সোমবার ২৫ নভেম্বর, ২০২৪


শনিবার আরও এক ঐতিহাসিক মাহেন্দ্রক্ষণের সাক্ষী হল সারা দেশবাসী।

শনিবার কাঁটায় কাঁটায় ঠিক ১১টা বেজে ৫০ মিনিট। ভারত আরও এক ঐতিহাসিক মাহেন্দ্রক্ষণের সাক্ষী হল। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর মহাকাশযান আদিত্য-এল১ পাড়ি দিল সূর্যের উদ্দেশে। অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটা সতীশ ধাওয়ন স্পেস রিসার্চ সেন্টারের লঞ্চিং প্যাড থেকে ভারতীয় রকেট ‘পোলার স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকল’ (পিএসএলভি)-এ করে শনিবার ১১টা ৫০ মিনিটে সূর্যের উদ্দেশে রওনা দিল মহাকাশযান আদিত্য।

সারা দেশে খুশির হাওয়া আদিত্য-এল১-এর উৎক্ষেপণ নিয়ে। দেশের একাধিক জায়গায় থেকে উৎক্ষেপণের লাইভ স্ট্রিমিংয়ের দেখতে পাওয়া গিয়েছে। চন্দ্রযান-৩ গত ২৩ অগস্ট চাঁদের বুকে পা দিয়েছে। এদিন ল্যান্ডার বিক্রম সন্ধ্যা ৬টা ৪ মিনিটে প্রজ্ঞানকে নিয়ে চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণ করে। আর তার ১০ দিনের মধ্যেই এ বার সৌরযান উড়ে গেল ইসরোর আদিত্য-এল১।
প্রস্তুতি চলছিল জোরকদমে। কাজ চলছিল রাত-দিন। এ প্রসঙ্গে ইসরো আগেই জানিয়ে দিয়েছে, শনিবার সকাল ১১টা ২০ মিনিট থেকেই এই অভিযান সরাসরি দেখতে পাওয়া যাবে। আদিত্য-এল১ মহাকাশযানটিকে নিয়ে পিএসএলভি-সি৫৭ রকেট নিয়ে উড়ে গিয়েছে। সৌর অভিযানের সাফল্য কামনায় ইসরো তিরুপতির মন্দিরে পুজোও দিয়েছিল। আদিত্য-এল১ মহাকাশযানের ছোট একটি মডেল নিয়ে পুজোও দেওয়া হয়। আদিত্য-এল-১ অভিযানের জন্য বরাদ্দ প্রায় ৩৭৮.৫৩ কোটি টাকা।

চাঁদের মতো সূর্যের পৃষ্ঠে যেহেতু নামা সম্ভব নয়, তাই উচ্চ প্রযুক্তির ‘আদিত্য-এল১’ মহাকাশযানকে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় পাঠানো হবে। মহাকাশযান ওই নির্দিষ্ট স্থান (পয়েন্ট) অবধি গিয়ে ঘুরতে থাকবে। ওই পয়েন্টকে ‘ল্যাগরেঞ্জিয়ান পয়েন্ট ১’ বলা হয়। এখানে সূর্য এবং পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি থাকে না। এই ‘ল্যাগরেঞ্জিয়ান পয়েন্ট ১’-এ ‘আদিত্য-এল১’-কে পৌঁছে দিলে সেটি আজীবন সেখানে থেকে যাবে। ইসরো সেটাই করতে চাইছে। আগামী ২ বা ৩ সেপ্টেম্বর উচ্চ প্রযুক্তির ‘আদিত্য-এল১’ মহাকাশযানকে পাঠানো হবে। উৎক্ষেপণের পর প্রায় ১৬ দিন আদিত্য-এল১ পৃথিবীর চারিদিকে পাক খেতে থাকবে। এই ক’দিন সূর্যের দিকে পাড়ি দেওয়ার জন্য মোট পাঁচটি ধাপে গতিবেগ লাভ করবে আদিত্য। এর পর টানা ১১০ দিন ধরে সূর্যের অভিমুখে যাত্রা করবে আদিত্য এল১। তার পরে একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে দাঁড়িয়ে সূর্যকে পর্যবেক্ষণ করবে।
আরও পড়ুন:

গোল হয়ে ঘুরছে প্রজ্ঞান, হঠাৎ চাঁদের মাটিতে সে কিসের খোঁজে করছে? ভিডিয়ো প্রকাশ ইসরোর

