চমকে পিছনে তাকালাম।
আমার দিকে কাঁচুমাচু মুখ করে তাকাল সুমন্ত। পরনে কাছা।
—সরি দাদা! আমার ভুল হয়ে গিয়েছে।
সুমন্তকে দেখে সাঁতার কাটতে গিয়ে দম হারিয়ে দম ফিরে পাবার মতো হারানো সাহস ফিরে এল।
—কি মুশকিল! এখন এ ক’টা দিন তোমায় এসব নিয়ে ভাবতে হবে না। এখন বাড়িতে অনেক কাজ। এ সব মিটেমাটে যাক তারপর নয় দেখা যাবে।
নিজের কানে নিজের কথাটাই কেমন যেন রাজনীতির মেজদার মতো শোনাল। সুমন্তকে দিয়ে আমার করণীয় কাজগুলো করিয়ে নেওয়া এটাতো এক প্রকারের শোষণ। সুমন্ত নিজে থেকে করছ নাকি নবীনবাবুকে করতে বলেছিলেন সেটা এখন আর জিজ্ঞেস করাটা ঠিক হবে না। আমি চাই সুমন্তই আগের মতো আমার কাজগুলোর প্রক্সি দিক। এই কটা দিন আমি আমার কাজের প্রক্সিটা দিয়েনি তারপর আমি আবার ইঁদুর থেকে বাঘ হব আর সুমন্ত আবার ইঁদুর।
ছোটবেলার সঙ্গে গল্পগুলো আমাদের মনে আছে কিন্তু আমাদের থেকে যারা ছোট তারা কি এ সব গল্প পড়েছে। তাদের সুবিধের জন্য গল্পটা দু’ লাইন বলে দেওয়াই ভালো।
এক মুনি বনের মধ্যে আশ্রমে বাস করতেন। তার একটি ইঁদুর ছিল। কিন্তু কিছুদিন পর দেখা গেল ইঁদুরটি বিড়ালকে ভয় পায়। তাই মুনি মন্ত্রবলে ইঁদুরটিকে বিড়ালে রূপান্তর করলেন। কিছুদিন পর আবার বিপত্তি। মানে বিড়ালটা কুকুর দেখলে ভয় পায়। তখন মুনি বিড়ালটিকে মন্ত্র বলে কুকুরে রূপান্তর করলেন। যাঃ বাবা! কিছুদিন পর আবার সমস্যা। মানে কুকুরটি বাঘ দেখলে ভয় পায়। অবশেষে মুনি কুকুরটিকে মন্ত্র দ্বারা বাঘ বানিয়ে দিলেন।
আমার দিকে কাঁচুমাচু মুখ করে তাকাল সুমন্ত। পরনে কাছা।
—সরি দাদা! আমার ভুল হয়ে গিয়েছে।
সুমন্তকে দেখে সাঁতার কাটতে গিয়ে দম হারিয়ে দম ফিরে পাবার মতো হারানো সাহস ফিরে এল।
—কি মুশকিল! এখন এ ক’টা দিন তোমায় এসব নিয়ে ভাবতে হবে না। এখন বাড়িতে অনেক কাজ। এ সব মিটেমাটে যাক তারপর নয় দেখা যাবে।
নিজের কানে নিজের কথাটাই কেমন যেন রাজনীতির মেজদার মতো শোনাল। সুমন্তকে দিয়ে আমার করণীয় কাজগুলো করিয়ে নেওয়া এটাতো এক প্রকারের শোষণ। সুমন্ত নিজে থেকে করছ নাকি নবীনবাবুকে করতে বলেছিলেন সেটা এখন আর জিজ্ঞেস করাটা ঠিক হবে না। আমি চাই সুমন্তই আগের মতো আমার কাজগুলোর প্রক্সি দিক। এই কটা দিন আমি আমার কাজের প্রক্সিটা দিয়েনি তারপর আমি আবার ইঁদুর থেকে বাঘ হব আর সুমন্ত আবার ইঁদুর।
ছোটবেলার সঙ্গে গল্পগুলো আমাদের মনে আছে কিন্তু আমাদের থেকে যারা ছোট তারা কি এ সব গল্প পড়েছে। তাদের সুবিধের জন্য গল্পটা দু’ লাইন বলে দেওয়াই ভালো।
