
পরমহংসদেব। ছবি: সংগৃহীত।
শ্রীরামকৃষ্ণদেবকে একজন ভক্ত জিজ্ঞাসা করছেন, ‘কী ভাবে ঈশ্বরকে পাওয়া যায়?’ উত্তরে পরমহংসদেব বললেন, “মনটা পড়েছে ছড়িয়ে, কত গেছে ঢাকা, কত গেছে দিল্লি, কত গেছে কুচবিহার। সেই মনকে কুড়িয়ে এক জায়গায় আনতে হবে তো। সব মন কুড়িয়ে না আনলে কী হবে! শ্রীভাগবতে আছে শুকদেবের কথা। শুকদেব পথে যাচ্ছে যেন সঙ্গী ছাড়া! কোনও দিকে দৃষ্টি নাই। একটাই লক্ষ্য, কেবল ভগবানের দিকে দৃষ্টি।”
মন সর্বদাই স্বাভাবিক ভাবেই দুর্বল ও নিম্ন মুখী। সব সময়ই বিষয়কে উপজীব্য হিসেবেই গণ্য করে। মন মানুষের নিয়ন্ত্রণে নেই। মানুষ মন দ্বারা পরিচালিত হয়। বিষয়, মান, যশ ভোগ করতে করতে ওটাই স্বাভাবিক হিসেবেই গ্রহণ করে।
তার জন্য ধীরে ধীরে ছলনা, কুটিলতা, মিথ্যাচার আশ্রয় নিতেও পিছুপা হয় না। যে মন ভগবান লাভের জন্য সাধনায় লিপ্ত রাখার জন্য, যে মন শুদ্ধ আচরণের দ্বারা নির্মল পবিত্র করার জন্য, সেই মনকে কুটিলতা, হিংসা, দ্বারা পূর্ণ করে রাখলে ঈশ্বরের জন্য জায়গার অভাব পড়বে তো!
তার জন্য ধীরে ধীরে ছলনা, কুটিলতা, মিথ্যাচার আশ্রয় নিতেও পিছুপা হয় না। যে মন ভগবান লাভের জন্য সাধনায় লিপ্ত রাখার জন্য, যে মন শুদ্ধ আচরণের দ্বারা নির্মল পবিত্র করার জন্য, সেই মনকে কুটিলতা, হিংসা, দ্বারা পূর্ণ করে রাখলে ঈশ্বরের জন্য জায়গার অভাব পড়বে তো!
আরও পড়ুন:

অনন্ত এক পথ পরিক্রমা, পর্ব-২৮: মানুষের মন থেকে বিষয়-বাসনা নিবৃত্তি হলে ঈশ্বর-কৃপায় হৃদয় পবিত্র হয়

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-১৯: কুরুপাণ্ডবদের অস্ত্রগুরু আচার্য দ্রোণ এবং তাঁর বিখ্যাত শিষ্যদ্বয়, কে মহান? গুরু না শিষ্য?
প্রকৃত সাধক কখনও মনকে ভগবান ছাড়া অন্য কিছুর জন্য খরচ করে না। হিসাব করে চলে। যদি কাজ করে তো ভগবানের কাজেই মনকে বিলীন রাখে। যেমন চাতক পাখি কেবল ফটিক জল চায়, পিপাসায় প্রাণ ওষ্ঠাগত। গঙ্গা, যমুনা, সাত সমুদ্র জলে পূর্ণ। সে কিন্তু পৃথিবীর জল খাবে না। উঁচু হয়ে আকাশের জলের পানে চেয়ে আছে।
শ্রীরামকৃষ্ণ বলছেন, “মনই সব জানবে। জ্ঞান বল আর অজ্ঞান বল, সবই মনের অবস্থা। মানুষ মনেই বদ্ধ, মনেই মুক্ত। মনেই সাধু, মনেতেই অসাধু। মনেই পাপী, মনেই পুণ্যবান।” সংসারী জীব মনেতে সর্বদা ভগবানকে স্মরণ মনন করতে পারলে তাদের আর অন্য কোন সাধনের দরকার হয় না।
শ্রীরামকৃষ্ণ বলছেন, “মনই সব জানবে। জ্ঞান বল আর অজ্ঞান বল, সবই মনের অবস্থা। মানুষ মনেই বদ্ধ, মনেই মুক্ত। মনেই সাধু, মনেতেই অসাধু। মনেই পাপী, মনেই পুণ্যবান।” সংসারী জীব মনেতে সর্বদা ভগবানকে স্মরণ মনন করতে পারলে তাদের আর অন্য কোন সাধনের দরকার হয় না।
আরও পড়ুন:

পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-২০: পঞ্চমের সুর আর কিশোর-আশার অনবদ্য উপস্থাপনা, ‘এক ম্যায় অউর এক তু’ গানটি আজও সুপারহিট

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-২৮: সাইনাস নাকি কখনওই সারে না?
ভগবান সাক্ষাৎকার করতে কে না চায়! প্রত্যেকে চায় সে আনন্দ লাভ করতে। কিন্তু, তাকে কি দর্শন করা যায়? শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছেন, “তাঁকে বিষয় বুদ্ধির অগোচর, কামিনী কাঞ্চনে তাঁকে পাওয়া যায় না। অরুণোদয় হলে তারপর সূর্য দেখা দেবেন। যার প্রাণ ব্যাকুল হয়েছে, তার ঈশ্বর দর্শন হবেই হবে। যার ভিতর অনুরাগের ঐশ্বর্য প্রকাশ হচ্ছে, তার ঈশ্বরলাভের আর বড় বেশি দেরি নাই। অনুরাগের ঐশ্বর্য, বিবেক, বৈরাগ্য, জীবে দয়া, সাধু সঙ্গ, ঈশ্বরের নাম গুণগান, সত্য কথা, এইসব।”
জ্ঞান বৈরাগ্য, ভক্তি, কর্ম, যোগ সাধনের দ্বারাও তাঁকে লাভ করা যায়। যার যা ভালো ও সহজ মনে হয়। যে কোনও পথ আশ্রয় করে ঈশ্বরের কাছে পৌঁছনো যেতে পারে। যে যেভাবেই ডাক দেন না কেন, আন্তরিক হলেই তিনি শুনবেন। জ্ঞান বৈরাগ্য দ্বারা পরিশিলিত ভক্তি যেমন সঠিক পথে পরিচালিত হয়, তেমন ভক্তির দ্বারা সিক্ত জ্ঞানও শুষ্ক না হয়ে, মাধুর্য্যতা লাভ করে।
জ্ঞান বৈরাগ্য, ভক্তি, কর্ম, যোগ সাধনের দ্বারাও তাঁকে লাভ করা যায়। যার যা ভালো ও সহজ মনে হয়। যে কোনও পথ আশ্রয় করে ঈশ্বরের কাছে পৌঁছনো যেতে পারে। যে যেভাবেই ডাক দেন না কেন, আন্তরিক হলেই তিনি শুনবেন। জ্ঞান বৈরাগ্য দ্বারা পরিশিলিত ভক্তি যেমন সঠিক পথে পরিচালিত হয়, তেমন ভক্তির দ্বারা সিক্ত জ্ঞানও শুষ্ক না হয়ে, মাধুর্য্যতা লাভ করে।
আরও পড়ুন:

দশভুজা: আমি আর কখনওই ফিরে আসার প্রত্যাশা করি না…

অজানার সন্ধানে: এক লিটার পেট্রলে গাড়ি ছুটবে ১০০ কিমি! যুগান্তকারী যন্ত্র আবিষ্কার করেও রহস্যজনক ভাবে উধাও হন বিজ্ঞানী ওগলে
যে অরণ্যে বাঘ প্রবেশ করে সেখান থেকে অন্যান্য জানোয়ার ভয়ে পালিয়ে যায়। তেমনি যার অন্তরে ঈশ্বরের অনুরাগ এসেছে সেই হৃদয়ে কাম বাসনা এসব থাকতে পারে না। পালিয়ে যায়। এ সব দরকার। তার প্রতি অনুরাগ হলে তাঁকে পাওয়া যায়। তার জন্য খুব ব্যাকুলতা চাই। ব্যাকুলতা হলেই সমস্ত মনটা তাতেই থাকে। ঈশ্বরের লাভের জন্য সাধকের মনে কখনও অন্যের প্রতি হিংসার উদয় হয় না। শঠতার আশ্রয় নিয়ে অন্যদের হীন প্রতিপন্ন করতে হয় না। বীর্যহীন, কাপুরুষ, দুর্বলেরা নিজেদের বড় প্রতিপন্ন করার জন্য অন্য দের হীন মনে করে। যাদের মনে লোভ, লালসা পূর্ণ তারা ঈশ্বরের দিকে এগোতে পারে না। বিষয় আসক্তি যতই কমবে ঈশ্বরের প্রতি মতিগতি ততই বাড়বে। সাধনের ফল ফলিয়ে মানুষ নিরভিমানী হয়।
* অনন্ত এক পথ পরিক্রমা (Ananta Ek Patha Parikrama) : স্বামী তত্ত্বাতীতানন্দ (Swami Tattwatitananda), সম্পাদক, রামকৃষ্ণ মিশন, ফিজি (Fiji)।