এই পাঁচটি কারণে বাড়ছে পুরুষের বন্ধ্যাত্ব, জেনে নিন কোনটি সবচেয়ে বেশি দায়ী

আদিত্য এল১-এ মোট সাতটি পে-লোড আছে। দু’টি মূল পেলোড হল ভিসিবল এমিশন লাইন করোনাগ্রাফি(ভিইএলসি) এবং সোলার আল্ট্রাভায়োলেট ইমেজিং টেলিস্কোপ (এসএউআইটি)। আর বাকি ৫টি পেলোড হল— সোলার লো এনার্জি এক্স-রে স্পেক্ট্রোমিটার (এসওএলইএক্সএস), হাই এনার্জি এল১ অরবিটিং এক্স-রে স্পেক্ট্রোমিটার (এইচইএল১ওএস), আদিত্য সোলার উইন্ড পার্টিকল এক্সপেরিমেন্ট (এসপিইএক্স) এবং প্লাজ়মা অ্যানালাইজ়ার প্যাকেজ ফর আদিত্য (পিএপিএ)। এই পে-লোডগুলি ফটোস্ফিয়ার থেকে ক্রোমোস্ফিয়ার কিংবা সূর্যের একে বারে বাইরের দিকের স্তর কোরোনা, পর্যবেক্ষণ করবে। ল্যাগরেঞ্জ পয়েন্ট পৌঁছানোর পরে এই ভিইএলসি পেলোড প্রতিদিন ১,৪৪০টি ছবি তুলে পাঠাবে। তাই এই পেলোডটিকেই আদিত্য এল-১-এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পেলোড বলে মনে করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, চন্দ্রযান-৩-এ মোট চারটি পেলোড আছে।
আরও পড়ুন:

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-১২: সুন্দরবনের আর এক ব্যাঘ্রদেবতা বড় খাঁ গাজী

অমর শিল্পী তুমি, পর্ব-৫: সফল হোগি তেরি আরাধনা

 

আদিত্য-এল১ মিশনের লক্ষ্য কী?

আদিত্য-এল১ মিশনের লক্ষ্য হল সূর্যের জলবায়ু, সৌর শিখা, সৌর ঝড়-সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাবে ইসরো। সেই সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করা হবে সূর্য থেকে নির্গত তরঙ্গ, চৌম্বকীয় ক্ষেত্র।
পৃথিবী ও সূর্যের মাঝে সূর্যের অভিকর্ষ বল, পৃথিবীর অভিকর্ষ বল এবং মহাকাশযানের কেন্দ্রাভিগ বল কাজ করে। ‘ল্যাগরেঞ্জিয়ান পয়েন্ট ১’ বা ‘এল-১’ বিন্দু এমনই একটি অবস্থান যেখানে এই তিনটি বলই পরস্পর বিপরীত ভাবে কাজ করে। ফলে সেখানে ‘আদিত্য-এল১’ স্থির হয়ে থেকে তার কাজ চালিয়ে যেতে পারবে।
৭ ধরনের বৈজ্ঞানিক পেলোড থাকবে ‘আদিত্য-এল১’ মহাকাশযানে। যেগুলির সাহায্যে সূর্যকে নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হবে সূর্যের ফোটোস্ফিয়ার, ক্রোমোস্ফিয়ার, সূর্যের বাইরের স্তরের উপর। নজর রাখা হবে অভিযান সফল হলে বিজ্ঞানের আরও এক দরজা খুলে যাবে। ইসরোর কথায়, ‘ল্যাগরেঞ্জিয়ান পয়েন্ট ১’ বা ‘এল-১’ থেকে সূর্যের সম্বন্ধে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া সহজ হবে।

চন্দ্রযান-৩-এর চাঁদের মাটি ছুঁতে ৪০ দিন সময় লাগলেও, সূর্যের ‘ল্যাগরেঞ্জিয়ান পয়েন্ট ১’-এ পৌঁছতে অনেক বেশি সময় লাগবে। সূর্য এবং পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শূন্য ওই জায়গায় পৌঁছতে ‘আদিত্য-এল১’ এর সময় লাগবে ১২০ দিন অর্থাৎ চার মাস । ‘চন্দ্রযান-৩’-কে পৃথিবী থেকে চাঁদে পৌঁছতে ৩ লক্ষ ৮৪ হাজার ৪০০ কিলোমিটার পথে পাড়ি দিতে হয়েছে। সেখানে ‘ল্যাগরেঞ্জিয়ান পয়েন্ট ১’-এ পৌঁছতে ‘আদিত্য-এল১’কে পাড়ি দিতে হবে প্রায় ১৫ লক্ষ কিলোমিটার দূরে। তাই এত দিন সময় লাগবে। এই প্রথম ইসরো এত দূরে কোনও মহাকাশযানকে পাঠাবে।


Skip to content