এক মুনি বনের মধ্যে আশ্রমে বাস করতেন। তার একটি ইঁদুর ছিল। কিন্তু কিছুদিন পর দেখা গেল ইঁদুরটি বিড়ালকে ভয় পায়। তাই মুনি মন্ত্রবলে ইঁদুরটিকে বিড়ালে রূপান্তর করলেন। কিছুদিন পর আবার বিপত্তি। মানে বিড়ালটা কুকুর দেখলে ভয় পায়। তখন মুনি বিড়ালটিকে মন্ত্র বলে কুকুরে রূপান্তর করলেন। যাঃ বাবা! কিছুদিন পর আবার সমস্যা। মানে কুকুরটি বাঘ দেখলে ভয় পায়। অবশেষে মুনি কুকুরটিকে মন্ত্র দ্বারা বাঘ বানিয়ে দিলেন।
অতঃপর একদিন বাঘটি মুনিকেই খেতে উদ্যত হল। উপায়ান্তর না দেখে মুনি তখন “পুনঃ মুষিক ভবঃ” অর্থাৎ আবার তুমি ইঁদুর হও বলে বাঘটিকে পুনরায় ইঁদুরে পরিণত করলেন।
রাজনীতির লোকজন তো এমনই করেন। ইঁদুরকে বিড়াল, বিড়ালকে কুকুর, কুকুরকে বাঘ আবার বাঘকে ইঁদুর। অবশ্য কখনও-সখনও বাঘেরা মুনির ওপরেই থাবা চালিয়ে দিয়েছে। বাঘ যখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় তখন তো সে এমনটা করবেই। সত্যি মিথ্যা জানিনা তবে এদেশে একটা চালু অভিমত হল রাজনৈতিক কারণে জার্নাল সিং ভিন্দ্রানওয়ালের ব্যবহার করা হয়েছিল। পরে তিনিই বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। একইভাবে একপক্ষ অভিযোগ করেন যে মার্কিন সরকার ওসামা বিন লাদেনকে ব্যবহার করতো পরে বিন লাদেন সমস্ত নিয়ন্ত্রণ অস্বীকার করে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন।
সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে সুমন্তকে বললাম—
—অশৌচের কটা দিন তুমি রাতে বেরিও না। আমার অসুবিধা হবে না আমি করে নেব।
—আপনি ভাববেন না আমি তো বাড়ির বাইরে যাচ্ছি না। বাড়ির মধ্যেই দরজাটা বন্ধ করে দেব বা এসে পাম্পের সুইচ অন করে দেবো। জামাইবাবু আমায় খুব ভালোবাসতেন।
আবার এই প্রসঙ্গ করতেই পিছন দিকটা মানে কাঁধের কাছটায় কেমন ঠান্ডা ভাব। একেই বোধহয় ভালো বাংলায় আতঙ্কের শীতলতা বলে। আমি হুঁ বলে আমাদের ফ্ল্যাটে ঢুকে গেলাম।
এতদিন এমন কিছু মনে হয়নি। একেবারে সেই প্রথম দিকে যেদিন রাস্তা হারিয়ে ফেললাম সেদিন একটু ভয় ভয় পেয়েছিলাম। কিন্তু তারপর থেকে এতদিন পর্যন্ত আমি আমার আশেপাশে অশরীরী উপস্থিতিকে উপভোগ করেছি বললে খুব একটা ভুল হয় না। ভাবিনি আমার সঙ্গে যা ঘটছে তারপর এরকম কখনও কিছু হতে পারে।
রাজনীতির লোকজন তো এমনই করেন। ইঁদুরকে বিড়াল, বিড়ালকে কুকুর, কুকুরকে বাঘ আবার বাঘকে ইঁদুর। অবশ্য কখনও-সখনও বাঘেরা মুনির ওপরেই থাবা চালিয়ে দিয়েছে। বাঘ যখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় তখন তো সে এমনটা করবেই। সত্যি মিথ্যা জানিনা তবে এদেশে একটা চালু অভিমত হল রাজনৈতিক কারণে জার্নাল সিং ভিন্দ্রানওয়ালের ব্যবহার করা হয়েছিল। পরে তিনিই বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। একইভাবে একপক্ষ অভিযোগ করেন যে মার্কিন সরকার ওসামা বিন লাদেনকে ব্যবহার করতো পরে বিন লাদেন সমস্ত নিয়ন্ত্রণ অস্বীকার করে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন।
সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে সুমন্তকে বললাম—
—অশৌচের কটা দিন তুমি রাতে বেরিও না। আমার অসুবিধা হবে না আমি করে নেব।
—আপনি ভাববেন না আমি তো বাড়ির বাইরে যাচ্ছি না। বাড়ির মধ্যেই দরজাটা বন্ধ করে দেব বা এসে পাম্পের সুইচ অন করে দেবো। জামাইবাবু আমায় খুব ভালোবাসতেন।
আবার এই প্রসঙ্গ করতেই পিছন দিকটা মানে কাঁধের কাছটায় কেমন ঠান্ডা ভাব। একেই বোধহয় ভালো বাংলায় আতঙ্কের শীতলতা বলে। আমি হুঁ বলে আমাদের ফ্ল্যাটে ঢুকে গেলাম।
এতদিন এমন কিছু মনে হয়নি। একেবারে সেই প্রথম দিকে যেদিন রাস্তা হারিয়ে ফেললাম সেদিন একটু ভয় ভয় পেয়েছিলাম। কিন্তু তারপর থেকে এতদিন পর্যন্ত আমি আমার আশেপাশে অশরীরী উপস্থিতিকে উপভোগ করেছি বললে খুব একটা ভুল হয় না। ভাবিনি আমার সঙ্গে যা ঘটছে তারপর এরকম কখনও কিছু হতে পারে।
আরও পড়ুন:
গা ছমছমে ভৌতিক উপন্যাস: মিস মোহিনীর মায়া, পর্ব-১৭: আচমকা আমার কাঁধে একটা ঠান্ডা হাত
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৩৫: টনিক খাওয়া শরীরের পক্ষে ভালো?
আজ এত বছর বাদে এতসব কিছু ঘটে যাবার পর আমার কৈশোরের আফিফা এ ভাবে আমার কাছে ফিরে আসবে সেটা আমি ভাবতেও পারিনি। কৈশোরের ভালোলাগা খুব পবিত্র। তার মধ্যে কামনার মালিন্য থাকে না। একে অপরের সঙ্গে এক হয়ে থাকার একটা বেলাগাম পাগলামি একটা আবেগ কাজ করে। অন্তত আফিফার ক্ষেত্রে আমার তেমনই হতো। একটা অস্থিরতা একটা বাঁধন না মানা অসম্ভব ছটফটানি যেটা ওকে চোখের সামনে দেখার পর অদ্ভুতভাবে শান্ত হয়ে যেত।
যত্ন করে রাখা আফ্রিকার চিঠিগুলো আমি লুকিয়ে বারবার পড়তাম বহুবার দেখা-চেনা-জানা শব্দগুলো বারবার পড়া কথাগুলো মনকে একটা অদ্ভুত শান্তি দিতো। বুনি বলেছিল তাই আফিফার চিঠিগুলো আমাদের ছাদে গিয়ে একটা লোহার বালতির মধ্যে ফেলে জ্বালিয়ে দিয়েছিলাম। বর্ষাকাল ছিল সারারাত বৃষ্টিতে আফিফার যত্নে লেখা শব্দগুলো ছাই হয়ে জলে ধুয়ে গিয়েছিল। আমার চিঠিগুলো আফিকা বুনিকে ফেরত দিয়েছিল। বুনি, একইভাবে চিঠিগুলো জ্বালিয়ে দিয়েছিল তবে বৃষ্টিতে ফেলেনি। ওদের বাড়ির পেছনের গোলাপ বাগানে সেই ছাই ছড়িয়ে দিয়েছিল। ওই গোলাপ বাগানে বুনির পাহারায় আমি আর আফিফা অনেকক্ষণ গল্প করতাম। আফিফাই নাকি বুনিকে বলেছিল চিঠিগুলো ওভাবে গোলাপ বাগানের ছড়িয়ে দিতে।
