শুক্রবার ২৯ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।

ভারত এক বৈচিত্র্যময় দেশ। উত্তরে হিমালয় পর্বত, দক্ষিণে ভারত মহাসাগর, পূর্বে গাঙ্গেয় সমভূমি ও পশ্চিমে থর মরুভূমি। এ দেশের ভৌগোলিক ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে ভিন্নমাত্রা প্রদান করেছে। কিন্তু সময় যত পরিবর্তিত হচ্ছে, ভারতের জলবায়ুও হচ্ছে পরিবর্তিত। স্বল্প বৃষ্টি বা অনাবৃষ্টি, ব্যাপক বৃক্ষচ্ছেদন ও বনভূমির ধ্বংস ইত্যাদির ফলে সুজলা সুফলা ভারতের ভূমিরূপের পরিবর্তন ঘটছে। পশ্চিমের থর মরুভূমি শিকার লোভী অজগরের ন্যারয় লোভাতুর চোখে ভারতের পূর্বমুখে ধীরে ধীরে অগ্রসর হচ্ছে।
ভূমির উপরিস্থলে অবস্থিত নরম মৃত্তিকা ক্রমে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে প্রথমে ধুলো ও পরে বালিতে পরিণত হয় ও ক্রমে সেই স্থান মরুভূমিতে রূপান্তরিত হয়। ২০১৬ সালে ভারতের মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র, ইসরো সারা ভারতব্যাপী মরুকরণ ও ভূমিক্ষয়ের যে ম্যাপ বানায় তাতে দেখা গেছে গুজরাত, রাজস্থান ও দিল্লির ৫০ শতাংশ ভূমি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে ও নষ্ট হয়ে গিয়েছে। যা পরবর্তীকালে ওই অঞ্চলে মরুকরণকে দ্রুত লয়ে এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হয়েছে। ভারতের মোট ভূমির পরিমাণ প্রায় ৩২৫.৭০ মিলিয়ন হেক্টর, এরই মধ্যে প্রায় ৯৬.৪ মিলিয়ন হেক্টর ভূমি ক্ষয়প্রাপ্ত। অর্থাৎ মোট ভূমিরূপের প্রায় ২৯.৩ শতাংশ আজ ক্ষয়িষ্ণু। ক্রমে এর পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা বিজ্ঞানী ও পরিবেশবিদদের কপালে ভাঁজ ফেলছে।
আরও পড়ুন:

ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে তারাপীঠ পুণ্যভূমির পবিত্র নদী দ্বারকা

ইতিহাস কথা কও, কোচবিহারের রাজকাহিনি, পর্ব-৭: প্রকৃত শাসক মহারাজ, একটি রাজ্যের আলোয় উত্তরণ

এইসময় ভারত সরকারের অন্যতম লক্ষ্য হল ২০৩০ সালের মধ্যে কমপক্ষে ২৬ মিলিয়ন হেক্টর ক্ষয়প্রাপ্ত ভূমিকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা ও সবুজায়ন করা। এখন ভারতের সর্বাপেক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল আরাবল্লি পাহাড়ি অঞ্চল। তাই একে সবুজায়ন করে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা, ভারত সরকারের অন্যতম মূল লক্ষ্য। ২০১৯ সালে সেপ্টেম্বর মাসে ভারতের রাজধানীতে অনুষ্ঠিত হয় ‘ইউনাইটেড নেশনস টু কমব্যাট ভের্জাটিফিকেশন’ বা সংক্ষেপে ‘ইউএনসিসিডি’। এর পোশাকি নাম হল ‘কপ ১৪’। এই আলোচনাচক্রে দেশ ও বিদেশের প্রায় ৬ হাজার জন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন।
আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৪৬: বহু জনমের মায়া, ধরিল যে কায়া, ওগো ‘শিল্পী’ সে তো শুধু তোমারই ছায়া

পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-২৬: অবশেষে চার হাত এক হল, পঞ্চম-আশা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে শুরু করলেন দ্বিতীয় ইনিংস

এই আলোচনায় ভারত মরুকরণ বন্ধে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেবে বলে বিশ্বকে আশ্বস্ত করে। ফলস্বরূপ হরিয়ানা ও দিল্লি সীমান্ত, বা আরও নির্দিষ্টভাবে হরিয়ানার পানিপথ থেকে গুজরাতের পোরবন্দর পর্যন্ত প্রায় ১৪০০ কিমি অঞ্চলে তৈরি হবে ‘গ্রিনওয়াল’ বা ‘সবুজ দেওয়াল’। এর প্রস্থ হবে পাঁচ কিলোমিটার, যা বিশ্বের অন্যতম দীর্ঘ ও চওড়া গ্রিন ওয়াল এর মধ্যে অন্যত্তম। পৃথিবীর দিকে তাকালে দেখা যায় এই রকম গ্রিন ওয়াল আছে আফ্রিকা এবং উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মাঝেও। আফ্রিকাতে এটি ‘গ্রেট গ্রিন ওয়াল’ ও কোরিয়াতে এটি ‘পিস ফরেস্ট ইনিশিয়েটিভ’ নামে জনপ্রিয়। এগুলি ওই অঞ্চলগুলিতে ভূমিক্ষয়রোধ ও সবুজায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে।
আরও পড়ুন:

অমর শিল্পী তুমি, পর্ব-8: চলতি কা নাম কিশোর

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৩৪: গলায় মাছের কাঁটা ফুটলে ওষুধ খেলে গলে যায়?

ভারতের গ্রিন ওয়াল তৈরির মূল লক্ষ্য পশ্চিমাঞ্চলের ভূমিক্ষয় রোধ করা ও থর মরুভূমির পূর্বমুখী প্রসারকে বন্ধ করা এবং আরাবল্লি পর্বতের সবুজায়ন করা ইত্যাদি। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এই বিরাট প্রকল্প রূপায়ণে প্রাথমিক সম্মতি দিলেও চূড়ান্ত সম্মতির অপেক্ষায় রয়েছে। এই সবুজ দেয়াল তৈরি হলে মরুকরণ হয়তো বন্ধ হতে পারে কিন্তু বৃক্ষচ্ছেদন বন্ধ করা ও বনসৃজন না করলে শস্য শ্যামলা আমাদের এই জন্মভূমি একদিন রিক্ত মরুভূমিতে রূপান্তরিত হবে।
* ড. উৎপল অধিকারী, সহ-শিক্ষক, আঝাপুর হাই স্কুল, আঝাপুর, জামালপুর, পূর্ব বর্ধমান।

Skip to content