শনিবার ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫


রোভার প্রজ্ঞানের তোলা ত্রিমাত্রিক ছবি। ছবি: ইসরো।

চাঁদের মাটিতে ধীরে ধীরে রাত ঘনিয়ে আসছে। তাই ভারতীয় সময় অনুযায়ী সোমবার সকাল ৮টা নাগাদ চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে ‘স্লিপ মোড’-এ চলে গিয়েছিল ল্যান্ডার বিক্রম। আগেই ঘুম পাড়ানো হয়েছে রোভার প্রজ্ঞানকে। মঙ্গলবার ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো প্রজ্ঞান এবং বিক্রম ‘স্লিপ মোড’-এ যাওয়ার পর তাদের এক্স হ্যান্ডল একটি রঙিন ত্রিমাত্রিক ছবি পোস্ট করে।

ইসরো জানিয়েছে, ত্রিমাত্রিক ছবিটি রোভার প্রজ্ঞান দু’ভাগে তুলেছে। নেভিগেশন ক্যামেরায় তোলা হয়েছে। প্রজ্ঞান ছবিটি একবার এক বার বাঁ দিক থেকে এবং এক বার ডান দিক থেকে ছবি তুলেছে। তার পর ছবি দু’টিকে মিশিয়ে নতুন ত্রিমাত্রিক ছবি তৈরি করা হয়েছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে চাঁদের মাটিতে দাঁড়িয়ে আছে ল্যান্ডার বিক্রম।
আরও পড়ুন:

ইতিহাস কথা কও, কোচবিহারের রাজকাহিনি, পর্ব-৯: রাজবাড়ির সান্নিধ্যে নারীর উড়ান

যে উপদেশ গিয়েছি ভুলে…

ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো এও জানিয়েছে, প্রজ্ঞান ‘স্লিপ মোড’-এ যাওয়ার আগে ছবিটি তুলেছিল। রোভার প্রজ্ঞান যখন ছবিটি তুলেছিল তখন ল্যান্ডার বিক্রম থেকে ১৫ মিটার দূরত্বে গিয়ে রোভার। ত্রিমাত্রিক ছবিটিকে খালি চোখে প্রাথমিক ভাবে সাদা-কালো রঙের মনে হলেও ‘ত্রি-ডি গ্লাস’ পরে দেখলে ছবিটিকে রঙিন দেখা যাবে।
আরও পড়ুন:

রবিবার ইসরোর জন্য ‘সান-ডে’, সূর্যের পথে প্রথম বার কক্ষপথ পরিবর্তন করল আদিত্য-এল১

কলকাতার পথ-হেঁশেল, পর্ব-৪: হাজরা মোড়ে নাম না জানা কচুরিখানা

চন্দ্রযান-৩ চন্দ্র অভিযানে গেলেও তার আগেই সে কাজ শেষ সেরে ফেলেছে। এখন ইসরোর তৈরি প্রজ্ঞান বিশ্রাম নিচ্ছে। প্রজ্ঞানকে বিজ্ঞানীরা আপাতত ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছেন। কিন্তু সময়মতো রোভারকে ফের জাগানো সম্ভব কি না, সেটাই এখন প্রশ্ন। শনিবার রাতে ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো একটি টুইট করে। সেই টুইটে জানিয়েছে, প্রজ্ঞারের কাজ সম্পন্ন। চাঁদের মাটিতে তাকে যে সব কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তা করা হয়ে গিয়েছে। এখন একটি নিরাপদ স্থানে রোভার প্রজ্ঞানকে পাঠিয়ে দিয়েছেন বিজ্ঞানী। অর্থৎ ওকে এখন ‘স্লিপ মোড’ চালু করে রাখা হয়েছে। ছ’চাকা বিশিষ্ট এই ছোট যন্ত্রটি ১০ দিন ধরে চাঁদে ঘুরে ঘুরে অনুসন্ধান চালিয়েছে।

ইসরো এও জানিয়েছে, রোভার প্রজ্ঞানে এপিএক্সএস এবং এলআইবিএস পেলোড-ও বন্ধ রাখা হয়েছে। এপিএক্সএস এবং এলআইবিএস পেলোড থেকে সংগৃহীত সব তথ্যই ল্যান্ডার বিক্রমের মাধ্যমে পৃথিবীতে ইসরোর দফতরে পাঠানো হচ্ছে। ইসরো জানিয়েছে, এই মুহূর্তে প্রজ্ঞানের ব্যাটারিতে সম্পূর্ণ চার্জ রয়েছে। প্রজ্ঞানের সোলার প্যানেল এমন ভাবে রাখা হয়েছে, যাতে আবার চাঁদের আকাশে সূর্য উঠলে ওই প্যানেলে সরাসরি আলো পড়ে। মনে করা হচ্ছে, চাঁদে আগামী ২২ সেপ্টেম্বর আবার সূর্যোদয় হবে। শে সব দিক খেয়াল রেখে পৃথিবীর রিসিভার বা তথ্য গ্রহণকারী যন্ত্রটিকেও বিজ্ঞানীরা চালু রেখেছেন।

টুইটে ইসরো জানিয়েছে, বিজ্ঞানীদের আশা প্রজ্ঞানকে আবার সফল ভাবে জাগিয়ে তোলা যাবে। ২০ দিন পর প্রজ্ঞামের যদি ঘুম ভাঙানো যায়, তাহলে আরও কিছু নতুন কাজ তাকে দিয়ে করিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে। এদিকে, ইসরোর রোভার প্রজ্ঞান চাঁদের মাটিতে নতুন ‘মাইলফলক’ ছুঁলো। সে ধীরে ধীরে তার লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে। প্রজ্ঞান ১০০ মিটার দূরত্ব পার করে ফেলেছে। ইসরো টুইট করে রোভারের এই কীর্তির কথা প্রকাশ্যে এনেছে।

প্রজ্ঞানকে যদি জাগানো না যায়, তবে?
এ প্রসঙ্গে ইসরো জানিয়েছে, সে ক্ষেত্রে রোভার প্রজ্ঞান চাঁদের মাটিতেই থেকে যাবে। চাঁদের দক্ষিণ মেরুর মাটিতে ভারতের দূত হিসাবে আজীবন ইসরোর সাফল্যের সাক্ষ্য বহন করবে চন্দ্রযান-৩। ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো জানিয়েছে, প্রজ্ঞানের চাকায় ইসরোর লোগো এবং অশোকস্তম্ভের ছবি খোদাই করা রয়েছে। চাঁদের দক্ষিণ মেরুর মাটিতে প্রজ্ঞানের চাকা গড়ালেই মাটিতে সেই সব চিহ্নের ছাপ পড়বে। অর্থাৎ, ওই ১০০ মিটার পথে এই চিহ্ন খোদাই করা হয়ে গিয়েছে।

Skip to content