদের নেশায় কি দেখতে কি দেখেছো, এখন উল্টোপাল্টা বকছো।

আগেই বলেছি যে তাঁতির তখনও বেশ টনটনে জ্ঞান ছিল; পরপুরুষের সঙ্গে মিলিত হতে যাওয়ার আগে বউয়ের সাজগোজ তার নজর এড়ায়নি। তার উপরে তার বউয়ের এইরকমঝাঁঝালো সব কথাবার্তা শুনে সে একেবারে মেজাজ হারালো। চিত্কার করে বলতে শুরু করলো, তুই একটা পুংশ্চলি। অনেকদিন ধরে তোর নামে এইসব অপবাদ শুনে আসছি, এতোদিন বিশ্বাস করিনি আর কিছুই বলিনি শুধু কোনও প্রমাণ হাতে পাইনি বলে। আজ নিজের চোখে সব দেখেছি।এর শাস্তি তোকে পেতেই হবে।
আরও পড়ুন:

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-২০: দু’জন সন্ন্যাসী এক জায়গায় হলেই সাধন-ভজন ভুলে তাঁরা জগৎ-সংসারের কথায় মগ্ন হয়ে যান

ক্যাবলাদের ছোটবেলা, পর্ব-১৫: একটাই ডেনজার জুজু যদি ধরে

এইসব বলে একটা মোটা লাঠি দিয়ে বেশ করে বউকে পিটিয়ে ঘরের একটা থামের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে নেশার ঘোরে সেখানেই ঘুমিয়ে পড়লো। ব্রাহ্মণ দেবশর্মা পাশের ঘর থেকে এ সবই দেখছিল। এমন সময়, সেই কুলটা তাঁতি-বউয়ের এক সখী নাপিত-বউ সেই জারপুরুষ দেবদত্তের দূতি হিসেবে এসে সেখানে এল এবং তাঁতিকে মাটিতে নেশার ঘোরে ওইভাবে শুয়ে থাকতে দেখে থামে বাঁধা তাঁতি-বউয়ের কাছে চুপি চুপি গিয়ে বললো, ওহে সখি! তোমার নাগর দেবদত্ত সেই সঙ্কেত স্থানে, যেখানে তুমি বলেছিলে, সেখানে তোমার জন্য অপেক্ষা করছে, তাড়াতাড়ি এসো। থামে বাঁধা তাঁতি-বউ হতাশ হয়ে সেই দূতি নাপিতনীকে বলল, আমার অবস্থা তো দেখতেই পাচ্ছো —কীভাবে যাবো তুমিই বলো? তাই ফিরে গিয়ে সেই কামী পুরুষটিকে বলো যে আজ রাতে তার সঙ্গে রসের খেলাটি আর সম্ভব হবে না।

দূতি নাপিতনীটি ছিল দৌত্যকার্যে একেবারে সিদ্ধহস্ত।আসলে আজকের দিনের মতো সেকালেও অন্যের স্ত্রী ভোগকরা ব্যাপারটা এতোটাই লোভনীয় ছিল যে বাৎস্যায়নের কামসূত্রের পঞ্চম অধ্যায়ে “পারদারিকম্‌” বলে একটি গোটা অধ্যায়ই রয়েছে, যেখানে শুধু পরস্ত্রী-সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। সেখানেই একটি প্রকরণ আছে যেখানে “দূতীকর্মণি” বা দৌত্যকার্য সংক্রান্ত একটি সম্পূর্ণ অধ্যায় আছে। শুধু এটুকুই নয়, পরস্ত্রী-সম্ভোগের ক্ষেত্রে এই দৌত্যসংক্রান্ত বিষয়টি এতোটাই গুরুত্বপূর্ণ যে কামসূত্রের প্রথম অধ্যায়ে “নায়কসহায়দূতীকর্মবিমর্শ” নামেও অপর একটি অধ্যায়ের আলোচনা করেছেন স্বয়ং বাৎস্যায়ন; যেখানে নায়কের সহায়তায় দৌত্যকর্ম সংক্রান্ত বিষয়ে অনেকরকম উপায় ও কৌশলের কথা আলোচনা করা হয়েছে একটা গোটা অধ্যায় জুড়ে।
আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৪৭: সে কোন প্রভাতে হইল মোর সাধের ‘নবজন্ম’