এ ভাবেই আমরা দুজনে আমাদের সম্পর্ককে অতীতের চাদরে যত্ন করে ঢেকে দিয়েছিলাম।
আফিফার যে এক দিদি ছিল সেটা কখন শুনিনি। বুনিও জানত না। আফিকা কখনও বলেনি। কোনও এক আত্মীয়ের বিয়ে উপলক্ষে বুনি এতদিন পরে আসানসোলে বাপের বাড়ি গেল। হয়ত ওর আসল উদ্দেশ্য ছিল আফিফার ব্যাপারে সবটুকু জানার। সেখানেই শবনমের সঙ্গে পরিচয়। সে বুনি বা আফিফার থেকে বছর চারেকের বড়। শবনমের কাছে আফিফার অনেক চিঠি এসেছিল দুবাই থেকে। আসলে দাম্পত্যের দ্বন্দ্বের কথা সঙ্গতকারণেই বুনিকে জানাতে চায়নি হয়তো। কিন্তু মানুষের একটা জায়গা লাগে। সবকথা বলে হালকা হবার কথা।
যত্ন করে রাখা আফ্রিকার চিঠিগুলো আমি লুকিয়ে বারবার পড়তাম বহুবার দেখা-চেনা-জানা শব্দগুলো বারবার পড়া কথাগুলো মনকে একটা অদ্ভুত শান্তি দিতো। বুনি বলেছিল তাই আফিফার চিঠিগুলো আমাদের ছাদে গিয়ে একটা লোহার বালতির মধ্যে ফেলে জ্বালিয়ে দিয়েছিলাম। বর্ষাকাল ছিল সারারাত বৃষ্টিতে আফিফার যত্নে লেখা শব্দগুলো ছাই হয়ে জলে ধুয়ে গিয়েছিল। আমার চিঠিগুলো আফিকা বুনিকে ফেরত দিয়েছিল। বুনি, একইভাবে চিঠিগুলো জ্বালিয়ে দিয়েছিল তবে বৃষ্টিতে ফেলেনি। ওদের বাড়ির পেছনের গোলাপ বাগানে সেই ছাই ছড়িয়ে দিয়েছিল। ওই গোলাপ বাগানে বুনির পাহারায় আমি আর আফিফা অনেকক্ষণ গল্প করতাম। আফিফাই নাকি বুনিকে বলেছিল চিঠিগুলো ওভাবে গোলাপ বাগানের ছড়িয়ে দিতে।
এ ভাবেই আমরা দুজনে আমাদের সম্পর্ককে অতীতের চাদরে যত্ন করে ঢেকে দিয়েছিলাম।
আফিফার যে এক দিদি ছিল সেটা কখন শুনিনি। বুনিও জানত না। আফিকা কখনও বলেনি। কোনও এক আত্মীয়ের বিয়ে উপলক্ষে বুনি এতদিন পরে আসানসোলে বাপের বাড়ি গেল। হয়ত ওর আসল উদ্দেশ্য ছিল আফিফার ব্যাপারে সবটুকু জানার। সেখানেই শবনমের সঙ্গে পরিচয়। সে বুনি বা আফিফার থেকে বছর চারেকের বড়। শবনমের কাছে আফিফার অনেক চিঠি এসেছিল দুবাই থেকে। আসলে দাম্পত্যের দ্বন্দ্বের কথা সঙ্গতকারণেই বুনিকে জানাতে চায়নি হয়তো। কিন্তু মানুষের একটা জায়গা লাগে। সবকথা বলে হালকা হবার কথা।
আরও পড়ুন:
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৯: ঠাকুরের ঘরণী সারদার গার্হস্থ্য জীবন
কলকাতার পথ-হেঁশেল: অফিসপাড়ার ক্যান্টিন ডেকার্স লেনে কোলাহল
এতদিন পরে জানা গেল আফিকা একমাত্র শবনমকেই আমার সঙ্গে সম্পর্কের সবকথা বলেছিল। এও বলেছিল এই সম্পর্কের কোনও সুখকর পরিণতি হওয়া সম্ভব নয়। শবনমের পরামর্শেই আফিফা আমাকে তার দুবাইয়ের বৈবাহিক সম্বন্ধে সবকথা জানায়।
শবনম আফিফার আর সব চিঠি বুনিকে দেখিয়েছে। আফিফার জীবনে দুবাই পর্ব আমি জানলাম বুনির কাছে। বহুদিন পর বুনি আসানসোল আসবে জেনে নবীন মুখার্জির শ্রাদ্ধ মিটতে মাকে নিয়ে আমি ছোট পিসির আসানসোলের বাড়িতে গিয়েছিলাম।
আফিফার স্বামীর নাম ছিল ফিরোজ রহমান। বিয়ের এক মাসের মধ্যে পাসপোর্ট ভিসা করিয়ে ওকে নিয়ে দুবাই চলে গেল ফিরোজ। দুবাই-এ বুর দুবাই অঞ্চলে ভারতীয়দের বাস হিন্দু মুসলিম শিখ বৌদ্ধ সবাই মিলেমিশে থাকে। জায়গাটার নাম আল ফাহিদি স্ট্রিট মিনা বাজারের কাছে। একটু ঘিঞ্জি। দোকানপাট অনেক। একেবারে ছোট্ট দু’ কামরার ঘর। একটা ঘরে ফিরোজের গোডাউন। অন্যটায় বসবাস। প্রথম বিয়ের পর আসানসোল থেকে হুশ করে একেবারে দুবাই।
ফিরোজের একটা চালু মিনি মার্ট ছিল মিনাবাজারে। আজ যেমন ছোট ছোট ডিপার্টমেন্টাল স্টোর আমাদের দেশের ছোটখাট শহরেও ছড়িয়ে পড়েছে। এমন সাইজ দোকান মালিক একজন লোক রেখেই ব্যবসা চালাতে পারবে। সিসি ক্যামেরা দিয়ে গোটা দোকানটার সবখানে নজরদারি রয়েছে। ফলে দোকান মালিক খেয়াল রাখতে পারছে। তখনই দুবাইতে এমন মিনিমার্ট ছিল। ঝাঁ চকচকে বিশাল বিশাল দোকানের ছড়াছড়ি দুবাইতে। কিন্তু নিম্ন ও মধ্যবিত্ত খেটে খাওয়া মানুষ সেসব জায়গায় এড়িয়ে চলত।
শবনম আফিফার আর সব চিঠি বুনিকে দেখিয়েছে। আফিফার জীবনে দুবাই পর্ব আমি জানলাম বুনির কাছে। বহুদিন পর বুনি আসানসোল আসবে জেনে নবীন মুখার্জির শ্রাদ্ধ মিটতে মাকে নিয়ে আমি ছোট পিসির আসানসোলের বাড়িতে গিয়েছিলাম।
আফিফার স্বামীর নাম ছিল ফিরোজ রহমান। বিয়ের এক মাসের মধ্যে পাসপোর্ট ভিসা করিয়ে ওকে নিয়ে দুবাই চলে গেল ফিরোজ। দুবাই-এ বুর দুবাই অঞ্চলে ভারতীয়দের বাস হিন্দু মুসলিম শিখ বৌদ্ধ সবাই মিলেমিশে থাকে। জায়গাটার নাম আল ফাহিদি স্ট্রিট মিনা বাজারের কাছে। একটু ঘিঞ্জি। দোকানপাট অনেক। একেবারে ছোট্ট দু’ কামরার ঘর। একটা ঘরে ফিরোজের গোডাউন। অন্যটায় বসবাস। প্রথম বিয়ের পর আসানসোল থেকে হুশ করে একেবারে দুবাই।
ফিরোজের একটা চালু মিনি মার্ট ছিল মিনাবাজারে। আজ যেমন ছোট ছোট ডিপার্টমেন্টাল স্টোর আমাদের দেশের ছোটখাট শহরেও ছড়িয়ে পড়েছে। এমন সাইজ দোকান মালিক একজন লোক রেখেই ব্যবসা চালাতে পারবে। সিসি ক্যামেরা দিয়ে গোটা দোকানটার সবখানে নজরদারি রয়েছে। ফলে দোকান মালিক খেয়াল রাখতে পারছে। তখনই দুবাইতে এমন মিনিমার্ট ছিল। ঝাঁ চকচকে বিশাল বিশাল দোকানের ছড়াছড়ি দুবাইতে। কিন্তু নিম্ন ও মধ্যবিত্ত খেটে খাওয়া মানুষ সেসব জায়গায় এড়িয়ে চলত।
আরও পড়ুন:
প্রথম আলো, পর্ব-৩: পৃথিবীর প্রথম কবি কে, জানেন?