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-১০: দশমহাবিদ্যা ও ঠাকুরের কালীভাবনা…

সেই নাপিতনী ছিল একেবারে কামশাস্ত্রে অভিজ্ঞ একজন দূতি। গৃহবধূদের পরপুরুষের নেশা লাগাতে সে ছিল একেবারে ওস্তাদ, কথাবার্তাতেও ছিল পটু। তাঁতি-বউকে সে বললো, ওহে সখি! নাগর তোমার জন্য সঙ্কেত স্থানে প্রতিক্ষা করছে আর তুমি এখন তোমার অবস্থা দেখাচ্ছো? বন্ধু এতো কুলটাধর্ম নয়। কামশাস্ত্রে বিধান বলে—

বিষমস্থস্বাদুফলগ্রহণব্যবসাযনিশ্চযো যেষাম্‌।
উষ্ট্রাণামিব তেষাং মন্যেঽহং শংসিতং জন্ম।। (মিত্রভেদ, ১৯০)


পরপুরুষকে ভোগ গেলে কুলটা বা জঘনচপলা নারীকে হতে হয় উটের মতো যে উট প্রাকৃতিক সমস্ত বিপর্যয়কে উপেক্ষা করে জলহীন মরুভূমি প্রান্তরের মধ্যে দিয়ে অনিশ্চিতের দিকে এদিয়ে কোনও এক মরুদ্যানে পৌঁছে তবে স্বাদু ফলের স্বাদ পায়, কুলটা নারীকেও তেমনই হতে হয়। মিলন পথে যতো বাঁধা, যতো বিষমতা বা বিপর্যয় থাকে অন্তে মিলন ততো সুস্বাদু হয়। তাই পণ্ডিতরা বলেন—

সন্দিগ্ধে পরলোকে জনাপবাদে চ জগতি বহুচিত্রে।
স্বাধীনে পররমণে ধন্যাস্তারুণ্যফলভাজঃ।। (ঐ, ১৯১) (মিত্রভেদ, ১৯০)


এই রকম কুলটা নারীদের মানসিকতাটা সাধারণ পাঁচ জনের মতো হয় না। এরা অনেক এগিয়ে ভাবে। পরলোক আছে কি নেই সে খবর কারও জানা নেই আর এই পৃথিবীতে চলতে গেলে লোকনিন্দা তো থাকবেই; মানুষ ভালো হোক বা মন্দ, লোকনিন্দা কাউকে পিছু ছাড়ে না। তাই পাপপুন্যেরহিসেব তোলা থাক। জীবনে কোথাও যদি সুখ আর স্বাধীনতা একসঙ্গে পাওয়া যায় সেটা হল পরপুরুষের সঙ্গে মিলনে। ফলে দৈবক্রমে কোনও বিকৃত দর্শন পুরুষও যদি তাদের প্রেমফাঁদে ধরা পড়ে, নিজের সুন্দর পতিকে উপেক্ষা করেও তারা সেই বিরূপদর্শন পুরুষের কাছে যায়। অনিশ্চয়তা আর বিপদের সম্ভাবনা যেখানে যত বেশী থাকে, নিষিদ্ধ ফলের মতো নিষিদ্ধ মিলনের স্বাদ তাদের কাছে ততোটাই ততোটাই সুন্দর লাগে।
আরও পড়ুন:

ইতিহাস কথা কও, কোচবিহারের রাজকাহিনি, পর্ব-৯: রাজবাড়ির সান্নিধ্যে নারীর উড়ান

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৩৬: গলা সাধলেই লতাকণ্ঠী?