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৪৬: বহু জনমের মায়া, ধরিল যে কায়া, ওগো ‘শিল্পী’ সে তো শুধু তোমারই ছায়া
বুনিদের বাড়ির পিছনে গোলাপ বাগানটায় দাঁড়িয়ে কথা বলছিলাম। ছোটপিসি বুনিকে ঘরে ডাকল। আমি একা একা বাগানটা দেখছিলাম। আগের মতো পরিষ্কার নেই। অনেক জায়গায় জঙ্গল হয়ে গেছে। গোলাপ গাছ আছে। কিন্তু তখনকার মতো ফুল ফুটে নেই। আফিফার সঙ্গে যখন এখানে দাঁড়িয়ে কথা বলতাম তখন গোটা বাগানটা যেন ফুলে ভরে থাকত। এই বাগানে ছড়িয়ে রয়েছে আমাদের সম্পর্কের সমাধি। আফিফা এল আবার হারিয়েও গেল।
আফিফার ভয়ানক পরিণতির কথা তো আমি এতদিন বাদে শুনলাম। কিন্তু আমি ক্রমাগত সেই চামড়া পোড়া মাংস পোড়া গন্ধটা পেতাম কেন? আসিফা আত্মহত্যা করেছে নাকি সেটা খুন? আচমকা পায়ের কিছু একটা ফুটলো। বুনি চটি পরতে বলেছিল কিন্তু ছোটবেলার মতোই খালি পায়ে চলে এসেছিলাম ঘাসের ওপর। নিচু হয়ে চমকে উঠলাম। কালচে হয়ে পুড়ে যাওয়া একটা রূপোর আংটি।
আমি ঘাগরবুড়ির মেলা থেকে আফিফাকে কিনে দিয়েছিলাম। আসানসোলে বহুদিনের পুরনো মেলা। প্রতিবছর একটা দিন পয়লা মাঘ ঘাগর বুড়ির চন্ডীমন্ডপ ঘিরে মেলা বসে। কিন্তু আংটিটা এখানে এল কী করে? এটা পুড়েই বা গেছে কেন? তার মানে এটা কি আফিফা বিয়ের পরেও ব্যবহার করত?
নিচু হয়ে আংটিটা হাতে নিতে সরাসরি যে শিহরণ বয়ে গেল চোখটা বুজিয়ে নিতে একটা অদ্ভুত দৃশ্য দেখলাম ঘন অন্ধকারের মধ্যে একটি অচেনা মেয়ের মুখ মুখে আঘাতের রক্তাক্ত চিহ্ন!—চলবে।
আফিফার ভয়ানক পরিণতির কথা তো আমি এতদিন বাদে শুনলাম। কিন্তু আমি ক্রমাগত সেই চামড়া পোড়া মাংস পোড়া গন্ধটা পেতাম কেন? আসিফা আত্মহত্যা করেছে নাকি সেটা খুন? আচমকা পায়ের কিছু একটা ফুটলো। বুনি চটি পরতে বলেছিল কিন্তু ছোটবেলার মতোই খালি পায়ে চলে এসেছিলাম ঘাসের ওপর। নিচু হয়ে চমকে উঠলাম। কালচে হয়ে পুড়ে যাওয়া একটা রূপোর আংটি।
আমি ঘাগরবুড়ির মেলা থেকে আফিফাকে কিনে দিয়েছিলাম। আসানসোলে বহুদিনের পুরনো মেলা। প্রতিবছর একটা দিন পয়লা মাঘ ঘাগর বুড়ির চন্ডীমন্ডপ ঘিরে মেলা বসে। কিন্তু আংটিটা এখানে এল কী করে? এটা পুড়েই বা গেছে কেন? তার মানে এটা কি আফিফা বিয়ের পরেও ব্যবহার করত?
নিচু হয়ে আংটিটা হাতে নিতে সরাসরি যে শিহরণ বয়ে গেল চোখটা বুজিয়ে নিতে একটা অদ্ভুত দৃশ্য দেখলাম ঘন অন্ধকারের মধ্যে একটি অচেনা মেয়ের মুখ মুখে আঘাতের রক্তাক্ত চিহ্ন!—চলবে।
* বসুন্ধরা এবং… দ্বিতীয় খণ্ড (Basundhara Ebong-Novel Part-2) : জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’।