আসলে এই ধরণের কথাগুলি বলার পিছনে প্রধান উদ্দেশ্যটা হলো রাজার ছেলেদেরকে সতর্ক করা। এ-কালের মতন সেই পুরোনো আমল থেকেই রাজনৈতিক প্রয়োজন সিদ্ধিকরার জন্য সুন্দরী সুন্দরী কুলটা নারীদেরকে ব্যবহার করা হতো—নিষিদ্ধ প্রলোভনের ফাঁদ পাতা হতো। তাই প্রাক যৌবনের শুরুতেই কুলটা নারীদের মানসিকতাটা ঠিক কেমন সে বিষয়ে সতর্ক করে দিতেই এতোগুলো কথা খরচ করলেন পঞ্চতন্ত্রকার।

মূল বক্তব্যটি হল, জনাপবাদ কিংবা লোকনিন্দার ভয় এইধরণের কুলটা নারীদের থাকে না—কিন্তু সম্ভ্রান্ত পুরুষের অবশ্যই থাকে। তাই এই ধরণের নিষিদ্ধ প্রণয়ের হাতছানি থেকে দূরে রাখতেই রাজার শিশুপুত্রদের উদ্দেশ্যে এই সাবধান বাণীগুলি উচ্চারণ করেছেন পঞ্চতন্ত্রকার। সকল পুরুষ বা সকল নারীর মানসিকতা যে একরকম নয় অর্থাৎ আপনি যেমন ভাবে চিন্তা করেন সকলকেই যে আপনার মতো করে চিন্তা করে এমনটা নয়। আপনি যে জিনিষটাকে সরল চোখে দেখছেন অন্যলোকেও যে সেটাকে সরল চোখে দেখবে এমন কোনও কথা নেই। সবরকম মানুষের মানসিকতা যে একরকম নয়, রাজকার্য চালাতে গেলে এ কথাগুলো ভুলে গেলে চলবে না।

তাঁতির লাঠিপেটা খেয়ে থামে বাঁধা সেই কুলটা তাঁতি-বউটি তখন অসহায়ের মতো দেবদত্তের দূতি সেই নাপিতনীকে বলল, তাই যদি হয় তবে তুমিই বলো বন্ধু, এ ভাবে যেখানে আমাকে এই থামের সঙ্গে বেঁধে রেখেছে সেখান থেকে আমি এখন যাই কি করে? তাঁতি ঠিক সামনেটায় নেশায় বুঁদ হয়ে ঘুমাচ্ছে। সে ঘুম যদি একবারও ভেঙ্গে যায়, তবে চোখে নেশা লেগে থাকলেও থামে যে কেউ বাঁধা নেই সেটা বুঝতে একটুও অসুবিধা হবে না তার। তাই এই অবস্থায় সেই কামুক দেবদত্তের কাছে যাওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।

দূতি নাপিতনী বললে, সখি! মদে চুড় হয়ে এ এখন এতোটাই ঘুমাচ্ছে যে সূর্যের আলোর স্পর্শ না পেলে এর নেশাও কাটবে না আর ঘুমও ভাঙবে না। আমি তোমার বাঁধন খুলে দিচ্ছি, আমাকে তোমার জায়গায় এই থামে বেঁধে তুমি তাড়াতাড়ি সেই দেবদত্তের কাছে যাও। মিলন শেষে ফিরে এসে আবার এখানে আবার আগের মতো তোমাকে এই থামের সঙ্গে বেঁধে দেবো আমি। এই মাতাল তাঁতি সকালে কিছুই বুঝতে পারবে না।

নাপিতনীর এই বুদ্ধিটি তাঁতি-বউয়ের বেশ পছন্দ হল। এতটুকু সময় নষ্ট না করে তাঁতি-বউকে বন্ধন মুক্ত করে সে দূতি নিজেকে থামের সঙ্গেতাঁতি-বউয়ের জায়গায় বেঁধে,যত দ্রুত সম্ভব তাঁতি-বউকে সেই দেবদত্তের কাছে পাঠিয়ে দিলে, যাতে পূর্বাকাশে সূর্যালোকের দেখা মেলবার আগেই তাঁতি-বউ ফিরে এসে তাকে বন্ধন মুক্ত করে দিতে পারে।—চলবে।
* পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি (Panchatantra politics diplomacy): ড. অনিন্দ্য বন্দ্যোপাধ্যায় (Anindya Bandyopadhyay) সংস্কৃতের অধ্যাপক, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়।

Skip to content